ঢাকা   বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১০ আশ্বিন ১৪৩১

সৈয়দ আবুল মকসুদের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ, এখনও তার যে স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি

Daily Inqilab হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতা

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:৫১ এএম | আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:৫১ এএম

দেশের সাংবাদিক, কলামিস্ট, প্রাবন্ধিক, কবি ও লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদের আজ তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। ২০২১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি মহামারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে তিনি বেশ কিছু কাজ হাতে নিয়েছিলেন। যা তিনি বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। তাঁর মৃত্যুর তিন বছর অতিবাহিত হলেও এখনো বাস্তবায়ন হয়নি তাঁর কিছু অসমাপ্ত কাজ। এখনও পূরণ হয়নি তাঁর স্বপ্নগুলো।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের গালা ইউনিয়নের কৌড়ি গ্রামে একটি জাদুঘর কাম পাঠাগার, কোমলমতি শিশুদের ছবি আঁকার জন্য আর্ট গ্যালারি ও প্রসূতি মায়েদের জন্য একটি মাতৃসদনাগার নির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন দেশ বরেণ্য এ কলামিস্ট । তার এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি কৌড়ি গ্রামে কিনেছিলেন ৪১ শতাংশ জমি। সেখানে মাটি ভরাট করে প্রাথমিকভাবে একটি ছাপড়া ঘর নির্মাণের মধ্য দিয়ে জাদুঘর কাম পাঠাগারের শুভ উদ্বোধনও করেন তিনি। কিন্তু তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে তাঁর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন যেন থমকে পড়েছে।
১৯৪৬ সালের ২৩ অক্টোবর বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত, বর্তমান বাংলাদেশের মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার আরুয়া ইউনিয়নের এলাচিপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন সৈয়দ আবুল মকসুদ।

 

পঞ্চাশ থেকে অনবদ্য পদ্মা নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে ভিটেবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেলে তার বাবা বাড়ি করেন হরিরামপুরের চালা ইউনিয়নের চালা গ্রামে। কৈশোর বয়স থেকেই তিনি এখানে বেড়ে উঠেন। ঝিটকা আনন্দ মোহন উচ্চ বিদ্যালয় থেকেই মাধ্যমিকের পড়াশেনা শেষ করেন।
বৈবাহিক জীবনে এসেছে চালা গ্রামের বাড়িটি বিক্রি করে তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস করেন ঢাকায়। তবে তিনি মাঝে মাঝেই কৌড়ি এলাকার হুগলাকান্দি গ্রামে এসে তার চাচার বাড়িতে সময় কাটাতেন। এভাবেই তিনি এই এলাকার মানুষের সাথে নিবিড় সম্পর্কে জড়িয়ে যান এবং স্বপ্ন দেখেন স্মৃতিবিজড়িত এলাকায় বিভিন্ন শিক্ষণীয় স্থাপনা নির্মাণের।

 

শনিবার কৌড়ি গ্রামে সরেজিমনে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর স্বপ্নের জাদুঘর কাম পাঠাগার ও মাতৃসদনাগার নির্মাণের জায়গাটিতে ভূট্টার চাষ করা হয়েছে। জীবিত থাকাকালীন সময়ে তিনি যে ছাপড়া ঘরটি নির্মাণ করেছিলেন সেটি ওভাবেই তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। তবে ছাপড়া ঘরের বেড়ার সাথে জাদুঘর কাম পাঠাগারের যে সাইনবোর্ডটি ছিল। তা আর এখন নেই।

 

তবে সন্ধান মিলল এই স্থানটি যিনি দেখা শোনা করেন এবং সৈয়দ আবুল মকসুদের স্বপ্নের বিষয়ে যার সাথে পরামর্শ করতেন এই গ্রামেরই বাসিন্দা তিনি হলেন আলী আওলাদ হোসেন আকন্দ।

 

তিনি ইনকিলাবকে জানান, সৈয়দ আবুল মকসুদ এখানে মাঝে মাঝেই আসতেন। পাশের তার এক চাচার বাড়িতে থাকতেন। এই এলাকায় তিনি স্মৃতিস্বরূপ বেশ কিছু কাজ হাতে নিয়ে ছিলেন। তার মা সন্তান প্রসবকালে মারা যান। এ জন্য তিনি এখানে একটা মাতৃসদনাগার করার চিন্তা করেছিলেন। প্রতি সপ্তাহে তিনি ঢাকা বড় ডাক্তার এনে চিকিৎসা দিতে চেয়েছিলেন। গান্ধীজির বেশ কিছু জিনিস তার সংগ্রহে ছিল। সে জিনিসপত্রসহ তার লেখা প্রকাশিত প্রবন্ধ, গল্পসহ অন্যান্য বই দিয়ে এখানে গান্ধীজির নামেই নামকরণ করে জাদুঘর কাম পাঠাগার করার চিন্তা করেছিলেন। আর সকল কাজের জন্যই তিনি জমি কিনেন এবং ভরাট করে ঘর তোলে উদ্বোধনও করেন। তার ওই জায়গা যেতে কিন্তু রাস্তা ছিল না। বিশেষ প্রকল্প দিয়ে তিনি আধা কিলোমিটার পাকা রাস্তা নির্মাণেরও কাজ করেন। রাস্তাটিতে যখন মাটির কাজ চলে তখনই তিনি মারা যান। এখন কিন্তু সেই রাস্তা পাকাকরণ হয়ে গেছে। শুনেছি তার সেই স্বপ্নগুলো তাঁর ছেলেমেয়েরা পূরণ করবে।

 

সৈয়দ আবুল মকসুদের বড় ছেলে সৈয়দ নাসিফ মকসুদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইনকিলাবকে বলেন, বাবা যে আশা ছিল, যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন আমাদের সেটা বাস্তবায়নের ইচ্ছে আছে। এতোদিন ওখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল ছিল না। এখন রাস্তার কাজ শেষ হয়েছে। আমরাও খুব তাড়াতাড়ি বাবার অসম্পূর্ণ কাজগুলো করার চেষ্টা করব।

 

উল্লেখ্য, সৈয়দ আবুল মকসুদ ছিলেন একজন বাংলাদেশী সাংবাদিক, কলামিস্ট, গবেষক, প্রাবন্ধিক ও লেখক। তিনি তার গবেষণাধর্মী প্রবন্ধের জন্য সুপরিচিত। তিনি নিয়মিত দৈনিক প্রথম আলোয় কলাম লিখতেন। তার প্রবন্ধসমূহ দেশের রাজনীতি, সমাজ, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়। তিনি বিখ্যাত সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদদের জীবনী ও কর্ম নিয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধ লিখেছেন। পাশাপাশি তিনি কাব্যচর্চাও করেছেন। তাঁর রচিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় চল্লিশের উপরে। বাংলা সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৫ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ব্রুকের সেঞ্চুরিতে অজিদের জয়রথ থামিয়ে টিকে থাকল ইংল্যান্ড

ব্রুকের সেঞ্চুরিতে অজিদের জয়রথ থামিয়ে টিকে থাকল ইংল্যান্ড

বাংলাদেশকে পূর্ণ সমর্থন বাইডেনের

বাংলাদেশকে পূর্ণ সমর্থন বাইডেনের

পাবর্ত্য চট্টগ্রামে দুর্গম পাহাড়ি সেনা ক্যাম্প পরিদর্শন সেনা প্রধানের

পাবর্ত্য চট্টগ্রামে দুর্গম পাহাড়ি সেনা ক্যাম্প পরিদর্শন সেনা প্রধানের

নিউইয়র্কে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক

নিউইয়র্কে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক

আম্মু তোমাকেও আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে

আম্মু তোমাকেও আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে

দেশের মাজার রক্ষা করতে হাইকোর্টের নির্দেশ

দেশের মাজার রক্ষা করতে হাইকোর্টের নির্দেশ

বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য চীন খুবই গুরুত্বপূর্ণ: উপদেষ্টা সাখাওয়াত

বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য চীন খুবই গুরুত্বপূর্ণ: উপদেষ্টা সাখাওয়াত

ক্ষোভ বাড়ছে ভারতে

ক্ষোভ বাড়ছে ভারতে

ভারতীয় সাংবাদিকদের এড়িয়ে গেলেন ড. ইউনূস

ভারতীয় সাংবাদিকদের এড়িয়ে গেলেন ড. ইউনূস

সোনারগাঁওয়ে তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর হামলা, আহত ৮

সোনারগাঁওয়ে তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর হামলা, আহত ৮

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্য চায় পবিপ্রবির গ্রাজুয়েটবৃন্দ

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্য চায় পবিপ্রবির গ্রাজুয়েটবৃন্দ

হামজাকে পাওয়ার আরও কাছে বাংলাদেশ

হামজাকে পাওয়ার আরও কাছে বাংলাদেশ

বান্দরবানে জামাতুল আনসারের ৩১ সদস্য কে ৪ মামলায় জামিন

বান্দরবানে জামাতুল আনসারের ৩১ সদস্য কে ৪ মামলায় জামিন

সাগরে লঘুচাপ, চার সমুদ্রবন্দরে বন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত

সাগরে লঘুচাপ, চার সমুদ্রবন্দরে বন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত

সকল অপকর্মে জড়িতদের বিরুদ্ধে যার যার অবস্থান থেকে সামাজিক আন্দোলন জোরদার করতে হবে -চকরিয়ায় নারী সমাবেশে বক্তারা

সকল অপকর্মে জড়িতদের বিরুদ্ধে যার যার অবস্থান থেকে সামাজিক আন্দোলন জোরদার করতে হবে -চকরিয়ায় নারী সমাবেশে বক্তারা

সেনা কর্মকর্তা হত্যাকারীদের অবিলম্বে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে

সেনা কর্মকর্তা হত্যাকারীদের অবিলম্বে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে

অবশেষে স্বস্তির বৃষ্টি পঞ্চগড়ে

অবশেষে স্বস্তির বৃষ্টি পঞ্চগড়ে

আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে: ডিএমপি কমিশনার

আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে: ডিএমপি কমিশনার

এবার প্রকাশ্যে এলো চবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক

এবার প্রকাশ্যে এলো চবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক

জাতিসংঘ মহাসচিবের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন ড. ইউনূস

জাতিসংঘ মহাসচিবের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন ড. ইউনূস