ঢাকা   শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১২ আশ্বিন ১৪৩১

শেরপুর থেকে হারিয়ে যাওয়ার পথে ডুবুরি পাখি পানকৌড়ি

Daily Inqilab ঝিনাইগাতী(শেরপুর) প্রতিনিধি

২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:৫০ পিএম | আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:৫০ পিএম

বর্তমানে নদীর তীরে পানকৌড়িকে ডুব দিতে এখন আর খুব একটা দেখা যায় না। অথচ বছর ১০-১২ আগেও ঝাঁকে ঝাঁকে দেখা যেত। ঝোঁপঝাড় জঙ্গল, জলাশয়, পুকুর, খাল-বিল, ধানক্ষেত ও নদীতে কালো কুচকুচে পাখিটি শিকারের অপেক্ষায় থাকতেন শিকারিরা। এই পাখিকে গ্রামেই যাদের শৈশব কেটেছে তারা পানকৌড়ি বা ডুবুরি পাখি বলেন। পানি আর মাছ যেখানে। সেখানেই ছিল ওদের অবাধ বিচরণ। শিকারীদের ফাঁদে আটকা পড়াাসহ খাদ্যের সংকট ও পরিবেশের বিপর্যয়ের কারণে গত ১০-১২ বছরে অস্বাভাবিক হারে হ্রাস পেয়েছে পানকৌড়ির সংখ্যা। পাখিদের আবাসস্থল দখল, পাহাড় কাটা, সংরক্ষিত বনাঞ্চল নিধনসহ ফসলি জমিতে বিষ প্রয়োগের ফলে ডুবুরি পাখি দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে বলে ধারণা করেন পরিবেশবাদীরা। শেরপুরের বিশাল গারো পাহাড়ে বনভূমির বন নিধনে বন আজ ধ্বংসের মুখে। তাছাড়া পাহাড়ের গহীনে মানুষের থাবা বাড়িঘর নির্মাণ, জলাশয় দখল, নদী ভরাট, পাখির বাসস্থান সংকুচিত হওয়ায় পানকৌড়ি আজ বিলুপ্তির পথে। শেরপুরের বিশিষ্ট পাখি গবেষক ও সাংবাদিক মুগণিউর রহমান মনি দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী বিলুপ্ত প্রাণীগুলো সংরক্ষণের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। বর্তমানে পানকৌড়ি তেমন দেখা মেলে না। হয়তো একদিন বিলুপ্তই হয়ে যাবে। তাই এখন থেকে বন বিভাগ চাইলে পাখিদের জন্য বিশেষ আবাসস্থলের ব্যবস্থা করতে পারেন। শেরপুরের পাহাড়, নদীসহ সবুজে ভরপুর। তাই হরেক পাখির সম্মিলিত জনপদের চিত্র ফুটে উঠে অতিত স্মৃতিতে। এ অঞ্চলে জ্যামিতিক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বাসস্থানের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাতে কৃষি জমি, খাল-বিল, জলাশয়, নদী ও পুকুরের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। যে কৃষি জমি অবশিষ্ট আছে। সেখানে বিষ প্রয়োগের ফলে পোকামাকড়, মাছ, ব্যাঙ, সাপ কমে গিয়েছে। তারপর পাহাড় কাটা। গাছ কাটা। নদী ভরাটসহ পরিবেশ দূষণের পরিমাণ বাড়ছে দিন দিন। খাদ্যের সংকট ও পরিবেশের বিপর্যয়ের কারণে গত ১০-১২ বছরে ক্রমহ্রাসমান হারে কমতে শুরু করেছে পানকৌড়ির সংখ্যা। যেখানে পানকৌড়ির মাছ শিকারের নিয়মিত দৃশ্য দেখা যেতো। তা আর যেন চোখেই পড়ে না। স্থানীয়রা জানান, অপরূপ সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি গারো পাহাড়ের নদী নালা খাল বিলে ছিল পানকৌড়ির অবাধ বিচরণ। সেই পানকৌড়িগুলো আজ যেন হারিয়েই গেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এই পাখি সংরক্ষণের বিধান থাকলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা একেবারেই নীরব বলে স্থানীয়রা মনে করেন। পানকৌড়ি মূলত উষ্ণ ও নাতিশীতোষ্ণ এলাকায় বিচরণ করে। কিন্তু গত ১০-১২ বছরে জলবায়ু পরিবর্তন ও বহু উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের কারণে এই অঞ্চলে প্রাকৃতিক আবহাওয়াা অতিমাত্রায় বেড়েছে। মূলত এই পাখি খাদ্য আহরণের জন্য পানির খুব গভীরে গিয়ে ছোট মাছ, শামুক ও বিভিন্ন শৈবাল শিকার করে থাকে। তবে, বর্তমানে এলাকার চারভাগের তিন ভাগ উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের বদৌলতে পানি শূন্য। বহু প্রজাতির পাখি প্রায় বিলুপ্ত। তার মধ্যে পানকৌড়ি একটি। পানকৌড়ির আবাসস্থল বিনষ্ট হয়ে গেছে। বনবিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মকরুল ইসলাম আকন্দ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পানকৌড়ি পাখিটি বিগত সময়ে হ্রাস পেয়েছে কিনা সে বিষয়ে কোন তথ্য নেই। তবে পাখি শিকারীদের বিরুদ্ধে তারা অভিযান পরিচালনা করেন। পাশাপাশি বিলুপ্তির পথে কোন কোন পাখি রয়েছে সেই বিষয়ে গবেষণার সুযোগ নেই তাদের। বাসস্থান নষ্ট হয়ে যাওয়া। খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়া। পাখিটি কমে আসার প্রধান কারণ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে জলাশয় ভরাট হচ্ছে। ফলে পানকৌড়ি নিরাপদ বাসস্থানের জন্য অন্যত্র চলে যাচ্ছে। সংখ্যা কমলেও পানকৌড়ি এখনো লাল তালিকাভুক্ত হয়নি। বর্তমানেও কিছু কিছু স্থানে দেখা যায়। তালিকাভুক্ত হলে এটি সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। পানকৌড়ি আমাদের অনেক উপকার করে। ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে ফেলে। তাদের বিষ্টা থেকে সার হয়। মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া পানিতে পড়তে তা মাছের খাদ্য হিসেবে পরিণত হয়। কেউ পাখি শিকার করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া প্রযয়োজন।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

