ঢাকা   শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি ২০২৫ | ২৬ পৌষ ১৪৩১

এমপি হওয়ার সাদ মিটলো না সুনামগঞ্জ-৩ আসনে তৃণমুল বিএনপির প্রার্থী শাহীনূর পাশা চৌধুরীর !

Daily Inqilab সিলেট ব্যুরো

০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:২৯ এএম | আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:২৯ এএম

 


‌‌''সাদ না মিটিলো, আশা না পুরিলো,'' দলছুট শাহীনূর পাশা চৌধুরীর। জামানত হারিয়ে প্রমান করলেন আসন নিশ্চিতের বক্তব্য ছিলো কেবল বাগড়ম্বর। একজন আলেমের মুখে ভোটারদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। নির্বাচনী প্রচারনায় বলেছিলেন, নৌকার বেইস লাগিয়ে তৃণমুল বিএনপি'র সোনালী আঁশে ভোট দিবে জনগন। কিন্তু তার মুখের এ কথা ,কত যে সস্তা, মিথ্যা ছিলো অবশেষ জামানত বাজেয়াপ্তের মধ্যে দিয়ে, সত্য হলো। । সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-শান্তিগঞ্জ) আসনের বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও পরকিল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান । তিনি মোট ভোট পেয়েছেন ১ লক্ষ ২৬ হাজার ৯৯৮ । আর তৃণমুল বিএনপির প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শাহীনূর পাশা চৌধুরী পেয়েছেন মাত্র ৪ হাজার ভোট। এই আসনে মোট ভোট কেন্দ্র ১৪৫টি। প্রার্থীর এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে বিভিন্ন এজেন্ট ও স্থানীয় সুত্রে। নির্বাচনে কোনো আসনে প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগ ভোট কোনো প্রার্থী যদি না পান, তা হলে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়ে যায়।
এই হিসেবে শাহীনূর পাশা জামানত হারাতে যাচ্ছেন। এই আসনের নির্বাচনকে স্থানীয়রা মনে করেছিল বাঘ-শিয়ালের লড়াই। তাদের মতে রাজনীতিক দূর্ত হলেন তৃণমুল বিএনপির প্রার্থী সাবেক এমপি শাহীনুর পাশা চৌধুরী। দলছুট পাশা নিজের ইমেজকে জলাঞ্জলি দিয়ে অংশ গ্রহন করেছেন নির্বাচনে। তার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী একজন হেভিওয়েট প্রার্থী বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রী এম.এ মান্নান এমপি। সুনামগঞ্জের উন্নয়ণ রূপকার তিনি। যার মেধা যোগ্যতা প্রশংসনীয়। সংসদীয় আসন সুনামগঞ্জে ৫ টি হলেও মন্ত্রী হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে এম এ মান্নানের। বিষয়টি সুনামগঞ্জ বাসীর জন্য অত্যন্ত গৌরবের। সেকারনে এরকম এক হেভিওয়েট প্রার্থী নৌকার মাঝির সাথে শাহীনূর পাশার নিবার্চনী প্রতিদ্বিন্দ্বীতা মোটেও মানানসই মনে করছেন না স্থানীয়রা।
তারা এও বলেছেন, লোভের কারনে এমনটি করেছিলেন শাহীনূর পাশা। সেই সাথে বিসর্জন দিয়েছেন নৈতিকতা ও আত্মসম্মানবোধ। এই আসনে নির্বাচন করেছেন জাতীয় রাজনীতিবিধ প্রয়াত আব্দুস সামাদ আজাদ, প্রয়াত স্পীকার হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী, ফারুক রশিদ চৌধুরীর মতো ব্যক্তিত্ব। ভাগ্যগুণে ৪ দলীয় জোটের সমর্থন ও সহযোগীতায় ২০০৫ সালের উপ-নির্বাচনে জয়ের স্বাধ একবার পেয়েছিলেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের শীর্ষ নেতা শাহীনূর পাশা চৌধুরী। তারপর থেকে ক্ষমতার লোভ পেয়ে বসে তার জীবন চরিত্রে। কিন্তু সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন বারংবার। ধর্মীয় শিক্ষা ও লেবাসের পরিচয়ে সহজ সরল আলেম উলামারা সমীহ করতো তাকে। সেই সাথে প্রচলিত রাজনীতির সাথে তার সখ্যতায় মাদ্রাসা পড়ুয়াদের কাছে ছিলেন স্মার্ট ও বিচক্ষণ তিনি। অনেকের কাছে আইকনও হয়ে উঠেছিলেন তিনি। ইসলাম ধর্মে জনসেবা বা মানব সেবার গুরুত্ব অপরিসীম থাকলেও এদিকে অমনোযোগী মাদ্রাসা শিক্ষিতরা। সেই সাথে তাদের নেতৃত্ব সীমাবদ্ধ মাদ্রাসা কেন্দ্রিক। আমজনতার