মাদারীপুরে টাকা দিলে মেলে সেবা, না দিলেই হয়রানি!
০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৪১ পিএম | আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৪১ পিএম
মাদারীপুরে ভূমি কার্যালয়গুলোতে ঘুষ, দুর্নীতি ও হয়রানির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। টাকা না পেলেই সেবা গ্রহীতাদের হয়রানি করেন কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী। আর তাদের সহযোগিতা করে কিছু দালাল চক্র। এর প্রতিবাদ করেও সুফল মেলে না, উল্টো হয়রানি বাড়ে।
জানা যায়, জমির নামজারি, ডিসিআর, মিসকেসসহ জমির বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে যান স্থানীয়রা। কিন্তু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাহিদা মতো টাকা দিতে না চাইলেই বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তাদের। বেশি হয়রানির শিকার হতে হয় নামজারি ও মিসকেস নিয়ে। অথচ ভোগন্তি কমাতে ই-নামজারি চালু করেছে সরকার। একজন নামজারি গ্রহীতাকে প্রথমে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। তার হার্ড কপি কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছে জমা দিতে হয়। আবার জমির সব সেবার জন্য নিয়ম অনুয়ায়ী লিখিত অবেদনও জমা দিতে হয়। তারপর শুরু হওয়ার কথা ফাইলের কার্যক্রম।
নিয়ম অনুযায়ী, আবেদন মঞ্জুর হওয়ার পর ডিসিআরের জন্য ১ হাজার ১০০ টাকা জমা দিলে জমির নামজারি হওয়ার পর সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ ২৮ দিন সময় লাগার কথা। কিন্তু উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের কিছু দালালসহ কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রতি নামজারিতে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা করে দিতে হয় সেবা গ্রহীতাদের। চাহিদা অনুযায়ী টাকা না দিলে দিনের পর দিন ভূমি কার্যালয়ে ঘুরতে হয় অনেককে। আবার টাকা না দিলে শুনানির নির্দিষ্ট সময়ের আগেই আবেদন নামঞ্জুর করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
খোয়াজপুর ইউনিয়নের রাজারচর গ্রামের ভুক্তভোগী হেমায়েত সরদার জানান, চরলক্ষ্মীপুর মৌজায় তাদের নামে প্রায় ৯৪ শতাংশের অধিক জমি আছে। গত বছর জানুয়ারি মাসে হেমায়েত আলিনগর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে জমির নামজারি করতে যান। সেখানে ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ওহাব আলী তার কাছে ৫০ হাজার টাকা চান। পরে অবশ্য ৩০ হাজার টাকায় চুক্তি হয়। হেমায়েত সেই টাকা জোগাড় করে দেন ভূমি কর্মকর্তাকে। পরে তাকে দুই মাস পরে যেতে বলেন। দুই মাস করতে করতে আজকে এক বছর পার হয়ে গেল। এখনো তার জমির কাজ সমাধান হয়নি।
এদিকে মাদারীপুর সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের ভূমি অফিসে আসেন জুয়েল নামের এক ব্যক্তি। তার কাছ থেকে এক ভূমি কর্মকর্তা ৭ হাজার টাকা নেন জমির নামজারি করতে। এরপর নামজারি আজকাল বলতে বলতে প্রায় তিন চার মাস গেছে এখনো কাজের সমাধান হয়নি।
এদিকে চরনচনা গ্রামের সবুর আলীর জানান, তার খারিজের শুনানির জন্য খুদে বার্তার মাধ্যমে তারিখ জানানো হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের আগেই খারিজটি নামঞ্জুর করা হয়েছে। তার সঙ্গে চারবার এমন হয়েছে। টাকা দিয়ে পাচ্ছে না সঠিক সেবা। এই ভোগান্তিরা শেষ কোথায়।
এছাড়া মাদারীপুর সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়ন ভূমি সেবা নেওয়ার জন্য যান কয়েকজন শিক্ষক। কিন্তু নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক তারা সংবাদকর্মীর কাছে লিখিত অভিযোগ করে বলেন, গত জুলাই মাসে ঝাউদি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়েছিল জমির খতিয়ান নাম্বার জানার জন্য, সেখানে আবুল নামে এক কর্মচারী তাদেরকে একটা বই থেকে মোবাইলে ছবি তুলে একটা পৃষ্ঠা প্রিন্ট করে দেয়। যার বিনিময়ে একজনের কাছে ৬০০ টাকা দাবি করে ও আরেকজনের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। যার কাছে ছয়শ টাকা দাবি করেছিল সে তখন ২০০ টাকা দিতে চাইলে তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন আবুল। তারপরে শিক্ষক এই কর্মচারীর কাছে বলে আমি ছয়শ টাকাই দেব কিন্তু আমাকে রিসিট কপি দিতে হবে। তখন তার কাছ থেকে জোর করে কাগজ রেখে দেন।
ওই কর্মচারী বলেন, এসি ল্যান্ড বা ডিসি কারো কথায় আমরা কাজ করি না। অন্য এক শিক্ষকের কাছে ২০ হাজার টাকা চেয়েছে। সে কোন কথা না বলেই চলে এসেছে।
সেবা নিতে এসে যদি আমাদের এরকম বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় তাহলে আমরা কোথা থেকে সেবা নেব। সরকার এবং প্রশাসনের কাছে আমাদের জোর দাবি বিষয়গুলো একটি খতিয়ে দেখার জন্য। আমরা যাতে সঠিকভাবে সেবা নিতে পারি এই ব্যবস্থাটুকু করে দেওয়ার জন্য মাননীয় সরকার এবং প্রশাসনের কাছে আমাদের জোর দাবি। সেবা গ্রহীতাদের অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন আলিনগর ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ওহাব মিয়া। তিনি বলেন, নামজারি করা নিয়ে কারও সঙ্গে টাকার চুক্তি হয়নি তার। আমি একটু অসুস্থ আছি সুস্থ হয়ে আপনার সাথে দেখা করব।
কালিকাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তার ও ঝাউদি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মচারীর মোবাইল ফোনে কল করেও কোনো সারা মেলেনি।কালকিনি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কায়েসুর রহমান জানান, ভূমি কার্যালয়গুলোতে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়টি জানা নেই তার। এ নিয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শুনানির আগেই আবেদন নামঞ্জুর করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুনানির জন্য সফটওয়্যারের নির্দেশ অনুযায়ী সেবা গ্রহীতাদের মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা যায়। তার সঙ্গে অফিসের তারিখের অনেক সময় মিল থাকে না। তাই উভয় ক্ষেত্রে তারিখের ভিন্নতার কারণে সেবা গ্রহীতা অফিসে উপস্থিত না থাকলে এবং কাগজপত্রে ত্রুটি থাকলে তা নামঞ্জুর করা হয়।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার
৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান
তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা
শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত
গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়
ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম
যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা
মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী
প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন
বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা