ঢাকা   সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৮ আশ্বিন ১৪৩১

নৌকায় ভোট না দেয়ায় গণধর্ষণ,নির্যাতিতা সেই পরিবারের নিরাপত্তায় পুলিশ

Daily Inqilab নোয়াখালী জেলা সংবাদদাতা

০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:৫১ এএম | আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:৫১ এএম

নৌকায় ভোট না দেয়ায় নোয়াখালীর সুবর্ণচরে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় রায় ঘোষণার পর থেকে নির্যাতিতা নারীর বাড়িতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে চরজব্বার থানা পুলিশ।
জানা গেছে, সোমবার রাতেও চরজব্বার থানার পুলিশ পরিদর্শক(তদন্ত) জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে দু'জন পুলিশ পরিদর্শকসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ওই নির্যাতিতা গৃহবধূর বাড়ি পাহারা দিচ্ছেন। পুলিশের সাথে নির্যাতিতার স্বামীকেও দেখা গেছে।
এর আগে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আসামিদের উপস্থিতিতে নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল–২এর বিচারক (জেলা জজ) ফাতেমা ফেরদৌস এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
দীর্ঘ ১ ঘন্টা ৩৯ মিনিট সময় তিনি আদালতে মামলার রায় পড়ে শোনান।
রায়ে ১৬ আসামির মধ্যে ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ছয় আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ও যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামিদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন,মো. রুহুল আমিন, মো. হাসান আলী বুলু, মো. সোহেল, স্বপন, ইব্রাহীম খলিল, আবুল হোসেন আবু, মো. সালাউদ্দিন, মো. জসীম উদ্দিন, মো. মুরাদ পিতা মো. রফিক ও মো. জামাল হেন্জু।

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন,মো. হানিফ প্রকাশ বাগন আলী, মো. চৌধুরী, মো. বাদশা আলম প্রকাশ কুড়াইল্যা বাসু, মোশারফ, ও মো. সোহেল। তাদের মধ্যে মো. মিন্টু প্রকাশ হেলাল পলাতক রয়েছেন। আসামিরা সকলে সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবিলি ইউনিয়নের মধ্যম ব্যাগ্যা গ্রামের বাসিন্দা।

চরজুবিলি ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মঞ্জুর আলম বলেন, ‘গতকাল রাত থেকে একাধিকবার ওই বাড়িতে গিয়েছি। তাদের নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে থানা পুলিশ। পুলিশ ডাকলে আমাকেও ভিকটিমের বাড়িতে যেতে হচ্ছে।’

চরজব্বার থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘রায় ঘোষণার দিন সকাল থেকে নির্যাতিতার বাড়িতে নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এলাকায় সচেতনতা জন্য জনগণের সাথে মতবিনিময় করা হয়েছে।’ জয়নাল আবেদীন আরও বলেন, ‘সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার জন্য পুলিশের নজরদারি থাকবে।’

মামলা ও আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাতে স্বামী–সন্তানদের বেঁধে রেখে এক নারীকে (৪০) মারধর ও দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। নির্যাতনের শিকার নারী চার সন্তানের জননী। ভুক্তভোগীর অভিযোগ ছিল, ভোটকেন্দ্রে থাকা ব্যক্তিদের পছন্দের প্রতীকে (নৌকা) ভোট না দেয়ায় ওই লোমহর্ষক হামলা ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি তখন দেশ-বিদেশ এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম গুলোতেও ব্যাপক আলোচিত হয়।

নির্যাতিতা ওই গৃহবধু গণমাধ্যমকর্মী দের বলেছিলেন, চর জুবিলি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য রুহুল আমীনের নেতৃত্বে বর্বরোচিত লোমহর্ষক নির্যাতন করা হয়। তিনি বলেন, ‘তারা আমাকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার জন্য জোর করেছিল, কিন্তু আমি তাদের কথা না শুনে ধানের শীষে ভোট দিয়েছিলাম।’

ঘটনার পরদিন (৩১ ডিসেম্বর) নির্যাতনের শিকার গৃহবধুরর স্বামী সিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে চর জব্বর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। পরে মামলার তদন্ত শেষে সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন প্রচার সম্পাদক (গ্রেপ্তারের পর বহিষ্কৃত) রুহুল আমিন মেম্বারসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ধানের শীষে ভোট দেয়ার কারণেই ক্ষিপ্ত হয়ে গৃহবধূকে দল বেধে ধর্ষণ করা হয় বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেন এ ঘটনায় গ্রেপ্তার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমীনের অনুসারী সোহেল। এজাহারনামায় প্রধান আসামি তিনি।
চরজব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, নির্যাতিতার পরিবারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা আছে।ওই এলাকায় পুলিশি টহল অব্যাহত আছে।
এর আগে মামলার রায় ঘোষণার সাথে সাথে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত সহ অন্যান্য আসামীরা এজলাসে ঘোষিত রায়ের বিরুদ্ধে নানা অশ্লীল বাক্য ব্যাবহার,পুলিশ ও গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর চড়াও হতে দেখা যায়।
তাদের স্বজনরা আদালত অঙ্গন,জেলা প্রশাসক কার্যালয়, প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ, ভাংচুর করে
রায়কে প্রহসনমূলক বলে বিষোদগার করে।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

রাতের ভোটের কারিগর হেলাল উদ্দিন এখনো গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ কক্সবাজার বাসী

রাতের ভোটের কারিগর হেলাল উদ্দিন এখনো গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ কক্সবাজার বাসী

খুলনার ডিসি সাইফুলকে প্রত্যাহারের দাবিতে মানব বন্ধন

খুলনার ডিসি সাইফুলকে প্রত্যাহারের দাবিতে মানব বন্ধন

পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে ৩০ কর্মকর্তার বদলি

পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে ৩০ কর্মকর্তার বদলি

মোহাম্মদপুরে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১

মোহাম্মদপুরে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১

শ্রমিক বিক্ষোভে আশুলিয়ায় ৩৯ পোশাক কারখানা বন্ধ, সড়ক অবরোধ

শ্রমিক বিক্ষোভে আশুলিয়ায় ৩৯ পোশাক কারখানা বন্ধ, সড়ক অবরোধ

বরিশাল রেঞ্জের আনসারের উপ-মহাপরিচালক ফখরুলকে বরখাস্ত

বরিশাল রেঞ্জের আনসারের উপ-মহাপরিচালক ফখরুলকে বরখাস্ত

সৈয়দপুরে তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি ঘরে ঘরে, হাঁসফাঁস জীবন

সৈয়দপুরে তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি ঘরে ঘরে, হাঁসফাঁস জীবন

গাজীপুরে ১২ দফা দাবি জানিয়ে কারখানা শ্রমিকদের বিক্ষোভ

গাজীপুরে ১২ দফা দাবি জানিয়ে কারখানা শ্রমিকদের বিক্ষোভ

চিরচেনা রূপে রাঙামাটি

চিরচেনা রূপে রাঙামাটি

ট্রাম্পকে হত্যা চেষ্টা নিয়ে যেভাবে গুজব ছড়ানো হচ্ছে

ট্রাম্পকে হত্যা চেষ্টা নিয়ে যেভাবে গুজব ছড়ানো হচ্ছে

লেবাননে পেজার ও ওয়াকিটকি বিস্ফোরণ নিয়ে যে ছয়টি প্রশ্ন সামনে আসছে

লেবাননে পেজার ও ওয়াকিটকি বিস্ফোরণ নিয়ে যে ছয়টি প্রশ্ন সামনে আসছে

সুনামগঞ্জে ফুটবল খেলা নিয়ে দু'পক্ষের সংঘর্ষ, আহত শতাধিক

সুনামগঞ্জে ফুটবল খেলা নিয়ে দু'পক্ষের সংঘর্ষ, আহত শতাধিক

সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রীর ফাঁসির দাবিতে সুনামগঞ্জে বিএনপির বিক্ষোভ

সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রীর ফাঁসির দাবিতে সুনামগঞ্জে বিএনপির বিক্ষোভ

নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে তিনে শ্রীলঙ্কা

নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে তিনে শ্রীলঙ্কা

খাগড়াছড়িতে অবরোধের তৃতীয় দিন, বাজারে পাহাড়ি-বাঙালি উপস্থিতি স্বাভাবিক

খাগড়াছড়িতে অবরোধের তৃতীয় দিন, বাজারে পাহাড়ি-বাঙালি উপস্থিতি স্বাভাবিক

শৈলকুপায় নিখোঁজের ৩ দিন পর  মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার

শৈলকুপায় নিখোঁজের ৩ দিন পর মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার

অমিত শাহ’র বক্তব্য বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ইঙ্গিত বহন করে না : জামায়াত

অমিত শাহ’র বক্তব্য বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ইঙ্গিত বহন করে না : জামায়াত

এবার পাকিস্তানে ১২ দেশের কূটনীতিকদের গাড়িবহরে হামলা

এবার পাকিস্তানে ১২ দেশের কূটনীতিকদের গাড়িবহরে হামলা

নতুন থিয়ানছি স্যাটেলাইটগুচ্ছ উৎক্ষেপণ করেছে চীন

নতুন থিয়ানছি স্যাটেলাইটগুচ্ছ উৎক্ষেপণ করেছে চীন

বাংলাদেশের জন্য এবারের জাতিসংঘ সম্মেলন যেসব কারণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ

বাংলাদেশের জন্য এবারের জাতিসংঘ সম্মেলন যেসব কারণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