সাথে সেরবম কোন ভূমিকা বা গ্রহনযোগ্যতা দেখাতে পারিনি তারা। এরমধ্যে শাহীনূর পাশা ছিলেন ব্যতিক্রম। মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট একাধিক জনের অভিমত, বর্তমান সরকারের সাথে তলে তলে অনেক গভীর সর্ম্পক গড়ে তুলেছিলেন শাহীনূর পাশা চৌধুরী। নিজের মাদ্রাসা সহ বিভিন্ন খাতে সুবিধ্ওা নিয়ে দায়ব্ধতার পথে নিজেকে জড়িয়ে ছিলেন তিনি। তার জানান দিলেন নিজের দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকে পাশ কাটিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের মাধ্যমে। অবশেষে চুড়ান্ত ভাবে নিজের মুখোশ প্রকাশ করলেন কিংস পার্টি খ্যাত তৃণমুল বিএনপিতে যোগদান ্ও নিজে প্রার্থী হ্ওয়ার মধ্যে দিয়ে। সেকারনে তাতে রাজনীতি দূর্ত বলছেন তার ঘনিষ্টজনরাও। তারা প্রশ্ন তুলে বলেছেন, নির্বাচণী প্রচারনায় শাহীপূর পাশা কি ভাবে বলছেন, আসন নিশ্চিত করে ভোটে এসেছেন তিনি। এরমধ্যে দিয়ে ভোটের আগেই নিজের বিজয়ের ফায়সালা শুনাচ্ছেন জনগনকে। তাহলে ভোটের দরকার কি ? ভোটারদের ধোঁকা দেয়ার এ আনুষ্ঠানিকতা জেনেও নির্বাচনে অংশ নেয়া ধর্মীয় দৃষ্টি কোণে তো পাপ। তাহলে অন্যদের সাথে তার প্রার্থক্য কি রহিল ? গত ১ জানুয়ারী জগন্নাথপুর পৌর পয়েন্টে বিকেলে এক নির্বাচনী প্রচারনায় অংশ নিয়ে শাহীনূর পাশা বলেছিলেন, ‘জোটের মাধ্যমে এ আসন নিশ্চিত করেছেন তিনি। নৌকার বেইস পকেটে লাগিয়ে জনগন সোনালী আঁশ পাট প্রতীকে ভোট দিবে। এছাড়া আ’লীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, গন্ডগোলের চেষ্টা করবেন না। কেউ তা করলে ছাড় দেয়া হবে না।” তার এ বক্তব্য শোনে অনেকে মুখ চেপে হেসে বলছেন, দুনিয়ার লোভ একজন আলেমকে কত নিচে নামাতে পারে শাহীনূর পাশা তার বাস্তব উদাহরন। মুলত শিয়ালের চরিত্রের মতো দূর্ত হয়ে গেছেন তিনি। তার মুখ মুখোশে মানুষ ধোকায় ছিল পাশের ও দেশের মানুষ। এখন আসল চরিত্র প্রকাশ পেয়েছেন এমপি হওয়ার লোভে। বাস্তব চিত্র হলো জনগন এতো বোকা নয়, তার মতো। একজন হেভিওয়েট প্রার্থী ছেড়ে ভোট দিবে তাকে। যে লোক স্থানীয় মানুষের উন্নয়নের কথা বলে, সুনামগঞ্জের কথা বলেন, দেশের কথা বলে তিনি হলেন নৌকার মাঝি এম এম মান্নান। এদিকে, এম এ মান্নান শেষ সময়ের নিরব প্রচারনায় ব্যস্ত। এর আগে একাধিক নির্বাচনীয় প্রচারনা বলেছেন দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এবং অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার জন্য নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আবারো ক্ষমতায় আনতে হবে। আমরা গ্রামকে শহরে রূপান্তর জন্য কাজ করছি। আমরা চাই গ্রামের মানুষও শহরের মতো সুযোগ সুবিধা পাবেন। হাওরাঞ্চলে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন করছি। আরও করবো। নৌকায় ভোট দিন, উন্নয়নের কমতি থাকবে না।
এদিকে, জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-৩ আসন। ধান পাটের চাষ, সেই সাথে হ্ওারের মাছে স্থানীয় অর্থনীতির পাশাপাশি প্রবাসীদের বিশাল রেমিটেন্সে মজবুত স্থানীয় অর্থনীতি। জগন্নাথপুরের শিমুলবাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহী নূর শাহীন বলেন, এম এ মান্নান স্যারের কাছে আমরা ঋণী। তিনি নিলোর্ভ নেহাত ভদ্র লোক। এলাকায় এমপি হতে পারবেন নির্বাচনে কেউ না কেউ। কিন্তু মন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা সেই এমপিদের অনেকের নেই। তিনি মন্ত্রী হয়েছেন, সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাই না, আমরা। এবারও এমপি হয়েছেন আশা করছি গুরুত্বপূর্ণ কোন মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব পাবেন তিনি। তার এ প্রাপ্তির জন্য মুখিয়ে থাকবে সুনামগঞ্জের আপামর জনগন।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

চীনে ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষোভ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ

চীনে ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষোভ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে এনআইডি : আইন পর্যালোচনায় রোববার বৈঠকে বসছে ইসি

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে এনআইডি : আইন পর্যালোচনায় রোববার বৈঠকে বসছে ইসি

কুমিল্লায় জনসম্মুখে শিশুকে দুগ্ধপান

কুমিল্লায় জনসম্মুখে শিশুকে দুগ্ধপান

যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে চূড়ান্ত লড়াই

যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে চূড়ান্ত লড়াই

টিউলিপ সিদ্দিককে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানোর কথা ভাবছেন কিয়ার স্টারমার

টিউলিপ সিদ্দিককে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানোর কথা ভাবছেন কিয়ার স্টারমার

আগুনে পুড়ল ৫০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ, চলছে লুটপাট

আগুনে পুড়ল ৫০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ, চলছে লুটপাট

লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানল, প্রবল বাতাসে পরিস্থিতি ভয়াবহ

লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানল, প্রবল বাতাসে পরিস্থিতি ভয়াবহ

কাতারের আমিরের উদ্দেশে ফেসবুকে যা লিখলেন তারেক রহমান

কাতারের আমিরের উদ্দেশে ফেসবুকে যা লিখলেন তারেক রহমান

গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত আরও ৭০ ফিলিস্তিনি, মানবিক বিপর্যয় অব্যাহত

গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত আরও ৭০ ফিলিস্তিনি, মানবিক বিপর্যয় অব্যাহত

নারী শিক্ষার্থীদের ওয়াশরুমে ভিডিও ধারণ, যুবক আটক

নারী শিক্ষার্থীদের ওয়াশরুমে ভিডিও ধারণ, যুবক আটক

শেখ হাসিনার সাথে হত্যা মামলায় জড়িত পটুয়াখালীর ইটবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা মোজাম্মেল আটক

শেখ হাসিনার সাথে হত্যা মামলায় জড়িত পটুয়াখালীর ইটবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা মোজাম্মেল আটক

বেরোবিতে দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ

বেরোবিতে দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ

ঠাকুরগাঁওয়ে ইত্যাদি চিত্রায়ন অনুষ্ঠানে চেয়ার ভাঙচুর-মারামারি, অনুষ্ঠান স্থগিত

ঠাকুরগাঁওয়ে ইত্যাদি চিত্রায়ন অনুষ্ঠানে চেয়ার ভাঙচুর-মারামারি, অনুষ্ঠান স্থগিত

কেসিসির সাবেক কাউন্সিলর টিপু কক্সবাজারে খুন

কেসিসির সাবেক কাউন্সিলর টিপু কক্সবাজারে খুন

লক্ষ্মীপুরে বিদেশি পিস্তলসহ গৃহবধূ আটক

লক্ষ্মীপুরে বিদেশি পিস্তলসহ গৃহবধূ আটক

ফটিকছড়িতে অবৈধ বালু উত্তোলনে বাধা দেয়ায় কৃষককে পিটিয়ে হত্যা!

ফটিকছড়িতে অবৈধ বালু উত্তোলনে বাধা দেয়ায় কৃষককে পিটিয়ে হত্যা!

৭ ডিগ্রিতে নামল পঞ্চগড়ের তাপমাত্রা

৭ ডিগ্রিতে নামল পঞ্চগড়ের তাপমাত্রা

ম্যাচের আগে হঠাৎ বরখাস্ত এভারটন কোচ

ম্যাচের আগে হঠাৎ বরখাস্ত এভারটন কোচ

চীনের অবিশ্বাস্য সামরিক উত্থানে টনক নড়েছে ভারতের

চীনের অবিশ্বাস্য সামরিক উত্থানে টনক নড়েছে ভারতের

পারমাণবিক বোমা সজ্জিত নতুন যুদ্ধজাহাজে আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন কিম

পারমাণবিক বোমা সজ্জিত নতুন যুদ্ধজাহাজে আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন কিম