যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে বাড়ছে বন্দির সংখ্যা, দেখা দিয়েছে চর্মরোগ
০৮ নভেম্বর ২০২৩, ০৪:১৩ পিএম | আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ০৪:১৩ পিএম
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে চলছে সংকট, কারন বন্দির সংখ্যা বাড়ছে। বন্দিদের মধ্যে অনেক আগে থেকেই চর্মরোগ দেখা দিয়েছে। ইদানীং বন্দির সংখ্যা বড়ছে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার বন্দিরা। বিএনপি-জামায়াতের গত ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া হরতাল-অবরোধে যানবাহন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলার কারণে যশোর শহর ও উপজেলাগুলোতে প্রতিদিনই বাড়ছে আটকের সংখ্যা। এই কারাগারে যাদেরকে রাখা হচ্ছে। আর এতে বেগ পেতে হচ্ছে কারাগারগুলোকে।
কারাগার সূত্রে জানা গেছে, যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ধারণ ক্ষমতা রয়েছে এক হাজার ৯১৯ জন। ৪ নভেম্বর পর্যন্ত বন্দি রয়েছে এক হাজার ৯৭০ জন। এরমধ্যে মহিলা বন্দি রয়েছে ৮৩ জন। এবং পুরুষ বন্দি রয়েছে এক হাজার ৮৮৭ জন। যার মধ্যে কয়েদী রয়েছেন ৬৫৫ এবং হাজতী ১৩০৫ জন। গত ১০ দিনের ব্যবধানে বন্দির সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৪শ। এতে করে ধারণ ক্ষমতার বেশি বন্দি হওয়ায় তাদেরকে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে।
জানা গেছে, কারাগারে রয়েছে মশার উপদ্রব। সেই সাথে রয়েছে পানির সংকট। সেই পুরনো আমলের পাইপ বা ট্যাঙ্কি দিয়ে পানি বের হচ্ছেনা। সামান্য পানি আসছে পাইপ দিয়ে। যেকারণে বন্দিরা ঠিকমত গোসল ও পয়নিস্কাশনে পানির ব্যবহার করতে পারেনা। এতে করে বন্দিদের মধ্যে চর্মরোগ ছড়িয়ে পড়েছে।
যশোর কারাগারে মোট জনবল অনুমোদন পদ রয়েছে ৪৯৭ জনের। সেখানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ২৭৫ জন। যারমধ্যে ৭ জন ডেপুটি জেলার থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন ৩ জন। এতে করে জনবল ঘাটতির কারণে বাড়তি বন্দি নিয়ে চাপে পড়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। তাদেরকে অনেকটা হিমশিম খেতে হচ্ছে বন্দি সামলাতে।
যশোর কারা হাসপাতালে একজন ফার্মাসিস্ট দিয়ে পরিচালনা করা হচ্ছে। চিকিৎসক ৪ জন খাতা কলমে থাকলেও আছেন ২ জন চিকিৎসক। তাদেরকে নিয়মিত পায়না বন্দিরা। যেকারণে সামন্য শারীরিক সমস্যা হলে তাদেরকে নিয়ে যেতে হয় যশোর আড়াইশ শয্যা হাসপাতালে। চিকিৎসকরা খেয়ালখুশিমত সপ্তাহে একদিন গিয়ে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন বলে বন্দিদের স্বজনদেদর অভিযোগ।
যশোর কারা হাসপাতালের সহকারী সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান জানান, কারা হাসপাতালে গত দেড় মাস ধরে ওষুধ সংকট ছিল। তবে গতকাল আমরা ওষুধ পেয়েছি। এখানে বন্দিদের মধ্যে চর্মরোগের প্রদুর্ভাব রয়েছে। কারা হাসপাতালে থাকা ওষুধে কাজ হয়না। যেকারণে বাইরে থেকে বন্দিদের ওষুধ কিনেত হয়েছে। তবে আবডেট ওষুধধের চাহিদাপত্র আমরা দিয়েছি। বর্তমানে আমরা ২ জন চিকিৎসক রয়েছি এই হাসপাতালে। অন্যান্য স্টাফও সংকট রয়েছে এখানে।