ভোট উৎসব যেন ভোট শোকে পরিণত হতে যাচ্ছে সিলেটে : শমসের মুবিন সহ বেশিরভাগ প্রার্থী মাঠ ছাড়া !
২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:০২ পিএম | আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:০২ পিএম
ভোট উৎসব যেন ভোট শোকে পরিণত হতে যাচ্ছে সিলেটে। নেই মাতামাতি, নেই চায়ের টেবিলে ভোটের ঝড়। একান্ত দল ও প্রার্থী কেন্দ্রিক যুদ্ধে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। সেই দল আবার তৃণমুলে বিভক্ত হয়ে পড়ছে নৌকা ও নৌকার মনোনয়ন বঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থীর দৌড়ঝাঁপে। এই পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ সিলেটে। অপরদিকে, নির্বাচন বয়কট করে মাঠে তৎপর রয়েছে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ সমমান অন্য দলগুলো। সেকারনে ফাঁকা মাঠে নির্বাচনের উৎসব মুখর পরিবেশ তৈরীতে এখনো পুরোদমে ব্যর্থ ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ। উৎসব তৈরী চেষ্টা চলছিল আ’লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর মোড়কে। এতে দুধের স্বাধ গোলে মেঠার লক্ষণ উবে যাচ্ছে। বরং তৃণমুল আ’লীগে এখন বিভক্তির নানা সুর। এমপি লীগ ও আ’লীগের একাংশ সক্রিয় হচ্ছে নৌকা মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে, সুবিধা বঞ্চিত দলের অপর অংশ সরব হচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সাথে। কিন্তু এমপি লীগ এখান্ওে চোখ রাঙ্গাচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর উপরে। সেকারনে আ’লীগের তৃণমুলে ছড়িয়ে পড়েছে নির্বাচন কেন্দ্রিক গৃহদাহ। দলের অনেকে আবার গা বাঁচিয়ে, মুখ লুকিয়ে পালন করছেন নিরবতা। তারা না দলের নৌকা, না দলের মোড়কে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে যাচ্ছেন সরাসরি। এতে পরিকল্পিত নির্বাচনের সমন্বিত পদক্ষেপে ভাটা পড়ছে খোদ আ’লীগ ভোটারদের মধ্যে। এতে ৭ জানুয়ারীর ভোট যুদ্ধ পুরোমাত্রায় হয়ে পড়েছে আমেজহীন। এরমধ্যে ভোট যুদ্ধে অংশ নেয়া প্রতিদ্বন্দ্বি নাম সর্বস্ব দলের বেশিরভাগ প্রার্থী নেই নির্বাচনী মাঠে।
নির্বাচনে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো অংশগ্রহণ না করায় এমনিতেই সিলেটের ৬টি আসনেই নেই বেশি ভোটের আমেজ। এরই মাঝে প্রতিদ্বন্দ্বী অর্ধেকের বেশি প্রার্থী নেই নির্বাচনি মাঠে। সবমিলিয়ে ভোটের তাপ, ভোটের হাঁক ভোটের ডাক, ভোট উৎসবের লেশ মাত্র দেখা যাচ্ছে না সিলেটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ৭ জানুয়ারীর নির্বাচনে যাচাই-বাছাই শেষে ভোটযুদ্ধে অংশ গ্রহনের সুযোগ পান জেলার ছয়টি আসনে ৩৩ প্রার্থী। পরে আপিলে প্রার্থীতা নিশ্চিত করেন আরও দুই জন। এই নিয়ে শেষ পর্যন্ত সিলেটে লড়ছেন মোট ৩৫ প্রার্থী। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত ছয় প্রার্থী, জাতীয় পার্টির চারজন, তৃণমূল বিএনপির পাঁচজন, ইসলামী ঐক্যজোটের (আইওজে) চারজন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) তিনজন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের তিনজন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের দুজন, গণফোরামের একজন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের একজন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএলের একজন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী পাঁচজন।
