ফরিদপুরে ডেঙ্গু পরিস্থিতির চরম অবনতি প্রচন্ড স্যালাইন সংকট রক্তের চাহিদাও বাড়ছে
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৩৬ পিএম | আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
ফরিদপুরে ডেঙ্গু পরিস্থিতির চরম অবনতি অব্যাহত রয়েছে। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলছে।
প্রতিদিনই হু হু করে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী সংখ্যা। ডেঙ্গুতে আক্রান্তের পাশাপাশি বেড়েছে মৃত্যুর হার। কোনোভাবেই যেন থামানো যাচ্ছেনা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর মিছিল। হাসপাতালগুলোতে চলছে শয্যাসংকট। অনেক রোগীকে মেঝেতে-বারান্দায়, রাস্তায় বিছানা পেতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে চরম সংকট দেখা দিয়েছে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় শিরায় দেওয়া অপরিহার্য (আইভি) স্যালাইনের। এ ছাড়াও কয়েক গুন বেড়েছে রক্তের চাহিদা।
খবর নিয়ে জানাগেছে, জেলা-উপজেলার বিভিন্ন হাসপাতালের পাশাপাশি শিরায় দেওয়া স্যালাইনের সংকট দেখা দিয়েছে ওষুধের দোকানগুলোতেও। বাইরে থেকে স্যালাইন কিনতে রোগীর স্বজনদের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। অধিকাংশ ফার্মেসীতে মিলছে না কোনো স্যালাইন। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে একটা দুইটা মিললেও গোপনে বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। আবার স্যালাইন না পেয়ে অনেকেই ফিরছেন খালি হাতে।
চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে রক্তের জলীয় অংশ কমে যায়। এতে রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি রক্তচাপ কমে যায়। রক্তের তারল্য ঠিক রাখতে ও রক্তচাপ স্থিতিশীল রাখতে রোগীকে স্যালাইন দিতে হয়। একজন রোগীকে দিনে এক থেকে দুই লিটার, কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর বেশি স্যালাইন দেওয়া প্রয়োজন হয়। ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় সাধারণত দশমিক ৯ শতাংশ সোডিয়াম ক্লোরাইড স্যালাইন রোগীর শরীরে পুশ করতে হয়। এটাকে ‘নরমাল স্যালাইন’ বলা হয়।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানাযায়,গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৬৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৮০২ জন। জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৮ হাজার ১৬৩ জন। এর মধ্যে সাত হাজার ৩৩১ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন। হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৩০ জন রোগী।
ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল,ডায়াবেটিস হাসপাতাল,মুজিব সড়কসহ বিভিন্ন উপজেলার হাসপাতালের সামনে অন্তত বিশটি ঔষধের দোকানে খোঁজ নিয়ে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত শিরায় দেওয়া স্যালাইন পাওয়া যায়নি। দোকানদারেরা জানিয়েছেন, গত প্রায় মাস খানেক ধরে ওই স্যালাইনের প্রচুর চাহিদা দেখা দিয়েছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় একেবারেই সরবরাহ নেই। তাই রোগীদের ফেরৎ দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। যাও সামান্য পরিমান সরবরাহ পাওয়া যায় তা চাহিদার তুলনায় খুবই সামান্য।
বোয়ালমারী উপজেলা সদরে অবস্থিত ভাবনা ফার্মেসীতে স্যালাইন ক্রয় করতে আসা মোঃ আসলাম শেখ বলেন, জেলা শহরের হাসপাতাল ছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু রোগীর ব্যাপক চাপ। হাসপাতালে শয্যা সংকট। স্যালাইন সংকট। বাজারের প্রায় দশটি দোকান খোঁজ করেও এক ব্যাগ স্যালাইন পাইনি। যে দোকানেই যাই সেখানে স্যালাইন নেই।
ফরিদপুর মেডিকেল হাসপাতাল এলাকায় ফার্মেসিতে স্যালাইন কিনতে আসা নজরুল ইসলাম বলেন, তার চাচা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। হাসপাতালে স্যালাইন নেই। বাইরে থেকে কিনতেও পারছিনা। অন্তত ১৫ টি ফার্মেসী ঘুরে এক ব্যাগ স্যালাইন পেয়েছি। এরপরও যদি স্যালাইন দরকার হয় তাহলে কোথায় পাবো ভাবছি।
এ ব্যপারে ফরিদপুরের কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতি মাজহারুল আলম চঞ্চল বলেন, শুধু ফরিদপুর নয়, সারা দেশেই ডেঙ্গু চিকিৎসায় ব্যবহৃত স্যালাইনের সংকট দেখা দিয়েছে। ফরিদপুরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পেয়েছে। গত প্রায় মাস খানেক ধরে স্যালাইনের সংকট চরম আকার ধারণ করছে। কোম্পানিগুলো স্যালাইন দিতে পারছে না। এখানে কোন সিন্ডিকেট নেই। কোনো ঔষধ ব্যবসায়ী নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম নিচ্ছেন না।
এ ব্যপারে কয়েকটি সামাজিক সংগঠনের সদস্য ও গরীবের বন্ধু হিসেবে পরিচিত সুমন রাফি বলেন, হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ভরা। ডেঙ্গু রোগীর জন্য স্যালাইন সংকট ও রক্তের চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। রোগী ও স্বজনদের মধ্যে হাহাকার চলছে।
এ ব্যপারে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকার ঔষধ ব্যবসায়ী পাংশা ড্রাগ এন্ড সার্জিক্যালের মালিক আকবর বিশ্বাস রাজু বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি খুবই খারাপ। গত প্রায় এক মাস ধরে স্যালাইন সংকট দেখা দিয়েছে। ডেঙ্গু রোগীর জন্য ১০০০ এম এল স্যালাইনের দাম মাত্র ৮৭ টাকা। এমন পরিস্থিতি টাকাও মিলছে না। কোম্পানির লোকজন চাহিদা মতো ডেঙ্গু রোগীর জন্য স্যালাইন দিতে পারছে না।
এ বিষয়ে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ সোহেল শেখ বলেন, ডেঙ্গু রোগীর জন্য ডিএনএস স্যালাইনের দাম নিয়ন্ত্রণে ফার্মেসীসমূহে নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। গত দুই দিন আগে দাম বেশি নেওয়ায় কয়েক ফার্মেসী মালিককে জরিমানা করা হয়েছে। ফার্মেসী মালিকরা স্যালাইনের সরবরাহ ও সংকটের কথা জানিয়েছেন। তবে অভিযান পরিচালনা পরিচালনা করা হলেও স্যালাইনের দাম বেশি নেয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭
মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল
মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি
উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা
ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
পানামা খাল দখলের হুমকিকে ভর্ৎসনা পানামা প্রেসিডেন্টের
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা