অসময়ের অতিবর্ষণে আগাম সবজি বিনষ্ট হলেও ২২.০৮ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যে ৮.৭০ লাখ হেক্টরে আমন আবাদ সম্পন্ন
১৮ অক্টোবর ২০২৩, ০৪:১০ পিএম | আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২৩, ০৪:১০ পিএম
ভরা মৌসুমে বৃষ্টিপাতের ব্যাপক ঘাটতির পরে শরতের অস্বাভাবিক বর্ষণে জনজীবন বিপর্যস্ত করে বরিশাল অঞ্চল থেকে বর্ষা মাথায় করে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু বিদায় নিয়েছে। তবে বর্ষা বিদায়ের আগে আশি^নের শেষ দিন, ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত বরিশালে পুরো অক্টোবরের স্বাভাবিক ১৫৮ মিলিমিটারের স্থলে ১শ’ মিলিমিটার বেশী, ২৫৬.৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এবার বর্ষা মৌসুমের মূল সময়ে বৃষ্টিপাতের ঘাটতিতে কৃষি ও জনস্বাস্থ্যে নানামুখী বিরূপ প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। এমনকি বৃষ্টির অভাবে দুঃসহ তাপ প্রবাহে দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে ডায়রিয়াও দীর্ঘস্থায়ী হয়। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের সরকারি হাসপাতালেই প্রায় ৭০ হাজার ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এমনকি বরিশাল অঞ্চলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ এপ্রিলে যেখানে ৩৩.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসে ওঠার কথা, তা গত মধ্য এপ্রিলে ৩৯.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে উঠে যায়।
এদিকে বর্ষা মৌসুম বিদায়ের শেষ প্রান্তে ও শরতের শুরুতে আগস্ট মাসে বরিশালে স্বাভাবিক ৪৩৩ মিলিমিটারের স্থলে ৭৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে আবহাওয়া বিভাগ। যা ছিল স্বাভাবিকের ৮০% বেশী। এমনকি শরতের মূল সময়ে সেপ্টেম্বর মাসেও বরিশাল অঞ্চলে স্বাভাবিক ৩২৭ মিলিমিটারের স্থলে ২৮৫-৩৫০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হলেও বাস্তবে প্রায় ১২% বেশী,৩৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলে কোন বৃষ্টি হয়নি। এপ্রিলে স্বাভাবিকের তুলনায় সামান্য কিছু বেশী বৃষ্টি হলেও জুন-জুলাইতেও তা ছিল অনেকটাই কম। এমনকি গত বছর ২০ অক্টোবর বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’এর বয়ে আনা গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার প্রবল বর্ষণের পরে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত বরিশাল অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ছিল অনুপস্থিত।
তবে চৈত্র-বৈশাখের দাবদাহের মধ্যে এপ্রিলে স্বাভাবিক ১৩২.৩ মিলির স্থলে সামান্য কিছু বেশী বৃষ্টি হলেও মে থেকে জুলাই পর্যন্ত তা ছিল স্বাভাবিকের অনেক কম। এমনকি জুলাই মাসে বরিশালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল স্বাভাবিকের ৫৮% কম।
গত বছরও বরিশাল অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল স্বাভাবিকের আরো কম। আবহাওয়া পর্যবেক্ষদের মতে, বরিশাল অঞ্চলে তাপমাত্রার পারদ ক্রমশ ওপরে উঠছে। গত বছর এপ্রিলে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলে স্বাভাবিকের ৮৫.৬% কম বৃষ্টি হয়েছে। মে মাসেও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল স্বাভাবিকের ৫.৬% কম। অথচ ঐ মাসেই ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’তে ভর করে ৭ থেকে ১১ মে পর্যন্ত অতি বর্ষণে তরমুজ সহ বিভিন্ন রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। জুনে বরিশালে আবহাওয়া বিভাগ থেকে ৪৬০ থেকে ৫১০ মিলি পূর্বাভাসের স্থলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল স্বাভাবিকের ৪৪.৪৫% কম। জুলাই মাসেও স্বাভাবিকের প্রায় ৬৫% কম বৃষ্টিপাতের পরে আগষ্টেও বরিশালে স্বাভাবিকের ১৬.৪% কম বৃষ্টি হয়েছে। সেপ্টেম্বরে স্বাভাবিক ৩১৬ মিলিমিটারের স্থলে ৩৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল।
