নগর ভবনের দুর্ভেদ্য অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার মধ্যেই বরিশালের নতুন মেয়র দায়িত্ব নিচ্ছেন মঙ্গলবার
১৩ নভেম্বর ২০২৩, ১২:৪৬ পিএম | আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৩, ১২:৪৬ পিএম
বরিশালের ৫ম মেয়র হিসেবে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ অনেক বিড়ম্বনা ও প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেই মঙ্গলবারে দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। নগরবাসীকে সুষ্ঠু সেবা প্রদানই আগামী ৫ বছরে তার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন তিনি। রোববার নিজ বাসভবনে নগর ভবনের সীমাহীন বিশৃংখলা সহ নানা অনিয়ম অব্যবস্থাপনা নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে মতবিনিময় সভায় খোলামেলা অনেক মন্তব্য করেছেন। নাগরিক সেবা নিশ্চিত সহ এ নগরীকে সুশৃংখলা ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
তবে এসব ক্ষেত্রে সব কিছুর আগে তাকে নগর ভবনে গত কয়েক বছরে জেঁকে বসা দুষ্ট চক্রের ব্যূহ ভেদ সহ যোগ্য ও সৎ কর্মীদের দায়িত্ব প্রদানের তাগিদ দিয়েছেন ওয়াকিবহাল মহল। নগর ভবনকে দুর্নীতিমুক্ত ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে নির্বাচনের আগে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেসব বিষয় বিবেচনায় রেখেই আগামী দিনে দায়িত্ব পালনের তাগিদ দিয়েছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলও। আর নাগরিক সেবা নিশ্চিতকরণে নগর পিতার সততা ও আন্তরিকতা নিয়ে জনমনে যেমনি কোন সংশয় নেই, তেমনি তাকে রাজনৈতিক বিবেচনা বাদ দিয়ে সব এলাকা ও নাগরিকের মেয়র হিসেব কাজ করারও পরামর্শ দিয়েছেন মহলটি। নচেৎ আগামী দিনে তাকেও পূর্বসূরীর ভাগ্যবরণ করার বিষয়টিও স্মরণে রাখার তাগিদ দিয়েছেন নগরীর বিভিন্ন স্তরের মানুষ। গত ১২ জুন বরিশাল সিটি নির্বাচনে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ নৌকা প্রতিক নিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন।
তবে বরিশাল মহানগরীর নাগরিক সেবা নিশ্চিতকরণে নতুন মেয়রকে সব কিছুর আগে নগর ভবনে শৃংখলা এবং সততা ও আন্তরিকতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার তাগিদ দিয়েছেন ওয়াকিবহাল মহল। গত কয়েক বছরে কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী নগর ভবনকে নাগরিক সেবার পরিবর্তে নিপীড়নের সুতিকাগারে পরিণত করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি নগরভবনে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর অবর্তমানে সেখানের শৃংখলা ও নাগরিক পরিষেবা আরো অনেকটাই ভেঙ্গে পড়েছিল বলেও অভিযোগ ছিল। নব-নির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের রোববার সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে জানান, মন্ত্রণালয় থেকে কোন ভালো কর্মকর্তাকে বরিশাল সিটি করপোরেশনে নিয়োগ দিলে ‘কাজের পরিবশে না থাকার অভিযোগে’ তারা এখানে যোগ দিতেন না।
অপরদিকে শুধুমাত্র ন্যূনতম কোন বিধিবিধান অনুসরণ না করে গত কয়েক বছরে প্রায় ৪০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকুরিচ্যুত করা সহ ওএসডি’র নামে আরো বিপুল সংখ্যক কর্মীর বেতন-ভাতা পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছিল। আবার অনেককে মাসের পর মাস অফিসে ঢুকতে দেয়া হয়নি। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অনেক দক্ষ ও আন্তরিক কর্মী থাকলেও তাদের সেবা থেকে নগরবাসী বঞ্চিত হয়েছেন।
