৬০ শতাংশ ছাড়েও পর্যটক নেই কক্সবাজারে

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২৪ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৪৩ এএম | আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৪৩ এএম

দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পর্যটন খাতে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। সরকার পতনের একদফা দাবিতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর হরতাল-অবরোধের কারণে এই খাতে ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। দেশে সাধারণত পর্যটনের মৌসুম ধরা হয় অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়কাল। এই হিসেবে এখন পর্যটনের ভরা মৌসুম। অথচ সবকটি পর্যটন কেন্দ্র কার্যত ফাঁকা। হরতাল-অবরোধে দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ থাকছে সপ্তাহের বেশিরভাগ সময়। এ ছাড়া সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রেন ও দূরপাল্লার বাসে আগুন দেওয়ার পর অনেক পর্যটকই নির্ধারিত ভ্রমণ বাতিল করছেন। এ অবস্থায় বর্তমানে পর্যটন কেন্দ্রগুলো খাঁ খাঁ করছে।

খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের দাবি, চলমান সংকটের সমাধান না হলে পর্যটনসহ সব খাতই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর মধ্যেই মৌসুমের দুইটি মাস শেষ হচ্ছে। গেল দুই মাসে কোনো ব্যবসা না থাকার কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বিশেষ করে হোটেল, রেস্তোরাঁ, শপিংমল, বার্মিজ মার্কেট, শুটকি মার্কেট, যানবাহন, শামুক ও ঝিনুক মার্কেট, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন।

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি তোফায়েল আহমদ বলেন, করোনার ব্যবসায়িক ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই হরতাল-অবরোধের কারণে এই খাতের মরণদশা। মানুষ ঘুরতে যায় আনন্দ করতে, কেউই চাইবে না কোনো ধরনের আতঙ্কের মধ্যে থাকতে। ফলে যেসব পর্যটন কেন্দ্রে মানুষ সবচেয়ে বেশি ঘুরতে যায়, সেসব পর্যটন কেন্দ্র এখন একেবারেই খালি। বিমানে কিছু পর্যটক আসা-যাওয়া করলেও তা উল্লেখ করার মতো নয়।

তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধের কারণে হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হবে। কারণ, নভেম্বর প্রায় শেষ, ডিসেম্বরে পরিস্থিতির উন্নতি হবে- এমন লক্ষণ আমরা দেখছি না। জানুয়ারিতে নির্বাচন। ফলে মৌসুমের চার মাসের মধ্যে তিন মাস কোনো ব্যবসা হবে না। আর ফেব্রুয়ারিতে ব্যবসা করে খরচও ওঠানো যাবে না। কারণ, সারা বছরের ব্যবসা হয় এই চার মাসে।

দেশের আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে কক্সবাজার, কুয়াকাটা, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলসহ প্রায় সবকটিই এখন পর্যটকশূন্য। বান্দরবানের একটি অভিজাত হোটেলের মালিক কিশলুর রহমান বলেন, নভেম্বরে মাত্র দুজন পর্যটক রিসোর্টে তিনদিন ছিলেন। এ ছাড়া আর কোনো পর্যটক আসেননি। প্রায় ৩০ জন পর্যটক বিভিন্ন সময় রুম বুকিং দিয়েছিলেন। হরতাল-অবরোধের কারণে সব বুকিংই বাতিল হয়েছে।

কক্সবাজারের তিন তারকা হোটেলের ম্যানেজার শামীম হাসান বলেন, অবরোধ-হরতালের কারণে কক্সবাজার পর্যটকশূন্য। বিমানে কিছু পর্যটক আসছেন, তাও একেবারে নগণ্য। তিনি বলেন, হোটেলের রুম ভাড়াসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার পরও পর্যটক পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি অনেকে আগে থেকে ডিসেম্বরের জন্য রুম বুকিং দিলেও এখন তা বাতিল করছেন। বর্তমানে মাত্র ১০ শতাংশ রুম ভাড়া দেওয়া যাচ্ছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে অন্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে। হরতাল-অবরোধের কারণে পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

কক্সবাজার হোটেল গ্র্যান্ড সেন্ডির মালিক আবদুর রহমান বলেন পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকের আনাগোনা নেই। বান্দরবানের পূরবী হোটেলের ম্যানেজার শিমুল দত্ত বলেন, পর্যটন স্পট নীলাচল, মেঘলা, চিম্বুক, নীলগিরি, নীলদিগন্ত, শৈলপ্রপাতসহ দর্শনীয় স্থানগুলো সবই ফাঁকা। বান্দবানের ট্যুরিস্ট গাড়ি শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন ফোনে বলেন, তিন শতাধিক ট্যুরিস্ট গাড়ির পাঁচ শতাধিক শ্রমিক রয়েছেন। তারা পর্যটকের ওপর নির্ভরশীল। অবরোধে পর্যটক না আসায় চালক শ্রমিকরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। অনেকে ঠিকমতো খেতে পর্যন্ত পারছেন না। বান্দরবানে দীর্ঘদিন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাসহ পাহাড়ের অভ্যন্তরীণ সমস্যায় পর্যটনশিল্প মুখথুবড়ে পড়েছিল। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে না হতেই রাজনৈতিক অস্থিরতায় পর্যটকদের আনাগোনা আবার থমকে গেছে। ফলে এবারের মৌসুমে ব্যবসায়ীদের নিশ্চিতভাবেই অনেক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ১ হাজার ৪০০ পর্যটন স্থান রয়েছে। এর মধ্যে ২৮১টি স্থানে পর্যটকরা নিয়মিত যান। প্রতিবছর এসব পর্যটন কেন্দ্রে প্রায় দুই কোটি দেশি পর্যটক ভ্রমণ করেন।

