বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠ: পাশাপাশি কবরে শায়িত নিহত এক পরিবারের ৪ জন

০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

ময়মনসিংহের নান্দাইলে বিদ্যুস্পৃষ্ঠে একই পরিবারের নিহত চার সদস‍্যকে দাফন করা হয়েছে পাশাপাশি কবরে। এ সময় জানাযার নামাজে অংশ নেওয়া শত শত মুসল্লীদের মধ‍্যে অশ্রুসিক্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

রবিবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে উপজেলার ৪ নং চন্ডিপাশা ইউনিয়নের ৫ নং ঘোষপালা ওয়ার্ডের পূর্বপাড়া এলাকায় নিহতদের বাড়ির পাশে একটি কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।

এ সময় ঘোষপালা গ্রামসহ আশপাশের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নেয়। এতে নিহত জামালের বাড়ির চারপাশ লোকারণ্য পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

এর আগে শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টা দিকে যাত্রীবাহী অটোরিকশা চার্জ দিয়ে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠে হয়ে এক পরিবারের ৪ জন নিহত হন।

নিহতরা হলেন- ঘোষপালা গ্রামের বাসিন্দা অটোচালক জামাল উদ্দিন (৩২) তার মা আনোয়ারা বেগম (৬৫) জামালের শিশু কন্যা আনিকা আক্তার (৪) ও মোছা. ফাইজা (৬)।

এ সময় জানাযার নামাজে অংশ নেওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, জামাল উদ্দিন খুবই গরিব মানুষ। অটো চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। এই অবস্থায় এক পরিবারের ৪ জন সদস্য এক সাথে মারা যাবে তা কখনও ভাবতে পারিনি।

স্থানীয়রা জানান, জামাল উদ্দিন দরিদ্র পরিবারের সন্তান। ৩ মেয়ে শিশু, স্ত্রী ও বৃদ্ধ মাকে নিয়ে তার সংসার। স্ত্রী মরিয়ম বেগম ঢাকায় একটি হাসপাতালে আয়া পদে কাজ করতো। ফলে তিন মেয়ে ও মাকে নিয়ে জামাল উদ্দিনে বাড়িতে থাকতো৷ প্রতিদিনের ন‍্যায় গতকাল শনিবার অটোরিক্সা চার্জ থেকে বের করা সময় বিদ্যুতায়িত হন। তার আত্নচিৎকারে দুই শিশু কন্যা ও বৃদ্ধা এগিয়ে এলে তারাও ঘটনাস্থলে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যান। তবে ঘটনার সময় গোসল করতে গিয়ে বাড়ির বাহিরে থাকায় জান্নাতুল মারফা(৮) নামে নিহত জামাল উদ্দিনের বড় মেয়ে ভাগ‍্যক্রমে বেঁচে যায়।

স্থানীয়রা জানায়, জামাল উদ্দিনের স্ত্রী মরিয়ম আক্তার ঢাকার বেসরকারি হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর চাকরি করেন। দুর্ঘটনার সময় সে বাড়িতে ছিল না। ফলে স্বামী সন্তানদের মৃত্যুর খবর পেয়ে গতকাল রাতে বাড়ি আসে সে।

এ সময় স্বামী, দুই সন্তান ও শাশুড়িকে হারিয়ে

মরিয়ম বলেন, স্বামী-স্ত্রী কষ্ট করে এই বাড়ীর জমিটি জমি কিনেছিলাম বাড়ী করব বলে। কিন্তু এখন সবাই আমাকে ছেড়ে চলে গেলে। আমি কি নিয়ে বঁচব, বলেই কাঁদতে কাঁদতে বার বার মূর্ছা যায় মরিয়ম।

নিহত জামালের ভাই নুরুল হক বলেন, জান্নাতুলের চিৎকার শুনে এসে দেখি চারজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছেন। তখন শুকনা বাঁশ দিয়ে আঘাত করে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করেন। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ঘরে এসে দেখি আমার মা, ছোট ভাই ও দুই ভাতিজির কেউ বেঁচে নেই। এখন আমার আপনজন বলে কেউ রইলো না।

বিভাগ : বাংলাদেশ