দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি আসনে দিনভর শুনশান নিরবতার পরেও প্রায় ৪৩.৭৬ ভাগ ভোটারের ভোটাধিকার প্রয়োগের বিষয়টি নিয়ে নির্বাচনী পর্যবেক্ষক মহলে বিষ্ময় প্রকাশ করলেও এর কোন সুস্পষ্ট জবাব কারো কাছে নেই। রোববার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-১ আসনে সর্বোচ্চ, ৬০.৪৮ ভাগ এবং পটুয়াখালী-১ আসনে সর্বনি¤œ, ২৩.৭৫ ভাগ ভেটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করে বলে নির্বাচন কমিশনের হিসেবে বলা হয়েছে। এমনকি বরিশাল বিভাগীয় সদর আসনের প্রায় সব কেন্দ্রেই দুপুর ২টা পর্যন্ত ২০ ভাগ ভোটারেরও উপস্থিতি ছিলনা। বিকেল ৪টায় ভোট গ্রহন শেষ হবার সময় পর্যন্ত বরিশাল মহানগরীর অনেক কেন্দ্রেই ২১ ভাগের বেশি ভোটারের উপস্থিতি না থাকলেও ফলাফল ঘোষনার সময় ২৯.০২ ভাগ ভোট পড়ার বিষয়টির হিসেব অনেকের কাছেই মিলছেনা।
প্রধান বিরোধী দলহীন গত রোরবারের সংসদ নির্বাচনে বরিশাল বিভাগের ২১টি আসনে আওয়ামী লীগ ১৪টি, মহাজোট সমর্থিত জাতীয় পার্টির ৩টি আসনের মধ্যে ২টি, মহাজোট সমর্থিত ওয়ার্কার্স পার্টি নৌকা প্রতিকে ১টি এবং স্বতন্ত্র ৫ জন প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। তবে এ ৫জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে ৪জনই আওয়ামী লীগেরই বিভিন্ন পদে রয়েছেন।
বরিশাল বিভাগের ৭৪ লাখ ২৩ হাজার ৫২২ জন ভোটারের মধ্যে গত রোববারের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ২ হাজার ৮১৮টি ভোট কেন্দ্রের ১৭ হাজার ২৯৬টি কক্ষে ৩২ লাখ ৪৮ হাজার ৬৭৭ জন ভোটধিকার প্রয়োগ করেন বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে। ভোটাধিকার প্রয়োগের গড় হার ছিল ৪৩.৭৬%।
জেলাওয়ারী হিসেবে ভোলা জেলার ৪টি আসনে সর্বোচ্চ ৫৩.৩৫ ভাগ, পটুয়াখালীর ৪টি আসনে সর্বনি¤œ ৩৫.৮৫ ভাগ এবং বরিশালের ৬টি আসনে ৪০.৩৭ ভাগ, বরগুনার দুটি আসনে ৪৪.২৬ভাগ, ঝালকাঠীর ২টি আসনে ৪৪.৭৭ ভাগ এবং পিরোজপুরের ৩টি আসনে ৪৬.৩৩ ভাগ ভোট পড়েছে বলে জানা গেছে।
এবারের নির্বাচনে পিরোজপুর-২ আসনে ৭ বারের এমপি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও পিরোজপুর-৩ আসনে ৮ম বার নির্বাচন করা সাবেক জাপা ও বিএনপি নেতা এবারের স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. রুস্তম আলী ফরাজির পরাজয় কিছুটা বিষ্ময়কর হলেও তা জনমতের সঠিক প্রতিফলন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। জেপি নেতা আনোয়ার হোসেন মঞ্জু মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতিকে নির্বাচন করেও আওয়ামী লীগেরই স্বতন্ত্র প্রার্থীর মহিউদ্দিন মহারাজের কাছে পরাজিত হয়েছেন। অপারদিকে জাতীয় পার্টি নেতা ডা. রুস্তম আলী ফরাজী দল থেকে মনোনয়ন না পেয়ে এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম শাহনেওয়াজের কাছে ১৪,৫০৯ ভোটের ব্যাবধানে হেরে গেছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধিন মহাজোট সমর্থিত জাতীয় পার্টি প্রার্থী মাশরেকুল আজম রবি মাত্র ৬০৭ ভোট পেয়ে লজ্জাজনক ভাবে জামানত হারিয়েছেন।
এবারের নির্বাচনে দক্ষিণাঞ্চলে সর্বাধিক সংখ্যক ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কৃত বরিশাল-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী পঙ্কজ দেবনাথ। প্রধান প্রতিদন্ধী জাপা’র জামানত হারানো প্রার্থীর ৭,৬২৬ ভোটের বিপরিতে পঙ্কজ পেয়েছেন ১ লাখ ৬১,০৪১ ভোট। অপরদিকে বরিশাল-২ আসনে নৌকার প্রতিকে নির্বাচন করা ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন স্বতন্ত্র প্রার্থী ফাইজুল হকের ৩১,৩৯৭ ভোটের বিপরিতে ১ লাখ ২২,১৭৫ ভোট পেয়ে ৬ষ্ঠ বারের মত সংসদে গেলেন।
গত রোববারের নির্বাচনে বরিশাল বিভাগের ২১টি সংসদীয় আসনে প্রতিদন্ধী ১২০ প্রার্থীর মধ্যে ৯৫ জন দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন ২৫ জন। ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগ প্রথমে ২১টি আসনেই প্রার্থী দিলেও শেষ পর্যন্ত সমমনাদের সাথে আসন ভাগাভাগিতে জাতীয় পার্টিকে ৪টি এবং ওয়ার্কার্স পার্টি ও জেপি’কে ১টি করে আসন ছেড়ে দেয়ায় তাদের নিজস্ব প্রার্থী ছিলেন ১৫ জন। কিন্তু বরিশাল-৪ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাম্মী আহমেদ দৈত নাগরিকত্বের কারণে দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে অযোগ্য ঘোষিত হবার পরে ঐ আসনে দলটির কোন প্রার্থী ছিলনা। ফলে ২১ আসনে দলটির ১৪ প্রার্থী থাকলেও সবাই বিজয়ী হয়েছেন। অপরদিকে জাতীয় পার্টির মনোনয়নপত্র দাখিলকারী ১৮ প্রার্থীর মধ্যে ৩জন আওয়ামী লীগের সাথে আসন ভাগাভাগীতে সমর্থন পেয়ে ভোটের মাঠে থাকলেও নির্বাচিত হয়েছেন দুজন। অবশিষ্ট ১৬ জনের মধ্যে ৩টি আসনে দুজন প্রার্থী নির্বাচন থেকে সড়ে দাড়াবার পরে অবশিষ্ট ১৩টি আসনের জাপা প্রার্থীদের তেমন কোন তৎপড়তা ছিল না। ৮-১-২০২৩.