শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিবাদ
১৯ মার্চ ২০২৪, ০১:৫২ পিএম | আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৪, ০১:৫২ পিএম
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হওয়া আমাদের দেশে মোটেই কোনো নতুন ঘটনা নয়। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিস্থিতি কেমন তা উঠে এসেছে এক শিক্ষকের গবেষণায়। এতে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা যৌন হয়রানি করে তাদের ৯ শতাংশই শিক্ষক। আর আর ৫৬ শতাংশ সহপাঠী। আর এই যৌন নিপীড়করা রাজনৈকিভাবে প্রভাবশালী।
সর্বশেষ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা গত শুক্রবার রাতে কুমিল্লার নিজ বাড়িতে আত্মহত্যা করেছে। অবন্তিকা কেন এ পথ বেছে নিয়েছে, ফেসবুকে পোস্ট করা সুইসাইড নোটে তার বিবরণ রয়েছে। তার বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, সহপাঠীর দ্বারা যৌনহয়রানি ও হুমকি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যথাযথ কর্তৃপক্ষের তরফে প্রতিকার না পাওয়াই তার এভাবে জীবন দেয়ার কারণ।
কতটা বিব্রত, কতটা অতিষ্ঠ, কতটা নিরূপায় হলে তার মতো একজন মেধাবী ছাত্রীকে আত্মহননের পথ বেছে নিতে হয়, সেটা সহজেই অনুমেয়। ওই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রোক্টর দ্বীন ইসলামকে বরখাস্ত এবং ছাত্র সিদ্দিক আম্মানকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।
সাম্প্রতিককালে গত বৃহস্পতিবার যৌন হয়রানির অভিযোগে ময়মনসিংহের কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহাকে বরখাস্ত এবং বিভাগীয় প্রধান রেজোয়ান আহমেদ শুভ্রকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষকের বিরুদ্ধে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যেখানে পিতা ও সন্তানতুল্য সেখানে শিক্ষকের দ্বারা ছাত্রীর যৌন পীড়নের শিকার হওয়া কতটা অপমানজনক, কতটা হীন ও ধিক্কারযোগ্য কাজ বলার অপেক্ষা রাখে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক নাদির জুনায়েদকে যৌন হয়রানির অভিযোগে তিন মাসের বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া হয় ১২ ফেব্রুয়ারি। তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও দীর্ঘদিন ধরে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করেন তার বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত এক বছরে ২০টির মতো যৌন হয়রানির অভিযোগ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
৬ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পর্বের থিসিস করতে গিয়ে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন রসায়ন বিভাগের এক ছাত্রী।ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর শাখার গণিতের শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকারকে গ্রেপ্তার করা হয় ২৭ ফেব্রুয়ারি।
এগুলো চলতি বছরের ঘটনা। প্রতিটি ঘটনায়ই কর্তৃপক্ষ প্রথমে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এসব ঘটনায় প্রতিবাদের ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে।
আজাদি সুলতানা ফেরদৌস নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, আমাদের দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এটি বরাবর হচ্ছে। দেখার কেউ নেই। অবন্তীকার মৃত্যুর কাহিনি শেষ হতে বড়জোর একমাস লাগবে। এরপর আবারও আসবে নতুন কোন কাহিনি। কী ভয়ংকর জঘন্য একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে আমরা কোথায় বাস করছি আমাদের সন্তান কে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে আমরা কি করে স্বস্তিতে থাকব।
ক্ষোভ জানিয়ে মারুফ কোরহি লিখেছেস, এসব তখনই বন্ধ হবে যদি ইসলামি সংস্কৃতিতে ফিরে আসি। আর সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। ক্ষমতা থাকা দলের ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত যারা, তারাই এটা বেশি করে কারণ ওরা জানে তাদের কোন বিচার হবেনা অন্যায় করার পরও।
