সৈয়দ আবুল মকসুদের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ, এখনও তার যে স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:৫১ এএম | আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:৫১ এএম
দেশের সাংবাদিক, কলামিস্ট, প্রাবন্ধিক, কবি ও লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদের আজ তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। ২০২১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি মহামারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে তিনি বেশ কিছু কাজ হাতে নিয়েছিলেন। যা তিনি বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। তাঁর মৃত্যুর তিন বছর অতিবাহিত হলেও এখনো বাস্তবায়ন হয়নি তাঁর কিছু অসমাপ্ত কাজ। এখনও পূরণ হয়নি তাঁর স্বপ্নগুলো।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের গালা ইউনিয়নের কৌড়ি গ্রামে একটি জাদুঘর কাম পাঠাগার, কোমলমতি শিশুদের ছবি আঁকার জন্য আর্ট গ্যালারি ও প্রসূতি মায়েদের জন্য একটি মাতৃসদনাগার নির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন দেশ বরেণ্য এ কলামিস্ট । তার এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি কৌড়ি গ্রামে কিনেছিলেন ৪১ শতাংশ জমি। সেখানে মাটি ভরাট করে প্রাথমিকভাবে একটি ছাপড়া ঘর নির্মাণের মধ্য দিয়ে জাদুঘর কাম পাঠাগারের শুভ উদ্বোধনও করেন তিনি। কিন্তু তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে তাঁর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন যেন থমকে পড়েছে।
১৯৪৬ সালের ২৩ অক্টোবর বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত, বর্তমান বাংলাদেশের মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার আরুয়া ইউনিয়নের এলাচিপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন সৈয়দ আবুল মকসুদ।
পঞ্চাশ থেকে অনবদ্য পদ্মা নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে ভিটেবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেলে তার বাবা বাড়ি করেন হরিরামপুরের চালা ইউনিয়নের চালা গ্রামে। কৈশোর বয়স থেকেই তিনি এখানে বেড়ে উঠেন। ঝিটকা আনন্দ মোহন উচ্চ বিদ্যালয় থেকেই মাধ্যমিকের পড়াশেনা শেষ করেন।
বৈবাহিক জীবনে এসেছে চালা গ্রামের বাড়িটি বিক্রি করে তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস করেন ঢাকায়। তবে তিনি মাঝে মাঝেই কৌড়ি এলাকার হুগলাকান্দি গ্রামে এসে তার চাচার বাড়িতে সময় কাটাতেন। এভাবেই তিনি এই এলাকার মানুষের সাথে নিবিড় সম্পর্কে জড়িয়ে যান এবং স্বপ্ন দেখেন স্মৃতিবিজড়িত এলাকায় বিভিন্ন শিক্ষণীয় স্থাপনা নির্মাণের।
শনিবার কৌড়ি গ্রামে সরেজিমনে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর স্বপ্নের জাদুঘর কাম পাঠাগার ও মাতৃসদনাগার নির্মাণের জায়গাটিতে ভূট্টার চাষ করা হয়েছে। জীবিত থাকাকালীন সময়ে তিনি যে ছাপড়া ঘরটি নির্মাণ করেছিলেন সেটি ওভাবেই তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। তবে ছাপড়া ঘরের বেড়ার সাথে জাদুঘর কাম পাঠাগারের যে সাইনবোর্ডটি ছিল। তা আর এখন নেই।
তবে সন্ধান মিলল এই স্থানটি যিনি দেখা শোনা করেন এবং সৈয়দ আবুল মকসুদের স্বপ্নের বিষয়ে যার সাথে পরামর্শ করতেন এই গ্রামেরই বাসিন্দা তিনি হলেন আলী আওলাদ হোসেন আকন্দ।
