কক্সবাজারে আরসা’র শীর্ষ সন্ত্রাসী ও গান কমান্ডারসহ গ্রেফতার -৪, বিস্ফোরক ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:২৭ পিএম | আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:২৭ পিএম
কক্সবাজারের উখিয়া পালংখালী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের তেলখোলা-বরইতলী পাহাড়ের রাস্তার মুখোমুখ এলাকায় এক অভিযানে সন্ত্রাসী সংগঠন ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি' (আরসা) এর শীর্ষ সন্ত্রাসী ও গান কমান্ডার রহিমুল্লাহ প্রকাশ মুছাসহ ৪জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব ১৫।
বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২ টার দিকে কক্সবাজার র্যাব ১৫ এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের নাগরিক এবং পার্শ্ববর্তী দেশের সন্ত্রাসী সংগঠন ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি' (আরসা) এর শীর্ষ নেতা ও ২জন বাংলাদেশের নাগরিক গ্রেফতার আরসা’র শীর্ষ নেতারা বালুখালী শরণার্থী ক্যাম্প ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহে খুন, অপহরণ, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা,চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকে।
তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য তারা পার্শ্ববর্তী দেশ হতে দূর্গম সীমান্তবর্তী অঞ্চল দিয়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য চোরাচালান করতো বলে জানা যায়। বাংলাদেশী নাগরিক শফিক ও সিরাজ উদ্ধার করা বিস্ফোরক দ্রব্য কৌশলে সীমান্তবর্তী অঞ্চল দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে নিয়ে এসে নিজেদের কাছে সংরক্ষণ করতো এবং সুবিধাজনক সময়ে আরসা’র সন্ত্রাসীদের নিকট সরবরাহ করতো বলে জানা যায় ।
উদ্ধার হওয়া বিস্ফোরক দ্রব্যে ক্লোরেট্স, ব্রোমেটস, পটাশিয়াম ও হেক্সামিথাইলিন টেট্রামাইন জাতীয় রাসায়নিক উপাদানের উপস্থিতি পাওয়া গেছে যা গান পাউডার বা উচ্চ বিস্ফোরক হিসেবে ব্যবহার হতে দেখা যায়। উপাদানসমূহ বিস্ফোরনের সময় সহায়ক হিসেবে অতি অল্প সময়ে বড় ধরণের অগ্নিকান্ড সংঘঠিত করতে সক্ষম। বিস্ফোরক দ্রব্যের মাধ্যমে বোমা প্রস্তুত করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য শরণার্থী শিবিরে হামলা, অগ্নিসংযোগ এর উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতো বলে জানা যায়।
গ্রেফতার রহিমুল্লাহ তার দলের সদস্যদের মাধ্যমে শরণার্থী শিবির ও স্থানীয় জনগণের নিকট হতে খুন, অপহরণ ও গুমের ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবি করতো। চাঁদার অর্থ না পেলে ভিকটিমকে অপহরণপূর্বক শারীরিক ও পাশবিক নির্যাতনসহ মুক্তিপণ আদায় করত। মুক্তিপণ না পেলে তারা ভিকটিমকে খুন করে গহীন পাহাড়ে অথবা জঙ্গলে লাশ গুম করতো বলে জানা যায়।
সীমান্তবর্তী অঞ্চল দিয়ে ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরণের মাদক বাংলাদেশে পরিবহণ এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির ও সংলগ্ন এলাকাসমূহে সংরক্ষণের কাজে মাদক ব্যবসায়ীদের নির্দিষ্ট চাঁদার বিনিময়ে এই সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্যরা সহযোগিতা করতো বলে জানায় র্যাব। তারা সন্ত্রাসী কার্যক্রম শেষে পাহাড়ে গহীন জঙ্গলে আত্মগোপনে চলে যেত। তাদের অত্যাচারে শরণার্থী শিবিরের শরণার্থীরা সবসময় ভীত সন্ত্রস্ত থাকতো। কেউ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে তারা তাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করতো বা অপহরণের পর লাশ গুম করতো বলে জানা যায়। তারা বেশ কয়েকদিন ধরে আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে উখিয়ার তেলখোলা-বরইতলী গহীন পাহাড়ে অবস্থান করছিল বলে জানা যায় ।
গ্রেফতারের মধ্য রয়েছে, সন্ত্রাসী সংগঠন ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি' (আরসা) এর শীর্ষ সন্ত্রাসী ও বালুখালী রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প-১৮ এর অন্যতম কমান্ডার ও আরসার জিম্মাদার হাফেজ আহমদের ছেলে রহিমুল্লাহ প্রকাশ মুছা (২৭), ক্যাম্প-৪ এর আরসার অন্যতম কমান্ডার বদি আলমের ছেলে মাস্টার শামছুল আলম (২৯) তারা হলেন মিয়ানমার থেকে আগত পুরাতন রোহিঙ্গা।