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুরাইয়া আক্তার জানান, আমাদের এখানে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কিছু বেশি বন্দি রয়েছে। রয়েছে জনবল সংকট। তারপরও এসব নিয়েই আমাদের চলতে হবে। বেশি বন্দি হলেও কিছু করার নেই। বন্দিদের মধ্যে চর্মরোগ রয়েছে বলে তিনি জানিয়ে বলেন, কারাগারে অনেক পুরনো পানির ট্যাঙ্কি ও পাইপ রয়েছে। যা দিয়ে ঠিকমত পানি পাওয়া যায়না। সব সময় থাকে মশার উপদ্রব। পৌরসভাকে বললে তারা ওষুধ দেয়। না বললে আর দেয়না। কারা হাসপাতালে ৫৮ শয্যার বিপরীতে রোগী রয়েছে ৩২ জন। একজন নার্স, ২ জন ফার্মাসিস্ট থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন শুধুমাত্র একজন ফার্মাসিস্ট। আর চিকিসকরা নিয়ম করে রোগীদের সবা দেন।
বিএনপির দাবি, চলমান হরতাল অবরোধের কর্মসূচি ঘিরে গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া হরতাল আর অবরোধের চার দিনের কর্মসূচিতে ২২ মামলায় আসামি করা হয়েছে দেড় সহ্রাধিক নেতাকর্মীকে। এসব মামলায় আটক করা হয়েছে সাড়ে চার শ’ নেতাকর্মী। গ্রেপ্তার আতঙ্কে বর্তমানে ঘরছাড়া জেলা বিএনপির শীর্ষনেতাসহ অন্তত পাঁচ হাজার নেতাকর্মী। এতে এসব নেতাকর্মীর পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার পাশাপাশি মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।
প্রত্যোকটি মামলার বাদী পুলিশ। বিস্ফোরক দ্রব্যে সজ্জিত হয়ে দেশকে অস্থিতিশীল ও নাশকতামূলক কর্মকান্ড ঘটানোর উদ্দেশ্যে সমবেত হয়ে হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে মামলাগুলোতে। তবে বিএনপির নেতারা বলছেন এগুলো পুলিশের গায়েবী মামলা। শুধু তাই নয়, ঘটনা ঘটেনি অথচ পুলিশ নাটকীয় গল্প বানিয়ে মামলাগুলো দায়ের করেছে।
দলটির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে মামলা আর নতুন কিছু নয়। গত ১৫ বছর ধরেই নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়েছে। কিছুদিন মিথ্যা মামলা দেয়া বন্ধ থাকলেও গত ১০ দিন ধরে আবারো নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে ২২টি মামলা দেয়া হয়েছে। হয়তো আরো মামলা হবে। অনেকটা কারাগার আমাদের নেতাকর্মীদের ঘর হয়ে গেছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসাইন বলেন, গাড়ি ভাঙচুর করার সময় বিএনপির নেতাকর্মীদের আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া সুনির্দিষ্ট অপরাধের মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কাউকে উদ্দেশ্যমূলক মামলায় আসামি করা হচ্ছে না দাবি করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল শেখ সুজাউর রহমান বলেন, একজন বন্দির জন্য কারাগারে ৩৬ ফুট জায়গা নির্ধারণ করা থাকে। তবে বন্দিদের কোনো খাট বা চৌকি দেওয়া হয় না। তারা মেঝেতে কম্বল পেতে ঘুমানোর কারণে একজনের জায়গায় একের বেশি থাকতে পারেন। এ ছাড়া তাদের খাবারের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয় না।
কারাগারে বন্দি বাড়ার কারণে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বন্দি বাড়লেও আমাদের জনবল তো বাড়ে না। আগে যারা আছেন তারাই কাজ করছেন। তাই চাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক। অতিরিক্ত বন্দির কারণে অনেক সময় নির্দিষ্ট কাজের বাইরেও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়। প্রতিদিনই বন্দি আসেন আবার অনেকে জামিনে মুক্ত হয়ে যান। বন্দিদের আসা-যাওয়া একটি চলমান প্রক্রিয়া।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি
কিউবায় সমাবেশ