২১ দিনের যুদ্ধবিরতি চায় যুক্তরাষ্ট্র-ইইউসহ ১১ দেশ

২১ দিনের যুদ্ধবিরতি চায় যুক্তরাষ্ট্র-ইইউসহ ১১ দেশ

পশ্চিমাদের উদ্বেগ বাড়িয়ে পরমাণু নীতিতে বদল আনছে রাশিয়া

পশ্চিমাদের উদ্বেগ বাড়িয়ে পরমাণু নীতিতে বদল আনছে রাশিয়া

প্রধান বিচারপতির সঙ্গে মাসদার হোসেনের সাক্ষাত

প্রধান বিচারপতির সঙ্গে মাসদার হোসেনের সাক্ষাত

দেশে শতভাগ নবায়যোগ্য জ্বালানির ব্যবহার নিশ্চিত করার দাবি

দেশে শতভাগ নবায়যোগ্য জ্বালানির ব্যবহার নিশ্চিত করার দাবি

গণমানুষের কল্যাণই জামায়াতের রাজনীতির আদর্শ : শফিকুর রহমান

গণমানুষের কল্যাণই জামায়াতের রাজনীতির আদর্শ : শফিকুর রহমান

সাবেক প্রক্টর গোলাম রাব্বানী, জয় লেখক রাব্বানী সাদ্দামসহ ছাত্রলীগের ৬৬ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

সাবেক প্রক্টর গোলাম রাব্বানী, জয় লেখক রাব্বানী সাদ্দামসহ ছাত্রলীগের ৬৬ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

তরুণরাই নতুন বাংলাদেশ গড়বে: ড. ইউনূস

তরুণরাই নতুন বাংলাদেশ গড়বে: ড. ইউনূস

সোনালি ব্যাগের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত কেন?

সোনালি ব্যাগের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত কেন?

ফ্যাসিবাদের ধারক-বাহক মিডিয়া সংস্কার করা জরুরি

ফ্যাসিবাদের ধারক-বাহক মিডিয়া সংস্কার করা জরুরি

জাতিসংঘে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন তুলে ধরছেন ড. ইউনূস

জাতিসংঘে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন তুলে ধরছেন ড. ইউনূস

ভারতে ধর্মীয় উৎসবের সময় পানিতে ডুবে ৪৬ জনের সলিল সমাধি

ভারতে ধর্মীয় উৎসবের সময় পানিতে ডুবে ৪৬ জনের সলিল সমাধি

মহারাষ্ট্রের হিন্দু পুরোহিত রামগিরি মহারাজ ও বিজেপির নিতেশ রানেকে গ্রেফতার দাবীতে সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

মহারাষ্ট্রের হিন্দু পুরোহিত রামগিরি মহারাজ ও বিজেপির নিতেশ রানেকে গ্রেফতার দাবীতে সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

দুর্বল ব্যাংকগুলো ধার পাচ্ছে সাড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকা

দুর্বল ব্যাংকগুলো ধার পাচ্ছে সাড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকা

জাবিতে সপ্তাহব্যাপী নাট্যপার্বণ শুরু শনিবার

জাবিতে সপ্তাহব্যাপী নাট্যপার্বণ শুরু শনিবার

সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে জাবিতে মানববন্ধন

সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে জাবিতে মানববন্ধন

পবিপ্রবিতে নবনিযুক্ত ভাইস-চ্যান্সেলর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম

পবিপ্রবিতে নবনিযুক্ত ভাইস-চ্যান্সেলর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম

গোলাপগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

গোলাপগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

মধ্যপ্রাচ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের হুঁশিয়ারি বাইডেনের

মধ্যপ্রাচ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের হুঁশিয়ারি বাইডেনের

প্রথমবার তাইওয়ান প্রণালীতে জাপানের যুদ্ধজাহাজ

প্রথমবার তাইওয়ান প্রণালীতে জাপানের যুদ্ধজাহাজ

চীনে রাশিয়ার গোপন যুদ্ধ ড্রোন প্রকল্প চালু

চীনে রাশিয়ার গোপন যুদ্ধ ড্রোন প্রকল্প চালু