শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন নয় : খুলনায় মির্জা ফখরুল
১৭ জুলাই ২০২৩, ০৭:৪৪ পিএম | আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৩, ০৭:৪৪ পিএম
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন না হলে শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন নয়। নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। ন্যাড়া বেল তলায় বারবার যায় না, একবারই যায়। শিয়ালের কাছে কেউ মুরগি বর্গা দেয় না। এই সরকারকে দেশের মানুষ আর বিশ্বাস করে না।
আজ সোমবার বিকালে খুলনা বিভাগীয় তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নগরীর ডাকবাংলো সোনালী ব্যাংক চত্বরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে লক্ষাধিক নেতাকর্মীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। তারা হিরো আলমকে পর্যন্ত সহ্য করতে পারছে না। আজ হিরো আলম ভোটকেন্দ্রে গেলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাকে বের করে দিয়েছে, মাটিতে ফেলে মারধর করেছে। দেশে ডেঙ্গুতে মানুষ ৭৬ জন মারা গেছে। অথচ মানুষকে বিপদে ফেলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিদেশ সফর করছেন। তাদের দেশের মানুষের প্রতি কোন দায়বদ্ধতা নেই। অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, লুটেরাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তির আন্দোলনই হলো তারুণ্যের সমাবেশ। এই সমাবেশ ঢাকায় হবে ২২ জুলাই। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি এই বাংলাদেশের জন্য নয়। একটা কঠিন ভয়ানক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে আমরা সময় কাটাচ্ছি। এই পরিস্থিতি থেকে দেশ ও দেশবাসীকে রক্ষায় এই তরুণ সমাজকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। খালেদা জিয়া সংগ্রাম করেই তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তিনি এখনও গৃহবন্দি হয়েও দেশ রক্ষার সংগ্রাম করছেন।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, আমাদের ৬০০ নেতাকর্মী গুম হয়েছে। শত সহস্র নেতাকর্মী কারাগারে রয়েছে। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সব ধরনের অনিয়ম চলছে। একটা ব্যাংকেও কিছু নেই। সব শূন্য। পাচার করা টাকা ফেরত আনতে কোনও প্রশ্ন ছাড়াই আড়াই শতাংশ ইনসেনটিভ ঘোষণা করেছে সরকার। আর সারচার্জ নিয়ে নিয়ে জনতার পকেট খালি করছে। জুট মিলগুলো বন্ধ। পেট চালাতে মানুষ এখন ধর্মঘট করে। ১০ টাকার চাল দেবে ঘোষণা ছিল। কিন্তু ৯০ টাকাতেও চাল হয় না। এখন শুধু কাজ আর কাজ। মানুষকে সংগঠিত করে এ অবৈধ সরকারকে হটাতে হবে। তা না হলে দেশই থাকবে না। সরকারি চাকরি আওয়ামী লীগের লোকেরাই পায়। বিএনপির নাম গন্ধ আছে এমন লোক চাকরি পায় না। স্বাস্থ্য সেবা বলতে কিছু নেই। হাসপাতালে হাসপাতালে মানুষ কাতরাচ্ছে। ডেঙ্গুতে লোক মরছে। আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিদেশ সফরে।
সমাবেশের সভাপতি ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ সভাপতির বক্তব্যে বলেন, খুলনা থেকে শেখ পরিবারকে হলুদ কার্ড দেখানো হলো। আগামী ২২ জুলাই ঢাকার তারুণ্যের সমাবেশ থেকে শেখ হাসিনার পতন নিশ্চিত করা হবে।
সম্মেলনের প্রধান বক্তা ও যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, ‘র্যাব-পুলিশ বাদ রেখে পারলে সামনে আসেন। আর জনতার কাতারে আসেন পারলে, জনতা চামড়া খুলে নেবে। এক হিরো আলমের এতটাই ভয় যে তাকে ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দেয়নি। সাংবিধানিক অধিকার নেই ভোটারদের। আমরা এই নতুন ভোটারদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় সরব, আন্দোলন করছি।’
স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী বলেন, শেখ হাসিনার পতনের জন্য আর সময় নেই। আমাদেরও ঘরে বসে থাকার সময় নেই। হাসিনার পতন না করা পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরবো না।
খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, আজকের তারুণ্য সেই ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের তারুণ্য। সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার তারুণ্য। এই তারুণ্যই আজ ভোটাধিকার বঞ্চিত। অথচ এই তারুণ্য মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় ক্লাস, থিসিস না করে মিছিলে মিছিলে রাজপথ কাঁপিয়েছে, সোনালী দিনগুলো কারাগারে কাটিয়েছে। এই তারুণ্যও আগামী কয়েকদিনের মধ্যে শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে।’
বক্তব্য দেন খুলনা নগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা, জেলা আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান প্রমুখ। সমাবেশে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন স্থানে গুম, খুনের শিকার দলীয় নেতাকর্মীদের স্বজনরা তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরেন। সমাবেশ পরিচালনা করেন যুবদলের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল।
সমাবেশে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন স্থানে গুম, খুনের শিকার দলীয় নেতাকর্মীদের স্বজনরা তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
