শেরপুর থেকে হারিয়ে যাওয়ার পথে ডুবুরি পাখি পানকৌড়ি

Daily Inqilab ঝিনাইগাতী(শেরপুর) প্রতিনিধি

২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:৫০ পিএম | আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:৫০ পিএম

বর্তমানে নদীর তীরে পানকৌড়িকে ডুব দিতে এখন আর খুব একটা দেখা যায় না। অথচ বছর ১০-১২ আগেও ঝাঁকে ঝাঁকে দেখা যেত। ঝোঁপঝাড় জঙ্গল, জলাশয়, পুকুর, খাল-বিল, ধানক্ষেত ও নদীতে কালো কুচকুচে পাখিটি শিকারের অপেক্ষায় থাকতেন শিকারিরা। এই পাখিকে গ্রামেই যাদের শৈশব কেটেছে তারা পানকৌড়ি বা ডুবুরি পাখি বলেন। পানি আর মাছ যেখানে। সেখানেই ছিল ওদের অবাধ বিচরণ। শিকারীদের ফাঁদে আটকা পড়াাসহ খাদ্যের সংকট ও পরিবেশের বিপর্যয়ের কারণে গত ১০-১২ বছরে অস্বাভাবিক হারে হ্রাস পেয়েছে পানকৌড়ির সংখ্যা। পাখিদের আবাসস্থল দখল, পাহাড় কাটা, সংরক্ষিত বনাঞ্চল নিধনসহ ফসলি জমিতে বিষ প্রয়োগের ফলে ডুবুরি পাখি দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে বলে ধারণা করেন পরিবেশবাদীরা। শেরপুরের বিশাল গারো পাহাড়ে বনভূমির বন নিধনে বন আজ ধ্বংসের মুখে। তাছাড়া পাহাড়ের গহীনে মানুষের থাবা বাড়িঘর নির্মাণ, জলাশয় দখল, নদী ভরাট, পাখির বাসস্থান সংকুচিত হওয়ায় পানকৌড়ি আজ বিলুপ্তির পথে। শেরপুরের বিশিষ্ট পাখি গবেষক ও সাংবাদিক মুগণিউর রহমান মনি দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী বিলুপ্ত প্রাণীগুলো সংরক্ষণের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। বর্তমানে পানকৌড়ি তেমন দেখা মেলে না। হয়তো একদিন বিলুপ্তই হয়ে যাবে। তাই এখন থেকে বন বিভাগ চাইলে পাখিদের জন্য বিশেষ আবাসস্থলের ব্যবস্থা করতে পারেন। শেরপুরের পাহাড়, নদীসহ সবুজে ভরপুর। তাই হরেক পাখির সম্মিলিত জনপদের চিত্র ফুটে উঠে অতিত স্মৃতিতে। এ অঞ্চলে জ্যামিতিক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বাসস্থানের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাতে কৃষি জমি, খাল-বিল, জলাশয়, নদী ও পুকুরের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। যে কৃষি জমি অবশিষ্ট আছে। সেখানে বিষ প্রয়োগের ফলে পোকামাকড়, মাছ, ব্যাঙ, সাপ কমে গিয়েছে। তারপর পাহাড় কাটা। গাছ কাটা। নদী ভরাটসহ পরিবেশ দূষণের পরিমাণ বাড়ছে দিন দিন। খাদ্যের সংকট ও পরিবেশের বিপর্যয়ের কারণে গত ১০-১২ বছরে ক্রমহ্রাসমান হারে কমতে শুরু করেছে পানকৌড়ির সংখ্যা। যেখানে পানকৌড়ির মাছ শিকারের নিয়মিত দৃশ্য দেখা যেতো। তা আর যেন চোখেই পড়ে না। স্থানীয়রা জানান, অপরূপ সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি গারো পাহাড়ের নদী নালা খাল বিলে ছিল পানকৌড়ির অবাধ বিচরণ। সেই পানকৌড়িগুলো আজ যেন হারিয়েই গেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এই পাখি সংরক্ষণের বিধান থাকলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা একেবারেই নীরব বলে স্থানীয়রা মনে করেন। পানকৌড়ি মূলত উষ্ণ ও নাতিশীতোষ্ণ এলাকায় বিচরণ করে। কিন্তু গত ১০-১২ বছরে জলবায়ু পরিবর্তন ও বহু উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের কারণে এই অঞ্চলে প্রাকৃতিক আবহাওয়াা অতিমাত্রায় বেড়েছে। মূলত এই পাখি খাদ্য আহরণের জন্য পানির খুব গভীরে গিয়ে ছোট মাছ, শামুক ও বিভিন্ন শৈবাল শিকার করে থাকে। তবে, বর্তমানে এলাকার চারভাগের তিন ভাগ উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের বদৌলতে পানি শূন্য। বহু প্রজাতির পাখি প্রায় বিলুপ্ত। তার মধ্যে পানকৌড়ি একটি। পানকৌড়ির আবাসস্থল বিনষ্ট হয়ে গেছে। বনবিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মকরুল ইসলাম আকন্দ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পানকৌড়ি পাখিটি বিগত সময়ে হ্রাস পেয়েছে কিনা সে বিষয়ে কোন তথ্য নেই। তবে পাখি শিকারীদের বিরুদ্ধে তারা অভিযান পরিচালনা করেন। পাশাপাশি বিলুপ্তির পথে কোন কোন পাখি রয়েছে সেই বিষয়ে গবেষণার সুযোগ নেই তাদের। বাসস্থান নষ্ট হয়ে যাওয়া। খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়া। পাখিটি কমে আসার প্রধান কারণ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে জলাশয় ভরাট হচ্ছে। ফলে পানকৌড়ি নিরাপদ বাসস্থানের জন্য অন্যত্র চলে যাচ্ছে। সংখ্যা কমলেও পানকৌড়ি এখনো লাল তালিকাভুক্ত হয়নি। বর্তমানেও কিছু কিছু স্থানে দেখা যায়। তালিকাভুক্ত হলে এটি সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। পানকৌড়ি আমাদের অনেক উপকার করে। ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে ফেলে। তাদের বিষ্টা থেকে সার হয়। মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া পানিতে পড়তে তা মাছের খাদ্য হিসেবে পরিণত হয়। কেউ পাখি শিকার করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া প্রযয়োজন।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

