সিলেট-১০ নম্বর কূপে তেল-গ্যাসের সন্ধান, দৈনিক মিলবে ৬০০ ব্যারেল
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:৪১ এএম | আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:৪১ এএম
প্রায় আড়াই হাজার মিটার ভূগর্ভ থেকে অতি উচ্চ চাপে আসছে গ্যাস, পাওয়া গেছে গ্যাসের তিনটি স্তর; ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি দূরত্বে তেলের সন্ধানও মিলেছে একই কূপে। সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে পাওয়া এমন তথ্যে সেখানে বাণিজ্যিক সম্ভাবনার নতুন দ্বার খোলার আশা দেখছে সরকার।
সিলেটের তামাবিল অঞ্চলে ৮ দশমিক ৪৮ একর এক ফসলি জমিতে এমন একটি সফল অনুসন্ধান কূপ সরকারি নীতি নির্ধারকদের ব্যাপক আশাবাদী করে তুলছে।
দেশের প্রধান গ্যাস সরবরাহকারী অঞ্চল সিলেটের এ কূপ থেকে ভালো কিছু পাবার আশায় পরিকল্পনাও সাজাচ্ছে এ গ্যাসফিল্ড দেখভালকারী সিলেট গ্যাসফিল্ড কোম্পানি।
‘নিশ্চিত’ সম্ভাবনা মাথায় রেখেই সিলেট-১০ নম্বর কূপ হিসেবে চিহ্নিত এ কূপের কাছাকাছি আরও দুটি কূপ খননের পরিকল্পনা নিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত এ কোম্পানি। সেখানে গ্যাসের পাশাপাশি তেল পাওয়ার সম্ভাবনার কথাও বলছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
শনিবার প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, “আমরা আশাবাদী এ এলাকায় আরও অনেক বড় সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে। আমাদের নতুন কর্মতৎপরতার আরেকটি প্রমাণ হচ্ছে সিলেট ১০ নম্বর কূপ। চেষ্টা করলে যে অবশ্যই পারা যায়, এটি তার একটি প্রমাণ।”
শিগগির এ কূপের তেল উত্তোলনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ব্যবহারে চেষ্টা করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, "আগামী দুই মাসের মধ্যে এখানে তেলের রিজার্ভ কতটুকু আছে সেটা জানা যাবে। এখানে আমরা আরও দুটি কূপ খনন করব। এখানে মোট তিনটি স্তরে গ্যাস পাওয়া গেছে যার চাপ অনেক বেশি।“
এ কূপ এলাকা পরিদর্শনের সময় শনিবার তিনি বলেছেন, এ জন্য সিলেট গ্যাস ফিল্ড কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনে আরও দুটি রিগ নিতে বলা হয়েছে।
“আপনারা আরও ৫/৬ কূপ খননের প্রস্তুতি নেন। আগামী দুই বছরে আমরা সম্ভাবনার দিক দেখতে চাই।“
কী আছে সিলেট-১০ নম্বর কূপে
সিলেটের তামাবিলে অবস্থিত এ কূপ খননের কাজ করছে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড। এখানে চলতি বছরের মধ্যে আরও একটি গ্যাস কূপ ও পরে একটি তেল কূপ খনন করা হবে।
অনুসন্ধানের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে গ্যাসক্ষেত্র কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রথম কূপ থেকে দৈনিক ২০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে এবং দ্বিতীয় কূপ থেকে দৈনিক ১৫ থেকে ২০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত এ কূপ খননে ২০২১ সালের অক্টোবরে ২০২ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। খনন ঠিকাদার হিসেবে চীনা কোম্পানি সিনোপ্যাকের সঙ্গে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে টার্ন কি চুক্তি সই করে কর্তৃপক্ষ।
সিলেট গ্যাস ফিল্ডের কর্মকর্তারা জানান, ইতোমধ্যে ৮ দশমিক ৪৮ একর জমিতে কূপের খনন কাজ শেষ হয়েছে। এ কূপে ৪টি স্তরে গ্যাস ও ১টি স্তরে তেল পাওয়া গেছে। ২৫৪০ হতে ২৫৬৫ মিটার গভীরতায় ডিএসটি চলাকালীন দৈনিক ২২-২৫ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস প্রবাহের বিপরীতে ওয়েলহেড প্রেসার ৩২৫০ পিএসআইজি। এ স্তর থেকে দৈনিক ২০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
এ ছাড়া ১৩৯৭ হতে ১৪৪৫ মিটার গভীরতায় টেস্ট করে ক্রুড অয়েল পাওয়া যায় যার এপিআই গ্রাভিটি ২৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি। স্বয়ংক্রিয় প্রেসারে প্রতি ঘণ্টায় ৩৫ ব্যারেল হারে তেল প্রবাহিত হয়।
গত ১৬ ডিসেম্বর এ কূপের ৯ হাজার লিটার তেল চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারিতে পাঠানো হয়েছে।
প্রাথমিক হিসাবে এ স্তরে তেলের মজুদ প্রায় ৮ মিলিয়ন ব্যারেল যার মূল্য ৭ হাজার কোটি টাকা।
এখানে গ্যাসের মজুদ রয়েছে ৪৩ বিসিএফ, যার ভারিত গড় মূল্য প্রায় ৩২৭৩ কোটি টাকা। আমদানি করা এলএনজি'র মূল্য বিবেচনায় উপজাতসহ এ পরিমাণ গ্যাসের মূল্য ৮ হাজার ১২৮ কোটি টাকা। কূপ দুটির মাধ্যমে দৈনিক ৩৫ হতে ৪০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস উৎপাদন করা হলে ৮/১০ বছর ধরে গ্যাসের সরবরাহ পাওয়া যাবে।
জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে দৈনিক ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস
শনিবার বাপেক্সের পরিচালনায় কৈলাশটিলা-৮ নম্বর কূপের চলমান খনন কাজ, সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানির সম্প্রসারিত প্রসেস প্লান্ট, সিলেট ১০ নম্বর অনুসন্ধান কূপের সদ্য সমাপ্ত খনন কাজ পরিদর্শন করেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
এখন ৪৬টি কূপ খননে সরকারের কার্যক্রম পরিচালনার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, নতুন আরও ১০০টি কূপ খননের পরিকল্পনা হাতে নিয়ে আগানো হচ্ছে। তাতে আগামী দুই বছরের মধ্যে দেশি কূপগুলো থেকে জাতীয় সঞ্চালন লাইনে দৈনিক আরও ৬০০ এমএমসিএফডির (মিলিয়ন ঘনফুট) কিছু বেশি গ্যাস যুক্ত হবে। ফলে এখনকার দৈনিক এক হাজার এমএমসিএফডি গ্যাসের ঘাটতির বড় যোগানদাতা হবে দেশীয় এসব উৎস।
সরকার এখন আন্তর্জাতিক বাজার থেকে যে গ্যাস আমদানি করে জাতীয় সঞ্চালন লাইনে দিচ্ছে তাতে প্রতি ইউনিটে ৬০ টাকা খরচ হচ্ছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। একই পরিমাণ দেশি গ্যাসের মূল্য মাত্র ৪ টাকা হওয়ায় তা গ্যাসের যোগানে বড় ধরনের অর্থ সাশ্রয় করবে বলে তার আশা।
পরিদর্শনকালে একাধিক স্থানে দেওয়া বক্তব্যে সরকারি কোম্পানিগুলোকে আরও গতিশীল ও কর্মদ্দীপক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
মন্ত্রী আরো বলেন, "৪৬টি কূপ খননের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের একসঙ্গে ছয়টা রিগ লাগবে। কিন্তু বর্তমানে বাপেক্সের রয়েছে মাত্র চারটি রিগ। কিন্তু এখন যে ১০০টি কূপ খননের পরিকল্পনা নিয়েছি সেখানে সমান্তরালভাবে আরও ছয়টি রিগ প্রয়োজন।
“এখন রিগের জন্য আমরা তো বসে থাকতে পারি না। সে কারণেই বাপেক্সের পাশাপাশি বিদেশি কোম্পানিকে দিয়ে আমরা কূপ খনন চালাচ্ছি।"
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪
মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫
সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই
ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের
গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি
রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের
শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা
বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা
এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা
দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম
বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের
ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?
আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু
বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ
রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী
ধূমপানকে না বলুন
জালিমের পরিণতি ভালো হয় না
অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি
মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়
১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত