বরিশালের ৫ লক্ষাধিক নগরবাসী মানবিক বিপর্যয়ের কবলে
২৪ আগস্ট ২০২৩, ০২:১৮ পিএম | আপডেট: ২৪ আগস্ট ২০২৩, ০২:১৮ পিএম
মাঝারী থেকে ভারী বর্ষণে বার বারই এককালের ‘প্রাচ্যের ভেনিস’ (?) খ্যাত বরিশাল মহানগরী ডুবলেও নগর ভবনের তেমন কোন হেলদোল নেই। পাশাপাশি ময়লা আবর্জনা পরিস্কার সহ এনগরীর অনেক নাগরিক পরিসেবাও যথেষ্ঠ ঢিলেঢালা হয়ে গেছে বলে অভিযোগ নগরবাসীর। এমনকি নগর ভবন থেকে এনগরী ও নাগরিক পরিসেবা সমুহ নিশ্চিত করণে মানষিকতার অভাবে অনেক ক্ষেত্রেই মানবিক বিপর্যয় পর্যন্ত সৃষ্টি হচ্ছে বলেও অভিযোগ। শুধু বৃষ্টিপাতই নয়, গত কয়েক বছর ধরে নগরীর পাশে প্রবাহমান কির্তনখোলার জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেলও এনগরীর ড্রেনের পানি রাস্তায় গড়াচ্ছে। বর্ষা মৌসুম ছাড়াও বরিশাল মহানগরী বার বারই পানির তলায় চলে গেলেও তা থেকে নগরবাসীকে পরিত্রান দিতে তেমন কোন উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না। এমনকি এসব বিপর্যয়ের পরেও নগরীর ড্রেনগুলো পরিস্কার করার তেমন কোন নিবিড় কার্যক্রম চোখে পরছেনা। গত বছর আগষ্টে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ ভর করে প্রবল বর্ষন ও কিতনখোলা নদীর পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করায় পুরো নগরী ডুবে গিয়েছিল। এমনকি বৃষ্টি বন্ধ ও নদীর পানি বিপদ সীমার নিচে নেমে যাবার এক সপ্তাহ পরেও নগরীর অনেক এলাকাই পানির তলায় ছিল। তবে নগর ভবনের কনজারর্ভেন্সি বিভাগ থেকে এসব অভিযোগ সমুহ অস্বিকার করে সব ড্রেনগুলো নিয়মিত সচল রাখা সহ ময়লা অঅবর্জানা পরিস্কার করার দাবী করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি সূত্রের মতে, ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’এ ভর করে গত বছর ২৫ আগষ্ট সকাল ৯টার পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায় বরিশাল মহানগরীতে ২৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সময় পাশর্^বর্তি কির্তনখোলা নদীর পানি বিপদ সীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছিল। অথচ গত ৭ আগষ্ট সকাল ৯টার পরবর্তি ২৪ ঘন্টায় বরিশালে ১৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সময় ভরা জোয়ারেও কির্তনখোলার পানি বিপদ সীমার ২৮ মেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত হলেও গোটা মহানগরীর জলাবদ্ধতা ছিল আগের পর্যায়েই। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ পরিস্থিতি বরিশাল মহানগরীর পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থার অধপতনকেই নির্দেশ করছে। যা আগামীতে এ মহনগরীর জন্য চরম দূর্যোগ সহ ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের বার্তা দিচ্ছে বলেও মনে করছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল সূত্র।
সাধারন নগরবাসীর অভিযোগ, নগর ভবনের অনেক দায়িত্বশীলগন নাগরিক সেবা সমুহ নিশ্চিত করার বিষয়টি ক্রমে ভুলে যাচ্ছেন। অনেকে নগরবাসীর প্রতি নগর পরিষদের প্রতিশ্রুতি ও দায়বদ্ধতাকেও মনে রাখেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি নগর ভবনের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী গত কয়েক বছরে সাধারন নাগরবাসীর সাথে প্রজাসুলভ আচরন করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
নগরীর ড্রেনসমুহ নিয়মিত পরিস্কার না করার অভিযোগ এখন রিতিমত পুরনো হয়ে গেছে। গত ৭ আগষ্ট সন্ধা ৬টার পূর্ববর্তি ৩৬ ঘন্টায় ২২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে ৫৮ বর্গ কিলোমিটারের বরিশাল মহানগরীর পুরোটাই পানির তলায় চলে যায়। ফলে ৫ লক্ষাধিক নগরবাসীর শুধু দূর্ভোগই নয়, অনেক এলাকায় চরম মানবিক বিপর্যয়ও সৃষ্টি হয়। এমনকি এসময় কির্তনখোলার পানি বিপদসীমার নিচে প্রবাহিত হচ্ছিল। মঙ্গলবার সকাল থেকে বরিশাল অঞ্চলে আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করে। টানা এক সপ্তাহ পরে বরিশাল মহানগরীতে সূর্যের হাসি ছড়ালেও এ নগরীর অনেক রাস্তাঘাট সহ বিশাল জনপদ তখনো পানির তলায় ছিল।
বরিশাল মহানগরীর কাঁচা পাকা প্রায় দেড়শ কিলোমিটার ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিস্কার না কারার অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। বিষয়টি নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে নগরবাসী যেমনি খুব বেশী আওয়াজ করতে পারেন নি, তেমনি তাদর দীর্ঘশ^াস নগর ভবনের সীমানায়ও পৌছেনি। নগরীর ভঙ্গুর পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা সহ বরিশাল নদী বন্দরের নাব্যতা রক্ষার নামে গত প্রায় দুই দশক ধরে ড্রেজিংকৃত পলি নদীতেই অপসারন করায় কির্তনখোলায় সংযুক্ত খালগুলোর মোহনা ভড়াট হয়ে গেছে। ফলে এ নগরীর ভঙ্গুর পয়ঃ নিস্কাশন ব্যবস্থা আরো রুদ্ধ হলেও তা নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই।
নগরীর ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিস্কার না করার অভিযোগ এখন প্রতিষ্ঠিত সত্য। এমনকি এ মাসের শুরু থেকে দফায় দফায় মাঝারী থেকে প্রবল বর্ষনে পুরো নগরী বার বারই পানির তলায় চলে গেলেও এ দূর্যোগের পরেও গুরুত্বপূর্ণ অনেক ড্রেনই পরিস্কার করার কোন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। অথচ চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসের মধ্যে ৬ মাসেই বরিশালে বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল স্বাভাবিকের কম। এমনকি গত জুলাই মাসেও বরিশালে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫৮% কম বৃষ্টি হলেও নগরীর নবগ্রাম রোডের বটতলা থেকে করিম কুটির পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকার ড্রেনের পানি রাস্তা ছুই ছুই করছিল। কোন মাঝারী বর্ষন বা ভারী বৃষ্টিপাত ছাড়াই অনেক সময় ড্রেনের পানি রাস্তায় গড়াতেও দেখা যায় বছর যুড়ে।
এমনকি গত জুলাই মাসে বরিশালে ৫৮% বৃষ্টিপাতের ঘাটতির পরে ১ আগষ্ট সকাল থেকে ৭ আগষ্ট রাত পর্যন্ত প্রায় ৫শ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে নবগ্রাম রোড সহ পুরো নগরী যুড়ে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসে। নগরবীদ ও পরিবেশবীদ সহ সচেতন নাগরিকদের মতে, গত কয়েক বছর ধরে নগর ভবনের উদাশীন দায়িত্বশীলরা নগরীর পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন দুরে থাক, যথাযথ সংরক্ষনেও বিবেকহীন নিরবতা পালন করেছেন। ফলে তার দূর্ভোগ বহন করতে হচ্ছে ৫ লক্ষাধিক নগরবাসীকে। সাথে বার বার জলাবদ্ধতার কবলে থাকায় নগরীর রাস্তাঘাট দ্রুত বিনষ্ট হচ্ছে।
এদিকে বরিশাল মহানগরীর পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে গত কয়েক বছরে নগরভবন থেকে কোন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। আগের নগর পরিষদ নগরীর কিছু খাল খনন ও পুনরুদ্ধারের প্রায় সোয়া ২শ কোটি টাকার একটি ‘উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তবনা-ডিপিপি’ নিয়ে মন্ত্রনালয়ে দৌড়ঝাপ করলেও তা অনুমোদন লাভ করেনি। বর্তমান নগর পরিষদ দায়িত্ব গ্রহন করে ঐসব খাল খননে প্রায় সাড়ে ১১শ কোটি টাকার ডিপিপি দাখিল করলেও মন্ত্রনালয় থেকে পরমার্শকের মাধ্যমে সম্ভাব্যতা সমিক্ষা সহ প্রকল্প ব্যায় কমিয়ে তা পূণর্গঠনের দিক নির্দেশনা দিয়ে তা ফেরত পাঠায়।
পরবর্তিতে পরামর্শকের সমিক্ষা সহ প্রায় ২২শ কেটি টাকার ডিপিপি দাখিল করা হলে মন্ত্রনালয় তা পরিকল্পনা কমিশনে না পাঠিয়ে ফেরত দিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ‘এ সংক্রান্ত একটি ডিডিপি এখনো পরিকল্পনা কমিশনের বিবেচনাধীন’ বলে জানিয়েছেন।
অপরদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড মহানগরীর ৭টি খাল সংস্কার ও উন্নয়নে ১০.৭৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করলেও নগর ভবন থেকে এ লক্ষে তাদের ‘দাখিলকৃত ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে চুড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায়’ বলে জানিয়ে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কার্যক্রম বন্ধ রাখার অনুরোধ করে। পাউবো’র প্রকল্পটির আওতায় নগরীর পলাশপুর খাল, আমনতগঞ্জ খাল, জেল খাল, ভাটার খাল, চাঁদমারী খাল, সাগরদী খাল ও রূপাতলী খালগুলোর প্রায় ১৮ কিলোমিটার অংশ সংস্কারের লক্ষ্যে দু দফায় দর প্রস্তাব গ্রহন করে মূল্যায়নও সম্পন্নের পরে ৬টি খাল সংস্কারে ঠিঅকাদারের সাথে চুক্তি হতে যাচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় এসব খালের দুধারে ওয়াকওয়ে নির্মান সহ কিছু অবকাঠামো নির্মান করবে বলেও জানা গেছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পটিতেও নগরীর পশ্চিম অংশের পয়ঃনিস্কাশনের প্রধান মাধ্যম নবগ্রাম রোড খালটি সংস্কার ও উন্নয়নে অন্তভর্’ক্ত করা হয়নি। ফলে নগরীর পশ্চিম অংশের পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন এখনো সুদুর পরাহত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, তাদের প্রকল্পটি দুবছর ধরে ঝুলে আছে। সময়মত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্ভব হলে গত বছরের মত এবারের বর্ষা মৌসুমেও নগরবাসীকে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার শিকার হতে হতনা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৭ খাল খনন ও সংস্কার প্রকল্প সম্পর্কে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক জানান, ‘খুব শিঘ্রই আমরা কার্যাদেশ প্রদান করব। আগামী জুনের মধ্যে প্রকল্পটির মূল কাজ সম্পন্ন করার কথাও জানিয়ে আগামী বর্ষা মৌসুমে বরিশাল মহানগরীর ভয়াবহ জলাবদ্ধতার অনেকটাই নিরশন হবে’ বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
মারা গেলেন 'মুজিব' বায়োপিকের নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল
মানবাধিকার সংগঠন রাইটস যশোর আয়োজিত যৌন শিশু পাচার প্রতিরোধে অ্যাডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত
যশোরে আদালত চত্বরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের বিক্ষোভ
ফাইনালে মুখোমুখি মেট্রো-রংপুর
চুয়াডাঙ্গার গোয়ালপাড়া থেকে ১ কেজি ১৯৪ দশমিক ৩২ গ্রাম ওজনের ৪টি অবৈধ স্বর্ণের বার উদ্ধার করেছে বিজিবি
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির নিরপেক্ষ ভেন্যু দুবাই
কুয়াকাটা টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরাম’র সভাপতি কাজী সাঈদ, সম্পাদক মিজান
শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর চিঠি নিয়ে যা জানাল ভারত
বিডিআর হত্যাকাণ্ড তদন্তে ৭ সদস্যের কমিশনে আছেন যারা
‘বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন’-এ বারের অন্তর্ভুক্তিকরণ প্রস্তাব
সোনারগাঁওয়ে বাস-অ্যাম্বুলেন্সের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ১০
মামলা রেকর্ড করতে ঘুষ গ্রহণ, কুষ্টিয়ায় ওসি ও এসআই ক্লোজ
কুমিল্লায় বীর মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিতের ঘটনায় জামায়াতের ২ কর্মী বহিষ্কার
পতিত আওয়ামী স্বৈরাচারের গত ১৭ বছরের নির্যাতন ভুলে যাবার সুযোগ নেই: আমিনুল হক
পাবনা ব্যাপ্টিস্ট চার্চে প্রাক বড়দিন উৎসব অনুষ্ঠিত
পূর্বধলায় শীতার্ত মানুষের মাঝে ইসলামী যুব আন্দোলনের কম্বল বিতরণ
ধর্ম-বর্ণ নয়, সমান মর্যাদায় হোক নাগরিক পরিচয়: জোনায়েদ সাকি
এসবিএসি ব্যাংকের শরিয়াহ্ সুপারভাইজরি কমিটির সভা অনুষ্ঠিত
আ.লীগের হাতেও নির্যাতিত হয়েছিলেন সেই মুক্তিযোদ্ধা, কিন্তু তুলে ধরেনি গণমাধ্যম!
ভারত বাংলাদেশ থেকে বস্তা বস্তা টাকা লুট করেছে : দুদু