নগর ভবনের চরম বিশৃংখল পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নাগরিক সেবা যেমনি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে, তেমনি প্রশাসনিক ও আর্থিক শৃংখলারও চরম অবনতি ঘটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর পরিষেবার দায়িত্বে কর্মকর্তার পরিবর্তে কর্মচারীদের দিয়ে কাজ করাতে গিয়ে পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। এমনকি নগরভবনের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আচরণগত সমস্যা এতটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে যে, অনেক নাগরিকই অতি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঐ ভবনের ছায়া মাড়ান না। সাধারণ নাগরিকদের সাথে প্রজাসুলভ আচরণের অভিযোগ রয়েছে কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে।
মহানগরীতে বাড়ির প্ল্যান অনুমোদন অত্যন্ত যন্ত্রণা আর আতঙ্কের নামে পরিণত হয়েছে গত কয়েক বছরে। বিধি বহির্ভূতভাবে একাধিক ফি চাপিয়ে দেয়ার পাশাপাশি লাগাতার হয়রানির কারণে অনেকেই বিগত নগর পরিষদের মেয়াদে বাড়ি করার আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন। এ নাগরিক হয়রানির পেছনেও নগর ভবনের একটি দুষ্ট চক্র জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
বরিশাল মহানগরীতে সুষ্ঠু পরিবহন ব্যবস্থা বলতে কিছু অবশিষ্ট নেই। গোটা নগরী জুড়ে অবৈধ ইজিবাইক, ব্যাটারী চালিত রিক্সা, বিকট গর্জনের থ্রী-হুইলার দাঁপিয়ে বেড়ালেও তার কোনটিরই লাইসেন্স নেই। ফলে নগরী জুড়ে এখন হাজার হাজার অবৈধ যানবাহন নগরবাসীর আতংক বৃদ্ধি করেছে।
৫৮ বর্গ কিলোমিটারের এ নগরীতে প্রায় দেড়শ কিলোমিটার ড্রেনের বেশীরভাগই নিয়মিত পরিষ্কার হচ্ছে না। ফলে ঘন্টায় ৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও এ নগরীর বেশীরভাগ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। নগরীর পাকা ড্রেনগুলোর চেয়েও আরো করুণ অবস্থা খালগুলোর। নিকট অতীতেও বরিশালকে ‘বাংলার ভেনিস’ বলা হত। কিন্তু নগরীর সেসব খালের মৃত্যু হয়েছে আরো আগে। আর এসব মৃত খাল অনেক আগেই মশার নিরাপদ প্রজনন কেন্দ্র আর জলাবদ্ধতার প্রধান কারণে পরিনত হলেও নগর ভবনের পরিচ্ছন্ন বিভাগের বিবেকহীন কর্মীদের নিরুদ্বিগ্ন মনোভাব পরিস্থিতি উন্নয়নে অন্তরায় হয়ে আছে। অথচ নগর ভবনের কনজার্ভেন্সী শাখায় জনবলের সংখ্যা প্রায় হাজারের কাছে। এমনকি নগরীর ৭টি খাল খননে মন্ত্রণালয় ১০ কোটি টাকা বরাদ্দের পরেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সে কাজ আটকে রাখা হয় দু বছরেরও বেশী সময়।
নগরীর প্রধান কয়েকটি রাস্তা ভালো থাকলেও একটু পাশের রাস্তাঘাটের সমস্যা দেখার কেউ নেই। নগর ভবনের কনজার্ভেন্সী বিভাগ এসব রাস্তাঘাট নিয়মিত ঝাড়– দেয়া সহ ঝোপঝাড় পরিষ্কারেও চরম উদাসীন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এ নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সহ বেশীরভাগ জনগুরুত্বপূর্ণ পরিষেবাই বিপর্যস্তকর অবস্থায়। নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিক ও মানসম্মত দূরের কথা, লাগসই বা পরিবেশ অনুকূল ব্যবস্থায় নেয়ার লক্ষ্যেও কোন কর্ম পরিকল্পনা নেই। এ নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ‘মোটেই স্বাস্থ্য ও পরিবেশবান্ধব নয়’ বলে পরিবেশ অধিদপ্তরের দাবী। নগর ভবন থেকে ‘আধুনিক ও মানসম্মত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’র জন্য নতুন প্রকল্প গ্রহণে ‘প্রক্রিয়া শুরু’র কথা আরো দু বছর আগে বলা হলেও তা এগিয়ে নিতে পারেনি নগর ভবন।
এ নগরীর অনেক রাস্তায়ই এখন সন্ধ্যার পরে বিজলি বাতির অভাবে পথচারীদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। অনেক রাস্তাঘাটের পাশের দোকানপাট বন্ধ হবার পরে রাতের আঁধারে পথ হারাবার জোগার পথচারীদের।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের কাছে বিদ্যুৎ বিভাগের বকেয়া প্রায় ৭০ কোটি টাকা। গত দেড় বছরে দুই দফায় বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানী-‘ওজোপাডিকো’ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলেও নগর ভবন থেকে বকেয়া পরিশোধে কোন উদ্যোগ নেই। বিষয়টি বিদ্যুৎ ও জ¦ালানী মন্ত্রণালয় সহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নজরেও রয়েছে। কিন্তু নগর ভবন থেকে বকেয়া দূরের কথা চলতি বিদ্যুৎ বিল পরিশোধেও ন্যুনতম কোন উদ্যোগ নেই।
