বঙ্গোপসাগরে ৬৫ দিনের আহরন নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবার প্রাক্কালে হাসি মুখে সাগরে যাবার প্রস্তুতি উপকূলের জেলেদের
২৩ জুলাই ২০২৩, ০৫:২৫ পিএম | আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৩, ০৫:২৫ পিএম
বঙ্গোপসাগরে মৎস্য আহরনে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবার মুখে উপক’লভাগের জেলেরা সাগরে যাবার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। গত ২০ মে থেকে কার্যকর হওয়া ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা রোববার রাত ১২টা থেকে উঠে যাবার মুখে জাল ফেলার লক্ষ্যে ট্রলারে জ¦ালানী, জাল, বরফ ও খাবার নিয়ে জেলেরা সাগরে ছুটবেন। উপক’ল সহ বঙ্গোপসাগরে এখন ইলিশের ব্যাপক প্রচুর্য। সাগর ও উপক’লে ইলিশের ঝাকের দেখা মিলবে এ আশা জেলেদের। টানা দু মাসের অখন্ড অবসর কাটিয়ে জেলেদের মলিন বদনে হাসি ফুটবে বলেও আশাবাদী উপক’লের আড়তদার সহ মৎস্যজীবীগনও। ইতোমধ্যে প্রাণ চঞ্চল হয়ে উঠেছে উপক’লের সব ইলিশ মোকামগুলোও। সরবারহ বৃদ্ধির ফলে বরিশাল সহ দক্ষিনাঞ্চলের খুচরা বাজারেও ইলিশের সাথে সাগরের মাছের মূল্যহ্রাসের প্রত্যশা ক্রেতাদেরও। বরিশালের খুচরা বাজারগুলোতে ১ কেজি সাইজের ইলিশের কেজি গত কিছৃু দিন ধরেই দেড় হাজার টাকার নিচে নয়।
সাগরে মৎস্য আহরনে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবার মুখে রোববার বিকেল পর্যন্ত উপক’লের আলীপুরÑমহিপুর, গলাচিপা, পাথরঘাটা, পাড়ের হাট, চর মোন্তাজ, ঢালচর, চর কুকরি-মুকরি সহ সাগর পাড়ের সব মোকাম থেকে বরফ বোঝাই করে ছোট বড় ট্রলার বঙ্গোপসাগরে মৎস্য আহরনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। রাত ১২টার পর পরই এসব ট্রলার ১০-১২ দিনের জন্য জেলেদের রসদ নিয়ে সাগরে ছুটবে।
বিগত ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময় উপক’ল সহ সাগর এলাকায় কোষ্ট গার্ড ছাড়াও নৌ বাহিনী নজরদারী অব্যাহত রাখে। এসময়ে বিভিন্ন জেলা প্রশাসন ছাড়াও পুলিশ, র্যাব ও কোষ্ট গার্ডের সহায়তায় সাগর এলাকার উপক’লীয় ১৪টি উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময়ে ২ হাজার ২৯৬টি মৎস্য অবতরন কেন্দ্র, ১০ হাজার মাছ ঘাট, ১৮ হাজার আড়ত ও প্রায় ১৫ হাজার বাজার পরিদর্শন করে মৎস্য অধিদপ্তর। আইনÑশৃংখলা বাহিনীর সহায়তায় এসময়ে প্রায় ৯০ টন সাগরের মাছ আটক করে বাজেয়াপ্ত করা হয়। সোয়া ২শ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ১৮টি মাছ ধারার নৌযান আটক ছাড়াও প্রায় ১ কোটি ১৪ লাখ মিটার অবৈধ জাল বাজেয়াপ্ত করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। বেআইনীভাবে মাছ ধরার অপরাধে এসময়ে ৬৩টি মামলা দায়ের ও প্রায় ২৪ লাখ টাকা জরিমানা আদায় সহ ১১ জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ডাদেশ প্রদান করা হয়েছে। আটককৃত বিভিন্ন নৌকা ও মৎস্য আহরন উপকরন বাজেয়াপ্ত করে নিলামে বিক্রীর মাধ্যমে সরকারী কোষাগারে প্রায় ৩৭ লাখ টাকা জমা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত।
পাশাপাশি সাগরে নিষেধাজ্ঞার এ সময়ে বরিশাল সহ উপক’লের ১৪ জেলার ৬৮ উপজেলার সমুদ্রগামী ৩ লাখ ১১ হাজার ৬২ জেলের জন্য ৫৬ কেজী করে দুই কিস্তিতে ২৬ হাজার ৭৫০ টন চাল বিতরন করেছে সরকার।
বঙ্গোপসাগরে ১ লাখ ৪০ হজার ৮৬০ বর্গ কিলোমিটারে ছোট-বড় নানা প্রকারের ৪৭৫ প্রজতির মৎস্য সম্পদ আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখছে। ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি, ৫ প্রজাতির লবস্টার, ১৫ প্রজাতির কাঁকড়া, ৫ প্রজাতির কচ্ছপ ও ১৩ প্রজাতির প্রবাল সহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী আমাদের সমুদ্র সম্পদকে সমৃদ্ধ করেছে।
