বরিশাল মহানগরীর শান্তি বিনোদনের ভরসাস্থল বঙ্গবন্ধু উদ্যান’টি অস্বস্তির জায়গায় পরিনত হয়েছে

Daily Inqilab বরিশাল ব্যুরো

১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:০৬ এএম | আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:০৬ এএম

বরিশাল মহানগরীর ‘বঙ্গবন্ধু উদ্যান’টির সার্বিক পরিবেশ এবং রক্ষনাবেক্ষন ও উন্নয়ন নিয়ে নগরবাসীর মনে এখন নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রাত ও বৈকালিক ভ্রমনকারী সহ নগরবাসী একটু শ্রান্তি খুজতে ঐতিহ্যবাহী এ উদ্যানে গিয়ে এখন অস্বস্তির শিকার হচ্ছেন। ফরে বাড়ছে হতাশার সাথে ক্ষোবের পরিধিও। অসংখ্য পথ খাবারের দোকানের সাথে কিশোর গ্যাং ও বিবেকহীন কতিপয় মানুষের নানা অনৈতিক কর্মকান্ডে সুস্থ সামাজিক পরিবেশ মারাত্ম ভাবে বিপন্ন। সাম্প্রতিককালে মাঠের অভ্যন্তর ভাগেও বিভিন্ন ধরনের দোকানপাট দখল নিতে শুরু করেছে। এসব দোকানের নানা বর্জ্য মাঠের অভ্যন্তর সহ পাশের ডিসি লেকে ফোলায় প্রায়ই লেকটির পানি দুষিত হয় দূর্গন্ধ ছড়ায়। এমনকি সম্প্রতি মাঠের উত্তর প্রান্তে শতাধিক বছরের প্রাচিন বিশাল একটি রেইন-ট্রি গাছ মরে গেছে। রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে পুরো উদ্যানের নানা অবকাঠামো বিনষ্ট হচ্ছে। বিপুল অর্থ ব্যায়ে পুরো মাঠ আলোকিত করা হলেও এখন সেখানে সন্ধার পরে বেশীলভাগ বাতিই আলো ছড়ায় না। এ উদ্যানটির দেখভালের কেউ আছে বলেও দৃশ্যমান নয়।
শেষ বৃটিস যুগে তৎকালীন বাকেরগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসক মিঃ বেল প্রায় পৌনে ৯ একর সরকারী খাশ জমির ওপর এ উদ্যানেটি গড়ে তুলে ছিলেন। তখন তার নাম অনুসারেই উদ্যানটির নামকরন করা হয় ‘বেল পার্ক’। তবে গনপূর্ত বিভাগ এ পার্কটির মালিকানা সহ তার তত্বাবধানের দায়িত্ব লাভ করে। যদিও বছর কয়েক আগে উদ্যানটির দুই দিকে জেলা প্রশাসন থেকে নকশা খচিত বিশাল প্রস্তর খন্ডে ভূমির মালিক ‘বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসক’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
১৯৭৩ সালের মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধিন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম বরিশাল সফরকালে একটি সুন্দর নান্দনিক উদ্যান গড়ে তোলার লক্ষে ‘বঙ্গবন্ধু উদ্যান’র ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। বিশাল এ ময়দানে ইতোপূর্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়াও শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, শেখ হাসিনা, বেগম খালেদা জিয়া, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এমএজি ওসমানী, ড. কামাল হোসেন, এইচএম এরশাদ সহ বিভিন্ন জাতীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রেখেছেন।
২০০৪ সালে তৎকালীন সিটি মেয়র মুজিবুর রহমান সারোয়ারের উদ্যোগে সরকারী প্রায় ৩ কোটি টাকা সংগ্রহ করে গনপূত অধিধপ্তরের মাধ্যমে উদ্যানটির চারিধারে ওয়াকওয়ে, বসার জন্য বেঞ্চি, ছাতা সহ শৌচাগার ও বিশ্রমাগার নির্মান ছাড়াও পুরো উদ্যানটি যুড়ে দৃষ্টি নন্দন লাইটিং-এর ব্যবস্থা করা হয়। পাশাপাশি শোভা বর্ধনের জন্য পুরো মাঠের চার ধারে গাছও লাগান হয়েছিল। সে থেকে উদ্যানটির পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব গ্রহন করে সিটি করপোরেশন। প্রতিদিনই এ উদ্যানে সকাল-বিকেল প্রচুর লোক হাটতে ও শ্রান্তি বিনোদনে আসতেন।
২০১১ সালে তৎকালীন সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরন গনপূর্ত মন্ত্রনালয় থেকে তহবিল সংগ্রহ করে উদ্যানটিতে দ্বিতীয় ওয়াকওয়ে এবং পূর্ব পাশের্^ বঙ্গবন্ধুর মুড়াল স্থাপন করেন। পাশাপাশি উদ্যানটির পূর্বপাশের নালাটি সংস্কার করে সেখানে শাপলার আবাদ করা ছাড়াও সংলগ্ন বাঁধ রোডে পাকা ফুটপাথ নির্মান সহ সোনালু গাছ লাগান হয়। যা এখনো নগরবাসীর চোখ যুড়ায়।
দ্বিতীয় দফায় সংস্কারের পরে উদ্যানে প্রাত ও বৈকালিক ভ্রমনকারীর সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেলেও গত কয়েক বছর ধরে ভ্রমনকারীর চেয়ে আড্ডাবাজদের ভীড় আশংকাজনক হারে বেড়ে গেছে। সাথে উদ্যানটির পুরো উত্তর পাশ যুড়ে নানা ধরনের পথ খাবারের দোকান আড্ডাবাজদের জন্য বাড়তি সুবিধা সৃষ্টি করছে।
পাশাপাশি পুরো বঙ্গবন্ধু উদ্যানের মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষনে গত কয়েক বছর ধরে গনপূর্ত বিভাগ ও নগর ভবনের নুন্যতম কোন উদ্যোগ নেই। বছর চারেক আগে উদ্যানটির পূর্ব পাশের দেয়ালের ওপর থেকে একটি বিশাল এসএস পাইপ ভেঙে একাংশ মাটিতে পড়ে আছে। দক্ষিণ ও পশ্চিম পাড়ের গ্রীলের বেশীরভাগই দেয়াল থেকে খশে পড়ে আছে। সম্পতি পশ্চিম পাশের দেয়ালের ওপর গ্রীলগুলোও খুলে পড়ে গেছে। গত কয়েক বছর ধরে উদ্যানটির উত্তর প্রান্তে বৃক্ষমেলা আয়োজন করতে গিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বালু ফেলায় মাঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই ওয়াকওয়ে ডুবে যাচ্ছে। কিন্তু এসব বিষয় দেখার কেউ নেই। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ উদ্যানে জনসভায় বক্তব্য রাখেন। তার পরে আর উদ্যানটির কোন স্থাপনার মেরামত, রক্ষনাবেক্ষন ও সংস্কার হয়নি। শুধুমাত্র সিটি করপোরেশনের কয়েকজন শ্রমিক ওয়াকওয়ে ঝাড়ু দেয়া ছাড়া কাউকে এখানে দেখা যায়না।
