ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

বাগাতিপাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর, পৌনে ১’শ টাকার প্রজনন বীজে হাজার টাকা ঘাপলা

Daily Inqilab বাগাতিপাড়া(নাটোর) উপজেলা সংবাদদাতা

২৭ অক্টোবর ২০২৩, ০৪:৫৪ পিএম | আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৩, ০৪:৫৪ পিএম

নাটোরের বাগাতিপাড়ায় গবাদি পশুর জাত উন্নয়ন করার লক্ষে গরুর কৃত্রিম প্রজনন বীজের মূল্য ৭৫ টাকা নির্ধারণ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। যে যেখানে যেমন পারছে তেমন দাম নিচ্ছে এ বীজের। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে প্রায় ১০ গুন টাকা বেশি নেয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলছেন, হাসপাতালে ৭৫ টাকাই নেয়া হচ্ছে, কিন্তু মাঠকর্মীরা খামারিদের বাড়িতে গিয়ে গরুর প্রজনন করতে ঠিক কত টাকা নিচ্ছেন এটি তার জানা নেই।

স্থানীয় গবাদি পশু পালনকারীরা জানান, দেশীয় বা ক্রস জাতের গাভী কিনে দুধ ও মাংস উৎপাদনের জন্য জাত উন্নয়নে গাভীকে কৃত্রিম প্রজনন করা হয়। একবার প্রজনন করলে কোনো কারণে গর্ভধারণ না হলে এক বা দুইমাস পর আবারো প্রজনন করতে হয়। এক্ষেত্রে গরু পালনকারীকে প্রথমবার প্রজননের জন্য ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা দিতে হয়। আর দ্বিতীয়বারের জন্য ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা ব্যয় করতে হয়। এর মধ্যে গরুর সমস্যা আছে বলে কোনো কোনো প্রজননকারী চিকিৎসা দিয়ে নিজ দোকানে নিয়ে হাজার-হাজার টাকার ওষুধ দেন।

তথ্য অনুযায়ী, বাগাতিপাড়ায় ৭৯ হাজার ৭৩০টি গবাদি পশু রয়েছে। এর মধ্যে মাংস উৎপাদনে গবাদি পশু রয়েছে ২৮ হাজার ৬৭টি এবং দুধ উৎপাদনের জন্য গাভী রয়েছে ১৭ হাজার ৫৪২টি। এসব গাভী থেকে জাত উন্নয়নে সরকারিভাবে কৃত্রিম প্রজননে প্রতিবছর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কাছে সিমেন (বীজের) বরাদ্দ দেওয়া হয় ৪ হাজার ৭৪০টি। এই সিমেন পর্যায়ক্রমে উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় একজন উপ-সহকারী কর্মকর্তা ও ৭ জন মাঠকর্মীর মাধ্যমে গবাদি পশুর কৃত্রিম প্রজনন করানো হয়। সরকারিভাবে প্রতিটি ফ্রিজিয়ান এবং শাহীয়াল জাতের বীজ ৭৫ টাকা নির্ধারণ করা আছে।

উপজেলার গালিমপুর দুগ্ধ খামার(পি.জি- ৫)এর সভাপতি আব্দুর রব বলেন, গরুর প্রজননের সময় পার্শ্ববতী এক খামারির মাধ্যমে সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। সরকারি বীজ নিতে ৭০০ টাকা দিতে হয়েছে। তার গরুর ক্ষেত্রে প্রথমবার প্রজননে গর্ভধারণ করায় পরে আর বাড়তি খরচ করতে হয়নি। তবে, কোনো কারণে প্রথমবার প্রজননে গরুর গর্ভধারণ না হলে পরে আবারও প্রজনন করতে ৬০০ টাকা খরচ করতে হয়।

উপজেলার বাগাতিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগ সেক্রেটারী মজিবর রহমান জানান, মাঠকর্মী গাভীকে প্রথম দিন সকালে ও বিকেলে দুই বারে প্রজননের ডোজ দিয়েছে। দুই ডোজে দিতে হয়েছে ৮০০ টাকা। তাতেও তার গাভীর প্রজনন না হওয়ায় কিছুদিন পরে আবার ৪০০ টাকা দিয়ে নতুন করে প্রজনন করাতে হয়েছে। তার গাভীকে প্রজনন করাতে তার ১ হাজার ২০০ টাকা খরচ হয়েছে।

ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘ক্যাব’বাগাতিপাড়া শাখার সভাপতি আব্দুল মজিদ বলেন, কৃত্রিম প্রজনন করাতে মাঠকর্মী ৭০০-১০০০ টাকা নিয়ে থাকে ফলে গ্রাহক ঠকানো হয়। এছাড়া চিকিৎসক না হয়েও চিকিৎসা দিয়ে বেশি টাকার ওষুধ লিখার মাধ্যমে খামারীরা প্রতারিত হচ্ছে, বলেও আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি করেন তিনি।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেনারি হাসপাতালের কৃত্রিম প্রজননকারী (এফএএআই) নাজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের হাসপাতালে গাভীর কৃত্রিম প্রজননের জন্য সরকার নির্ধারিত ৭৫ টাকা নিয়ে থাকি। কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র থেকে দূরত্বের হিসাবে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি নিয়ে থাকি। এ ছাড়া নির্ধারিত কেন্দ্রে আসলে ৭৫ টাকা নেওয়া হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবু হায়দার জানান, মাঠকর্মীরা প্রতি মাসে সামান্য দুই হাজার টাকা করে সম্মানি পান। তারা অনেকটা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেন। আমাদের নিকট থেকে কর্মীরা সিমেন নিয়ে সরকারি নির্ধারিত দামে প্রতি সিমেন ৭৫ টাকা জমা দিয়ে থাকেন। গবাদি পশু নির্ধারিত কেন্দ্রে নিয়ে আসলে ৭৫ টাকা করে নেওয়ার কথা। এ ছাড়া কেন্দ্রের বাইরে বা গবাদি পশুর মালিকদের বাড়িতে গেলে কত টাকা নিতে পারবেন তা জানা নেই।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে হত্যা মামলায় আরও একজনসহ গ্রেপ্তার ৬

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে হত্যা মামলায় আরও একজনসহ গ্রেপ্তার ৬

সাধ্যের বাইরে গিয়ে মা-বাবার চাহিদা পূরণ করা প্রসঙ্গে?

সাধ্যের বাইরে গিয়ে মা-বাবার চাহিদা পূরণ করা প্রসঙ্গে?

আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা প্রথম বিদেশ সফরে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন

আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা প্রথম বিদেশ সফরে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন

ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান

ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান

জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত

জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত

সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু

সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু

আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক

আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক

যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার

এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার

গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল

গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু

প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান

প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান

সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’

সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’

বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল

৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল

১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে

১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরীর ইন্তেকাল

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরীর ইন্তেকাল