কিন্তু গতবছর অক্টোবরে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এ ভর করে স্বাভাবিক ১৭৬ মিলিমিটারের স্থলে বরিশালে ৪৪১ মিলি বৃষ্টিপাতের কথা জানায় আবহাওয়া বিভাগ। অথচ দক্ষিণ উপকূল থেকে বর্ষা মাথায় করে গত বছর ২০ অক্টোবর দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু বিদায় নিলেও ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর বর্ষণে বরিশালে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ১৫০% বেশী বৃষ্টি হয়েছিল। তবে এর পরের নভেম্বর মাসেই বরিশালে স্বাভাবিকের ৯৮% কম বৃষ্টি হয়েছিল।
এবার আষাঢ়-শ্রাবণের নজিরবিহীন বৃষ্টির আকালের পরে আশি^নের শুরু থেকে লাগাতার বর্ষণে বরিশাল অঞ্চলের গ্রীষ্মকালীন সবজির বেশীরভাগই বিনষ্ট হবার সাথে শীতকালীন আগাম শাক-সবজিরও প্রায় পুরোটাই বিনষ্ট হয়েছে। ফলে বাজারে এখন ৮০ টাকা কেজির নিচে কোন সবজি নেই। এমনকি কোন কোন সবজির কেজি ইতোমধ্যে ১২০ টাকার ওপরে।
তবে প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমনের রোপন শত ভাগেরও বেশী অর্জিত হলেও উপকূল ভাগ সহ বরিশাল অঞ্চল নভেম্বর মাসটি ঘূর্ণিঝড় প্রবণ সময়। ১৯৭০-এর ১২ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় ‘হেরিকেন’ ও ২০০৭-এর ১৫ নভেম্বর ‘সিডর’এর ভয়াল রাতে উপকূলভাগ সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে সোনালী আমন ধান সম্পূর্ণই বিনষ্ট হয়েছিল। এর আগে পরেও কয়েকটি ছোট বড় ঘূর্ণিঝড় দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমন, ‘পাকা ধানে মই’ দেয়ার মতই মাটিতে মিসিয়ে দিয়ে গেছে।
ফলে এবারো আমনের ভবিষ্যত নিয়েও নিশ্চিন্ত নন বরিশাল অঞ্চলের কৃষি যোদ্ধাগণ। প্রায় ১৫ লাখটন খাদ্য উদ্বৃত্ত বরিশাল কৃষি অঞ্চলে চলতি খরিপ-২ মৌসুমে ২২ লাখ ৮ হাজার টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রায় ৮.৭০ লাখ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হয়েছেন কৃষকগণ। তবে নদ-নদীর পানি বিপদ সীমার নিচে এবং সাগর ফুঁসে না ওঠায় আমন এখনো অনেকটাই নিরাপদ বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল মহল মনে করলেও ‘প্রকৃতি নির্ভর দক্ষিণাঞ্চলের আমন পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত নয়’ বলেও মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবিদগণ। ১৭-১০-২০২৩.
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
দুই দিনেই পরাজয়ের ধ্বনি শুনছে বাংলাদেশ
ছাত্রআন্দোলনে শহীদ ছাত্রদলনেতা ওয়াসিমের কবর জিয়ারতে কেন্দ্রীয় নেতারা
অনেক সচিবসহ কর্মকর্তারা নাশকতা করার চেষ্টা করছে:রিজভী
রাজধানীতে ঢাকা দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের বিক্ষোভ মিছিল
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে ফিরে আসছে: উপদেষ্টা নাহিদ
কমলা হ্যারিস জিতলে বিনিয়োগ তুলে নেয়ার হুমকি প্রস্তুতি নিচ্ছেন ওয়ারেন বাফেটও: ইলন মাস্ক
বান্দরবানের রুমায় অস্ত্র গোলাবারুদ জ্যামার উদ্ধার
প্রথমবারের মতো ছুটির দিনেও চলছে মেট্রো
বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধ ও বিচারের দাবীতে খুলনায় মানববন্ধন
শেখ হাসিনার দলবলকে আগলে রেখেছে বর্তমান প্রশাসন: সেলিমা রহমান
রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০০ জনে
অনতিবিলম্বে ভিসি নিয়োগ না হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী ইবি শিক্ষার্থীদের
৩শ' আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত: অধ্যাপক মুজিবুর রহমান
বরিশালে রাইজিং স্কলার অ্যাওয়ার্ড ২০২৪ অনুষ্ঠিত
ঈশ্বরদীতে সাপের কামড়ে ১ ব্যাক্তির মৃত্যু
৭ দিনের রিমান্ডে মশিউর রহমান
সিলেট মহানগর শ্রমিক কল্যাণের ট্রেড ইউনিয়নের দিনব্যাপী কর্মশালা সম্পন্ন
দক্ষিণাঞ্চলে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের ৪ ডিগ্রী বেশী মধ্য শরতের দুঃসহ গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত
নামাজের আগে বায়তুল মোকাররমে নাটকীয়তা