এমনকি উদ্যানের অভ্যন্তরে এখন আগের সুস্থ সামাজিক পরিবেশও অনেকটাই বিপন্ন। উদ্যানটির ওয়াকওয়েতে নারী-পুরষ এখন আর নির্বিঘেœ, নির্ভরতার সাথে হাটতে আস্থা রাখতে পারছেন না। প্রতিদিনই বিপুল সংখ্যক বখাটে ও স্কুল-কলেজ পড়–য়া (?) ছেলে মেয়েদের অনৈতিক বিচরনে গোটা উদ্যানটির পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। অনেক হায়াহীন ছেলে মেয়েদের প্রেমের লীলাভূমিতে পরিনত হয়েছে এ উদ্যান। পড়ার টেবিল ছেড়ে গভীর রাত পর্যন্ত কতিপয় ছাত্র-ছাত্রীর অনৈতিক বিচরনে উদ্যানের সামাজিক পরিবেশ বিপন্ন হলেও তা দেখার কেউ নেই।
বঙ্গবন্ধু উদ্যানেই প্রতিবছর ‘বৃক্ষ মেলা’য় বিভাগ ও জেলার শীর্ষ কর্মকর্তা সহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও পরিবেশের জন্য বৃক্ষ রোপনের অপরিহার্যতা নিয়ে অনেক ভাল কথা বলেন। কিন্তু সে মেলার পড়ে অনেকেই নিজেদের উপদেশের কথাই মনে রাখেন না। গত কয়েক বছরে বঙ্গবন্ধু উদ্যান ও সংলগ্ন সড়ক থেকে অনেক গাছ বিলুপ্ত হলেও কেউ নতুন করে একটি গাছও রোপন করেন নি। আমেনকি বঙ্গবন্ধু উদ্যানের অভ্যন্তরে অনেক গাছ ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে।
এ ব্যাপরে গনপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর সাথে কথা বলতে তাদের সেল ফোনে যোগাযোগের বহু চেষ্টা করে তা সম্ভব হয়নি। ১০-৯-২০২৩.
উন্নয়ন দূরের কথা, যথাযথ রক্ষনাবেক্ষন ও নজরদারীর অভাবে বরিশালের ঐতিহ্যবাহী বঙ্গবন্ধু উদ্যান এখন আর নগরবাসীর শ্রান্তি বিনোদনের স্থান নেই।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
জমকালো আয়োজনে পালিত হলো বান্দরবান সেনাবাহিনীর ৬৯ ব্রিগেডের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
আরও

আরও পড়ুন

প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস

প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস

৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়

৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়

বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়

বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়

ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড

ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড

গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ

গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ

এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ

এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ

আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?

আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?

হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে

হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে

ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন

ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন

দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা

দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা

নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই

নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই

ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে

ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে

বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম

বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম

সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা

সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা

সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ

সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ

৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার

৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার

সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী

সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী

মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন

মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন

বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার

বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার

জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক

জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক