মৃত্যু আর ধ্বংসের ঘূর্ণিঝড় ‘হেরিকেন’ এর কাল রাত আজ
১২ নভেম্বর ২০২৩, ০২:৩৭ পিএম | আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৩, ০২:৩৭ পিএম
উপকূলের ৭১০ কিলোমিটার তটরেখার দেড় কোটি মানুষের কাছে বিভীষিকাময় ভয়াল ১২ নভেম্বর আজ। ১৯৭০-এর এই রাতে মৃত্যু আর ধ্বংস নিয়ে বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ‘হেরিকেন’ উপকূলের প্রায় ৫ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। ঝড়ের ঐ কালো রাতে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ নিখোঁজ হলেও পরে তাদের বেশীর ভাগেরই কোন সন্ধান মেলেনি। বঙ্গোপসাগর থেকে প্রায় ৩০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস নিয়ে আড়াইশ কিলোমিটার বেগের ঘূর্ণিঝড় বরিশাল বিভাগ ছাড়াও নোয়াখালী উপকূলের জেলাগুলোর বিশাল জনপদকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছিলো। ফুঁসে ওঠা বঙ্গোপসাগরের সে জলোচ্ছ্বাস লক্ষাধিক মানুষকে সমুদ্রের অতলে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ায় তাদের ঠাঁই হয়েছিল না ফেরার দেশে। ১৯৭০ এর ১২ নভেম্বর হেরিকেন-এর আঘাতে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি পরিবারেরই কোন না কোন সদস্য নিহত বা নিখোঁজ হয়েছিলেন।
আজ (রোববার) সে ‘হেরিকেন’র ছোবলে নিহতদের স্মরণে বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। ১২ নভেম্বরের হেরিকেনের সে তান্ডব গোটা উপকূলের মাইলের পর মাইল জুড়ে বিধ্বস্ত জনপদে শুধু লাশের মিছিল আর জনবসতির ধ্বংসস্তুপের চিহ্ন রেখে গিয়েছিলো। হাজার হাজার মানুষ আর গবাদী পশুর মৃতদেহ, আর তার পঁচা-গলা দুর্গন্ধে বেঁচে যাওয়া মানুষগুলোর জীবনও দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। বেঁচে যাওয়াদের পরনে ছিলোনা কাপড়, পেটে ছিলো না খাবার। ছিলো না মাথা গোঁজারও কোন ঠাঁই। ফলে বেঁচে যাওয়া মানুষগুলোর জীবন আরো কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশের দক্ষিণ সীমানা জুড়ে বিস্তীর্ণ জলরাশির সঞ্চালন সুনীল ঢেউ-এর মাথায় যে রূপালী উর্মিমালা আলিঙ্গন করছে, বিশ্ব মানচিত্রে তা-ই বঙ্গোপসাগর। পৃথিবীর অন্যসব সাগরের মতই প্রকৃতির সব লীলার সঙ্গীনী হয়ে মেতে আছে আমাদের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বঙ্গোপসাগরও। প্রকৃতির সাথে বঙ্গোপসাগরের বিচিত্র লীলার যে ভয়ঙ্কর রূপ, তার অস্তিত্ব অনুভব করতে গিয়ে বাংলাদেশের উপকূলবাসীকে বারবারই চরম মূল্য দিতে হয়েছে।
তারই আরেক বিভীষিকার রাত ১৯৭০-এর ১২ নভেম্বর মধ্যরাত। উপকূলের ৭১০ কিলোমিটার এলাকার বেশীরভাগ জুড়ে সে রাতে যে ভয়াবহ বিভীষিকা নেমে এসেছিল, তার নজির এখনো গোটা বিশ্বে বিরল। ১৯৭০-এর ১২নভেম্বর কালরাত্রির সে বিভীষিকা আজও উপকূলের বয়োজ্যেষ্ঠদের তাড়া করে ফিরছে। তাই এখনো স্বজনহারা সব বয়সী মানুষ বড় দুঃসহ যাতনা নিয়েই স্মরণ করছেন ভয়াল ১২ নভেম্বরকে।
তারপরেও প্রকৃতির একের পর এক রুদ্র রোষ থেকে বেঁচে যাওয়া উপকূলের মানুষগুলো লড়াই করেই টিকে আছে এসব জনপদে। তবে ’৭০-এর সেই স্মৃতি নিয়ে এখনো যারা বেঁচে আছেন, তাদের সকলকেই আজও তাড়া করছে ভয়াল সে স্মৃতি। এমনকি সে রাতে ভয়াল হেরিকেনের তান্ডবের শিকার নিকটজনের লাশও খুঁজে পায়নি হাজার হাজার পরিবার। পরিপূর্ণ ধ্বংসস্তুপে পরিনত হয়েছিল দেশের পুরো উপকূলীয় জনপদ।
তাই নভেম্বর এলেই গোটা উপকূলীয় এলাকার মানুষ চরম আতঙ্কে থাকেন। ২০০৭-এর ১৫ নভেম্বর রাতেও হেরিকেন-এর অনুরূপ আরেক ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’ বঙ্গোপসাগর থেকে বিশাল জলোচ্ছ্বাস মাথায় করে প্রায় আড়াইশ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে এসে বরিশাল বিভাগ সহ সন্নিহিত বিশাল জনপদকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছিল।