প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয় গত ১৮ ডিসেম্বর। এরপর শুরু হয় নির্বাচনী প্রচারণার আনুষ্ঠানিকতা। গত এক সপ্তাহের প্রচার-প্রচারণা পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, প্রচারের মাঠে নেই অন্তত ১৯ প্রার্থী। প্রার্থিদের মধ্যে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী (আ’লীগ ঘরনা) ছাড়া নড়চড়া নেই অন্যদের। ভোটে দাঁড়িয়েও মাঠ ছাড়া ওই সব প্রার্থী। এনিয়ে গুঞ্জনের ঢালপালা বিস্তৃত হচ্ছে নানাভাবে। মনে করা হচ্ছে, ভোট কেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল থেকে সুবিধা নিয়ে তারা ভোটের মাঠে নাম লিখিয়েছেন বটে, কিন্তু আগামীর শংকায় গা ঢাকা দিয়েছেন নিজেদের স্বার্থে। যদিও ওই সব প্রার্থী ও তাদের প্রতীকের মুজেজা ভোটের মাঠে একেবারে নতুন। যেখানে জনম জনমের পরিচিত মার্কা ও অনেক প্রার্থীও দিকেও মনোযোগ নেই ভোটারদের।
সিলেট-১ আসনে (সিটি করপোরেশন-সদর) আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের পাশাপাশি প্রার্থী হয়েছেন ৪ দলের চারজন। তারা হলেন- বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী মো. সোহেল আহমদ চৌধুরী (প্রতীক), সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের প্রার্থী আব্দুল বাসিত (ছড়ি), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি)-এর প্রার্থী ইউসুফ আহমদ (আম) এবং ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী ফয়জুল হক (মিনার)। দেশের মর্যাদাপূর্ণ এই আসনে এমন নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা পরিবেশ প্রথমবারের মতো দেখছেন ভোটাররা। কারন এই আসনে ভোট যুদ্ধ ইতিহাস হেভিওয়েট প্রার্থীদের। মিথ রয়েছেন এই আসনে যে দলের প্রার্থী জয় লাভ করে সরকার গঠন করে সেই দল। তাই গুরুত্ব বিবেচনায় রাজনীতিক দল গুলো সেরাদের প্রার্থী করে ্ওই আসনে। কিন্তু এবার ভিন্ন। এই আসনে একাই বাঘ আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী ড. মোমেন। বাকীদের কেউ কেউ বলছেন হাঁস। পানিতে গা বিজিয়ে কিনারায় যেয়ে জড়োসড়ো হয়ে পানি শুকাচ্ছেন তারা। কারন ভোটের মাঠে ওই চার প্রার্থীর কাউকে দেখা যাচ্ছে প্রচারন প্রচারনায়। কোনো পোস্টারও পড়ছে না চোখে। লিফলেট বিলি বা গণসংযোগ করতেও কেউ দেখেননি। তবে এ আসনের ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী ফয়জুল হক বলেন- ‘প্রেসে গিয়ে পোস্টার ছাপার সিরিয়াল পাচ্ছেন না তিনি। দুই-এক দিনের মধ্যে পোস্টার হাতে নিয়ে মাঠে নামবেন। এতে পরিস্কার তাদের নির্বাচনীমুখী উদাসীনতা। একই হাল এ আসনের বাকি ৩ প্রার্থীরও।
সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) আসনে গণফোরামের প্রার্থী বর্তমান এমপি মোকাব্বির খান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. মনোয়ার হোসাইন, তৃণমূল বিএনপির মোহাম্মদ আব্দুর রব ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. জহির। কিন্তু ভোটের মাঠে তোড়জোড় নেই। প্রচার প্রচারনায় নেই তাদের খোঁজ। স্থানীয় অনেকের মতে, মুলত হাস্যরস থেকে বাঁচতে ব্যস্ত এই সব প্রার্থীরা।
সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ) আসনে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আনোয়ার হোসেন আফরোজ, বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যফ্রন্টের শেখ জাহেদুর রহমান মাসুম, ইসলামী ঐক্যজোটের (আইওজে) মো. মইনুল ইসলাম। এই ৩ প্রার্থীর খোঁজ দেখছে না ভোটারা। প্রচার প্রচারনা তো দুরের কথা তাদের নাম পরিচয় বা দল কোনটিতে নেই ভোটারদেনিয়ে বিন্দু পরিমান আগ্রহ। হয়েতো সেকারনে মুখ লুকাতে আড়ালে সরিয়ে রেখেছেন নিজেদের প্রার্থীরা।
সিলেট-৪ (জৈন্তাপুর-গোয়াইনঘাট-কোম্পানীগঞ্জ) আসনে ইসলামী ঐক্যজোটের মো. নাজিম উদ্দিন কামরান এবং তৃণমূল বিএনপির মো. আবুল হোসেন। তারাও নিবার্চনী মাঠে এখন লক্ষ্যহীন পথের পথিক। কিভাবে নিজেদের ব্যস্ত রেখেছেন তারাই কেবল জানেন তাদের।
সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) আসনে তৃণমূল বিএনপির কুতুব উদ্দীন আহমদ শিকদার, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. বদরুল আলম, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) মো. খায়রুল ইসলাম এখন ভোটে মাঠে হাওয়া হয়ে গেছেন। তারা নিজেরাই জানেন কি করছেন, কোথায় আছেন। তবে যে তারা ভোট যুদ্ধের আগে পরিনাম ভেবে হয়ে মাঠ ছেড়েছেন, অনেকে এমন কেথা বলছেন।
সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার)। আসনটিতে কিংস পার্টি খ্যাত নতুন নিবন্ধিত দল তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরী। ভোটের রাজনীতিতে আলোচিত-সমালোচিত এ দলের চেয়ারপার্সন প্রার্থী হলেও সিলেট-৬ আসনে তাঁর নেই ভিত্তিই নেই। গত সাত দিনে শমসের মবিনের পক্ষ থেকে মাত্র এক দিন মাইকিংয়ে প্রচার শুনেছেন স্থানীয়রা। এরমধ্যে সিলেটে নিজে এক সংবাদ সম্মেলন করে প্রচারনার আনুষ্ঠানিকতা সেরেছেন। এই মাত্র। বড় বেশি দামী এই প্রার্থী ভোটের মাঠে একেবারেই বিবর্ণ। তাকে নিয়ে ইতিবাচক কোন ধারনাই নেই, ভোটারদের। সচেতন কিছু ভোটারের মতে, কোন মানুষের পরিনাম কত নির্মম হতে পারে শমসের মবিন চৌধুরী এর উদাহরণ। ভোট প্ওায়া তো দুরের কথা ভোট চাওয়ার হিম্মতও তার মাঝে নেই অবশিষ্ট। সেকারনে ভোটের পালে, অপছন্দের তালিকায় নম্বর ওয়ান এখন তিনি। তবে দলের নির্বাচনি প্রচার সমন্বয়কারী শমসের মবিনের ভাই ময়েজ চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন- ভিন্ন কৌশলে নির্বাচনি প্রচার চালাচ্ছেন তারা। ‘সন্ধ্যার পর কিছু গণসংযোগ করা হয় তাদের। নীরব ভোটারের সাড়া পেতে এমন কৌশল নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তৃণমুল বিএনপির চেয়ারপার্সন শমসের মবিনের ভাই ময়েজ চৌধুরী।
এছাড়া ওই আসনে ইসলামী ঐক্যজোটের সাদিকুর রহমান এবং বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের আতাউর রহমান। তাদের অবস্থা বলার মতো কিছু নেই। স্থানীয়দের মতে তাদের অবস্থা ‘হাতি ঘোড়া গেছে তল, মশা বলে কত জল!’
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
দফতর পুনর্বণ্টনের পর কে পেলেন কোনটি
গাজায় যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা বন্ধ করেছে কাতার
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ট্রাম্প বিরোধী বিক্ষোভ
চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ চায় না ইইউ
ইয়েমেনের রাজধানীতে মার্কিন ও ব্রিটিশ বাহিনীর অভিযান
আড়াই হাজার লিটার বুকের দুধ দান করে বিশ্বরেকর্ড
পরাজয় নিয়ে ডেমোক্র্যাট শিবিরে উত্তাপ, পাল্টাপাল্টি দোষারোপ
দলীয় পদে শামা ওবায়েদের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার
পরকীয়ার জন্য স্বামী আত্মঘাতী হলে দায় স্ত্রীর নয় : আদালত
ফের রাজপথে
মার্কিন-মেক্সিকো চুক্তি
বিশ্ব সেরা স্কুল
দুঃসংবাদ
৮৮ হাজার টাকা জরিমানা, ৯৩৬ কেজি পলিথিন জব্দ
তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা নিয়ে সিলেটে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় টিমের মতবিনিময়
শহীদ নুর হোসেন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের মহানায়ক : ডা. ইরান
সিলেটের বন্ধ থাকা সকল পাথর কোয়ারী খুলে দিতে হবে: চরমোনাইর পীর
সাইবার বুলিং বন্ধে অন্তর্বর্তী সরকার আলাদা ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করছে : নাহিদ ইসলাম
ট্রাম্পের সঙ্গে মোদির বন্ধুত্ব কতটা মুখে আর কতটা কাজে!
যশোরের সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত ট্রাক আটক