আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ ভুটানের সব, ভারতের ৬০ পণ্য আমদানির অনুমতি মিললো
০৭ নভেম্বর ২০২৩, ১১:২৩ এএম | আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৩, ১১:২৩ এএম
আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ চালুর মধ্য দিয়ে দু’দেশের বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে- এমনটাই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতিমধ্যে এ লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়ে গেছে অনুমতি মিলেছে ভুটানে উৎপাদিত সব (সুতা ও আলু ব্যতীত) পণ্য ও ভারতের ৬০টি পণ্য। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে সব ধরণের পণ্য উল্লেখিত রেলপথ দিয়ে রপ্তানি করা যাবে ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এর এক প্রজ্ঞাপন থেকে আমদানির-রপ্তানির এ তথ্য জানা গেছে। গত ৩১ অক্টোবর এ প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়। সোমবার এ প্রতিবেদকের হাতে প্রজ্ঞাপনটি আসে। একই প্রজ্ঞাপনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে আরো চারটি পণ্য আমদানির অনুমতি মিলেছে। এসব পণ্য হচ্ছে, ভুসি, ডাল, বুট ও বাঁশ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডেও নতুন এ প্রজ্ঞাপন জারির কারণে ব্যবসায়িদের মধ্যে উৎসাহ বিরাজ করছে। রেলপথের আনুষাঙ্গিক কাজ শেষ হলে কয়েক মাসের মধ্যেই ভারত থেকে পণ্য আমদানি শুরু করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন তারা।
আখাউড়া স্থলবন্দরের ব্যবসায়ি মো. মনির হোসেন বাবুল সোমবার সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে দৈনিক ইনকিলাব কে বলেন, ‘আখাউড়া স্থলবন্দরের বাণিজ্য খেই হারিয়ে ফেলেছে। রেলপথ দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানির অনুমতি মেলায় এখন বাণিজ্যে নতুন ধারা ফিরে আসবে। ব্যবসায়িরা লাভবান হবেন।’
আখাউড়া স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন চালু হলে দু’দেশের বাণিজ্যে আরো গতি বাড়বে। বিশেষ করে পাথর ও গম আমদানি আমাদের সহজ হবে। ভারতের ট্রেন বাংলাদেশে চলে আসবে বলে কমে আসবে পরিহন ব্যয়। ইতিমধ্যেই পণ্য আমদানি-রপ্তানির জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। তবে ভারতের অংশে রেললাইনের কিছু কাজ বাকি থাকায় এখনই বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। আশা করছি কয়েক মাসের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু করা যাবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত হয়ে দু’দেশের মধ্যে রেল যোগাযোগের উদ্বোধন হয়েছে বুধবার। বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ভার্চ্যুয়ালি আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন প্রকল্প উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দু’দেশের মধ্যে আরো একটি রেল যোগাযোগ স্থাপন হলো।
এদিকে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের জন্য মুখিয়ে আছেন ভারতীয়রা। বিশেষ করে সেখানকার ত্রিপুরা রাজ্যের মানুষ মনে করছে বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে কলকতা হয়ে সেদেশের বিভিন্নস্থানে গেলে তাদের অনেক সময় বেঁচে যাবে। এছাড়া বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার যাওয়াটা তাদের জন্য সহজ হবে।
তবে এখনই এটা সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশ হয়ে আগরতলা-কলকাতা ট্রেন চলাচল। এ ক্ষেত্রে বাধা মিটার গেজ রেললাইন। কেননা, আখাউড়া থেকে ভৈরব পর্যন্ত ব্রডগেজ (ডুয়েল গেজ) হলেও ভৈরব থেকে টঙ্গী পর্যন্ত পুরোটাই এখনো মিটার গেজ রয়ে গেছে। এক্ষেত্রে যতক্ষণ না পর্যন্ত ওই পথটুকু ব্রডগেজ লাইনে পরিণত না করা হয় ততক্ষণ বাংলাদেশ হয়ে সরাসরি আগরতলা থেকে কলকাতা যাওয়া সম্ভব না। ভারতের অভ্যন্তরের পুরোটাই ব্রজগেজ বিধায় বাংলাদেশ থেকেও গাড়ি যাওয়া সম্ভব না।
আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মো. আবু জাফরও জানিয়েছেন যে বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে আগরতলা থেকে কলকাতা ট্রেন চলাচল হুট করেই সম্ভব না। তবে এক্ষেত্রে আগে ভৈরব থেকে টঙ্গী পর্যন্ত পুরো অংশে ব্রডগেজ লাইন করতে হবে।
