বরিশাল অঞ্চলে সম্ভবনাময় দানাদার খাদ্য ফসল গম আবাদে আশার আলো
১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:২০ পিএম | আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:২০ পিএম
কয়েক বছরের সংকট কাটিয়ে গত বছর বরিশাল কৃষি অঞ্চলে গম আবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্য অতিক্রমের পরে চলতি রবি মৌসুমেও ভাল সাফল্য আসছে। গত বছর প্রায় ৫৯ হাজার হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৯০ হাজার টন গম উৎপাদনের পরে এবারো প্রায় ৬০ হাজার হেক্টরে ১ লাখ ৯২ হাজার টন উৎপাদন লক্ষ্য অর্জনে মাঠে কাজ করছেন কৃষি যোদ্ধাগন। ইতোমধ্যে প্রায় ৫৭ হাজার হেক্টরে আবাদ সম্পন্ন হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই’র আঞ্চলকি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে। গত বছরের মত চলতি মৌসুমেও বরিশাল কৃষি অঞ্চলে গম আবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্য অতিক্রমের আশা দেখছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন। এবার হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন লক্ষ্য নির্ধারন করা হয়েছে প্রায় ৩.২৪ টন। যা গত বছর ছিল ৩.১১ লাখ টন।
চলতি রবি মৌসুমে দেশে ৩ লাখ ২৩ হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে ১২ লাখ ২৮ হাজার ৫৪৬ টন গম উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারন করেছে কৃষি মন্ত্রনালয়। যা গত বছর প্রকৃত আবাদের চেয়ে ১ হাজার হেক্টর এবং উৎপাদনে প্রায় ২৩ হাজার টন বেশী বলে জানা গেছে।
প্রায় ৫ বছর পরে গত বছর থেকে দেশে গমের আবাদ ও উৎপাদন ইতিবাচক ধারায় ফিরতে শুরু করে। এ প্রবৃদ্ধিকে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সহ কৃষিবীদগন আশাব্যঞ্জক বলেই মনে করছেন।
২০১৭ সালে দেশের ৫টি জেলায় ছত্রাকবাহী রোগ ‘ব্লাষ্ট’এর সংক্রমনের পরে সরকার গমের আবাদ ও উৎপাদন কিছুটা নিরুসাহিত করে। ফলে অত্যন্ত সম্ভবনাময় এ দানাদার খাদ্য ফসলের ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এমনকি ব্যায় সাশ্রয়ী এ খাদ্য ফসলের ভাল দাম পেয়ে কৃষকরা আশার আলো দেখলেও তা নিয়ে নতুন শংকা তৈরী করে ছত্রাকবাহী রোগ ‘ব্লাষ্ট’।
তবে ২০১৭ সালের পরে বরিশাল কৃষি অঞ্চল সহ দেশের কোথাও ব্লাষ্ট-এর সংক্রমন না থাকায় কৃষি যোদ্ধাগন আবার যথেষ্ঠ আশাবাদী হয়ে গম আবাদে মনোনিবেস করছেন বলে ডিএই’র দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। ফলে গত বছর রবি মৌসুমে সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলেও গম আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। তবে দেশে এখনো গমের মোট আবাদ ৫ লাখ হেক্টরে উন্নীত করতে না পারাকে হতাশাব্যঞ্জক বলে মনে করছেন কৃষিবীদগন। কৃষক পর্যায়ে উন্নত বীজ ও আবাদ প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে গমের গড় উৎপাদন হেক্টর প্রতি নুন্যতম ৪ টনে উন্নীত করার লক্ষে কর্মসূচী গ্রহনের তাগিদ দিয়েছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন। পাশাপাশি আগামী ৩ বছরের মধ্যে আবাদ অন্তত ৫ লাখ হেক্টরে উন্নীত করতে পারলে দেশে গমের মোট উৎপাদনও ২০ লাখ টনে নিয়ে যাওয়া কঠিন নয় বলেও মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন।
আমাদের ‘কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট-বারি’ ও ‘গম গবেষনা ইনস্টিটিউট’এর বিজ্ঞানীগন ইতোমধ্যে উচ্চ ফলনশীল ও পরিবেশ উপযোগী একাধীক গম-এর উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছেন। এমনকি ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাতের গম বীজ এবং আমাদের দেশের মত কম শীত প্রধান অঞ্চলের জন্য ‘শতাব্দী’ নামের গম বীজ উদ্ভাবন করেছেন বারি’র বিজ্ঞানীগন। বারি উদ্ভাবিত গম বীজের মধ্যে ‘কাঞ্চন, আকবর, অঘ্রানী, শতাব্দী ছাড়াও সৌরভ-বারি-১৯ ও গৌরব-বারি-২০’ নামের উচ্চ ফলনশীল গম বীজও উদ্ভাবন করা হয়েছে। এসব বীজ থেকে হেক্টর প্রতি সাড়ে ৪ টন পর্যন্ত গম উৎপাদন সম্ভব বলে ‘বারি’র দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। এছাড়া গম গবেষনা ইনস্টিটিউট-এর বিজ্ঞানীগনও আরো একাধীক উচ্চ ফলনশীল গম বীজ উদ্ভাবন করেছেন।
