সেন্টমার্টিন ঘিরে মহাপরিকল্পনা -নিষিদ্ধ হচ্ছে বহুতল স্থাপনা -সীমিত হচ্ছে পর্যটক যাতায়াত
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:৫১ পিএম | আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৪:১৯ পিএম
দেরিতে হলেও মহাপরিকল্পনার আওতায় আসছে সেন্টমার্টিন। নিষিদ্ধ করা হচ্ছে বহুতল স্থাপনা। সীমিত করা হচ্ছে পর্যটক যাতায়াত। বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সর্বদক্ষিণে সাগরবক্ষে অবস্থিত গর্বের এই প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। এটি অবশ্যই বাংলাদেশের একটি বড় সম্পদ। এটি টেকনাফ উপজেলার একটি ইউনিয়ন। কক্সবাজার শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরত্বে ১৭ বর্গকিলোমিটারের ক্ষুদ্র এ দ্বীপটির অবস্থান। এটি স্থানীয়ভাবে আদি নাম নারিকেল জিঞ্জিরা বলে পরিচিত। স্বাধীনতার পর থেকে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন পরিচিতি পেলেও পর্যটনের সুবাদে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। তাই প্রতিবছর পর্যটন মৌসুমে দেশী বিদেশী হাজারো পর্যটক হুমড়ি খেয়ে পড়েন সেন্টমার্টিনে।
এই সেইদিনও টেকনাফ-সেন্টমার্টিন সাগর পথে যাতায়াতের মাধ্যম ছিল ইঞ্জিন চালিত কাঠের বোট। সম্প্রতি পর্যটনের সুবাদে এই সাগর পথে যুক্ত হয়েছে দুই ডজনেরও বেশি আধুনিক জাহাজ। এসব জাহাজে পর্যটন মৌসুমে যাতায়াত করে লাখ লাখ পর্যটক। এসুযোগে উচ্চতর আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ক্ষুদ্র এদ্বীপে গড়ে উঠে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত বহুতল ভবন ও অসংখ্য স্থাপনা। পাশাপাশি অতিরিক্ত পর্যটকের চাপে হুমকীর মুখে পড়ে দ্বীপের পরিবেশ প্রতিবেশ।
তাই প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনকে ঘিরে সরকার একটি মহপরিকল্পনা করেছে বলে জানা গেছে।
মালদ্বীপের আদলে আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলার জন্য মাস্টার প্ল্যানের আওতায় আনা হচ্ছে সেন্টমার্টিনকে। একই সঙ্গে পর্যটন শিল্পকে ঘিরে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনকে সাজানো উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে। প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করতে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিনে সি-প্লেনেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যাতে করে সারা বছরই পর্যটকরা সেন্টমার্টিনে যেতে পারেন। তবে তাতে পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় পর্যটক সংখ্যা
সীমিত রাখা হবে। এজন্য সেন্টমার্টিন ভ্রমণকারী পর্যটকদের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমের কাছে এমন তথ্য জানিয়েছেন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) চেয়ারম্যান কমোডর মোহাম্মদ নুরুল আবছার।
তিনি বলেন, আগে বছরে ৪-৫ মাস (পর্যটন মৌসুমে) সেন্টমার্টিনে যাওয়া যেত। সি-প্লেন ও ক্রুজ চালু করা হলে পর্যটকরা সারাবছর সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন। সীমিত পর্যায়ে হলেও সারাবছর তো সেন্টমার্টিন যাওয়া যাবে। কমোডর মোহাম্মদ নুরুল আবছার বলেন, অপরিকল্পিতভাবে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে এখন পর্যন্ত যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে। এর ফলে সেন্টমার্টিন দ্বীপটা আস্তে আস্তে সৌন্দর্য হারাচ্ছে। এজন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় দ্বীপকে সুরক্ষায় জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় একটা গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে সেন্টমার্টিনে দ্বীপে আর স্থাপনা নির্মাণ করতে দেয়া হবে না। সরকারি প্রতিষ্ঠানও দ্বীপে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের জন্য কোন ধরনের স্থাপনা করবে না।
চেয়ারম্যান আরো বলেন, প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের সব উন্নয়ন একটি মাস্টার প্ল্যানের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। সেন্টমার্টিনে কিভাবে পরিবেশবান্ধব স্থাপন করা যায়, পর্যটকদের জন্য কীভাবে ভালো বিনোদনের ব্যবস্থ করা যায় এবং টেকসহ পদ্ধতিতে কিভাবে অন্য সুযোগ-সুবিধ বাড়ানো যায় এ জন্য পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, মালদ্বীপের রিসোর্ট গ্রুপগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, তাদের কাছ থেকে কারিগরি পরামর্শ নিয়ে সেন্টমার্টিনকে কীভাবে আকর্ষনীয় করে সাজানো যায় তারও চেষ্টা করা হচ্ছে।
সেন্টমার্টিনে পরিবেশগত ক্ষতির দিকগুলো তুলে ধরে কউক চেয়ারম্যান বলেন, এখন পর্যটকরা সেন্টমার্টিনে গিয়ে যত্রতত্র ময়লা-আর্বজনা ফেলা, পরিবেশ নষ্ট করাসহ রাতের বেলা আলোকিত করে গান-বাজনা করে থাকেন। এতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন তো হারিয়ে যেতে পারে বা সৌন্দর্য্য নষ্ট হয়ে যাবে। তিনি বলেন, কাছিমগুলো পানিকে পরিষ্কার করার জন্য কাজ করে। একেকটা কাছিম শতবছর ধরে বাঁচে। এসব কাছিম কিন্তু যেখানে মানুষজনের যাতায়াত কম, শব্দ বা আলো কম সেখানে বসবাস করে। সেন্টমার্টিনে পর্যটকের যাতায়াত বেড়ে যাওয়া, গান-বাজনা করা ও দ্বীপে রাতের বেলা আলো জ্বালানোর কারণে কিন্তু কাছিমরা আর সেখানে অবস্থান করছে না। একটা কাছিমের দাম যদি ১ কোটি বা ২ কোটি টাকা ধরা হয় তাহলে কয়েক'শ কোটি টাক আমাদের লোকসান হচ্ছে। এ জন্য সেন্টমার্টিনে দ্বীপে পর্যটকের যাতায়াত সহনীয় পর্যায়ে আনতে হবে। তাই সরকার উদ্যোগ নিয়েছে পর্যটকদের রেজিস্ট্রেশন করে সেন্টমার্টিনে যেতে হবে। যাতে করে সীমিত সংখ্যক পর্যটক পর্যটন মৌসুমে সেন্টমার্টিনে যেতে
পারে।
তবে পর্যটন ব্যবসায় জড়িত ট্যুর অপারেটর গ্রুপগুলো সেন্টমার্টিনে পর্যটক সীমিত করণের প্রতিবাদ করে আসছিল কয়েক বছর ধরে। তাদের মতে এটি গোষ্ঠী বিষেশের স্বার্থ রক্ষার ষড়যন্ত্র।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
রাহাত ফতেহ আলী খানের সম্মানে পাকিস্তান হাইকমিশনারের নৈশভোজ আয়োজন
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে কাপ্তাই ভূমিকা রেখেছিলো, আগামীতেও রাখবে : ঢাবি শিবির সেক্রেটারি
সুন্দরবনকেন্দ্রিক দস্যুতা বন্ধে পুলিশের নজরদারি বৃদ্ধি করা হচ্ছে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত
মায়োতে সাইক্লোন চিডোর ধ্বংসযজ্ঞে ফ্রান্সে জাতীয় শোক
সাড়ে ৪মাস পর হিলিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত নাঈমের লাশ কবর থেকে উত্তোলন
কলাপাড়ায় অগ্নিকান্ডে দু'টি দোকান পুড়ে ছাই
গাছ আর জিও ব্যাগ পেয়ে খুশি খুলনার ছাদবাগানীরা
খুলনায় একাধিক মামলার আসামী সন্ত্রাসী রকি গ্রেপ্তার
টাঙ্গাইলে সুবিধা বঞ্চিত গরীব অসহায়দের শীতবস্ত্র বিতরণ
রাজবাড়ীতে পদ্মা নদীর এক বোয়াল ৫২ হাজারে বিক্রি
অচিরেই বিলুপ্ত হবে নেতানিয়াহু শাসন, হুমকি হুতি প্রধানের
এলন মাস্ক কি প্রেসিডেন্ট হতে পারেন? ট্রাম্প বললেন ‘অসম্ভব’
নাটোরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় চালকসহ এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নিহত
এবার সাদপন্থিদের ১০ দফা দাবি
সা'দ পন্থীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও আশুলিয়া থানায় স্মারক লিপি প্রদান
লক্ষ্মীপুরে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু
পার্লামেন্টে আপত্তিকর মন্তব্যের জেরে বিজেপি নেতা শুভেন্দুকে জুতোপেটা
সিকদার গ্রুপের ১৫ প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ
শীতের তীব্রতায় বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ,বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা
চিরিরবন্দরে আগাম জাতের আলুর ভালো ফলন ও দাম পেয়ে কৃষকেরা খুশি