জবির একজন শিক্ষার্থী নিজের হয়রানির ঘটনা তুলে ধরে লিখেছেন, আমি নিজে একজন জবির শিক্ষার্থী। আমি নিজে একটা ছোটখাটো সমস্যায় পড়েছিলাম প্রক্টর অফিস থেকে শুরু করে ডিপার্টমেন্ট এর প্রতিটা শিক্ষক এর পা এ পর্যন্ত পড়েছি সাহায্য করার জন্য সবাই সামান্য সহযোগিতা তা দূরে থাক এতো রুড বিহেব করেছে যা আমার জীবনে কোনদিন শিক্ষক তো দূরে বন্ধুদের থেকেও পাই নি।প্রতিদিন প্রক্টর অফিসে ১ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকা দেখা করার জন্য, প্রতিটা শিক্ষকের রুমে রুমে ঘুরতে ঘুরতে প্রতিদিন ক্লান্ত হয়ে বাসায় আসতাম।সহযোগিতা তো দূরের কথা সামান্য সহমর্মিতাও কোথাও পাই নাই, আর রুড এর বিহেভ এর কথা কি বলবো। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা শুনেছি ছাত্রদের মানসিক যতো সাপোর্ট করে আর এখানে মানসিক সাপোর্ট তো দূরে মানসিক যেই নির্যাতন টা করে যারা ফেইস করে তারাই বলতে পারবে।শুধু দাত খিচিয়ে পড়ে আছি একটা সার্টিফিকেট এর জন্য। হৃদয়টা একেকবার কষ্টে ভারী হয়ে উঠে আল্লাহ একটা সার্টিফিকেট দিয়ে শুধু বের করে দিক। আর যেনো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দুয়ারের সামনে না যেতে হয়।অবন্তীকা তো আজকে সুইসাইড করেছে এরকম মানসিক সুইসাইড এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষার্থী অনেক আগেই করে ফেলছে।এদের মনে কতো কষ্ট অবন্তীর ঘটনার পরে স্টুডেন্টদের ফেসবুক পোস্ট গুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন।
জয় চৌধুরী লিখেছেন, ইসলামি আদর্শ এবং নৈতিকতা শিক্ষার অভাব থাকলে এইরকম অবস্থা হয়। মা-বাবার উচিত সন্তানদেরকে ইসলামের আদর্শ এবং নৈতিকতা শিক্ষা দেয়া। কেয়ামতের দিন পিতা মাতাকে সন্তানদের ব্যাপারে আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে। আত্মহত্যা মহাপাপ এবং আত্মহত্যা প্রতিবাদের ভাষা হতে পারে না। তার ধৈর্য ধরা এবং প্রতিবাদ অব্যাহত রাখ উচিত ছিল।
রাখাল রাহা নামে আরেক নেটিজনের মন্তব্য, এভাবেই প্রতিবেশী দেশের স্বার্থে এদেশের পুরা শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করেছেন! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কেরানী থেকে ভিসি, প্রভোষ্ট থেকে প্রক্টর, শিক্ষক থেকে চেয়ারম্যান সব অপদার্থ আর লুচ্চা-বদমাইশ দিয়ে ভরে দিয়েছেন! সাধারণের মেধাবী সন্তানদের শারীরিক ও মানসিকভাবে পঙ্গু করে চলেছেন!
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বছরের প্রথম ম্যাচেই মেসির গোল
জিয়াউর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে গাবতলীতে ছাত্রদলের দোয়া মাহফিল
‘যে সন্মান অর্জন করেছেন, তা এইভাবে নষ্ট কইরেন না’
নতুন ভূগর্ভস্থ নৌ ঘাঁটি উন্মোচন ইরানের
সম্পর্ককে বাণিজ্য সহযোগিতায় রূপান্তরের জন্য আর্জেন্টিনার প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান
গ্রেফতারকৃত এসকে সুরের বাসায় দুদকের অভিযান, ১৭ লাখ টাকা উদ্ধার
চাল আমদানির সময় বাড়ল ২৭ দিন: দুইমাসে ৯,৬৬২ টন চাল আমদানি হলেও প্রভাব নেই বাজারে
সিরিয়ার আসাদ সরকারের মাদক বাণিজ্যের ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ
হাইকোর্টে চিন্ময়ের জামিন আবেদন, শুনানি সোমবার
পুলিশ লাইন্সে ফ্যানের সঙ্গে নারী কনস্টেবলের লাশ ঝুলছিল
দাউদকান্দির গৌরীপুর চররায়পুর আসমানিয়া সড়কে বড় বড় গর্ত, জনদুর্ভোগ চরমে
লৌহজংয়ে যানবাহন চলাচলে জন্য বালিগাঁও সেতু উন্মুক্ত করা হয়েছে
নারায়ণগঞ্জে পাওয়ার প্ল্যান্টের ৩৬০ মেট্রিকটন তেল ডাকাতি, ৮ ডাকাত গ্রেপ্তার
ভারতের প্রথম মহিলা নৃবিজ্ঞানী ইরাবতী কারভে, সাহসী গবেষক ও সংস্কারক
মুজিবনগরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মবার্ষিকী পালন
ভয়ঙ্কর প্রেমের ফাঁদ!
মিডিয়া থেকে ইসলামফোবিয়া কবে যাবে? সারজিস আলম
যুদ্ধবিরতি স্থগিত করে গাজায় হামলা অব্যাহত রাখল ইসরাইল
দাউদকান্দিতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী পালিত
টেকনাফমুখী ৪টি পণ্যবাহী জাহাজ এখনো ছাড়েনি আরাকান আর্মি