তবে ঘূর্ণিঝড় হেরিকেন-এর নির্মম অভিজ্ঞতার আলোকে গড়ে তোলা রেড ক্রিসেন্ট-এর ‘ঘূর্ণিঝড় প্রন্তুতি কর্মসূচী-সিপিপি’র অর্ধ লক্ষাধিক স্বেচ্ছাসেবী সেদিন উপকূলবাসীকে সময়মত সতর্ক করা এবং ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র সহ নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ায় সিডর-এ প্রাণহানী আশাতীতভাবে হৃাস করা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু সিডর-এর তান্ডব এবং ক্ষয়ক্ষতিও ছিল হেরিকেন-এর মতই ভয়াবহ।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট বেশীরভাগ নি¤œচাপই বার বার ঘূর্ণিঝড়ের রূপ ধরে উপকূলে আঘাত হানে। এমনকি প্রকৃতির এ রুদ্র লীলায় আজ পর্যন্ত উপকূলভাগের কত মানুষের প্রাণহানী ঘটেছে তার কোন সঠিক হিসেবও নেই। একইভাবে সম্পদের ক্ষয় ক্ষতির সীমাও অপরিসীম। এসব প্রাকৃতিক বিপর্যয় বার বারই উপকূল সহ গোটা দেশের অর্থনীতিকে পর্যন্ত বিপর্যস্ত করে দিচ্ছে। বিজ্ঞানের প্রসারের ফলে ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তির কারণ ও এর গতিপথ নির্ণয় সম্ভব হলেও তরে নিয়ন্ত্রণ আজও মানুষের সাধ্যের বাইরে।
তবে সময়মত সতর্ক করার ফলে প্রাণহানীর সংখ্যা যথেষ্ঠ হৃাস করা সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি টেকসই অবকাঠামো নির্মাণের ফলে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতিও কিছুটা হৃাস করা সম্ভব হলেও দক্ষিণাঞ্চল সহ উপকূলীয় কৃষি ব্যবস্থা এখনো প্রকৃতি নির্ভর। আর সে প্রকৃতি, কৃষি নির্ভর উপকূলের অর্থনীতিকে বারবারই বিপন্ন করছে। ফলে ক্ষুধা আর দারিদ্রতা দক্ষিণ উপকূলবাসীর পিঁছু ছাড়ছে না।
’৭০-এর ১২ নভেম্বর রাতের ঘূর্ণিঝড়ের রাতের ঐ ধ্বংসলীলার পর পরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী দক্ষিণের ঘূর্ণি উপদ্রুত এলাকায় ছুটে এসে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। দলীয় নেতা কর্মীদের নিয়ে ত্রাণ ও উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেন ঐ দুই জননেতা।
তৎকালীন পাকিস্তানের সর্বাধিক অনুন্নত ও দারিদ্রপীরিত উপকূলীয় এলাকা হেরিকেন-এর রুদ্ররোশে আরো একবার বিপন্ন হবার পরে বিভৎস ধ্বংসস্তুপ থেকে ভেসে আসছিল স্বজন হারাদের কান্নার রোল। মরদেহের পঁচাগলা গন্ধে পুরো উপকূলীয় জনপদেই চরম মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল। পানি, খাবার আর আবাসন সহ বসনের অভাবে উপকূলের বেশীরভাগ এলাকার বাতাসই সেসময় দীর্ঘশ্বাসে ভারি হয়ে গিয়েছিল। অবশিষ্ট ছিল শুধু সাগরের গর্জন এবং মানুষ আর গবাদী পশুর শব মিছিল।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
প্রশাসন ক্যাডারের ‘ইয়াং অফিসার্স’ ফোরামের সভাপতি শুভ, সাধারণ সম্পাদক জয়
“ইউনিলিভার বাংলাদেশ ও কেওক্রাডং বাংলাদেশ এর উদ্যোগে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে হলো ‘কোস্টাল ক্লিনআপ’”
তথ্য উপদেষ্টার সঙ্গে পাকিস্তানের বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী রাহাত ফাতেহ আলী খানের সৌজন্য সাক্ষাৎ
রক্তের বিনিময়ে অর্জিত ছাত্র জনতার বিজয়কে নস্যাৎ হতে দেয়া যাবে না
বিপিএল মিউজিক ফেস্ট: যান চলাচলে যে নির্দেশনা ডিএমপির
গাজীপুরের শ্রীপুরে মেঘনা গ্রুপের একটি বাটন তৈরির কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড
সোনারগাঁওয়ে ছেলের ছুরিকাঘাতে বাবা নিহত
আনজার গ্রুপের আয়োজনে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠকদের সংবর্ধনা
মির্জাপুরে রাস্তায় বাঁশের বেড়া দেয়ায় জনদুর্ভোগ এলাকাবাসির মানববন্ধন
মেধা বৃত্তির ফলাফল ঘোষণা করলো উষা
পাহাড় কাটা, বায়ুদূষণ ও নিষিদ্ধ পলিথিনের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান জোরদার করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা
ফুলপুরে অবৈধ ইট ভাটায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, এক লাখ টাকা জরিমানা
মিরপুরে বেড়েছে চুরি ছিনতাই
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ভাইয়ের হাতে ভাই খুন
পালিয়ে গিয়ে হাসিনা ভারত থেকে ষড়যন্ত্র করছে: মির্জা ফখরুল
মাগুরায় দলকে গতিশীল করতে কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত
মৌলভীবাজারে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে শ্রমিকের মৃত্যু, জিরো লাইন থেকে লাশ উদ্ধার
মাদারীপুরে ভুয়া সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্র জনতা
সেনবাগে ট্রাক্টর চাপায় ১ শিশু মৃত্যু : আহত ১
আ.লীগের নিবন্ধন বাতিলসহ ৩ দফা দাবিতে ৭ দিনের আল্টিমেটাম ইনকিলাব মঞ্চের