মোরেলগঞ্জে পার্টনার ফিল্ড স্কুলের প্রশিক্ষণার্থীরা সনদ ও ভাতা বঞ্চিত
লক্ষ্মীপুরে আন্দোলনে শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার
ময়মনসিংহসহ চার শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে ওএসডি
অবশেষে কাজের সমাপ্তি হলো সিকৃবির নান্দনিক অডিটোরিয়ামের
শ্বশুরকে সৌদি প্রবাসীর কাফনের কাপড় উপহার, রাগ করে স্বামীকে স্ত্রীর তালাক
আরও

আরও পড়ুন

মোরেলগঞ্জে পার্টনার ফিল্ড স্কুলের প্রশিক্ষণার্থীরা সনদ ও ভাতা বঞ্চিত

মোরেলগঞ্জে পার্টনার ফিল্ড স্কুলের প্রশিক্ষণার্থীরা সনদ ও ভাতা বঞ্চিত

লক্ষ্মীপুরে আন্দোলনে শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

লক্ষ্মীপুরে আন্দোলনে শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

বাবা-চাচা-মামার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হবে কেন, প্রশ্ন সারজিসের

বাবা-চাচা-মামার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হবে কেন, প্রশ্ন সারজিসের

ময়মনসিংহসহ চার শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে ওএসডি

ময়মনসিংহসহ চার শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে ওএসডি

অবশেষে কাজের সমাপ্তি হলো সিকৃবির নান্দনিক অডিটোরিয়ামের

অবশেষে কাজের সমাপ্তি হলো সিকৃবির নান্দনিক অডিটোরিয়ামের

শ্বশুরকে সৌদি প্রবাসীর কাফনের কাপড় উপহার, রাগ করে স্বামীকে স্ত্রীর তালাক

শ্বশুরকে সৌদি প্রবাসীর কাফনের কাপড় উপহার, রাগ করে স্বামীকে স্ত্রীর তালাক

আটঘরিয়ায় জালসায় তুচ্ছ ঘটনায় বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ২

আটঘরিয়ায় জালসায় তুচ্ছ ঘটনায় বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ২

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে বেশি টাকা গুণলেই গোপনে মিলছে সার

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে বেশি টাকা গুণলেই গোপনে মিলছে সার

ঘোড়াঘাটে পাওয়ার টিলার ট্রলি চালাতে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

ঘোড়াঘাটে পাওয়ার টিলার ট্রলি চালাতে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

সিন্ডিকেটের প্রভাবে পেঁয়াজ চাষীদের মাথায় হাত

সিন্ডিকেটের প্রভাবে পেঁয়াজ চাষীদের মাথায় হাত

গাড়ি নিয়ে খালেদের বাহাস, স্পষ্ট করে যা বললেন হাসনাত

গাড়ি নিয়ে খালেদের বাহাস, স্পষ্ট করে যা বললেন হাসনাত

চন্দ্রঘোনায় প্রতিষ্ঠান ওমরা হজ্জ্ব ঘোষণা

চন্দ্রঘোনায় প্রতিষ্ঠান ওমরা হজ্জ্ব ঘোষণা

অপহরণের ১২ ঘণ্টা পরেও উদ্ধার হয়নি মার্চেন্ট ব্যবসায়ী

অপহরণের ১২ ঘণ্টা পরেও উদ্ধার হয়নি মার্চেন্ট ব্যবসায়ী

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রতিটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে: প্রকৌশলী জাকির সরকার

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রতিটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে: প্রকৌশলী জাকির সরকার

কাতারের কাটারা কালচার ভিলেজে বাংলাদেশি চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজন

কাতারের কাটারা কালচার ভিলেজে বাংলাদেশি চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজন

সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আরব সফরে অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে বিনিয়োগের আহ্বান জানাবেন

সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আরব সফরে অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে বিনিয়োগের আহ্বান জানাবেন

ভারতে আটক জেলেরা দেশে ফেরত আসতে পারেন সোমবার

ভারতে আটক জেলেরা দেশে ফেরত আসতে পারেন সোমবার

কুষ্টিয়ায় বিএনপি নেতার বাড়ি থেকে অস্ত্র ও বোমা উদ্ধার

কুষ্টিয়ায় বিএনপি নেতার বাড়ি থেকে অস্ত্র ও বোমা উদ্ধার

পিকআপ ভ্যান ও মোটরসাইকেলের সংঘষে যুবক নিহত

পিকআপ ভ্যান ও মোটরসাইকেলের সংঘষে যুবক নিহত

ছাত্রদের মনে রাখতে হবে শুধু স্লোগান দিয়ে দেশ শাসন করা যায় না- ডঃ আব্দুল মঈন খান

ছাত্রদের মনে রাখতে হবে শুধু স্লোগান দিয়ে দেশ শাসন করা যায় না- ডঃ আব্দুল মঈন খান