নগরীর বিশুদ্ধ পানি সমস্যা সমাধানে ২০০৪-০৫ অর্থ বছরে দুটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ও প্রায় ৫০ কিলোমিটার পাইপ লাইন স্থাপনের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। সরকারের প্রায় ৩৫ কোটি টাকার নিজস্ব তহবিলের ঐ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয় ২০১৮-১৯ সালে। কিন্তু সরকারি বিপুল অর্থ ব্যয়ের সে প্রকল্পের সুফল এ নগরবাসী আর পায়নি। ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট দুটি মুখ থুবড়ে পরে আছে।
আর এসব বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যেই আগামী ১৪ নভেম্বর নব নির্বাচিত নগর পরিষদ নিয়ে নতুন নগরপিতা দায়িত্ব গ্রহণ করছেন। রোববার গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে মতবিনিময় সভায় নগর ভবনে শৃংখলা ফিরিয়ে আনা সহ সুষ্ঠু নাগরিক পরিষেবা নিশ্চিত করণে নতুন মেয়র গনমাধ্যম কর্মী সহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষর সহযোগিতা চান। এর আগে গত বৃহস্পতিবার সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ তার মেয়াদ শেষ হবার ৪ দিন আগেই প্যানেল মেয়রের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে নগর ভবন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নেন।
মেয়র আবুল খায়ের নগরীর ভঙ্গুর ড্রেনেজ ব্যবস্থা, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন সহ নগর ভবনে প্রশাসনিক শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার অঙ্গিকার করেছেন। নগরীর দুুটি বাস টার্মিনালে বিশৃংখলা ও অনিয়মের কথা উল্লেখ করে নতুন মেয়র বলেন, এন গরীর সর্বত্রই অনিয়মের জঞ্জালে ভরে আছে। তার ‘ব্যক্তিগত কিছু চাওয়া পাওয়ার নেই’ বলে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, গত কয়েক বছরে বরিশাল মহানগরী অনেক পিছিয়ে পড়েছে। গণমাধ্যম কর্মী সহ নগরবাসীর সহযোগিতা নিয়ে তিনি সব কিছু এগিয়ে নিয়ে যাবার কথাও জানান।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
কালিহাতীতে মারামারির সন্ধিগ্ধ মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ইংল্যান্ড দলে নেই স্টোকস, ফিরলেন রুট
ঝিকরগাছায় মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে চলছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান
কেবল সেবন নয় মাদক ব্যবসায়ও জড়িত তারকারা, ডিসেম্বরের পরে দেখে নেবে কে?
গাবতলীতে আরাফাত রহমান কোকো ফুটবল টুর্নামেন্ট ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সাবেক এমপি লালু
যমুনার ভাঙনের মুখে আলোকদিয়াবাসীর বসতবাড়ি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা
নোবিপ্রবির সঙ্গে নেদারল্যান্ডের ইউট্রিচ বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তি স্বাক্ষর
৯ দফা দাবীতে নওগাঁয় পুলিশ সুপারের কার্যালরে সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান
এলজিইডির এক প্রকল্পে ৪০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক
আবাসিক হোটেলের নামে মাদকের আড্ডা
নোয়াখালীতে মসজিদের ইমাম ও খতিবকে বিদায়ী সংবর্ধনা
খুলনাকে বিদায় করে ফাইনালে মেট্রো
কালিয়াকৈরে চাঁদাবাজের হামলায় চাঁদাবাজ কালামের মৃত্যু
বিরল উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত- ১
কামালপুর সড়কের ব্রিজ ভেঙ্গে মরণফাঁদ চরম দুর্ভোগে পথচারীরা
মেয়েদের ক্রিকেটে যুক্ত হলো যেসব সুযোগ-সুবিধা
বাড়ছে শীতের প্রকোপ, সাধারণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়
জকিগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে হামলার অভিযোগে যুবলীগ নেতা গ্রেফতার
খালিশপুরে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন