কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থমকে গেছে আওয়ামীপন্থী রাজনীতি, অভিযোগের তীর ভিসির দিকে
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৫:৪১ পিএম | আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৬:৩৮ পিএম
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) প্রায় দুই বছর ধরে বন্ধ শিক্ষক সমিতির নির্বাচন। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরাই এ শিক্ষক সমিতিতে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু পরিষদ নামে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের দুটি সংগঠন রয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে দুটি সংগঠনের নেতাদেরই অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন নিজের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখতে তার অনুগত শিক্ষকদের দিয়ে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে বাঁধা সৃষ্টি করছেন। এর পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে স্তব্ধ করতে বঙ্গবন্ধু পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনায়ও তিনি বাঁধা প্রদান করছেন বলে অভিযোগ এ শিক্ষক নেতাদের।
এদিকে কমিটি বিলুপ্তির প্রায় এক বছর হয়ে গেলেও শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হয়নি। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, কমিটি বিলুপ্তির বছর পেরোলেও নতুন কমিটি না হওয়ার পেছনে উপাচার্যই দায়ী। এছাড়াও অছাত্র এবং প্রশ্নবিদ্ধ প্রার্থীদের কমিটিতে আনতে একাধিকবার কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে ধর্না দিয়েছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সর্বশেষ গত ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে বঙ্গবন্ধু পরিষদের সদস্যদের শ্রদ্ধা নিবেদনে সরাসরি বাধা প্রদান করেন উপাচার্য। বিষয়টি নিয়ে উপাচার্যের মতাদর্শ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামীপন্থী শিক্ষক নেতৃবৃন্দ।
এর আগে ২০২২ সালের পহেলা ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের একাংশের সভাপতি কাজী ওমর সিদ্দিকীসহ উপাচার্যপন্থি বেশ কয়েকজন শিক্ষক কর্তৃক নির্বাচনে হস্তক্ষেপের পর নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। এরপরে গত ১ বছরেরও বেশি সময়ে বেশ কয়েকবার সমিতি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হলেও উপাচার্য পন্থি শিক্ষকদের অসহযোগিতায় বিষয়টি আর এগোয়নি।
সম্প্রতি শিক্ষকদের একটি অংশ সমিতি গঠনের উদ্যোগ নিলে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২০০ জন শিক্ষক স্বাক্ষর করেন। এতেও উপাচার্যের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত বিভিন্ন পদে থাকা শিক্ষকদের একটি অংশ স্বাক্ষর করেননি। সর্বশেষ ০৭ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) শিক্ষকদের এক সাধারণ সভায় আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের ঘোষণা দেয়া হয়।
তবে দীর্ঘ দিন সমিতি গঠন করতে না পারার বিষয়টি উপাচার্যের ইন্ধনে হয়েছে উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সর্বশেষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দি জানান, শিক্ষক সমিতির সর্বশেষ নির্বাচন ভন্ডুল করেছেন উপাচার্য পন্থী শিক্ষকগণ৷ স্পষ্টতই তারা নিজেদের সিদ্ধান্তে এমনটা করেনি। প্রশাসনের বিভিন্ন পদে তারা বহাল রয়েছেন। উপাচার্যের ইন্ধনেই এমনটা করেছে তারা। এখনও শিক্ষক সমিতি গঠন হোক, একটি অংশ সেটা তারা চায়না।
বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহেদী হাসান জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেজর স্টেক হোল্ডারদের প্রতিনিধিত্ব করে শিক্ষক সমিতি। কিন্তু উপাচার্য শিক্ষকদের মতামতকে অবনমন করতে খুবই চাতুর্যপূর্ণভাবে তার আস্থাভাজন কয়েকজনকে দিয়ে সমিতির নির্বাচন বানচাল করেছেন। তার নির্দেশেই গত এক বছরেরও বেশি সময়ে শিক্ষকদের কোন বৈধ প্রতিনিধিত্ব নেই। ২০১০ সালের পর থেকে কখনও শিক্ষক সমিতি অকার্যকর ছিল না। আরেকটি দিক হলো আমরা দেখেছি, ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই যখন জননেত্রী শেখ হাসিনাকে কারাগারে প্রেরণের মধ্যে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে স্তব্ধ করার প্রচেষ্টা চালায় স্বাধীনতা বিরোধীরা। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপকগণ রাজপথে আন্দোলন করলেও বর্তমান উপাচার্য দেশ ছেড়ে অস্ট্রেলিয়ায় পালিয়ে যায়। আবার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়েও বঙ্গবন্ধুর পরিষদকে গত ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে বাধা প্রদান করেন। কাজেই বিষয়গুলো খুবই পরিস্কার। বস্তুত উপাচার্য মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে দুর্বল করার অপচেষ্টা বাস্তবায়নে তৎপর। তিনি সত্যাসত্য কোন মতাদর্শ বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি তার বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু পরিষদের কার্যক্রমে বিভিন্ন সময়ে উপাচার্যের অসহযোগিতা এবং উপাচার্যের নানা অনিয়ম এবং দুর্নীতির বিষয়ে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু পরিষদের দুটি অংশের নেতারা।
বঙ্গবন্ধু পরিষদের একাংশের (কামাল-মাহবুব) সভাপতি অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন জানান, উপাচার্য বরাবরই বঙ্গবন্ধু পরিষদের কার্যক্রমে বাধা প্রদান করে আসছেন। বিভিন্ন সময়ে তাঁর অসহযোগিতা পেয়েছি। সর্বশেষ গত ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে তিনি প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুর ভাষ্কর্যে আমাদের শ্রদ্ধা নিবেদনে বাধা প্রদান করেন। যেটি প্রমাণ করে, তিনি মূলত মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মুখে বললেও অন্তরে সেটি ধারণ করেন না।
বঙ্গবন্ধু পরিষদের অপর আরেকটি অংশের (ওমর-মাহবুব) সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুক হক ভুঁইয়া জানান, উপাচার্য মুখে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বললেও কাজে তার প্রতিফলন নেই। কেউ বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাস করলে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম করতে পারেন না, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ন্যায্য প্রমোশন আটকে দিতে পারে না, অনিয়ম করে প্রক্টরের অবৈধ ডিগ্রির অনুমোদন দিতে পারে না। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের নেতৃত্বে কিছু শিক্ষককে দিয়ে ক্যাডার বাহিনী গড়ে তুলেছেন, যারা অন্য শিক্ষকদের মারধর, গালিগালাজ করছে। এসব বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নয়। সর্বোপরি এই প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অংশীদারের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রুদ্ধ করেছে। এগুলোর কোনটিকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসরণ বলা যায়?
এদিকে ২০২৩ সালে ০৬ মার্চ শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্তির পর প্রায় বছর পার হতে চলেছে। তবে বিভিন্ন সময়ে কমিটি গঠনের গুঞ্জন এবং কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলেও পুণরায় কমিটি গঠিত হয়নি। বিষয়টি নিয়ে শাখা ছাত্রলীগের অন্তত দশজন নেতাকর্মীদের সাথে কথা হয়েছে। তাদের অভিযোগ, উপাচার্য নিজের পক্ষে কমিটি আনতে বিভিন্ন সময়ে অছাত্র এবং ভিন্ন রাজনৈতিক পরিচয়ের ব্যক্তিতের দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের দারস্থ হয়েছেন। এমনকি বিভিন্ন সময়ে এজেন্ডা বাস্তবায়নে বাধা হওয়ায় শাখা ছাত্রলীগের একাধিক নেতাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও বহিষ্কার করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কোন কমিটি নেই৷ শুরু থেকেই বিভিন্ন সময়ে উপাচার্য ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের একজনের বিরুদ্ধে অপরজনকে ব্যবহার করে কোন্দলে জড়িয়েছেন। শাখা ছাত্রলীগের কোন কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকুক, সেটি তিনি চাননা। যাদের বিরুদ্ধে শিবিরের সাথে যোগসূত্র এবং মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তির সাথে থাকার অভিযোগ আছে, বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে তিনি তাদের বিষয়ে তদবির করেছেন। অপরদিকে প্রশাসনের বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়নে বাধা হওয়ায় গত বছরের ৬ মার্চ কমিটি বিলুপ্তির ঠিক পরদিনই ৭ মার্চ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে আমাদের বহিস্কার করেছিলেন। বস্তত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কোন রাজনীতি থাকুক সেটি উপাচার্য চায়না।
তবে অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন জানান, এ বিষয়ে উপাচার্য বলেন 'ফুল দিতে দেয়নি এটি সত্য নয়। স্বদেশ প্রর্তাবর্তন দিবস পালনে আমি একটি ম্যানেজম্যান্ট কমিটি করি। শৃঙ্খলা রক্ষার্থে আমি তাদের উপাচার্যের বক্তব্যের পরে ফুল দিতে বলেছি।'
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
গৌরনদীতে তৃতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে প্রতীক পেয়ে শুরু প্রচার-প্রচারণা
ভোটারদের হুমকি : ওবায়দুল কাদেরের ভাই মেয়র কাদের মির্জার বিরুদ্ধে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ চেয়ারম্যান প্রার্থী বাদলের
পাবনায় জটিল রোগে আক্রান্তদের মাঝে চেক বিতরণ সমাজ সেবা অধিদপ্তরের
সৈয়দপুর বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠানামা স্বাভাবিক
প্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশ তৈরিতে প্রকৌশলীদের এগিয়ে আসতে হবে : নজরুল হামিদ
বেগমগঞ্জে দুহাজার টাকা নিয়ে স্বামী সাথে ঝগড়া করে গৃহবধূর আত্মহত্যা
১১ জন গর্ভধারিণী মাকে ‘স্বপ্নজয়ী মা’ সম্মাননা প্রদান করেছে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর
ডিএনসিসির উন্নয়ন কাজে নতুনভাবে যুক্ত হচ্ছে ১৮টি ওয়ার্ডের রাস্তা ও ড্রেনেজ : মেয়র
ইন্দোনেশিয়ায় বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৩
সমাজ পরিবর্তনে পোশাক শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে : বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী
এলএএনপিএসি’র সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র গেলেন সেনাবাহিনী প্রধান
নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য আবাসন প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের
চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে কুইক রেসপন্স টিম চান সিটি মেয়র
দেশব্যাপী সাংস্কৃতিক গণজাগরণ দরকার : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
দক্ষ নারী কর্মীদের বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে কাজ করবে মন্ত্রণালয় : শফিকুর রহমান চৌধুরী
হায়দার আকবর খান রনোর দাফন সম্পন্ন
সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার ও ভুয়া খবর ছড়ানো রোধে বৈশ্বিক পর্যায়ে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি : তারার
মুক্তি পেলেন বিএনপি নেতা হাবিব উন নবী খান সোহেল
গাজীপুরে লিফটে আটকে রোগীর মৃত্যু, ঘটনাস্থল পরিদর্শনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
স্যাটেলাইট প্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা অর্জনে সহযোগিতা করতে চায় ফ্রান্স : প্রতিমন্ত্রী পলক