এদের সাথে বাংলাদেশী নাগরিক সহযোগি হিসাবে কাজ করেছেন উখিয়া পালংখালী এলাকার মোঃ জাফর আলম ছেলে মোঃ শফিক (২৮) ও মৃত আব্দুস সালামের মোঃ সিরাজ (৩০)।
তাদের কাছে উদ্ধার করা হয় ৩৬ কেজি ৭৮০ গ্রাম বিস্ফোরক’সহ সর্বমোট ৪৩ কেজি ৩১০ গ্রাম বিস্ফোরক দ্রব্য, ১টি বিদেশী পিস্তল,২টি ওয়ানশুটারগান, ৪টি পিস্তলের বুলেট, ৩টি ওয়ানশুটারগানের বুলেট এবং ২টি বাটন মোবাইল ফোন । প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা উদ্ধারকৃত বিস্ফোরক সংক্রান্ত এবং সন্ত্রাসী সংগঠন ‘আরসা’র সাথে সংশ্লিষ্ট থেকে খুন, অপহরণসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত থাকার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরো বলেন, গ্রেফতার রহিমুল্লাহ প্রকাশ মুছা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেন, সে মিয়ানমারের নাগরিক ২০১৭ সালে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশপূর্বক শরণার্থী ক্যাম্পে অবস্থান করেছে। বাংলাদেশে এসে প্রথমে সে মিয়ানমারে থাকা তার আত্মীয় স্বজনদের মাধ্যমে বিভিন্ন কৌশলে বাংলাদেশে ইয়াবার চালান নিয়ে এসে নিজে এবং তার সহযোগিদের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিত। পরবর্তীতে সে ২০১৮ সালে আরসা’র নেতা খালেদের মাধ্যমে ‘আরসা’ এ যোগ দেয় এবং আরসার সন্ত্রাসী গ্রুপের বিভিন্ন কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে অস্ত্র, গোলাবারুদ সরবরাহ, অপহরণ, খুন, ক্যাম্পের আধিপত্য নিজ কুক্ষিগত করার লক্ষ্যে ক্যাম্পে গোলাগুলিসহ সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে। আরসা’র নেতা হাফেজ সাইফুল ইসলামের সাথে তার বিশেষ সখ্যতা রয়েছে। এছাড়াও আবু আনাস, মোহাম্মদ হাসান, খালেদসহ বেশ কিছু আরসা’র শীর্ষ নেতার সাথে তার পরিচয় ও সরাসরি যোগাযোগ ছিল বলে জানা যায়। সে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের দুর্গম সীমান্তবর্তী এলাকায় অস্ত্র ও বোমা বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে বলে জানা যায়। সে বোমা তৈরিতে ও অস্ত্র চালানায় বিশেষ পারদর্শী হওয়ায় আরসার গান কমান্ডার ও ক্যাম্প-১৮ এর জিম্মাদার হিসেবে দায়িত্ব পায়। সে আরসা’র অন্যান্য সদস্যদের বোমা তৈরি ও অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ দিত। তার নেতৃত্বেই বালুখালী শরণার্থী ক্যাম্প এর আরসার সদস্যরা খুন, টার্গেট কিলিং, অপহরণ, ডাকাতি,চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ধরণের অপরাধ কর্মকান্ড পরিচালনা করে। সে হেড মাঝি আজিম উদ্দিন হত্যাকান্ড, সাবমাঝি জাফর হত্যাকান্ড, এপিবিএন পুলিশের উপর হামলা, মাদ্রাসায় হামলা করে নৃশংসভাবে ৬ জন শিক্ষক ও ছাত্রকে হত্যা, জসিম হত্যাকান্ড, হেডমাঝি শফিক হত্যাকান্ড, মৌলভী সামশুল আলম হত্যাকান্ড, নুর হাসিম ও নূর হাবা হত্যাকান্ড, সাবমাঝি আইয়ুব হত্যাকান্ডসহ বিভিন্ন হত্যাকান্ডে জড়িত ছিল বলে জানা যায়। এছাড়াও ২০২২ সালের নভেম্বরে গোয়েন্দা সংস্থা ও র্যাবের মাদকবিরোধী যৌথ অভিযানের সময় সন্ত্রাসীদের হামলায় গোয়েন্দা সংস্থার একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিহত হন এবং একজন র্যাব সদস্য গুরুতর আহত হন। উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে সে জড়িত ছিল বলে জানা যায়। বিভিন্ন সময়ে অপহরণ/টার্গেট কিলিং শেষে কক্সবাজারের গহীন পার্বত্য এলাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে থাকতো বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে উখিয়া, নাইক্ষ্যংছড়িসহ বিভিন্ন থানায় হত্যা, অপহরণ, অস্ত্রসহ বিভিন্ন অপরাধে ১২ টির অধিক মামলা রয়েছে এবং বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়।
