যশোরে বিএনপি’র পাঁচ হাজার নেতাকর্মী গ্রেফতার আতঙ্কে আত্মগোপনে
০৩ নভেম্বর ২০২৩, ০১:৩৩ পিএম | আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৩, ০১:৩৩ পিএম
যশোরে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের প্রায় পাঁচ হাজার নেতাকর্মী রাজনৈতিক মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কে আত্মগোপনে রয়েছেন। টানা অবরোধের দলীয় কর্মসূচিতেও তাদের দেখা মিলছে না। মাঝে মধ্যে ঝটিকা মিছিলে শামিল হয়ে ছবি তুলেই আবার হাওয়া যাচ্ছেন তারা।
বিএনপির দাবি, গত কয়েকদিনে যশোরের আট উপজেলায় নাশকতার নামে রাজনৈতিক মামলায় প্রায় এক হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন প্রায় চারশ’ নেতাকর্মী। তারপরও হামলা, মামলা, গ্রেফতার, নির্যাতন উপেক্ষা করে নেতাকর্মীরা কর্মসূচি পালন করছেন।
যশোর জেলা বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, গত শনিবার (২৮ অক্টোবর) ঢাকায় মহাসমাবেশের পর হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি শুরু হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসন নতুন করে তৎপর হয়ে উঠেছে। ২৮ অক্টোবরের পর যশোরে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে ৭টি মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় প্রায় এক হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় চারশ’ নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। এজন্য এখন বিএনপি এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাকর্মীকে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না। গ্রেফতার আতঙ্কে অনেকেই এখন ঘরছাড়া। পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এখানে-ওখানে। মামলার আসামিরা তো বটেই, মামলা নেই-এমন নেতাকর্মীও বাসায় থাকার সাহস পাচ্ছেন না। অনেকের মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, গত রবিবার যশোর নড়াইল রোডে দুটি বাসে ককটেল ও লাঠি পেট্টোল জব্দের মামলায় বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ জেলার শীর্ষ ৮৭ নেতাকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া জেলায় ধরপাকড়ও চলছে। গত পাঁচ দিনে বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রায় চারশ’ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা সবাই কারাগারে রয়েছে। এছাড়া মামলাটিতে অজ্ঞাত আরও অনেক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। নেতাকর্মীদের অভিযোগ, এ পর্যন্ত দায়ের করা বেশির ভাগ রাজনৈতিক মামলায়ই অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে। এটিই বেশি উদ্বেগের। নেতাকর্মীদের যে কাউকে গ্রেফতারের পর এসব মামলার আসামি করা হচ্ছে। হরতাল-অবরোধের মাঝে পুরোনো মামলার পাশাপাশি নতুন মামলার আতঙ্কও বিরাজ করছে নেতাকর্মীদের মাঝে। মাঠে নামলেই মামলা ও গ্রেফতারের মখোমুখি হওয়ার আশঙ্কায় অনেক নেতাকর্মী গা ঢাকা দিয়েছেন।
নাম না প্রকাশে জেলা বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা জানান, শনিবারের মহাসমাবেশের পর থেকেই যশোরে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে আসছেন না। রোববার সকাল-সন্ধ্যা হরতালে মিছিল হলেও সেটা খুব সকালে। তাও আধা ঘন্টা সময়ের মধ্যে পুলিশের বাঁধায় শেষ হয়। এরপর টানা তিনদিনের অবরোধেও খুব সকালে ঝটিকা মিছিল বা সন্ধ্যারাতে মিছিল করেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। শহর ও শহরতলীর দুএকটি মিছিল হলেও উপজেলাগুলোতে কর্মসূচি নেই বললেই চলে। শহরের লালদীঘি পাড়ের জেলা বিএনপি কার্যালয়ও গত এক সপ্তাহ ধরে নেতাকর্মী শূন্য। বন্ধ রয়েছে দলীয় কার্যালয়।
বিএনপি নেতারা আরও অভিযোগ করেন, রাজপথে পুলিশের পাশাপাশি আওয়ামী লীগকেও মোকাবেলা করতে হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা বিএনপি নেতাদের বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও বোমার বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে। এজন্য গ্রেফতার ও হামলা এড়াতে অনেক নেতা নিজ বাসস্থানে না থেকে অন্যত্র রাত যাপন করছেন। পুলিশ বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করতে বিভিন্ন জায়গায় হানা দেওয়ার ফলে তারা এলাকায় থাকা নিরাপদ মনে করছেন না। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডগুলো এখন কার্যত নেতা-কর্মীশূন্য হয়ে পড়েছে।
যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেবুল হক সাবু বলেন, ২৮ অক্টোবরের আগপর্যন্ত যশোরে নাশকতার ১৩টি মিথ্যা মামলা ছিল। ২৮ অক্টোবরের পর জেলায় আরও ৭টি মামলা দায়ের হয়েছে। মিথ্যা এসব মামলায় প্রায় নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এর পাশাপাশি ক্ষমতাসীনরা নেতাদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হামলা করছে। রাজপথে অস্ত্র লাঠি নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মহড়া দিচ্ছে; সেখানে বিএনপি নেতাকর্মীরা কিভাবে রাজপথে থাকবে। একদিকে অস্ত্র লাঠি নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে মহড়া অন্যদিকে পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের আটক করছে। ফলে বিএনপির আন্দোলন সফল করতে বেগ পেতে হচ্ছে। তারপরেও কর্মীরা মাঠে আছে। নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছি হঠকারী কিছু না করে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে।
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচিতে জনগণের কোন সম্পৃক্ততা নেই। তারা কয়েকজন নেতাকর্মী মিলে ভোরবেলা ফাঁকা মাঠে ঝটিকা মিছিল করছে। তাদের আন্দোলন জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। আর হরতাল অবরোধের নামে বিএনপি যেন কোনো ধরণের নৈরাজ্য ও সহিংসতা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য আওয়ামী লীগ মাঠে রয়েছে। বিএনপি হামলা, ভাংচুর নাশকতায় লিপ্ত হলে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসাইন সাংবাদিকদের বলেছেন, বিএনপির অবরোধ চলাকালে নাশকতা এড়াতে পুরো জেলায় ৯ শতাধিক পুলিশ সদস্য সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। কেউ আইনবিরোধী কোনো কর্মকাÐে লিপ্ত হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিবে। যাদের বিরুদ্ধে শুধু মামলা রয়েছে, তাদেরকেই আটক করছে পুলিশ। কাউকে হেনস্তা করা হচ্ছে না।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বিগত ৫৩ বছরের জঞ্জাল দূর করে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সময়ের দাবি
তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আটক ছয়জনের পাঁচজনই ছাত্রলীগের
রাঙামাটিতে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষে নিহত ১, থমথমে পরিস্থিতিতে ১৪৪ ধারা জারি, ৭২ ঘন্টার অবরোধের ডাক
বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনো বিপদমুক্ত নয় : তারেক রহমান
নিরাপদ ও নির্ভয়ে উদযাপন হবে শারদীয় দূর্গোদসব এবং দূর্গাপূজা- এসএমপি কমিশনার রেজাউল করিম
মব কিলিং সরকার সমর্থন করে না: উপদেষ্টা নাহিদ
চট্টগ্রামে রাতের আঁধারে বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর
বলিউডে কারিনা কাপুরের ২৫ বছর
মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে ঢাবি কর্তৃপক্ষ
রাজশাহীতে ট্রেনে বরযাত্রীদের ওপর হামলা
চিহ্নিত গোষ্ঠী আবার দখলদারি ও চাঁদাবাজি শুরু করেছে : সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম চরমোনাই
গায়িকা রুকসানার রহস্যজনক মৃত্যু!
যে কোনো মূল্যে লাহোর কর্মসূচি সফল করুন: ইমরান খান
চৌদ্দগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় সিএনজি চালকসহ নিহত ২
যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত ভবনে বিচারককে গুলি করে হত্যা
ডিবির সাবেক ডিসি ৭ দিনের রিমান্ডে দলীয় বিবেচনায় শুদ্ধাচার পুরস্কার পান মশিউর
খাগড়াছড়ি-রাঙামাটিতে সংঘর্ষ: তিন জেলার মানুষকে শান্ত থাকার আহ্বান সরকারের
গরমে যেন শেষ সিলেট !
গল টেস্টে ঘুরে দাঁড়িয়েছে শ্রীলঙ্কা
প্রেতাত্মাদের উসকে দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন হাসিনা