বরগুনা-১ আসনে আ’ লীগের ৩ স্বতন্ত্রের চাপে নৌকা, ২ আসনে নৌকার প্রার্থী একাই মাঠে
৩০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৪:৫৬ পিএম | আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৪:৫৬ পিএম
বরগুনা-১ (সদর, আমতলী, তালতলী) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত ৫ বারের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এবার দলীয় তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীর চাপে পড়েছেন। এবারও দলের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমে নিজ দলের তিন হেভিওয়েট নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।
বরগুনা-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু (ঈগল), আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক খলিলুর রহমান (ট্রাক) ও আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ছরোয়ার ফোরকান (কাচি) দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। নৌকার প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুসহ একই দলের চার জন প্রার্থী ভোট যুদ্ধে সামিল হয়েছেন।
প্রচারণা শুরু করে বিভিন্ন স্থানে সভা সমাবেশে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এলাকার উন্নয়ন নিয়ে কথা বলছেন। ১৫ বছরে শম্ভুর সময়ে এলাকায় কাঙ্খিত উন্নয়ন হয়নি বলে কথা উঠে এসেছে তাদের বক্তব্যে। এবার জনগণ পরিবর্তন চায়। আর এ পরিবর্তনের প্রত্যাশা পূরণের দাবিতেই তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের জেষ্ঠ্য যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু বলেন, ১৯৯১ সাল থেকে পাঁচ বারের এমপি শম্ভু বরগুনায় দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন করতে পারেননি। বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে বরগুনা জেলা পিছিয়ে রয়েছে। এছাড়াও পাশের জেলা পটুয়াখালীতে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ স্থাপনসহ নদ-নদীতে একটি সেতুও নির্মাণ বাকি নেই, এছাড়া পায়রা বন্দর, তাপবিদ্যুতকেন্দ্র, সেনানিবাস এ সবই পটুয়াখালীতে। তিনি আরও বলেন, এমপি শম্ভু উন্নয়নের ব্যাপারে নির্লিপ্ত ছিলেন। যে কারণে উন্নয়নে পিছিয়ে পড়েছে বরগুনা জেলা। এসব কারণেই বরগুনার মানুষ পরিবর্তন চায়।
কাচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম ছরোয়ার ফোরকান বলেন, পাঁচ বারের এমপি শম্ভুর জুলুম অত্যাচারে অতিষ্ঠ দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা নিয়ে হাইব্রিডদের দলে ভেড়ানো, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করা ও ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ রয়েছে বর্তমান এমপি শম্ভুর বিরুদ্ধে।
ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. খলিলুর রহমান বলেন, তিনি এলাকার উন্নয়ন করতে ব্যর্থ হয়ে জনগণের রোষানলে পড়েছেন। মাঠের অবস্থা বুঝতে পেরে এখন আমাদের কর্মী সমর্থকদের প্রকাশ্যে বিভিন্ন পথসভায় অব্যাহত হুমকি দিয়ে আসছেন। এরকম হুমকি অব্যাহত থাকলে সাধারণ ভোটাররা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বেন। এতে ভোট কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম হবে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ব্যক্তিরা মনে করেন, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের হুমকি অব্যাহত থাকলে ভোট কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন শোকজ ও অর্থদন্ড করলেও তারা তাদের অবস্থান থেকে সরে দাঁড়ায়নি। এতে সাধারণ ভোটাররা আরও কিছুটা হলেও ভীত হয়ে পড়েছেন।
বরগুনা-১ আসনের নৌকার প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ভোটারদের হুমকির প্রসঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, তারা নৌকা, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তাদের মনে রাখতে হবে, তাদেরকে আবারো দলের কাছে আসতে হবে। তখন এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হবে।
এদিকে বরগুনা-২ (বামনা, পাথরঘাটা ও বেতাগী) আসনে প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন মোট সাতজন প্রার্থী। তাঁদের মধ্যে প্রতিদ্বন্ধী কোনো প্রার্থী না থাকায় শুধু মাত্র আওয়ামী লীগ প্রার্থী সুলতানা নাদিরার পক্ষে প্রচারণা, গণসংযোগ, পথসভা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে মিটিং করতে দেখা যায়। তিনি প্রয়াত সংসদ সদস্য গোলাম সবুর টুলুর সহধর্মীনী।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ছাড়াও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, বিএনএম (নোঙ্গর প্রতীকে) প্রার্থী প্রফেসর ড. আবদুর রহমান খোকন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (হাতুড়ী প্রতীক) প্রার্থী জাকির হোসেন রাজু, তৃণমূল বিএনপি (সোনালী আশ প্রতীক) কামরুজ্জামান লিটন, বাংলাদেশ কংগ্রেস (ডাব প্রতীক) মো. মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (একতারা প্রতীকে) মো. আবুবক্কর সিদ্দিক ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন (ফুলের মালা প্রতীক) প্রার্থী শাহ মো. আবুল কালাম।
বরগুনা-২ আসনটি বামনা, পাথরঘাটা ও বেতাগী এই তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত ছিল। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনটিতে প্রথমবারের মতো জয় ছিনিয়ে নেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী গোলাম সবুর টুলু।
২০১৩ সালে তাঁর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। এর পর উপ-নির্বাচনে তার পরিবারের কোন সদস্য নির্বাচনে অংশ নিতে অনিহা প্রকাশ করলে এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয় পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত হাচানুর রহমান রিমনকে। এরপর থেকে তিনি পর পর দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
এদিকে এ আসনে নির্বাচনে অংশ নেওয়া বাকি ৬ প্রার্থী নির্বাচনের মাঠে নতুন হওয়ায় এ আসনের সাধারণ জনগণ তাদের চিনেন না। । ফলে একচেটিয়া মাঠ দখলে রয়েছে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সুলতানা নাদিরার।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান
জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত
সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু
আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক
যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা
এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার
গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু
প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান
সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’
বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের
৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল
১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরীর ইন্তেকাল
ভারতের কাছ থেকে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে: আইন উপদেষ্টা
মেজর জে. অব. তারেক সিদ্দিকসহ ১০ জনের নামে মামলা
বহিঃশক্তি শকুনের মত শিল্প কলকারখানায় থাবা দেয়ার চেষ্টা করছে : শিমুল বিশ্বাস
বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বরদাশত করা হবে না: আইন উপদেষ্টা