গ্রেফতার শামছুল আলম মাস্টার শামসু জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক। সে ২০১২ সালের শেষে দিকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশপূর্বক শরণার্থী ক্যাম্পে অবস্থান করে। সে ২০১৩ সালে ভুয়া পাসপোর্ট তৈরী করে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে গমন করে এবং ২০১৮ সালে পুনরায় বাংলাদেশে ফেরত এসে রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে অবস্থান করতে থাকে। সে ২০১৯ সালে মৌলভী জাবেদের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আরসা’য় যোগ দেয়। আরসা’য় যোগদানের পর সে অস্ত্র চালনা ও রণকৌশল সম্পর্কে প্রশিক্ষণ লাভ করে। পরবর্তীতে ক্যাম্প-৪ এর অন্যতম কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পায় । সে বিভিন্ন সময়ে আরসা’র শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনায় টার্গেট কিলিং, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় এবং মুক্তিপণ না পেলে হত্যাপূর্বক লাশ গুম করতো বলে জানা যায়। এছাড়াও সে শরণার্থী শিবিরে হেডমাঝি হোসেন ও কামাল হত্যাকান্ডে জড়িত ছিল বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে কক্সবাজার এর উখিয়া থানায় বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে এবং সে কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়।
তিনি আরো বলেন, গ্রেফতার বাংলাদেশি মোঃ শফিক কৃষি কাজের পাশাপাশি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। সে গ্রেফতার সিরাজের সহযোগিতায় পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে দুর্গম সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে বিস্ফোরক দ্রব্য এবং মাদক সংগ্রহ করে তার বাড়ীতে মজুদ রাখে। পরবর্তীতে সে গ্রেফতারকৃত সিরাজের মাধ্যমে বর্ণিত বিস্ফোরক দ্রব্য আরসা’র শীর্ষ নেতাদের নিকট সরবরাহ করতো বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম সদর থানায় মাদক সংক্রান্ত মামলা রয়েছে এবং দীর্ঘ দিন কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়। এবং মোঃ সিরাজ টমটম গাড়ী চালনার পাশাপাশি মাদক ব্যবসা করতো। সে গ্রেফতারকৃত শফিকের অন্যতম সহযোগী। সে গ্রেফতারকৃত শফিকের আমদানিকৃত বিস্ফোরক দ্রব্যাদি তার টমটম গাড়ীর মাধ্যমে বহন করে আরসা'র শীর্ষ নেতাদের নিকট সরবরাহ করতো বলে জানা যায় ।
গ্রেফতার হওয়া আসামীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়া দিন রয়েছে বলে জানান র্যাব এই কর্মকর্তা।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
অর্ধকোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি কচুয়ায় যুবলীগ নেতার ৪টি দোকান পুড়েছে দুর্বৃত্তরা
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে বিএনপির দু’পক্ষে সংঘর্ষে আহত অর্ধশতাধিক
লেবানের বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪
রাঙামাটিতে সেনা, বিজিবি ও পুলিশের টহল, পরিস্থিতি শান্ত
পরমাণু দূষিত পানি নিয়ে চীন ও জাপানের কিছু ঐকমত্য
ঝিকরগাছায় বিএনপি নেতা খায়রুজ্জামান মিনুসহ ২১ নেতাকর্মী বহিষ্কার
হিজবুল্লাহর ভয়ে ইসরাইলিদের আশ্রয়কেন্দ্রের কাছে থাকার নির্দেশ
ভারতের ঘুম হারাম করে পাকিস্তানকে ভয়ঙ্কর হেলিকপ্টার দিচ্ছে চীন
পাকিস্তানে সেনানিবাসে আত্মঘাতি হামলা, সেনাসহ নিহত ১৮
জুলাই বিপ্লবে শহিদের সংখ্যা ১৪২৩, আহত ২২ হাজার
নড়াইলে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জুয়েল গ্রেফতার
বিচারবিভাগ নিয়ে আজ রোডম্যাপ দেবেন প্রধান বিচারপতি
নেছারাবাদে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার নিহতদের স্মরণে বিএনপির আলোচনাসভা ও দোয়া মাহফিল
নেপালের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে চায় চীন: শি জিনপিং
পতিত স্বৈরাচারের দোষর মিডিয়া আর স্বার্থান্বেষী মহল পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে
পাকিস্তান-ইংল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্টও মুলতানে
৭০টির বেশি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা সিআইআইই-তে অংশ নেবে
সুস্থতার জন্য দোয়া কামনা
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে আজ প্রতিনিধিদল যাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে
৩ হাজার কয়েদির সাজা মওকুফ অথবা হ্রাস করতে যাচ্ছে ইরান