বরিশাল কৃষি অঞ্চলেও গম আবাদের ইতিহাস খুব বেশী দিনের না হলেও ‘দানাদার খাদ্য ফসল’ হিসেবে তা ইতোমধ্যেই তৃতীয় শীর্ষস্থান দখল করেছে। সারা বিশ্বে গম উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম ২০টি দেশের মধ্যে। ১৯৮৫ সালে দেশে স্থানীয় জাতের প্রায় ১২ লাখ টন গম উৎপাদন হয়েছিল। কিন্ত এর পর থেকে গমের আবাদ খুব একটা সম্প্রসারন ঘটেনি। তবে উচ্চ ফলনশীল বীজের কারণে আবাদী জমির পরিমান না বাড়লেও উৎপাদন কিছুটা বেড়েছে।
বেশী লাভের আশায় দক্ষিণাঞ্চল সহ দেশের অনেক জমিতেই গমের পরিবর্তে এখন ভ’ট্টা ছাড়াও সম্প্রতি পেয়াঁজের আবাদ সম্প্রসারন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল। ফলে আমাদের সীমাবদ্ধ আবাদী জমিতে গম আবাদে কাঙ্খিত সম্প্রসারন ঘটছে না বলেও মনে করছেন মহলটি।
স্বল্পসেচ এবং সহজ বালাই ব্যবস্থাপনা সহ উৎপাদন ব্যায় তুলনামূলক ভাবে কম ও ভাল দাম পাওয়ায় নিকট অতীতে দেশে গমের আবাদ সম্প্রসারন ঘটলেও ২০১৭ সালে আকষ্মিকভাবেই ছত্রাকবাহী ‘ব্লাষ্ট’ সংক্রমনে বিপুল আবাদী জমির ফসল বিনষ্ট হয়। কিছু জমির ফসল আগুনে পুড়িয়েও ফেলতে হয়েছে। কোন প্রতিকার ব্যাবস্থা না থাকায় কৃষি বিজ্ঞানীদের সুপারিশে যেসব এলাকায় ব্লাষ্টÑএর সংক্রমন দেখা দেয়, পরবর্তি ৩ বছর সেসব এলাকায় গমের আবাদ নিরুৎসাহিত করে সরকার। ফলে অত্যন্ত সম্ভবনাময় এ ফসল আবাদ সম্প্রসারনের পরিবর্তে ক্রমশ পেছাতে শুরু করে।
তবে বিগত ৫টি মৌসুমের মত চলতি রবি মৌসুওমেও ব্লাষ্টের কোন সংক্রমন না হওয়ায় কৃষকরা গম আবাদে আবার আগ্রহী হয়ে উঠছেন বলেই মনে করছে ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ব্লাষ্ট-এর মত অপ্রতিরোধ্য ছত্রাকবাহী রোগের ঝুকি বাড়ছে।
তবে এসব কিছুর পরেও অত্যন্ত সম্ভনাময় দানাদার খাদ্য ফসল গম নিয়ে আবার আশার আলো দেখছেন বরিশাল সহ সারাদেশের কৃিষ যোদ্ধাগনও।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বাংলাদেশকে সব ধরনের সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত: ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত
মানুষ আমি দেবতা নই, আমারও ভুল হয়: নরেন্দ্র মোদি
হাসিনার স্বৈরাচারী কার্যকলাপ নিয়ে প্রশ্ন করায় অন্তঃসত্ত্বা সাংবাদিককে হুমকি দেন টিউলিপ
শূন্যরেখায় বিএসএফের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ
বাংলাদেশের ওয়ান ইলেভেনের ঘটনা পরদিনের সংবাদপত্রে যেভাবে এসেছিলো
সিংগাইরের তহরা হত্যা মামলা : শিক্ষক লালমুদ্দিনের ব্লাকমেইলের শিকার ছাত্রী আইরিন আক্তার
১৫ জানুয়ারি বিদায়ী ভাষণ দেবেন জো বাইডেন
’৭১ প্রশ্নে জামায়াতে নতুন আলোচনা, আসতে পারে সিদ্ধান্ত
ঘণকুয়াশায় ৩ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটের ফেরি সার্ভিস চালু হয়েছে
রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল নিয়ে বিদেশি জাহাজ মোংলায়
চীন সফরে রেচেল রিভস , যুক্তরাজ্যের উন্নতির প্রতিশ্রুতি
দায়িত্ব পেলে আমরা ধর্ম ও দল দেখব না : জামায়াতের আমির
'মুরুব্বী মুরুব্বী কামডা করল কী'
বায়ুদূষণের শীর্ষে কলকাতা, ঢাকা দ্বিতীয়
তথ্য গোপন মামলায় ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হলেও নেই কোনও শাস্তি
সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিজয়ী কারেন বিদ্রোহীরা, প্রশাসন গঠনে চ্যালেঞ্জ
ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধির ইস্যুতে প্রতিক্রিয়া জানাবে জাতীয় নাগরিক কমিটি
লস অ্যাঞ্জেলেসে ভয়াবহ দাবানলে নিহতের সংখ্যা ১১, সংকট আরও বাড়ছে
মেঘনায় বাল্কহেড-স্পিডবোট সংঘর্ষে নিহত অন্তত ২, একাধিক নিখোঁজ
গাজায় টেলিকম সেবা বন্ধের আশঙ্কা , জ্বালানি সংকটে জরুরি সেবা বিপর্যস্ত