চরম দূর্ভোগ নিয়ে আরেক দূর্যোগ ‘মিধিলি’ উপক’লভাগ সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের জন জীবনকে বিপর্যস্ত করে দিয়ে উপক’লে আঘাত হেনেছে। বিকেল নগাদ ঝড়টি বরিশাল সহ দক্ষিণ উপক’ল অতিক্রম সম্পন্ন করবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ রয়েছে। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত বরিশাল মহানগরীতে প্রায় ২শ মিলিমিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এরমধ্যে ৩ ঘন্টায়ই ৯৯ মিলি বৃষ্টি হয়েছে বলে আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে। দূর্যোগ মোকাবেলায় পায়রা বন্দর ও খুলনা শিপইয়ার্ড সব ধরনের সতর্কতা মূলক প্রস্ততি সম্পন্ন করে রেখেছে। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ‘ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী-সিপিপি’র প্রায় ৭৫ হাজার সেচ্ছাসেবক সকাল থেকে দক্ষিণ উপক’ল এলাকায় ঝড়ের আগমন বার্তা প্রচার সহ অতি ঝুকিপূর্ণ এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসতে শুরু করে। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দক্ষিণ উপক’লের বেশকিছু বিচ্ছিন্ন ও ঝুকিপূর্ণ এলাকা থেকে প্রায় ২০ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু নিকটস্থ আশ্রয় কেন্দ্রে নিরাপদ অবস্থান নিয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘হামুণ’এর আঘাতের ২৩ দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার রাতভর উপক’লে মাঝারী থেকে ভারী বর্ষণের পরে সকাল থেকে বরিশাল সহ দক্ষিণ উপকুল যুড়ে মিধিলা’র প্রভাবে ভারী বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ এলাকাই বিদ্যুৎ শূণ্য। রাতভর বরিশালে ৪০ মিলিমিটার ও সাগর পাড়ের খেপুপাড়াতে ৯৭ মিলি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এসময়ে কলাপাড়াতেও ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। দুপুর সাড়ে ৩টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বরিশাল মহানগরীতে ঝড় বৃষ্টির প্রকোপ কিছুটা হ্রাসপেলেও গোটানগরী পানির তলায়।
বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের নদী বন্দরগুলোতে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হলেও পায়রা সমুদ্র বন্দরের ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় রাখা হয়েছে পুরো দক্ষিণ উপক’লকে। বরিশাল সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের সাথে সারা দেশের নৌযোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
বরিশাল বিমান বন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স-এর সকাল সাড়ে ১০টার ফ্লাইট দুপুর ২টা পর্যন্ত বিলম্বিত করে শেষ পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে। তবে দূর্যোগপূর্ণ আবহায়ায় আগেই অনেক যাত্রী তাদের যাত্রা বাতিল করেছেন বলে বিমান বন্দর সূত্রে জানা গেছে। এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র প্রভাবে অগ্রহনের এ অকাল বর্ষণে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের মাঠে থাকা প্রায় ৮ লাখ হেক্টরের আমন ধানের জন্য বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বলে মনে করছেন কৃষিবীদগন। এমনকি আগাম সবজীর পুরোটাই বিনষ্টের পাশাপাশি এর আবাদ আরো বিলম্বিত করবে বলেও মনে করছেন কৃষি সম্বপ্রসারন অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল মহল। এবার দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় ৮.৭০ লাখ হেক্টরে আমন আবাদ সম্পন্ন করেছেন কৃষিযোদ্ধাগন। সবজী আবাদের লক্ষ্য রয়েছে ৬৫ হাজার হেক্টরে। কৃষি মন্ত্রনালয় চলতি মৌসুমে দক্ষিনাঞ্চলে ২৩ লাখ টন আমন চাল ও ৬৫ লাখ টন সবজী উৎপাদনের লক্ষ্য স্থির করে রেখেছে।
দুপুর সাড়ে ১২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দক্ষিণ উপক’লে ‘মিধিলি’ আঘাত হানতে শুরু করে। সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে ৩৫-৪৫ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়ার সাথে মাঝারী থেকে প্রবল বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে।