ঢাকা   সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৮ আশ্বিন ১৪৩১

আখেরি মোনাজাতে দুনিয়া ও আখিরাতের শান্তি কামনা শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব

Daily Inqilab গাজীপুর থেকে স্টাফ রিপোটার

০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:০৬ পিএম | আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:৩৭ পিএম

 

 

 

মুসলিম উম্মার শান্তি সম্প্রীতি, দেশের কল্যাণ, দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি কামনা করে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে তাবলিগ জামাতের তিন দিনের মহা সম্মেলন বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব।

রবিবার ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখ লাখ মুসুল্লি উপস্থিত হন টঙ্গী ও এর আশপাশের এলাকায়। আখেরি মোনাজাতে মুসল্লিরা তাদের অতীত কৃতকর্মের জন্য চোখের জলে বুক ভাসিয়ে দু হাত তুলে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

এ সময় আমিন আমিন ধ্বনিতে টঙ্গীর তুরাগ তীর ও এর আশপাশের এলাকা প্রকম্পিত হয়ে উঠে। তৈরি হয় এক আবেগ ঘন মুহূর্ত। যে যেভাবে যে অবস্থায় ছিলেন সে অবস্থাতেই আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন।
রবিবার সকাল ৯টা‌ ১ মিনিটে এই আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন কাকরাইল মারকাজের তাবলিগ জামায়াতের শুরা সদস্য মাওলানা মো. জুবায়ের হাসান। আরবি, উর্দু ও বাংলা মিলিয়ে তিনি ২২ মিনিটে মোনাজাত শেষ করেন।

ইজতেমা ময়দানের বিদেশি নিবাসের পূর্বপাশের বিশেষ মোনাজাত মঞ্চ থেকে মোনাজাত পরিচালনা করা হয়। এই মোনাজাত টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

এর আগে ফজরের পর হেদায়েতি বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক । ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা কিছু সময় নসিহতমূলক বক্তব্য দেন। পরে সকাল ৯টা ১ মিনিটে শুরু হয় আখেরি মোনাজাত।তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের মধ্যে বিভেদের কারণে এবারও বিশ্ব ইজতেমা হচ্ছে আলাদাভাবে। গত শুক্রবার আম বয়ানের মধ্য দিয়ে এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হয়।

এই পর্বে অংশ নেন কাকরাইল মারকাজের মাওলানা মো. জুবায়েরের অনুসারীরা, যারা নিজেদের ‘শুরায়ে নিজাম’ বলতে পছন্দ করেন।

প্রতিবছর বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেয় কয়েক লাখ মানুষ। তাদের মধ্যে তাবলিগ জামাতের বিদেশি অনুসারী থাকেন ৩০ থেকে ৪০ হাজার।
তাবলিগ জামাতের নিয়মিত অনুসারী নন, এমন অনেকও বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে শামিল হন।

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেকেই টঙ্গীর তুরাগ তীরে পৌঁছাতে শুরু করেন শনিবার দুপুর থেকে। বাস, ট্রাক, কার, মাইক্রোবাস, ট্রেন, লঞ্চে করে এসে টঙ্গীতে পৌঁছে অবস্থান নিতে শুরু করেন।

তাদের যাতায়াত সহজ করতে শনিবার রাত ১০টা থেকে গাজীপুরের তিনটি সড়কে ইজতেমাগামী যাত্রীদের যানবাহন ছাড়া সাধারণ যান চলাচল বন্ধ করে দেয় গাজীপুর মহানগর ট্রাফিক পুলিশ। সারা রাত ধরেই ইজতেমা ময়দানের পথে মানুষের ঢল নামে।

ভোগড়া বাইপাস থেকে ইজতেমা মাঠের দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। এই পুরো পথ হেঁটে অনেকে ইজতেমা মাঠের কাছাকাছি পৌঁছান।

ইজতেমা মাঠে জায়গা না পেয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, কামারপাড়া সড়ক, আহ্ছানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতাল এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেয় হাজারো মানুষ। তাতে ওইসব এলাকায় স্বাভাবিক যানবাহন চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। গাজীপুরের সফিপুর থেকে আসা আবুল কালামের সঙ্গে কথা হয় টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায়। তিনি জানান, ভোর ৪টায় পিকআপে করে কালিয়াকৈর থেকে রওনা হয়ে ভোগড়া বাইপাসে এলাকায় আসেন ভোর সাড়ে ৬টায়। কিছু সময় পরিবহনের জন্য অপেক্ষা করেন। পরিবহন না পেয়ে অন্য অনেকের মত হাঁটা শুরু করেন।

গাজীপুরের ভোগড়া এলাকা থেকে আসা মুজিবুর রহমান বললেন, তার বাড়ি ঝালকাঠিতে। তবে স্টারলাইট সোয়েটার কারখানায় চাকরি পাওয়ায় কিছুদিন ধরে ভোগড়া এলাকাতেই থাকেন। আগে ইচ্ছে থাকলেও ঝালকাঠি থেকে বিশ্ব ইজতেমায় আসা হয়নি তার। এবার যেহেতু গাজীপুরেই আছেন, আখেরি মোনাজাতে অংশ নেওয়ার সুযোগ হারাতে চাননি। পায়ে হেঁটে আসার কষ্ট তিনি ভুলে গেছেন আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে পেরে।

ময়মনসিংহ থেকে আসা লোকমান মিয়া জানালেন, ভালুকা স্ট্যান্ড থেকে একটি মিনিবাসে করে তারা ২০ জন রওনা হয়েছিলেন রাত আড়াইটার দিকে। কুয়াশা আর শীত উপেক্ষা করে এসে তারা মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন।
নরসিংদী থেকে আসা জামাল হোসেন বললেন, “আল্লাহকে রাজি খুশি করতেই শীতের রাতে এ কষ্টটুকু করেও তৃপ্তি পাচ্ছি।”

রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের এলাকার লোকজনও শীত উপেক্ষা করে রাতেই টঙ্গী মুখো হন। মধ্যরাত থেকে টঙ্গীমুখী সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় ১৫ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটেও ইজতেমা মাঠে পৌঁছান অনেকে।

ইজতেমার মাঠে যাদের জায়গা হয়নি, আশপাশের বাসাবাড়ি, ভবন, ভবনের ছাদ কিংবা করিডোর, সড়কের পাশে ফুটপাতে এমনকি গাছতলায় এসে তারা মোনাজাতে হাত তুলেছেন।

ইজতেমা ময়দানে নারীদের বসার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। সে কারণে ময়দানের বাইরে খালি জায়গায়, কলকারখানা ও বসত বাড়ির ছাদসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন বহু নারী।

দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা শুরু হবে ৯ ফেব্রুয়ারি। সেই পর্বের নেতৃত্ব দেবেন ভারতের দিল্লি মারকাজের মাওলানা সা’দ কান্ধলভীর অনুসারীরা। ১১ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ বছরের বিশ্ব ইজতেমা।

 

আরো ৪ জনের মৃত্যু

টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে আসা আরও চার জনের মৃত্যু হ‌য়ে‌ছে। এ নিয়ে এবারের ইজতেমায় ১৯ জনের মৃত্যু হল।

রোববার সকালে ইজতেমা আয়োজক কমিটির গণমাধ্যম সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, শনিবার রাত পর্যন্ত আরও চারজন মৃত্যুবরণ করেছেন। তারা সবাই ইজতেমায় আসা তাবলীগের সাথী।

মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন, রাজবাড়ি জেলার পাংশা থানার মো. সানোয়ার, চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানার মো. আলম, নরসিংদীর মো. শাহনেওয়াজ ভুঁইয়া ও সিরাজগঞ্জের আল মাহমুদ।

গণমাধ্যম সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ আরো বলেন, এবারের ইজতেমার ময়দানে হাজির হওয়া তাবলীগের অনুসারীদের মধ্যে মোট ১৩ জন মারা গেছেন। বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন ধরনের রোগ ও হৃদরোগে অসুস্থ হয়ে তারা মারা যান।

এ ছাড়া মাঠের বাইরে ইজতেমার কাজে সংশ্লিষ্ট ও ইজতেমায় আসার পথে পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয় জন প্রাণ হারিয়েছেন। ইজতেমা আয়োজক কমিটি জানিয়েছে, এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে এর আগে ময়দানে মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন, শেরপুর জেলা সদরের জুগনিবাগ গ্রামের মৃত শমশের আলীর ছেলে নওশের আলী (৬৫), ভোলা জেলার সামানদার গ্রামের বেলায়েত হোসেনের ছেলে আব্দুল কাদের (৫৫), নেত্রকোনা সদরের কালিয়াঝুড়ি এলাকার হোসেন আহম্মদের ছেলে স্বাধীন (৪৫), নেত্রকোনা থানার কুমারী বাজার গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে আবদুস সাত্তার (৭০), একই জেলার বুড়িঝুড়ি গ্রামের স্বল্পদুগিয়া গ্রামের আব্দুস ছোবাহানের ছেলে এখলাস মিয়া (৬৮), ভোলা জেলার ভোল্লা গ্রামের নজির আহমেদের ছেলে শাহ আলম (৬০), জামালপুর জেলার তুলশীপুর এলাকার পাকুল্লা গ্রামের হজরত আলীর ছেলে মতিউর রহমান (৬০)।

ময়দানে আসার পথে মারা যাওয়া তিনজন হলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল থানার ধামাউরা গ্রামের ইউনুছ মিয়া (৬০), চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার চৌহদ্দীটোলা গ্রামের জামান মিয়া (৪০), ও ইজতেমায় আসার পথে বাসচাপায় নিহত পুলিশ সদস্য হাসান উজ্জামান (৩০)। অন্যদের নাম পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে আয়োজক কমিটি।

তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধের কারণে এবারও বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে আলাদাভাবে। প্রথম পর্বের নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশের ‘শুরায়ে নিজাম’ পক্ষ। যারা সাধারণভাবে জুবায়েরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। রবিবার আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয় এ পর্বের ইজতেমা।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ওসমানী হাসপাতালের দুই কর্মচারীকে বরখাস্ত

ওসমানী হাসপাতালের দুই কর্মচারীকে বরখাস্ত

রোমাঞ্চকর মিলান ডার্বিতে ইন্টারের হার

রোমাঞ্চকর মিলান ডার্বিতে ইন্টারের হার

ইন্টারনেটের ব্যবহারের ক্ষেত্রে নতুন উচ্চতায় চীন

ইন্টারনেটের ব্যবহারের ক্ষেত্রে নতুন উচ্চতায় চীন

মধ্যরাতে রাজধানীর সড়কে সড়কে সেনা চেকপোস্ট

মধ্যরাতে রাজধানীর সড়কে সড়কে সেনা চেকপোস্ট

বিপন্ন মেরু ভালুককে গুলি করে হত্যা, তোপের মুখে আইসল্যান্ডের পুলিশ

বিপন্ন মেরু ভালুককে গুলি করে হত্যা, তোপের মুখে আইসল্যান্ডের পুলিশ

বাড়িতে ঢুকে আওয়ামী লীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা

বাড়িতে ঢুকে আওয়ামী লীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা

নদীতে মেহেদী রাঙা হাতে ‘আই লাভ ইউ’ লেখা যুবতীর লাশ উদ্ধার

নদীতে মেহেদী রাঙা হাতে ‘আই লাভ ইউ’ লেখা যুবতীর লাশ উদ্ধার

গান গেয়ে উল্লাস করে যুবককে পিটিয়ে হত্যা, সমালোচনার ঝড়

গান গেয়ে উল্লাস করে যুবককে পিটিয়ে হত্যা, সমালোচনার ঝড়

বড় জয়ে হোয়াইটওয়াশ এড়াল দ. আফ্রিকা

বড় জয়ে হোয়াইটওয়াশ এড়াল দ. আফ্রিকা

গোল উৎসবে বার্সার ছয়ে ছয়

গোল উৎসবে বার্সার ছয়ে ছয়

রোনালদোর দ্রততম শত গোলের রেকর্ড ছুঁলেন হল্যান্ড

রোনালদোর দ্রততম শত গোলের রেকর্ড ছুঁলেন হল্যান্ড

ঘটনাবহুল ড্রয়ে শেষ আর্সনাল-সিটি মহারণ

ঘটনাবহুল ড্রয়ে শেষ আর্সনাল-সিটি মহারণ

বায়তুল মোকাররমের ঘটনার জেরে ইফা মহাপরিচালক প্রত্যাহার

বায়তুল মোকাররমের ঘটনার জেরে ইফা মহাপরিচালক প্রত্যাহার

কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?

কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?

এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী

এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে

রাষ্ট্র গঠনে যা করা জরুরি

রাষ্ট্র গঠনে যা করা জরুরি

নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রস্তাবনা

নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রস্তাবনা

ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ

ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ

ইসরাইল এখনো সন্ত্রাসীর মতো হামলা চালাচ্ছে

ইসরাইল এখনো সন্ত্রাসীর মতো হামলা চালাচ্ছে