শাল্লায় বিদ্যুৎবিহীন পাঁচ গ্রাম ভেস্তে গেলো ৩২ কোটি টাকার প্রকল্প
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:৪২ পিএম | আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:৪২ পিএম
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা। তবে গত ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার পর থেকে অন্ধকারে উপজেলার হবিবপুর ইউনবয়নের পাঁচটি গ্রাম। আগুয়াই,মৌরাপুর,দত্তপাড়া,শাসখাই ও বিলপুর এই পাঁচ গ্রামে বিদ্যুৎ না থাকায় বিপাকে পড়েছে হাজারো মানুষ।
উপজেলার এই পাঁচ গ্রামে বন্যার আগে রহিম আফরোজ সোলার বিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় ছিল। তখনও সারাদিনে ৩-৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ পেত এলাকাবাসী।ভয়াবহ বন্যায় ৩২ কোটি ব্যয়ে স্থাপিত সোলার প্রকল্পটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।প্রকল্পটি পুনরায় চালু না করায় এই ৩২ কোটি টাকা ভেস্তে গেছে বলে মনে করে স্থানীয়রা।
জানা যায়, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ও বন মন্ত্রনালয়ের অর্থায়নে ঠিকাদারি সোলার প্রতিষ্ঠান রহিম আফরোজ ২০১১ সালে ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪০০ কিলোওয়াট সোলার বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ পায়।ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রহিম আফরোজের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তায়ন করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর ভার্চ্যুয়ালি সোলার প্রকল্পর শুভ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু এত টাকার প্রকল্প দিয়ে কতৃপক্ষ কোনধরণের সফলতা দেখাতে পারেনি! প্রকল্পটি এলাকার মানুষের কোন উপকারে আসেনি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
২০১৭ সাল থেকে ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার পূর্ব পর্যন্ত সরকারের দেওয়া রহিম আফরোজ সৌর বিদ্যুতের আওতায় ছিলেন এসব গ্রামের লোকজন। কিন্তু ভয়াবহ বন্যায় সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের সবকিছু তছনছ করে ফেলে। বন্যার সময় থেকে এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎবিহীন মানবেতর জীবনযাপন করছে উপজেলার পাঁচটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ।
দিরাই পিডিবি অফিস সুত্রে জানা যায়,বন্যায় ক্ষতির পরিমান ব্যাপক।এটি মেরামত করতে হলে অনেক টাকা বরাদ্দ প্রয়োজন। তাই এটি আর পুনরায় চালু সম্ভব নয়।
এদিকে সোলার থেকে বিদ্যুৎ পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় এবং পল্লী বিদ্যুৎ থেকে সংযোগের আশায়, দিরাই পিডিবি অফিসে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের বকেয়া বিলসহ সব মিটার জমা দিয়েছে গ্রাহকেরা। সোলার প্রকল্পের বকেয়া বিলসহ মিটার জমা দিলে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে আসছিলেন দিরাই পিডিবি অফিস।কিন্তু পিডিবি কতৃপক্ষের কথা ও কাজে বলে জানান এলাকাবাসী। তবে দিরাই পিডিবি অফিসের দাবি কিছু সংখ্যক গ্রাহকেরা এখনো বকেয়া পরিশোধ করেনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,দীর্ঘদিন বিদ্যুৎ না থাকায় এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা সহ সর্বক্ষেত্রে সমস্যা পড়তে হচ্ছে এলাকাবাসীর।সোলার প্রকল্পের ভেতরে গরু-ছাগল বসবাস করছে। খুঁটির সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। কোনো জায়গায় উপড়ে পড়ে রয়েছে বৈদ্যুতিক লাইন, কোনো জায়গায় তা মানুষের মাথা স্পর্শ করছে। দীর্ঘদিন সৌর প্রকল্পটি বন্ধ থাকায় প্রকল্পের অধিকাংশ যন্ত্রপাতি বিকলের পথে। স্থানীয়রা বলছেন এখানে শুধু শুধু সরকারের অর্থের অপব্যবহার করা হয়েছে। সরকারের ৩২ কোটি টাকার প্রকল্প স্থানীয়দের কোন কাজেই আসেনি বলে জানান তারা।
এদিকে পল্লী বিদ্যুতের খুঁটি টানানো হয়েছে এই পাঁচ গ্রামে। কিন্তু পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ পাচ্ছেন না গ্রাহকেরা। কেন সংযোগ পাচ্ছে না এ প্রশ্নের জবাব পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা।
তবে বিভিন্ন সূত্রেমতে, সোলার প্রতিষ্ঠান রহিম আফরোজ কতৃপক্ষ যতদিন না তাদের এরিয়া ছেড়েছে বা যতদিন পর্যন্ত তারা অনুমতি না দিবে ততদিন পর্যন্ত পল্লী বিদ্যুতের খুঁটি টানানো থাকবে বাট সংযোগ দেয়া হবে না।
এবিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী বলেন,সরকারের উন্নয়নের শুধু গল্প শুনি।আমাদের শাল্লা উন্নয়নের কোন ছোঁয়া লাগেনি।এই ডিজিটাল বাংলাদেশে কিভাবে আমরা দেড় বছর ধরে বিদ্যুৎ ছাড়া আছি।মোবাইলটা পর্যন্ত চার্জ দেয়া অনেকের জন্য কঠিন।নবজস্ব অর্থায়নে কেউ কেউ সৌর বিদ্যুৎ এনে চলছে।তীব্র তাপদাহে আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে।সন্ধ্যার পরে ছেলে-মেয়েরা মোমবাতি বা হারিকেনের আলোতে পড়তে হচ্ছে।আশা করবো অচিরেই বিদ্যুৎ সংযোগ দিবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
শাসখাই বাজারের ব্যবসায়ী বাদল চন্দ্র দাস বলেন,বিদ্যুৎ না থাকায় আমরা দিনের আলো ছাড়া ব্যবসা করতে পারছি না। সন্ধা হলেই দোকান বন্ধ করে বাড়িতে চলে যেতে হয়। বিদ্যুৎ না থাকায় আমরা সাধারণত কোন একটা কাগজ ফটোকপি করতে হলেও উপজেলা সদরে যেতে হয়। বর্তমান সময়ে এমনিতেই তাপমাত্রা বেশি তারপর বিদ্যুৎ না থাকায় গরমে আমাদের জনজীবন মারাত্মক ভোগান্তিতে রয়েছে।
এবিষয়ে ২নং হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুবল চন্দ্র দাস বলেন, এই পাঁচ গ্রামের মানুষ বিদ্যুতের জন্য চরম সংকটময় সময় অতিক্রম করছে। আমরা এলাকাবাসীর স্বাক্ষর নিয়ে একটা রেজুলেশন তৈরি করতেছি সেটা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে জমা দেব। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যেই সেখানে পল্লী বিদ্যুতের লাইন পাওয়া যাবে।
শাসখাই এলাকার সৌর সোলার প্রকল্পটি পিডিবি’র অধীনে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে থাকায় দিরাই শাখার আবাসিক প্রকৌশলী পরশু রাম তালুকদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন মাস খানেক হয় আমি এখানে এসেছি। এব্যাপারে আমার সব তত্ত্ব জানা নেই।
পল্লী বিদ্যুৎ দিরাই সাব-জোনাল অফিসের এজিএম মো. নুরুল ইসলাম এই বলেন পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ সেখানে দেওয়া যাচ্ছে না। এটা মন্ত্রনালয়ের ব্যাপার। তিনি বলেন উপর মহল থেকে কোন সুপারিশ বা নির্দেশনা আসেনি। মন্ত্রনালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে আমরা বিদ্যুতের লাইন মেইনটেইন করে সংযোগ দিতে পারবো।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭
মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল
মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি
উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা
ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
পানামা খাল দখলের হুমকিকে ভর্ৎসনা পানামা প্রেসিডেন্টের
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা