পদ্মা ও কীর্তনখোলায় নদী শাসন সাফল্যজনকভাবে সম্পন্ন করল খুলনা শিপইয়ার্ড
০৩ আগস্ট ২০২৩, ০৯:২১ এএম | আপডেট: ০৩ আগস্ট ২০২৩, ০৯:২১ এএম
দেশের সর্ববৃহৎ নদী ভাঙন রোধ প্রকল্প সাফল্যজনকভাবে বাস্তবায়ন করল বাংলাদেশ নৌ বাহিনী নিয়ন্ত্রিত খুলনা শিপইয়ার্ড। দেড় সহস্রাধিক কোটি টাকার সম্পূর্ণ দেশীয় তহবিলে শরিয়তপুরের নড়িয়া ও বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর ভাঙন থেকে মহানগরী সংলগ্ন চরবাড়িয়া এলাকার ভাঙন রোধ প্রকল্প দুটি বাস্তবায়নের ফলে বিশাল জনপদ খরশ্রোতো দুটি নদীর ভয়াবহ ভাঙন থেকে রক্ষা পেল। নিরাপদ হচ্ছে সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন অবকাঠামো সহ নানা স্থাপনা ও বিপুল ফসলী জমি। এরফলে বরিশাল মহানগর সন্নিহিত একাধিক ডকইয়ার্ড, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ফেরিঘাট ছাড়াও সিটি করপোরেশনের পানি শোধনাগার সহ বিপুল স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীগন জানিয়েছেন।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনায় ক্রয় নীতিমালার ‘ডিপিএম’ পদ্ধতিতে বাংলাদেশে নৌ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড শরিয়তপুরের নড়িয়াতে প্রায় ১০ কিলিামিটার দীর্ঘ বৃহত এ নদী তীর রক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পন্ন করেছে। দেশে পদ্মা সেতু সংলগ্ন নদী শাষণের পরে শরিয়তপুর জেলার নড়িয়া এলাকার প্রকল্পটিই অপর একক বৃহত প্রকল্প। সম্পূর্ণ দেশীয় তহবিলের ১ হাজার ৩২৬ কোটি টাকার এ প্রকল্পটির পাশাপাশি প্রায় ২শ কোটি টাকা ব্যায়ে বরিশাল মহানগরীর পাশে কির্তনখোলা নদীর ভাঙন রোধ প্রকল্পটিও ইতোমধ্য সম্পন্ন করেছে খুলনা শিপইয়ার্ড। বরিশালের প্রকল্পটির আওতায় কির্তনখোলার ভাঙন থেকে মহানগর পানি শোধনাগার সহ বেলতলা ফেরি ঘাট ও চরবাড়ীয়ার ৩ কিলোমিটার নদী তীর রক্ষা কাজ সাফল্যজনকভাবে সম্পন্ন হয়েছে ।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনায় ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে খুলনা শিপইয়ার্ডের চুক্তির আওতায় শরিয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় পদ্মার ভাঙন রোধে প্রথমে প্রায় ১১শ কোটি টাকার চুক্তি সম্পাদন হয়। পরবর্তিতে প্রকল্প ব্যায় বেড়ে ১ হাজার ৩২৬ কোটিতে উন্নীত হয়েছে।
প্রকল্পটির আওতায় ড্রেজিং-এর মাধ্যমে ৩ কোটি ৮ লাখ ঘন মিটার পলি অপসারন করে ভাঙন কবলিত এলাকা থেকে পদ্মার গতিপথ পরিবর্তন করা হয়েছে। এছাড়া ভাঙন কবলিত শরিয়তপুরের ঠাকুর বাজার, বাঁশতলা, কুন্ডের চর সংলগ্ন প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় ৪০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতার ২১ লাখ সিসি ব্লক, ৪৫ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও ৩০ সেমি উচ্চতার ৪.৮৫ লাখ এবং ৫০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ, প্রস্থ ও উচ্চতার প্রায় ১৬ লাখ সিসি ব্লক দিয়ে পদ্মা নদীর প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন কবিলত এলাকার নদী তীরে প্রতিরক্ষা কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকায় প্রায় ৬২ লাখ জিও ব্যাগ ফেলার পরে তার ওপর বিভিন্ন সাইজের প্রায় ৬২ লাখ সিসি ব্লক সন্নিবেশ করে ভয়াল পদ্মার ভাঙন থেকে ভাঙন প্রতিরোধ সম্ভব হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত প্রায় ৫ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে পদ্মার ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষের মুখে ইতোমধ্যে হাসি ফুটে উঠছে। ভাঙন প্রতিরোধ এলাকায় ইতোমধ্যে পর্যটক আকর্ষনেও নানা মুখি পদক্ষেপ গ্রহন করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রতিদিন আসেপাশের এলাকা ছাড়াও দুর দুরান্ত থেকে অনেক মানুষ পদ্মা পাড়ে বেড়াতে আসছেন। নিকট অতিতে যে ভয়াল পদ্মার নাম শুনলে যেকোন মানুষ আঁতকে উঠতেন, সেখানে এখন শ্রান্তি ও বিনোদনের স্থান খুজে পাচ্ছেন সব বয়সি মানুষ। খরশ্রোতা সে পদ্মা এখন সবার চোখ জুড়াচ্ছে।
এব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পশ্চিম জোনের প্রধান প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার শাহজাহান সিরাজ জানান, ‘দেশের অন্যতম বৃহত ও ঝুকিপূর্ণ এ নদী শাষন প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। পদ্মার মত ভয়াল ও খরশ্রোতা নদীর ভাঙন রোধ ছিল অত্যন্ত দুরুহ বিষয়। কিন্তু মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমীনের রহমতে আমরা এ চ্যলেঞ্জ অতিক্রম করেছি’ বলে জানান তিনি। ভাঙন রোধ প্রকল্পের আওতায় প্রতিরক্ষা কাজ সম্পন্ন এলাকায় নতুন করে কোন বিপত্তি সৃষ্টি হয়নি বলেও জানান প্রধান প্রকৌশলী ।
এদিকে বরিশাল মহানগরীর বেলতলা খেয়াঘাট সংলগ্ন সিটি করপোরেশনের ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট থেকে উত্তর ও উত্তরÑপূর্ব দিকে চরবাড়ীয়া হয়ে প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন রোধ প্রকল্পের কাজও ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৯-এর জানুয়ারীতে ২০৯ কোটি টাকার এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকারী ক্রয় নীতিমালার ‘ডিটিএম’ পদ্ধতির আওতায় খুলনা শিপইয়ার্ডের সাথে চুক্তি সম্পাদন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পের আওতায় বরিশালের কির্তনখোলা নদীর ভাঙন কবলিত এলাকায় পৌনে ৫ লাখ জিও ব্যাগ সন্নিবেশ করে তার ওপরে ১২ লাখ ২০ হাজার সিসি ব্লক ফেরে নদী তীর প্রতিরক্ষা কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
পাশাপাশি ভাঙন কবলিত এলাকা থেকে কির্তনখোলা নদীর প্রবাহ নিরাপদ এলাকায় ঘুরিয়ে দিতে ড্রেজিং-এর মাধ্যমে ২৫ লাখ ঘনমিটার পলি অপসারন ছাড়াও সিটি করপোরেশনের ‘ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট’ রক্ষায় প্রায় সাড়ে ৩শ মিটার ‘সীট পাইলিং’ কাজও সম্পন্ন করেছে খুলনা শিপইয়ার্ড।
ফলে ইতোমধ্যে খরশ্রোতা কির্তনখোলা নদীর ভাঙন থেকে বরিশাল মহানগরী ছাড়াও সদর উপজেলার চরবাড়ীয়ার বিশাল জনপদ এবং বিভিন্ন স্থাপনা সহ ফসলী জমি কির্তনখোলার ভাঙন থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছেন।
এছাড়া আরো ১৬১ কোটি টাকা ব্যায়ে ৭টি প্যাকেজে বরিশাল বন্দরের অপর পাড়ের চরকাউয়া থেকে উত্তরে সাহেবের হাট চ্যানেলের মোহনা পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার নদী তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বলে নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছেন। মোট ৮টি প্যাকেজের দুটি প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে বরিশাল বন্দরের অপর পাড় সহ মহানগরীর উত্তর ও উত্তর-পূর্ব প্রান্তে কির্তনখোলার ভয়াবহ ভাঙন প্রতিরোধ সম্ভব হচ্ছে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল মহল।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক