উঠতি ও কিশোর গ্যাং-এর দখলে বরিশাল মহানগরীর শ্রান্তি বিনোদনের স্থানগুলো
১৭ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৪ পিএম | আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৪ পিএম
বরিশাল মহানগরীর চিত্ত বিনোদনের সীমিত স্থানগুলোও বখাটে এবং কিশোর গ্যাং-এর নিয়ন্ত্রণ চলে যাওয়ায় নারী ও শিশুরা নিরাপত্তাহীন। নগরভবনের স্বেচ্ছা অন্ধত্বে নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যান সহ হাতে গোণা শ্রান্তি বিনোদনের সবগুলো স্থাপনার আশপাশ সহ অভ্যন্তর ভাগও ক্রমশ অবৈধ দোকানপাটে ভরে গেছে। সাথে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সুষ্ঠু নজরদারীর অভাবে সংগঠিত এবং অসংগঠিত উঠতি ও কিশোর মাস্তানের দল বেশীরভাগ শ্রান্তি বিনোদনের স্থানগুলোর অঘোষিত দখল নিয়েছে। ফলে নগরীর প্রায় সব শ্রান্তি ও চিত্ত বিনোদনের স্থানগুলোতেই এখন সুস্থ সামাজিক পরিবেশ বিপন্ন। মাস্তানদের লাগাতার আড্ডাবাজি সহ নানা সমাজ বিরোধী কর্মকান্ডে নগরীর চিত্ত বিনোদনের স্থানগুলো এখন আর সমাজের শান্তি প্রিয় মানুষের প্রশান্তির স্থান নেই। ফলে প্রায় বিনোদন সুবিধাবিহীন এ নগর জীবনে একটু শ্রান্তির স্থানগুলো নারী ও শিশুদের স্বস্তি দিতে পারছে না। বিষয়টি নিয়ে বিব্রত নারী ও শিশু সহ অভিভাবক মহলও।
তবে এ ব্যাপারে বরিশাল মহানগর পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম জানান, বিষয়টি নিয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখা সহ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণে প্রতিটি থানাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নিয়মিত টহলের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও প্রতিটি পার্কে ফোর্স রয়েছে বলে জানান তিনি। এ ব্যাপারে আরো মনযোগী হতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ প্রদানের কথাও জানান পুলিশ কমিশনার।
এ ব্যাপারে ট্যুরিষ্ট পুলিশের বরিশাল দপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি।
গত কয়েক বছর ধরেই নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যান, মুক্তিযোদ্ধা পার্ক, স্বাধীনতা পার্ক, ৩০ গোডাউন সংলগ্ন শতায়ু অঙ্গন এবং সম্প্রতি চালু হওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহনারা বেগম পার্কের সমাজিক পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন নগরবাসী। এসব কথিত বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে সুস্থ-সামাজিক পরিবেশের সাথে নারী এবং শিশুদের নির্বিঘেœ বিচরণ ও বিনোদনের পরিবেশ ক্রমাগত বিলুপ্ত হয়ে ইতোমধ্যে আতংকস্থলের রূপ নিয়েছে। এমনকি প্রায় ৬০ বর্গ কিলোমিটারের যান্ত্রিক এবং কোলাহলপূর্ণ এ নগর জীবনের ক্লান্তি থেকে একটু শ্রান্তি পেতে এসব পার্কে এসে শিশু ও নারীরা প্রায়শই চরম বিরক্তি সহ বিব্রতকর বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরে পরিবার পরিজন নিয়ে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বেড়াতে গিয়ে এক কিশোর গ্যাং-এর হেনস্থা থেকে হামলার শিকার হয়েছেন মহানগর ট্রাফিক পুলিশের এক সার্জেন্টের স্ত্রী। এ ঘটনার পরে মহানগর পুলিশ কিছুটা নড়েচড়ে বসেছে। এ ঘটনায় সার্জেন্টের স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় কিশোর গ্যাং-এর এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হলেও বাকিরা পলাতক।
সিটি মেয়রের মায়ের নামে নগরীর মধ্যে দিয়ে চলমান জাতীয় মহাসড়কের ওপর গড়ে তোলা বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহানারা বেগম পার্কটিতে নগরীর বিভিন্ন এলাকার নারী ও শিশুরা শ্রান্তি বিনোদনে এলেও এখানের পরিবেশও বিপন্ন। একদিকে একটি জাতীয় মহাসড়কের ওপর এ পার্কটিতে প্রবেশ যেমনি যথেষ্ঠ ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনি এখানে উঠতি মাস্তান ও কিশোর গ্যাং’র বেপরোয়া কর্মকান্ড আগত নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা বিঘিœত করায় যথেষ্ঠ বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিদিন। এমনকি পার্কটির পাশে বিশাল লেক-এর চার ধারের বেশীরভাগই অবৈধ পথ খাবারের দোকান গোটা এলাকার সুস্থ সামাজিক পরিবেশকে অনেক আগেই বিপন্ন করে তুললেও তা দেখার কেউ নেই। এসব পথ খাবারের অনেক দোকানে মধ্যরাত পর্যন্ত কি কেনাবেচা হয়, তা নিয়ে এলাকাবাসীরও প্রশ্ন রয়েছে। দিনরাত এখানে বখাটে ছাড়াও বিভিন্ন কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের বিরামহীন আড্ডাবাজি অনেক সময়ই বেলেল্লাপনাকেও হার মানাচ্ছে।
ফলে এ পার্কে আগতদের প্রায় সবাই এখানের পরিবেশ নিয়ে অসন্তুষ্ট। পার্কটির অভ্যন্তর ভাগ সহ লেকটির পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম পাড়ের রাস্তাটিও কিশোর মাস্তানদের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এমনকি এ পার্কের আসেপাশের রাস্তা ও পথ খাবারের খুপরি দোকানে মাদক বেচা কেনারও অভিযোগ উঠছে।
১৯৭৩ সালের মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বরিশাল সফরকালে ‘বঙ্গবন্ধু উদ্যান’ নামকরন সহ আনুষ্ঠানিক স্মৃতি ফলক স্থাপন করেছিলেন, সেখানেও এখন কিশোর গ্যাং-এর উৎপাতে সকলে বিব্রত।
এক সময়ে খেলাধুলা এবং প্রাত ও সান্ধ্য ভ্রমণের জন্য এ নগরীতে বঙ্গবন্ধু উদ্যানের যে নির্ভরতা ছিল, তা ইতোমধ্যে নির্লজ্জ আড্ডাবাজ ও পথ খাবারের দোকানের ভিড়ে বিড়ম্বনাস্থলের রূপ নিয়েছে। উপরন্তু এ উদ্যানটিতে সরকারি নানা মেলা ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে গিয়ে মূল মাঠ সহ ওয়াকওয়ের অবস্থাও বিপন্ন। বৃক্ষমেলা করতে মাঠটির উত্তর ও পশ্চিম-উত্তর অংশে বালু ভরাট করায় ওয়াকওয়ের চেয়ে মাঠের উচ্চতা বেড়ে গিয়ে সামান্য বৃষ্টিতেই মাঠের পানিতে ওয়াকওয়ে ডুবে যাচ্ছে।
এর সাথে আড্ডাবাজ এবং সংগঠিত ও অসংগঠিত কিশোর মাস্তান বাহিনীর সরব উপস্থিতি একটু শ্রান্তি খুঁজতে আসা নারী-পুরুষ ও শিশুদের স্বস্তি কেড়ে নিচ্ছে। এমনকি এ উদ্যানের ওয়াকওয়ে’তে নিয়মিত বাতি না জ¦লায় সন্ধ্যার পরে অন্ধকারচ্ছন্ন পরিবেশে নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। কাগজেপত্রে বঙ্গবন্ধু উদ্যান ধুমপান মূক্ত এলাকা হলেও এখন বিড়ি-সিগোরেটের সাথে গাঁজার গন্ধেও নারী ও শিশুদের প্রাণ ওষ্ঠাগত।
উপরন্তু এ উদ্যানে স্কুল-কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের অনেক রাত অবধি আড্ডাবাজি সহ অবাধ মেলামেশা সুস্থ সামাজিক পরিবেশকে বিপন্ন করছে। কিন্তু তা দেখার কেউ নেই। গণপূর্ত অধিদপ্তরের জমিতে গড়ে তোলা এ পার্কটি বিজলী বাতি ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের হলেও এর অঘোষিত নিয়ন্ত্রণ জেলা প্রশাসনের হাতে। কিন্তু এ উদ্যানের উন্নয়ন ও পরিবেশ রক্ষায় সরকারি কোন প্রতিষ্ঠানের দায় আছে বলে এখন আর কেউ মনে করেন না।
নগরীর পাশে বহমান কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে বিআইডব্লিউটিএ’র অধুনালুপ্ত মেরিন ওয়ার্কশপের জমিতে ‘মুক্তিযোদ্ধা পার্ক’টি নগরবাসীর চিত্ত বিনোদনের অন্যতম একটি স্থান হিসেবে গড়ে তোলা হলেও কিশোর মাস্তান বাহিনীর উৎপাতে সেখানের সুস্থ পরিবেশও বিপন্ন। একই পরিস্থিতি সিএসডি গোডাউন সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদী তীরের বধ্যভূমি সহ ‘শতায়ু অঙ্গন’ এলাকায়ও। নদীর পাড়ে কোলাহল মুক্ত একটু প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটাতে এখানে নারী-পুরুষ ও শিশুরা ভীড় জমালেও কোন স্বস্তি নেই। এখানেও সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কিশোর ও উঠতি মাস্তানদের উৎপাতে সুস্থ সামাজিক পরিবেশ বিপন্ন। সাথে অবৈধ দোকানের ভিড়ে পা ফেলা দায়। অথচ এসব শ্রান্তি বিনোদনের স্থানগুলো গড়ে তুলতে সরকারি কোষাগার থেকে বিপুল অর্থ ব্যয় হলেও তার রক্ষণাবেক্ষণে কোন সমন্বিত উদ্যোগ নেই।
নগরীর আমতলা মোড়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট-এর জমিতে গড়ে তোলা ‘স্বাধীনতা পার্কটি’র অবস্থাও একই। এখানেও দিন-রাত কিশোর ও উঠতি মাস্তানদের অবাধ কর্মকান্ডে বন্দি সুস্থ সামাজিক পরিবেশ। ফলে এ পার্কে সকাল-সন্ধ্যা যারা হাটতে বা ঘুরতে আসেন, তাদেরকে প্রায়শই যথেষ্ঠ বিড়ম্বনায় পরতে হচ্ছে। অথচ এ পার্কটি গড়ে তুলতেও সরকারি কোষাগার থেকে নগর ভবন কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করেছে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
৭ দিনের রিমান্ডে মশিউর রহমান
সিলেট মহানগর শ্রমিক কল্যাণের ট্রেড ইউনিয়নের দিনব্যাপী কর্মশালা সম্পন্ন
দক্ষিণাঞ্চলে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের ৪ ডিগ্রী বেশী মধ্য শরতের দুঃসহ গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত
নামাজের আগে বায়তুল মোকাররমে নাটকীয়তা
জয়সয়ালকে ফেরালেন নাহিদ
সরকারের শিক্ষা-গণমাধ্যমসহ আরও কিছু সংস্কার কমিশন করার পরিকল্পনা আছে : নাহিদ
তাসকিনের শিকার রোহিত
কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া ফাঁসির আসামি গ্রেপ্তার হলো ধামরাইয়ে
দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইজনকে পিটিয়ে হত্যার বিচার দাবিতে চাটমোহরে ছাত্র-জনতার মানববন্ধন
বায়তুল মোকাররমের অপ্রীতিকর ঘটনা নিয়ে যা বললেন খতিব রুহুল আমীন
গোদাগাড়ী সরকারি ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক, সাবেক এমপি লুৎফুন নেসা হোসেন মারা গেছেন।
দেড়শর আগেই শেষ বাংলাদেশের ইনিংস
ঝিনাইদহে ৮ মামলায় পুলিশের ৪৩ কর্মকর্তা আসামী
পাহাড়িদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ
গণপিটুনিকে নরমালাইজ করা নিয়ে অভিনেত্রী মেহজাবীনের পোস্ট
গোয়ালন্দে গলায় ফাঁস নিয়ে যুবকের আত্মহত্যা
হবিগঞ্জে ৫ সাংবাদিক নাশকতার মামলায় আসামি
ঢাবিতে বর্বরোচিত গণপিটুনিতে নিহত তোফাজ্জলের জানাজা শেষে পাথরঘাটায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন
তারাকান্দায় প্রাইভেটকার ও সিএনজির সংঘর্ষে নিহত-২
রাঙামাটিতে পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি