কক্সবাজারে ধরা পড়ছে প্রচুর ইলিশ -দাম সাধারণের নাগালের বাইরে
২৬ আগস্ট ২০২৩, ০৬:২২ পিএম | আপডেট: ২৬ আগস্ট ২০২৩, ০৬:২২ পিএম
বঙ্গোপসাগরে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর কক্সবাজার সাগর উপকূলে ধরা পড়ছে প্রচুর ইলিশ। কিন্তু দাম এখনো সাধারণের নাগালের বাইরে। দেশের সর্বাধিক ইলিশ আহরণ জেলা কক্সবাজার থেকে দিন দিন বেড়েই চলেছে ইলিশের সরবরাহ। জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে গত ১০ দিনে কক্সবাজার থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টনের বেশি ইলিশ সরবরাহ করা হয়েছে।
তবে স্থানীয় ক্রেতারা বলছেন, কক্সবাজারে শত শত টন ইলিশ আসলেও রপ্তানীর চাপে এই প্রিয় মাছটি আগের চেয়ে বেশ চড়া দামে কিনতে হচ্ছে।
কক্সবাজারের শহর ও গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজারগুলোতে ভরা মৌসুমেও ইলিশের দাম চড়া। বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদার তুলনায় বাজারে মাছের সরবরাহ বেশি। কিন্তু দাম কমছে না। অথচ বছরের এই সময় ইলিশের দাম কিছুটা কমতির দিকে থাকে।
মূলত ঢাকা ও পশ্চিমবঙ্গের বড় বড় মাছ ব্যবসায়ীদের চাহিদার কারণে স্থানীয় বাজারে ইলিশ মাছের সরবরাহ কম বলে জানা গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঢাকাসহ ভারতে বিপুল পরিমাণ ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে। তাই বাজারে চাহিদা অনুযায়ী জোগান মিলছে না। যে কারণে বেশি দাম গুণতে হচ্ছে ইলিশ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত কক্সবাজার জেলার মানুষকে। এবছর অনেকেই এত দামের ইলিশ মাছ ছুঁয়েও দেখতে পারছেন না।
স্থানীয় ক্রেতারা মনে করছেন, জেলার বড় বড় আড়তদাররা স্থানীয়দের চাহিদার চেয়ে ঢাকার ব্যবসায়ীদের রপ্তানীকেই অধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন। ইলিশের বাজারে তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।
জেলার প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ও পাইকারি বাজার শহরের বাঁকখালী নদীর ফিশারি ঘাট ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ কিনতে ঘাটে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। কিন্তু সাধারণ ক্রেতারা ইলিশের দাম দেখে খালি হাতে চলে যায়।
ফিশারি ঘাটের ইলিশ ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘গত বছর এ সময় যে ইলিশের দাম ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা ছিল। এবার এসব ইলিশের দাম প্রায় দিগুণ ১১০০ থেকে ১৫০০ টাকা। যার কারণ মাছের দাম আর চাহিদা বেশি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এ সময় ইলিশের দামের এত ফারাকের কারণ হচ্ছে, বিপুল পরিমাণ মাছ ঢাকা এবং ভারতে চলে যাচ্ছে।
ঘাটে মাছ কিনতে আসা কয়েকজন জানান, ‘নিষেধাজ্ঞা ও বৈরী আবাহওয়ার পর বেশ ভালোই মাছ পাওয়া যাচ্ছে বলে কিনতে এসেছেন তারা। কিন্তু এখানে এসে ইলিশে হাত দেওয়া যাচ্ছে না। এক কেজি বা তার বেশি ওজনের ইলিশের দাম চায় ১ হাজার ৫০০ থেকে ১হাজার ৭০০ হাজার টাকা, ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম এক হাজারন থেকে ১হাজার ১০০ টাকা। আর ছোট ইলিশের দাম চায় কেজিপ্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। কীভাবে ইলিশ কিনবে মানুষ?’
