ঘূর্ণিঝড় ‘মিগজাউম’ দূর্বল ও স্থল নি¤œচাপে পরিনত হয়ে মিলিয়ে গেলেও গত পাঁচদিনের টানা মেঘলা আকাশ সহ হালকা থেকে মাঝারী বর্ষণের পরে শণিবার সকালে ঝলমলে রোদ নিয়ে সূর্য দেখা দিলেও উত্তরের কনকণে বাতাসে দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবন অনেকটাই বিপর্যস্ত। গত দুমাসে ৩টি দূর্যোগে জনস্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের ঠান্ডাজনিত নানা রোগ ব্যাধীর প্রকোপ বৃদ্ধির আশংকা করছেন চিকিৎসকগন।
শণিবার সকালে তাপমাত্রার পারদ ১৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে গেলেও সাইবরেীয়ান বায়ুর আগমনে শীতের অনুভুতি ক্রমশ বাড়ছে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবীদগন। তবে গত দু মাসে পর পর ৩টি নি¤œচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিনত হয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম উপক’লে আছড়ে পড়েছে। এর প্রভাবে বিরূপ আবহাওয়া দক্ষিণাঞ্চলের জনস্বাস্থ্যের পাশাপাশি মাঠ যুড়ে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ হেক্টরের আমন ও যে প্রায় ৬০ হাজার হেক্টরে শীতকালীন সবজি আবাদের লক্ষ রয়েছে সেখানে বিরূপ পরিস্থিতি তৈরী করেছে। এবার দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় যে ৮.৭০ লাখ হেক্টরে আমন আবাদ সম্পন্ন করেছেন কৃষিযোদ্ধাগন, উৎপাদন লক্ষ রয়েছে ২৩ লাখ টন চাল। এছাড়াও প্রায় ৬০ হাজার হেক্টরে দেড় লাখ টন সবজী উৎপাদনের লক্ষ্য স্থির করে রেখেছে কৃষি মন্ত্রনালয়।
অক্টোবরে ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’ দক্ষিণ উপক’লে ৭৫-৮০কিলোমিটার ঝড়ো হাওয়ার সাথে প্রবল বর্ষণ নিয়ে আঘাত হনায় প্রায় ২০ ভাগ আমন ফসলের ক্ষতি ছাড়াও রবি আবাদ যথেষ্ঠ বিলম্বিত হয়। কৃষি ও মৎস্য ক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমান ছিল ২শতাধিক কোটি টাকার ওপরে। কিন্তু তার ২২ দিনের মাথায় চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট আরেক ঝড় ‘মিগাজাউম’ বরিশালের পায়রা বন্দর থেকে প্রায় সাড়ে ১২শ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম উপক’লে আঘাত হানলেও তার প্রভাবে গত ৫ দিন ধরে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে লাগাতার মেঘলা আকাশের সাথে হালকা থেকে অস্থায়ী মাঝারী বর্ষণ মাঠে থাকা প্রায় ৬০ ভাগ আমন ধানের জন্য চরম ঝুকি তৈরী করেছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে মাঠে থাকা আমনের প্রায় ৮০ ভাগই মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। ফলে এসব ধানে চিটা হবার সম্ভবনা প্রবল বলেও মনে করছেন কৃষিবীদগন। এতেকরে দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় আমন থেকে এবার যে ২৩ লাখ টন চাল পাবার আশা কৃষি মন্ত্রনালয়ের, সে লক্ষ্যে পৌছান নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে ইতোমধ্যে। আমনই এখনো দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল।
এমনকি আমনের ওঠার আগেই এ অঞ্চলে রবি ফসল আবাদের কার্যক্রম শুরু হলেও অক্টোবর থেকে বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা পর পর ৩টি ঘূর্ণিঝড় দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি ব্যবস্থায় চরম ঝুকি সৃষ্টি করছে। অগ্রহায়ন মাস শেষ হতে চললেও দক্ষিণাঞ্চলে শীতকালীন সবজি আবাদ বার বারই পিছিয়ে যাচ্ছে। ফলে এ অঞ্চলে দেড় লাখ টন সবজীর উৎপাদনেও অনিশ্চয়তা বাড়ছে।
এদিকে মিগজাউম’র প্রভাবে গত ৫দিনের মেঘলা আকাশের সাথে হালকা থেকে মাঝারী বর্ষণ বিদায়ের পর পরই তাপমাত্রার পারদ ২৩ ডিগ্রী থেকে ১৮ ডিগ্রীতে হ্রাস পাবার সাথে সাইবেরিয়ান বায়ুতে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে শীতের অনুভুতি যথেষ্ঠ বেড়ে গেছে। আবহাওয়া বিভবাগের হিসেবে চলতি মাসে বরিশালে স্বাভাবিক সর্বনি¤œ তাপমাত্রার পারদ ১৩.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াসে হ্রাস পাবার কথা।
শণিবার সকাল থেকে সূর্য আপন মহিমায় উদ্ভাসিত হলেও উত্তর-পশ্চিমের সাইবেরিয়ান কনকনে হাওয়ায় জনজীবন অনেকটাই বিপর্যস্ত। অনেকেই সকাল থেকে বেলা না বারা পর্যন্ত ঘরের বাইরে বের হননি। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আগামী কয়েক দিনেই তাপমাত্রার পারদ ক্রমে হ্রাস পাবার কথাও বলা হয়েছে।