তারুণ্যের সমাবেশে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের জন্য ফাঁকা চেয়ার
খুলনায় তারুণ্যের সমাবেশে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য দুটি চেয়ার ফাঁকা রাখা হয়। চেয়ার দুটিতে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি রাখা হয়। সোমবার দুপুর ২ টার পর নগরীর সোনালী ব্যাংক চত্বরে সমাবেশ শুরু হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলনে তরুণ প্রজন্মকেও জাগ্রত করতে তরুণদের নিয়ে এ সমাবেশ। জাতীয়াতাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রদল এ সমাবেশের আয়োজন করে।
বৃষ্টি উপেক্ষা করে লাখো মানুষের সমাগম
দুপুরে শুরু হওয়ার কথা ছিল তারুণ্যের সমাবেশ। পথে পথে হয়রানি হতে পারে এ আশঙ্কায় আগের দিনেই বিভাগের ১০ জেলার নেতা কর্মীরা খুলনায় চলে আসেন। সমাবেশের আগের দিন অর্থাৎ রোববার রাত থেকেই সমাবেশ স্থল ডাকবাংলো সোনালীব্যাংক চত্বরে জমায়েত হন বিএনপির সহযোগী সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। সমাবেশের দুপুরে তুমুল বৃষ্টি তাদের স্থানচ্যুত করতে পারেনি। বেলা ১ টা নাগাদ কানায় কানায় ভরে যায় সমগ্র এলাকা। নেতা কর্মীরা সমাবেশস্থল ছাড়াও অবস্থান নেন ফেরীঘাট মোড়, পিকচার প্যালেস মোড়, খানজাহান আলী রোড, ডাকবাংলো মোড়, থানার মোড়সহ প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকায়। নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে সমাবেশ মঞ্চে চলে জাসাস এর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সকাল ১০টা থেকে জাসাসের শিল্পীদের সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হলেও মূল সমাবেশ শুরু হয় দুপুর ২টায়। স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান যাদু বলেন, জীবনের প্রথম ভোট যে সকল তরুণ আজও দিতে পারেনি, বাকস্বাধীনতা হরণ, অধিকার থেকে বঞ্চিত, চাকরি বঞ্চিত কোটি তরুণ-যুবক, জুলুমের শিকার, হামলা-মামলায় জর্জরিত যেসকল তরুণ, যুব সমাজ তারা আজ জেগেছে। তারা এই ফ্যাসিবাদের দুঃশাসন থেকে মুক্তি চায় বলেই তারুণ্যের সমাবেশে তরুণের ঢল নেমেছে। যে উত্তাল ঢেউ এই ফ্যাসিস্ট সরকারের থামানোর ক্ষমতা নেই। এই তরুণ তুর্কিদের একটাই চাওয়া দেশ রক্ষার জন্য এই নব্য বাকশালীদের পতন ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা।
সমাবেশে আসতে বাধা দেয়ার অভিযোগ
খুলনায় বিএনপির তিন অঙ্গ সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ সোমবার দুপুরে অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা অভিযোগ করেছেন, সমাবেশ যাতে সফল না হয় সে জন্য বাধা দেয়া হয়। ক্ষমতাসীনরা খুলনার পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলায় বাস বন্ধ করে দেয়। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা রোববার থেকে কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলায় বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়। সমাবেশের দিন সোমবারও বাস চলাচল বন্ধ ছিল। বাগেরহাট থেকেও বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। এছাড়া নগরী সংলগ্ন ট্রলার ঘাটগুলোতে পারাপার বন্ধ করে দেয়া হয়।
মহানগর যুবদলের সভাপতি নাজমুল হুদা চৌধুরী সাগর বলেন, আমাদের কর্মীদের সমাবেশে আসতে পথে পথে বাধা দেয়ার অভিযোগ পেয়েছি। সরকার বুঝে গেছে তাদের পতনের ঘন্টা বেজে গেছে। তাই সর্বশক্তি দিয়ে নানা কৌশলে তারুণ্যের সমাবেশ বন্ধ করার অপচেষ্টা চালায় তারা। তবে তারা ব্যর্থ হয়েছে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শান্ত-সাকিবের সাবধানী শুরু
ট্রাম্পের সঙ্গে আবারো মুখোমুখি হতে চ্যালেঞ্জ কমলার
পরিচারককে অপমান! মেয়েকে ‘শিক্ষা’ দিতে গিয়ে বিপাকে রণবীরের বোন
হার্ট অ্যাটাক করেছেন মাহমুদুর রহমান মান্না, হাসপাতালে ভর্তি
দ্বিতীয় দিনের মতো সড়ক অবরোধে অচল তিন পার্বত্য জেলা
যুক্তরাষ্ট্র পৌঁছে প্রথম দিনেই বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকে যে আলোচনা হলো মোদির
পাগড়ি বিতর্কে সাফাই দিয়ে বিজেপিকে তোপ রাহুলের
ড. ইউনূসকে মার্কিন চার সিনেটরের চিঠি, যা জানা গেল
পাকিস্তান সফরে যাচ্ছেন ড. জাকির নায়েক
খালেদা জিয়া মানসিকভাবে অনেক শক্ত : মুশফিকুল আনসারী
স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যার পর থানায় স্বামীর আত্মসমর্পণ
বৈরুতে ইসরায়েলি হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৭
গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতায় নিহত আরও শতাধিক ফিলিস্তিনি
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এগিয়ে কুমারা দিসানায়েকে
ড. ইউনূস-জো বাইডেন বৈঠক হবে নিউইয়র্কে
ফ্রিজের ভেতর থেকে মিলল তরুণীর ৩০ টুকরা লাশ
খলিস্তানপন্থীদের সঙ্গে বৈঠকে মার্কিন কর্তারা, সফরের আগেই অস্বস্তিতে মোদি
আওয়ামী দুর্বৃত্তায়ন ও দুর্নীতি র আতুঁড়ঘর ‘পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক’
বড় ব্যবধানে হেরে এএফসি বাছাই শুরু যুবাদের
যাত্রাবাড়ীতে ট্রাকের ধাক্কায় নিহত ১