পেকুয়ায় বিলুপ্তিরপথে কামার শিল্প -শতাধিক কর্মকারের পরিবারে চলছে দুর্দিন
২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০৩:৫৭ পিএম | আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০৪:২০ পিএম
প্রাচীন কাল থেকে লোহাকে কয়লার আগুনে পুড়িয়ে নরম করে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে কামার সম্প্রাদয় তৈরী করে আসছে নানা ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস। কিন্তু কালের পরিবর্তনে লোহা শিল্পের প্রয়োজনীয় উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি, আধুনিক যন্ত্র ও ক্রেতা স্বল্পতার কারণে কক্সবাজারের পেকুয়ায় এ সম্প্রদায়ের শতাধিক পরিবার মাঝে মানবেতর জীবনযাপন চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিস্তীর্ণ মহেশখালী-কুতুবদিয়া চ্যানেল ঘেসে পেকুয়া বাজার, বাগগুজরা বাজার,বারবাকিয়া বাজার,
আরবশা বাজার, সবুজ বাজার,মগনামা বাজার,কইড়া বাজার,কাজি বাজার,রুপালি বাজার,টইটং বাজার, মহুরী পাড়া বাজার, হাজী বাজার এবং আমিন বাজারে গড়ে উঠে শতাধিক কর্মকারের কারখানা। এ সব কারখানা থেকে তৈরি কৃত বিভিন্ন প্রকারের জিনিসপত্র গুলো দেশে বিভিন্ন জেলা উপজেলায় পাইকারী ব্যবসায়ীরা নিয়ে যেত। সেই সময়ে তাদের ব্যবসা ছিল জমজমাট। লৌহজাত শিল্পের এসব সংকটের কারণে পেশাদার কর্মকাররা তাদের বাপ-দাদার ঐতিহ্যবাহী পেশা ছেড়ে এখন অন্য পেশায় যোগ দিচ্ছে। আর যারা এ পেশা ছাড়া কোনো কাজ পারে না তারাই এপেশায় এখনো জড়িত আছে।
তথ্য অনুসন্ধ্যানে জানা গেছে, যুগের পরিবর্তন ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় একটু একটু করে গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে হাতে তৈরি দেশীয় লোহার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। নতুন করে স্থান করে নিচ্ছে চায়না ও ভারত থেকে আসা অ্যালুমিনিয়াম ও স্টিলের যন্ত্রপাতি। দাম বেশি হলেও টেকসই হওয়াতে ক্রেতারা ক্রয় করছেন স্টিলের চাকু, খুন্তি, কাস্তেসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি। ফলে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের যন্ত্রপাতির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে কামার শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেকেই এখন এই পেশা পরিবর্তন করে ফেলছেন।
কর্মকার রনজিত জানিয়েছেন, লোহা শিল্প দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি হওয়ায় মানুষ আগের মত আর আমাদের কাছে আসেনা। অন্যদিকে আধুনিক চাষাবাদ, ক্রেতা সংকট ও দিন দিন নিত্যপন্য সামগ্রীর ক্রয় মূল্য বৃদ্ধি, ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা এবং সাংসারিক ঘানি টানতে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। তাদের দাবি, সরকারি সাহায্য সহযোগিতা, ব্যাংক বা এনজিও থেকে ঋণ পাওয়া গেলে তাদের এই পেশাকে টিকিয়ে রেখে সুখে-শান্তিতে পূর্বের মত জীবন যাপন করতে পারবেন।
পেকুয়া বাজারের কর্মকার সনজিৎ (৩৮) বলেন, তিনি ১৮ বছর ধরে এ পেশায় আছেন। তাদের তৈরিকৃত বিভিন্ন কৃষি উপকরণ জিনিস গুলো পাইকারেরা কিনে নিয়ে যেত। কিন্তু এখন পাইকারী তো দূরের কথা খুচরাও বিক্রি করা অনেক কষ্ট হচ্ছে। তাদের এ পেশা আজ বিলুপ্তির পথে। সরকার একটু সুদৃষ্টি বা সহযোগিতা করলে আমাদের বাপ দাদার ঐতিহ্য পেশাটা ধরে রাখতে পারবেন।
পেকুয়া বাজারের শিবাধন কর্মকার (৫০) বলেন, পেকুয়া উপজেলার মধ্যে এটি বৃহত্তর বাজার এ বাজারে রয়েছে অনেক কামারের দোকান, তবে বর্তমানে লৌহ শিল্পের মূল্য বৃদ্ধিতে আগের মত কাজ নেই। পেশায় কর্মরত থেকে সংসার, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হচ্চে প্রতিনিয়ত। তিনি আরো বলেন লেখাপড়া করি নাই এবং অন্য কাজ পারিনা বিধায় এ কাজ করি। বর্তমানে আমাদের তৈরি দা,বঁটি, খুন্তি,কোদাল,কাস্তে,বেলচা,নিরানি,কাঁচি ইত্যাদি। এসব জিনিস বিক্রি করে দৈনিক ৫শ-৬শ টাকা ইনকাম হয়, আবার হয়না। দোকান ভাড়া, কর্মচারী, বিদ্যুৎ বিল এসব দিতে এখন হিমশিম খাচ্ছি। এ টাকা দিয়ে পরিবার নিয়ে কোনরকম দিন পার করছি ।
উপজেলার আরবশাহ বাজারের সংকর কর্মকার (৫৫) বলেন, এটি উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের অনেক পুরাতন বাজার। বর্তমানে এ কাজ করে সংসারের তেমন চাহিদা মেটাতে পারেননা। বছর ঘুরে কোরবানির ঈদ ও কৃষি কাজের মৌসুমে কিছু কাজ হয়। তাছাড়া কাজ হয় না। বাকী সময়টা তাদের অনেক কষ্ট করে চলতে হয়।
উপজেলার টৈইটং বাজারের দিবাসিস কর্মকার (৩৭) বলেন, ছোট বেলা থেকে তিনি জীবিকার তাগিদে এ পেশায় জড়িত। অনেক কষ্ট করে জীবনযাপন করছেন।
পেকুয়া কবির আহমদ চৌধুরী বাজার সমিতি সভাপতি মোঃ মিনহাজ উদ্দীন বলেন,কামার শিল্প এদেশের একটি প্রাচীন পেশা, যার কাজ লোহার জিনিসপত্র তৈরি করা। তারা পেশাগতভাবে গৃহস্থালির কাজে, কৃষিকাজে ব্যবহার্য লৌহজাতসামগ্রী তৈরি করেন। এখন ঈদে চাঁদে দুই একমাস ছাড়া বাকি মাসগুলোতে তেমন কাজ থাকে না। ইতিমধ্যে তাদের জীবিকার চাহিদা মেটাতে না পেরে অনেক কর্মকার চলেও গেছে। তবে বিশেষ প্রনোদনা দিয়ে
এই পেশা ও পেশাজীবীদের বাঁচিয়ে রাখা দরকার।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
টিউলিপকে বরখাস্তের দাবি ব্রিটেনের বিরোধীদলীয় নেতার
দাবানল থেকে পালিয়ে আসার ‘নারকীয় অভিজ্ঞতা’ লস অ্যাঞ্জেলেসের বাসিন্দাদের
হামাসের পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে গাজায় চার ইসরাইলি সেনা নিহত
শতাধিক পণ্য ও সেবায় সরকার ভ্যাট বাড়ানোর পথ বেছে নিলো কেন
আজ বায়ুদূষণের শীর্ষে ঘানার আক্রা, ঢাকার অবস্থান তৃতীয়
ডাকসু নির্বাচন : ছাত্রদলের সঙ্গে শিবির-বৈষম্যবিরোধীদের পাল্টাপাল্টি অবস্থান
লন্ডনে চিকিৎসকদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে খালেদা জিয়া, অবস্থার দ্রুতই উন্নতি
এবার নির্বাচন কমিশনের ডিসপ্লে বোর্ডে ভেসে উঠল ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’
এবার মার্কিন পণ্যের ওপর ‘প্রতিশোধমূলক’ শুল্ক আরোপের ঘোষণা কানাডার
ফ্রান্সের বিরুদ্ধে আলজেরিয়ার তথ্য বিভ্রান্তির অভিযোগ, কূটনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে
আজ গরম চা দিবস
এলিফেন্ট রোডে ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে চাপাতি দিয়ে কোপ, ভিডিও ভাইরাল
গাজায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে হাজার হাজার অবিস্ফোরিত বোমা
জ্যাক স্মিথ বিচার বিভাগ থেকে পদত্যাগ করেছেন
তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডে গ্যারেজের আগুন নিয়ন্ত্রণে
লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানল, আগুনের বিরুদ্ধে দমকল বাহিনীর মরিয়া লড়াই
হাসিনাকে যে কারণে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করতেই হবে ভারতকে: তুর্কি গণমাধ্যমের বিশ্লেষণ
সিরিয়ার স্থিতিশীলতা নিয়ে আলোচনায় সউদী আরবে বৈঠক
ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গাজায় নিহত আরও ৩২, মানবিক সংকট চরমে
চাটমোহর পৌর বিএনপির কাউন্সিলে আরশেদ-তাইজুল-সিন্টু নির্বাচিত