গতকাল শহরের ফিশারিঘাটের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে গিয়ে জানা যায়, বঙ্গোপসাগরে এক ট্রলারে জেলেদের জালে এক টানেই ৫২ লাখ টাকার ইলিশ ধরা পড়েছে। কক্সবাজারের পেশকারপাড়া এলাকার আবদুস সাত্তারের মালিকানাধীন একটি ট্রলারে মাছগুলো ধরা পড়ে।
ট্রলারের জেলে আবদুল গণী বলেন, ছয় দিন আগে একটি ট্রলার নিয়ে তাঁরা ২১ জন জেলে সাগরে নামেন।
উপকূল থেকে প্রায় ৮৫ কিলোমিটার পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে জাল ফেললে একসঙ্গে ৭ হাজার ৩০০টি ইলিশ ধরা পড়ে। মাছগুলো ফিশারিঘাটে এনে বিক্রি করে ৫২ লাখ টাকা পেয়েছেন। জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য বলছে, গত ১০ দিনে কক্সবাজার জেলা থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টনের বেশি ইলিশ সরবরাহ করা হয়েছে। ফিশারিঘাটের পাইকারি বাজার ছাড়াও টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, পেকুয়াসহ জেলার বিভিন্ন মৎস্যকেন্দ্র থেকে দৈনিক কমপক্ষে ৩০০ মেট্রিক টন ইলিশ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হচ্ছে।
এর আগে গত বছর কক্সবাজারে ইলিশ আহরণ হয়েছিল ৩৯ হাজার ৩১৪ মেট্রিক টন। এবার ইলিশ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০ হাজার মেট্রিক টন।
গতকাল ফিশারিঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, বেচাবিক্রির জন্য তোলা অধিকাংশ ইলিশের ওজন ৮০০ গ্রাম থেকে দেড় কেজি। বেচাবিক্রিও হচ্ছে চড়া দামে।
বাজারে ৯০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের প্রতিটি ইলিশ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকায়, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ৫৫০-৬০০ টাকায়।
শহরের নুনিয়াছটার আবদুল শুক্কুরের মালিকানাধীন আরেকটি ট্রলার ৭ হাজার ইলিশ বিক্রি করেন ৪৮ লাখ টাকায়। দুপুরে ফিশারিঘাটে দেড় হাজার ইলিশ বিক্রি করে সাড়ে ১২ লাখ টাকা পেয়েছে শহরের ৬ নম্বর ঘাট এলাকার নাসির উদ্দিনের মালিকানাধীন একটি ট্রলার।
নাসির উদ্দিন বলেন, কম-বেশি সব ট্রলারে ৫০০ থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত ইলিশ ধরা পড়ছে। মাছ ধরা পড়ায় খুশি জেলে শ্রমিক ও ট্রলারের মালিকেরা।
ফিশারিঘাট মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির উপদেষ্টা ও ইলিশ ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন বলেন, ফিশারিঘাট থেকে সকাল ৮টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ২০ মেট্রিক টনের মতো ইলিশ ঢাকা-চট্টগ্রামে সরবরাহ করা হয়েছে। ইলিশের দাম আগের তুলনায় কিছুটা কমতে শুরু করেছে। বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকার বাজারে ইলিশের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় কক্সবাজারের ইলিশের চাহিদা থাকার পরেও মানুষ ইলিশ পাচ্ছেনা।
ইলিশ ব্যবসায়ীরা বলছেন, কক্সবাজার থেকে ট্রাকে প্রতি কেজি ইলিশ ঢাকায় পাঠাতে পরিবহন ও প্যাকেজিং খরচ যাচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এ কারণে ঢাকায় প্রতি কেজি ইলিশের বিপরীতে ১০ থেকে ২০ টাকার বেশি লাভ করা যাচ্ছে না।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান বলেন, ফিশারিঘাটে পাইকারি ইলিশ বিক্রির বাজারসহ টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়াসহ বিভিন্ন উপকূলে দৈনিক ৫০০ মেট্রিক টন সামুদ্রিক মাছ আহরণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৩০০ মেট্রিক টন ইলিশ। আহরিত ইলিশের মধ্যে ৬০ ভাগের ওজন ৮০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি। ৩০ শতাংশের ওজন ১ থেকে দেড় কেজি। বাকিগুলো দেড় থেকে দুই কেজির।
কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, ইলিশ ধরতে সাগরে অবস্থান করছে জেলার ছয় হাজার ট্রলার। ট্রলারগুলো ঘাটে ফিরলে ইলিশে সয়লাব হয়ে যাবে হাটবাজার।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ঘন কুয়াশায় এক্সপ্রেসওয়েতে ৭ যানবাহনের সংঘর্ষ, আহত ৫
ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি
উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন
বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের
নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত
সিনেটে প্রার্থী হতে সরে দাঁড়ালেন লারা ট্রাম্প
আমাদেরকে আর স্বৈরাচার হতে দিয়েন না : পার্থ
মার্চের মধ্যে রাষ্ট্র-সংস্কার কাজ শেষ হবে : ধর্ম উপদেষ্টা
জামালপুরে দুই ইজিবাইকের চাপায় সাংবাদিক নুরুল হকের মৃত্যু
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইনের সামরিক সদর দফতরের দখল নিয়েছে আরাকান আর্মি
ব্রাজিলে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৩২
নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ সিরিয়ায়
ঘনকুয়াশায় ৩ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু
গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে
কনসার্ট মঞ্চে স্বৈরাচার হাসিনার বিচার দাবি
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ১৪ ফিলিস্তিনি
ঘনকুয়াশায় আরিচা-কাজিরহাট, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ
আওয়ামী লীগ যা করেছে, বিএনপি তার বিপরীত কাজ করে সুন্দর সমাজ গড়বে: ইয়াকুব চৌধুরী
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়