বঙ্গোপসাগরের মৎস্য সম্পদকে আরো সমৃদ্ধ করতেই মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপারিশে ২০১৫ সাল থেকে ’১৮ সাল পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে বাণিজ্যিক ট্রলারের ক্ষেত্রে এবং ২০১৯ সাল থেকে সব মৎস্য নৌযানের ক্ষেত্রেই ৬৫ দিনের মৎস্য আহরন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়। মৎস্য অধিদপ্তরের মতে, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে দেশের সামুদ্রিক এলাকায় মাছের উৎপাদন ছিল প্রায় ৬ লাখ ৬০ হাজার টন। যা ২০২০Ñ২১ অর্থ বছরে প্রায় ৬.৮৫ লাখ টনে উন্নীত হবার পরে গত অর্থ বছরে তা ৭ লাখ টন অতিক্রম করেছে বলে মনে করছেন মৎস্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল মহল।
মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, ‘দেশের উপক’লীয় তটরেখা এবং সমুদ্রের ২শ নটিক্যল মাইল পর্যন্ত ‘একান্ত অর্থনৈতিক এলাকা’র ১ লাখ ১৮ হজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটারের প্রায় সর্বত্রই ইলিশ সহ নানা প্রজাতির মাছের বিচরন রয়েছে’। দূর্যোগপূর্ণ মৌসুম হলেও নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবার পরেই দুবলা পয়েন্ট থেকে ভোলার মনপুরার ভাটিতে ঢালচর সহ চর কুকরী-মুকরী হয়ে টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনের মধ্যবর্তি সাগর এলাকা পর্যন্ত জেলেরা জাল ফেলার আশা করছেন। গত বছরও এসময়ে সাগর থেকে ঝাকে ঝাকে ইলিশ উঠে এসেছে জেলেদের জালে।
আশি^নের বড় পূর্ণিমার আগে-পরে মূল প্রজনন কালের ২২দিন সারা দেশে এবং ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সাগরে মৎস্য আহরনে নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশে ইলিশ সহ অন্যান্য প্রজাতির মাছের উৎপাদন ক্রমশ বাড়ছে। তবে সারা বিশ্বে আহরিত ইলিশের ৬০ ভাগেরও বেশী বাংলাদেশ উপক’লে উৎপাদন ও আহরিত হবার কারণেই সাগর এলাকায় আহরন নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই ভারতীয় জেলেদের আমাদের একান্ত অর্থনৈতিক এলাকা থেকে মাছ লুটে নেয়ার প্রবনতা বাড়ছে।
মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, কোন সম্পদই অফুরন্ত নয়। তাই আমাদের সুনীল অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে বঙ্গোপসাগরে অতি আহরন নিয়ন্ত্রনের কোন বিকল্প নেই। বঙ্গোপসাগরে মাছের প্রজনন ও বংশ বিস্তারের লক্ষ্যে ৬৫ দিনের এ নিষেধাজ্ঞা যথেষ্ঠ কার্যকর ভ’মিকা রাখছে। পাশাপাশি ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্র ও মাইগ্রেশন পথ নির্বিঘœ রাখা সহ সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের মজুত ও জীব বৈচিত্রকে সমৃদ্ধ করতে ২০১৯ সালে হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ সংলগ্ন ৩ হাজার ১৮৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে দেশের প্রথম ‘সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা বা মেরিন রিজর্ভ এরিয়া’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
বাংলাদেশের দক্ষিন সীমানা জুড়ে বিস্তীর্ণ জলরাশির সঞ্চালন সুনীল ঢেউ-এর মাথায় যে রূপালী উর্মিমালা আলিঙ্গন করছে, বিশ্ব মানচিত্রে তা-ই বঙ্গোপসাগর। মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, বিভিন্ন বৈশিষ্ট ও বৈচিত্রপূর্ণ মৎস্য সম্পদে সমৃদ্ধ আমাদের বঙ্গোপসাগর বিশে^র একমাত্র উপ সাগর যেখানে সবচেয়ে বেশী নদী বিধৌত পানি প্রবাহিত হয়। কিন্তু সম্প্রতিককালে বিশ^ব্যাপী ‘সামুদ্রিক ও উপক’লীয় মৎস্য সম্পদ অতি আহরন, ভ’মি ও সমুদ্র হতে সৃষ্ট দুষণ এবং জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তনে তা নানামুখি সংকটের সম্মুখিন’। ফলে বাংলাদেশের মত বিশে^র মৎস্যকুলের প্রাচুর্য, বিস্তৃতি ও প্রজাতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। মৎস্য সম্পদের টেকসই উন্নয়নে ৬৫ দিনের সাময়িক এ নিষেধাজ্ঞার বিকল্প নেই বলেও মনে করছেন মৎস্য অধিদপ্তর ও বিজ্ঞানীগন।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি
কিউবায় সমাবেশ
ঈশ্বরদীতে দূর্বৃত্তের হামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আহত
থিনেস্ট স্বাস্থ্যের