পর্যটক আকর্ষণ বাড়াতে ও রাতের বিনোদনের জন্য মাত্র ক'দিন আগে কক্সবাজারে মাসব্যাপী শুরু হয়েছে শিল্প ও বানিজ্যমেলা। সেখানে নেই কোন কোলাহল। আর কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের প্রতিটি পয়েন্ট এখন শোনশান নিরব।বন্ধ হয়ে গেছে কক্সবাজার শহরের আড়াইশ রেস্তোরাঁ। হোটেল রেস্তোরাঁ থেকে প্রতিদিন ছাঁটাই করা হচ্ছে কর্মচারী।

কক্সবাজার চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাষ্টিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, কক্সবাজারের হোটেল মোটেল ও বিপণী বিতানসহ পর্যটন সেক্টরে গত দুই মাস ধরে দৈনিক ১৫/১৬ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সুদের টাকা আদায়ে ঝগড়া ফেরাতে একজন খুন, আহত চার
সালথায় কলেজ ছাত্রকে হাতুড়িপেটা
বাংলাদেশের ভেতরে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ বিএসএফের, দু’দিন ধরে উত্তেজনা চলছে
কত তারিখে কোথায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির জনসংযোগ
বগুড়ার টপ টেরর যুবলীগ নেতা আলহাজ শেখ গ্রেপ্তার
আরও

আরও পড়ুন

সুদের টাকা আদায়ে ঝগড়া ফেরাতে একজন খুন, আহত চার

সুদের টাকা আদায়ে ঝগড়া ফেরাতে একজন খুন, আহত চার

সালথায় কলেজ ছাত্রকে হাতুড়িপেটা

সালথায় কলেজ ছাত্রকে হাতুড়িপেটা

বাংলাদেশের ভেতরে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ বিএসএফের, দু’দিন ধরে উত্তেজনা চলছে

বাংলাদেশের ভেতরে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ বিএসএফের, দু’দিন ধরে উত্তেজনা চলছে

পঙ্গু হাসপাতালে আগুন, ফায়ার সার্ভিস যাওয়ার আগেই নির্বাপণ

পঙ্গু হাসপাতালে আগুন, ফায়ার সার্ভিস যাওয়ার আগেই নির্বাপণ

কত তারিখে কোথায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির জনসংযোগ

কত তারিখে কোথায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির জনসংযোগ

তিব্বতে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১২৬, নিখোঁজ অনেকে

তিব্বতে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১২৬, নিখোঁজ অনেকে

খালেদা জিয়া দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন : মির্জা ফখরুল

খালেদা জিয়া দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন : মির্জা ফখরুল

বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করলেন জামায়াত আমির

বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করলেন জামায়াত আমির

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৫ শিশুসহ ৪৯ ফিলিস্তিনি নিহত

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৫ শিশুসহ ৪৯ ফিলিস্তিনি নিহত

প্রত্যর্পণের চাপের মধ্যেই হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়াল ভারত

প্রত্যর্পণের চাপের মধ্যেই হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়াল ভারত

বগুড়ার টপ টেরর যুবলীগ নেতা আলহাজ শেখ গ্রেপ্তার

বগুড়ার টপ টেরর যুবলীগ নেতা আলহাজ শেখ গ্রেপ্তার

ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে লস অ্যাঞ্জেলেস

ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে লস অ্যাঞ্জেলেস

সাতক্ষীরায় অপহৃত তরুণী উদ্ধার, যুবদল নেতাসহ গ্রেপ্তার দুই

সাতক্ষীরায় অপহৃত তরুণী উদ্ধার, যুবদল নেতাসহ গ্রেপ্তার দুই

পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে ইইউর সহায়তা চাইলেন- পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে ইইউর সহায়তা চাইলেন- পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিদেশ সফর, দেশবাসীর নিকট দোয়া চাইলেন কায়কোবাদ

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিদেশ সফর, দেশবাসীর নিকট দোয়া চাইলেন কায়কোবাদ

লক্ষ্মীপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করা সেই নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার

লক্ষ্মীপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করা সেই নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার

লক্ষ্মীপুরে বেড়েছে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া হাসপাতালের ফ্লোরে ও বারান্দায় ঠাঁই হচ্ছে রোগীদের

লক্ষ্মীপুরে বেড়েছে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া হাসপাতালের ফ্লোরে ও বারান্দায় ঠাঁই হচ্ছে রোগীদের

সাতসকালেই ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু নিয়ে দূষণের শীর্ষে ঢাকা

সাতসকালেই ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু নিয়ে দূষণের শীর্ষে ঢাকা

সচিবালয়ের গেটে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া-পুলিশের ফাঁকা গুলি

সচিবালয়ের গেটে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া-পুলিশের ফাঁকা গুলি

ফ্রান্সের উগ্র ডানপন্থী রাজনীতিবিদ মারি লা পেনের মৃত্যু

ফ্রান্সের উগ্র ডানপন্থী রাজনীতিবিদ মারি লা পেনের মৃত্যু