শিকলবন্ধি অন্ধ মা আর প্রতিবন্ধি ছেলের জীবন
৩০ আগস্ট ২০২৩, ০৪:৩৫ পিএম | আপডেট: ৩০ আগস্ট ২০২৩, ০৪:৩৫ পিএম
মা অন্ধ আর ছেলে বুদ্ধি প্রতিবন্ধি। মা রহিমা বেগমের কোমরের সাথে তার ৮ বছরের ছেলে আব্দুর রহমানকে শিকলবন্ধি করে রাখা হয়েছে। প্রতিবন্ধি ছেলের চোখ দিয়েই রহিমার পথ চলা। গ্রাম আর শহরের মানুষের দেওয়া সহযোগীতায় দিন চলে মা-ছেলের। মঙ্গলবার (২৯ আগষ্ট) মানুষের কাছে সাহায্য চাইতে শহরে এসেছিল মা-ছেলে। কিন্তু সন্ধ্যার পর আশ্রয় নেয় কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। রাত হওয়ায় হাসপাতালের মেঝেতে শিকলবন্ধি অবস্থায় মা ছেলে শুয়ে পড়েন। মা-ছেলের দৃশ্যটি হাসপাতালে আসা রোগী ও তার স্বজনদের নজর কাড়ে। অনেকে তাদের ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোষ্ট করেন। ফেসবুকে ওই মানবিক পোষ্টটি দেখে রাত সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালে ছুটে যান কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ। তিনি তাৎক্ষনিক ওই মা ছেলের জন্য বেড ও কাপড়সহ চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের দাদপুর গ্রামের অন্ধ রহিমা হতদরিদ্র ভ্যানচালক ছালাম হোসেনের স্ত্রী। অনুমানিক ১০ বছর আগে ছালাম হোসেনের সাথে রহিমার বিয়ে হয়। তাদের প্রথম সন্তান আব্দুর রহমান। ছেলে হওয়ার কিছুুদিন পরেই নিরুদ্দেশ হয় সালাম। রহিমা আগে থেকেই চোখে কিছুটা কম দেখত। একদিন হঠাৎ তার ঘরে আগুন লেগে পুড়ে যায়। আগুনে তার মাথার এককাংশ ও দুটি চোখেরই দৃষ্টি শক্তি হারায়। এরপর নেমে আসে দুর্বিসহ জীবন। ছোট্ট ছেলে আ¦্দুর রহমানকে নিয়ে অন্ধ রহিমার ঠাই হয়েছিল একই গ্রামের বাবার বাড়ীতে। অসুস্থ্যতার কারনে সেখানেও জায়গা হইনি তাদের। এখন মা-ছেলের ঠিকানা পথে পথে আর রাত কাটে কোন না কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনের চালাতে। চোখে না দেখার কারনে ছেলের সাহায্যেই পথ চলতে হই রহিমার। ছোট্ট ছেলেটি কোথাও যেন হারিয়ে না যায় সেজন্য কোমরে ছিকল বেধে রাখেন। খুব বেশী আবদার করলে মাঝে মাঝে খুলে দেন। খেলাধুলা করে আসলে আবারও বেধে রাখেন ছিকলে।
স্থানীয় গনমাধ্যমকর্মী হাবিব ওসমান জানান, তাদের এক সাংবাদিকের অসুস্থ্যতার খবর শুনে কয়েকজন সাংবাদিক মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালে যান। তারা দ্বিতীয় তলায় উঠেই দেখেন মেঝেতে শিকলবন্ধি অবস্থায় মা ও ছেলে শুয়ে আছে। এ সময় মা রহিমা বেগম জানায়, তিনি অন্ধ, চোখে দেখেন না। তার একমাত্র বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি ছেলেকে সাথে নিয়ে শহরে ভিক্ষা করে বেড়ান। তার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি শিশু সন্তান হারিয়ে যেতে পারে সেই আশঙ্কায় কোমরের সাথে শিকলবন্ধি করে রাখেন। শহরে সাহায্য চাইতে এসে রাত হয়ে যাওয়ায় হাসপাতালের মেঝেতে আশ্রয় নিয়েছেন বলেও জানান।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডাক্তার কৌশিক আহম্মেদ জানায়, তিনি রাতে ছিলেন না। খবর নিয়ে জেনেছেন, ওই রাতে একজন মহিলা তার ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালের আশে পাশে ঘোরাঘুরির পর রাতে থাকার জন্য মেঝেতে আশ্রয় নিয়েছিল। সকালে তারা চলে গেছেন।
এদিকে রহিমার স্বামী ভ্যান চালক ছালাম হোসেনের সাথে কথা বলতে স্থানীয় কয়েকজন সংবাদকর্মীরা তার বাড়ীতে যান। সেখানে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। প্রতিবেশিরা জানান, ছালাম হোসেন ভ্যান নিয়ে বাইরে গেছেন, রাতে ফিরবেন।
অন্ধ মা ছেলেকে হাসপাতালে দেখতে যাওয়া পৌর মেয়র আশরাফুল আলম বলেন, মা ও ছেলের এক শিকলে বন্ধি জীবনের দৃশ্যটি অত্যান্ত বেদনাদায়ক। আমি ফেসবুকে ছবিটি দেখার পর তাদের দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। অন্ধ রহিমার সাথে কথা বলেছি। পরিবারটির বেঁচে থাকার জন্য ব্যাক্তিগতভাবে সহায়তা করবেন বলেও জানান মেয়র আশরাফ।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ঘন কুয়াশায় এক্সপ্রেসওয়েতে ৭ যানবাহনের সংঘর্ষ, আহত ৫
ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি
উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন
বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের
নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত
সিনেটে প্রার্থী হতে সরে দাঁড়ালেন লারা ট্রাম্প
আমাদেরকে আর স্বৈরাচার হতে দিয়েন না : পার্থ
মার্চের মধ্যে রাষ্ট্র-সংস্কার কাজ শেষ হবে : ধর্ম উপদেষ্টা
জামালপুরে দুই ইজিবাইকের চাপায় সাংবাদিক নুরুল হকের মৃত্যু
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইনের সামরিক সদর দফতরের দখল নিয়েছে আরাকান আর্মি
ব্রাজিলে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৩২
নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ সিরিয়ায়
ঘনকুয়াশায় ৩ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু
গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে
কনসার্ট মঞ্চে স্বৈরাচার হাসিনার বিচার দাবি
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ১৪ ফিলিস্তিনি
ঘনকুয়াশায় আরিচা-কাজিরহাট, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ
আওয়ামী লীগ যা করেছে, বিএনপি তার বিপরীত কাজ করে সুন্দর সমাজ গড়বে: ইয়াকুব চৌধুরী
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়