একাধিক সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ি, ভারত-বাংলাদেশ এর মধ্যে রেলওয়ের এ সংযোগ প্রকল্পটি চালু হলে মূলত ভারতীয়রা ব্যবসায়িরাই বেশি লাভবান হবেন। এক্ষেত্রে তারা চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশ থেকে আনা পণ্য ট্রেনে করে ত্রিপুরাসহ আশেপাশের সাতটি রাজ্যে সহজেই নিয়ে যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম থেকে আখাউড়ার গঙ্গাসাগর পর্যন্ত ব্রডগেজ লাইন থাকায় ট্রেন চলাচলের কোনো অসুবিধা হবে না।
সোমবার দুপুরে নতুন দিগন্তের সূচনা হয় ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে। বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার গঙ্গাসাগর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ভারতের ত্রিপুরার রাজ্যের রাজধানী আগরতলার নিশ্চিন্তপুর স্টেশনে গেলো পাঁচটি বগির মালবাহী ট্রেন। এরপর রেললাইন ঠিক আছে মর্মে সবুজ সংকেত পেয়ে বুধবার দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে সেটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করানো হয়।
দুই দেশের এ রেলপথের দৈর্ঘ্য ১২.২৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশে ৬.৭৮ কিলোমিটার। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ৪৭৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়ন ৫৭ কোটি ৫ লাখ টাকা এবং ভারতীয় ঋণ ৪২০ কোটি ৭৬ লাখ কোটি টাকা।
গত ১৬ আগস্ট ‘গ্যাং কার’ বা ‘ট্র্যাক কার’ চালানো হয়ে। ‘গ্যাং কার’ নামে পরিচিত ‘ট্র্যাক কার’ বিশেষ আকৃতিতে নির্মিত রেলের ‘ইঞ্জিন’। এর সঙ্গে দু’টি বগি সংযুক্ত করে উল্লেখিত পথে চালানো হয়। ২৫ সেপ্টেম্বর চালানো হয় মালবাহী ট্রেন। তবে এগুলো শুধুমাত্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গঙ্গাসাগর রেলওয়ে স্টেশন থেকে মনিয়ন্দের শিবনগর পর্যন্ত চলাচল করে।
২০১৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ প্রকল্প নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। প্রথমে প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ১৮ মাস। এরপর করোনার প্রভাবসহ নানা কারণে পাঁচ দফা এর মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ নির্মাণ কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী বছরের জুন নাগাদ করা হয়েছে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
জাজিরা থানার ভেতরে মিলল ওসির ঝুলন্ত মরদেহ
বাসের লকারে থাকা অর্ধশতাধিক ছাগল আগুনের তাপে ঝলসে মারা গেল
মেয়ার্স ঝড়ে রংপুরকে বড় লক্ষ্য দিল বরিশাল
হাসিনার দুর্নীতি অনুসন্ধানে যৌথ টাস্ক ফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত
মুজিবনগরে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট শাখায় দুর্ধর্ষ চুরি
কুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা শনিবার, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন
বিডিআর জওয়ানদের মুক্তির দাবিতে শাহবাগ অবরোধ
ভাসমান ডিপো স্থায়ীকরণ ও জ্বালানি তেল সরবরাহের দাবীতে মানববন্ধন
শরীয়তপুর জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে
নোবিপ্রবিতে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মশালা
আশুলিয়ায় বাসা বাড়িতে অবৈধ তিতাস গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন
‘বরবাদ’ সিনেমার দ্বিতীয় অংশের শুটিংয়ে মুম্বাইয়ের পথে শাকিব
কেরানীগঞ্জে অপহরণকারী চক্রের ৬ সদস্য র্যাবের হাতে গ্রেফতার
শিবালয়ে খাবারের সাথে নেশা জাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে গৃহকর্তার সর্বস্থ লুটে নেয়া চক্রের এক সদস্য আটক
ইমরানের খানের বিচার পর্যবেক্ষণ করবে আন্তর্জাতিক সংসদীয় সংস্থা
কুড়িগ্রামে যুবদল নেতার হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবীতে বিক্ষোভ সমাবেশ
নাঙ্গলকোটে দুর্ঘটনায় পৌর স্বাস্থ্য সহকারীর মৃত্যু
ইউক্রেনে সংঘাতের দ্রুত অবসান চান ট্রাম্প
ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি জ্যাকবসন
নোয়াখালীতে বাসচাপায় শ্রমিকের মৃত্যু,আহত ২