তিনি ইনকিলাবকে জানান, সৈয়দ আবুল মকসুদ এখানে মাঝে মাঝেই আসতেন। পাশের তার এক চাচার বাড়িতে থাকতেন। এই এলাকায় তিনি স্মৃতিস্বরূপ বেশ কিছু কাজ হাতে নিয়ে ছিলেন। তার মা সন্তান প্রসবকালে মারা যান। এ জন্য তিনি এখানে একটা মাতৃসদনাগার করার চিন্তা করেছিলেন। প্রতি সপ্তাহে তিনি ঢাকা বড় ডাক্তার এনে চিকিৎসা দিতে চেয়েছিলেন। গান্ধীজির বেশ কিছু জিনিস তার সংগ্রহে ছিল। সে জিনিসপত্রসহ তার লেখা প্রকাশিত প্রবন্ধ, গল্পসহ অন্যান্য বই দিয়ে এখানে গান্ধীজির নামেই নামকরণ করে জাদুঘর কাম পাঠাগার করার চিন্তা করেছিলেন। আর সকল কাজের জন্যই তিনি জমি কিনেন এবং ভরাট করে ঘর তোলে উদ্বোধনও করেন। তার ওই জায়গা যেতে কিন্তু রাস্তা ছিল না। বিশেষ প্রকল্প দিয়ে তিনি আধা কিলোমিটার পাকা রাস্তা নির্মাণেরও কাজ করেন। রাস্তাটিতে যখন মাটির কাজ চলে তখনই তিনি মারা যান। এখন কিন্তু সেই রাস্তা পাকাকরণ হয়ে গেছে। শুনেছি তার সেই স্বপ্নগুলো তাঁর ছেলেমেয়েরা পূরণ করবে।
সৈয়দ আবুল মকসুদের বড় ছেলে সৈয়দ নাসিফ মকসুদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইনকিলাবকে বলেন, বাবা যে আশা ছিল, যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন আমাদের সেটা বাস্তবায়নের ইচ্ছে আছে। এতোদিন ওখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল ছিল না। এখন রাস্তার কাজ শেষ হয়েছে। আমরাও খুব তাড়াতাড়ি বাবার অসম্পূর্ণ কাজগুলো করার চেষ্টা করব।
উল্লেখ্য, সৈয়দ আবুল মকসুদ ছিলেন একজন বাংলাদেশী সাংবাদিক, কলামিস্ট, গবেষক, প্রাবন্ধিক ও লেখক। তিনি তার গবেষণাধর্মী প্রবন্ধের জন্য সুপরিচিত। তিনি নিয়মিত দৈনিক প্রথম আলোয় কলাম লিখতেন। তার প্রবন্ধসমূহ দেশের রাজনীতি, সমাজ, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়। তিনি বিখ্যাত সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদদের জীবনী ও কর্ম নিয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধ লিখেছেন। পাশাপাশি তিনি কাব্যচর্চাও করেছেন। তাঁর রচিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় চল্লিশের উপরে। বাংলা সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৫ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে শতাধিক অসহায় হতদরিদ্র প্রতিবন্ধীদের মাঝে কম্বল বিতরণ
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাবি ছাত্রদলের বিক্ষোভ
কুষ্টিয়ায় চালের বাজার মনিটরিংয়ে ডিসি
১৯ জানুয়ারি ইসলামী আইনজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় সম্মেলন সফলের আহ্বান
ঘোষণাপত্রকে কেন্দ্র করে যেন ফাটল সৃষ্টি না হয় : সালাহউদ্দিন
জুলাই-আগস্ট নৃশংসতা: জাতিসংঘে পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাঠিয়েছে সরকার
ইসলামি আদর্শের প্রতি বিদ্বেষ রেখে কোন দল ক্ষমতার চিন্তা করতে পারবে না: এএমএম বাহাউদ্দীন
দুদকের মহাপরিচালক ও পরিচালক পদে পদোন্নতি
বর্ধিত ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে সৈয়দপুরে রেস্তোরাঁ মালিকদের মানববন্ধন
ব্যর্থ ও দুর্নীতিবাজদের ক্ষমতায় চায় না: ইসলামী আন্দোলন
কুষ্টিয়ায় প্লাইউড বোর্ড কারখানায় আগুন
চাঁদাবাজির তকমা থেকে পরিবহন সেক্টরকে বের হতে হবে : শিমুল বিশ্বাস
ফরিদপুরের শ্রেষ্ঠ পুলিশ পরিদর্শক হলেন জাফর ইকবাল
প্রথম ম্যাচের অর্থ পুরস্কার দাবানলে ক্ষতিগ্রস্তদের দিলেন ফ্রিটজ
শুধু ঘোষণাপত্র নয়, ১৬ বছরের আন্দোলনের স্বীকৃতি চায় ১২ দলীয় জোট
‘আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস’ হতে হবে সংবিধানের অন্যতম মূলনীতি - খেলাফত মজলিস
পাহাড় কাটা মনিটরিংয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার : রিজওয়ানা হাসান
মেট্রোরেলের শুক্রবারের সময়সূচি পরিবর্তন
লৌহজংয়ে বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া ও শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ
নবাব সলিমুল্লাহ অসংখ্য নেতা তৈরির মৌলিকক্ষেত্র সৃষ্টি করেছেন : বাংলাদেশ মুসলিম লীগ