যন্ত্র-জনবল সঙ্কটে মমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগ, ভোগান্তি শিকার রোগীরা

Daily Inqilab ময়মনসিংহ ব্যুরো

০৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫৪ পিএম | আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫৪ পিএম



আশ্চর্য্যজনক হলেও সত্য যে, চিকিৎসাসেবায় দেশসেরা খ্যাতি পাওয়া ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে ইকো বা ইকোকার্ডিওগ্রাফি পরীক্ষা করতে সময় লাগে দুই থেকে তিন মাস। এতে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সেবাপ্রার্থী রোগী ও তাদের স্বজনরা। এনিয়ে ভুক্তভোগীসহ সচেতন মহলে মিশ্রপ্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্র জানায়, এক হাজার শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে হৃদরোগীদের শয্যা রয়েছে মাত্র ৭১টি। কিন্তু গড়ে প্রতিদিন এই ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি থাকে ২৮০ জন। ফলে নির্ধারিত শয্যা ছাড়িয়ে সেবাপ্রার্থী রোগীরা ছড়িয়ে পড়েছেন হাসপাতালের মেঁঝে, বারান্দা ও সিঁড়ির সামনের অংশসহ প্রবেশ পথগুলোতেও। কিন্তু রোগীদের এই বাড়তি চাপ সামলাতে ১৯৭২ সালের পর বাড়ানো হয়নি প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও জনবল। এমনকি গুরুত্বপূর্ণ এই বিভাগটিতে নেই কোন প্রফেসর পদ। ফলে প্রয়োজনীয় জনবল, যন্ত্র ও চিকিৎসক সঙ্কটে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিত খাচ্ছে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। এতে ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছে হৃদরোগী ও তাদের স্বজনরা।
ভুক্তভোগীরা জানায়, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কোন জটিল রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তাকে ইকো বা ইকোকার্ডিওগ্রাফি (হৃৎপিন্ড পরীক্ষার রোগনির্ণয় পদ্ধতি) করার পরামর্শ দেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। সেই সঙ্গে পরীক্ষাটির মান বিবেচনায় পরীক্ষাটি হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে করারও পরামর্শ দেন তারা। কিন্তু হাসপাতালের নতুন ভবনের চার তলা কার্ডিওলজি বিভাগের ইকো কক্ষে গেলে কর্তব্যরত কর্মচারিরা পরীক্ষার সিরিয়াল দেয় দুই থেকে তিন মাস পর। এই অবস্থায় রোগী এবং স্বজনদের প্রশ্ন, ইকো পরীক্ষা করতে যদি দুই বা তিন মাস সময় লাগে। তবে চিকিৎসা হবে কখন ?
নগরীর মাসকান্দা এলাকার বাসিন্দা মোছা: লিপি (৪৫) নামের এক ভুক্তভোগী জানান, গতকিছুদিন ধরে হুদরোগ এবং হাড় ব্যাথা রোগে ভুগছি। এ কারণে সম্প্রতি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। সেখান থেকে চিকিৎসকরা আমাকে কালার ডপলার ইকো করে দেখা করতে বলেছেন। এরপর পহেলা এপ্রিল মমেক হাসপাতালে ইকো করতে গেলে তারা আমাকে আগামী পহেলা জুন সকাল ৮টায় যেতে বলেছেন। এই অবস্থায় আমার শারীরিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে।
একই ধরনের ভোগান্তির মধ্যে রয়েছে এই হাসপাতালের ভর্তি ও চিকিৎসা নেওয়া আরও কয়েক শত সেবাপ্রার্থী রোগী। এই অবস্থায় হাসপাতালের প্যাথলজিতে ইকো পরীক্ষা করতে না পেরে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন রোগীরা, লাভবান হচ্ছে বেসরকারি প্যাথলজিগুলো।
ভোগান্তির কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, হাসপাতালের সাবেক পরিচালক বিগ্রেডিয়ার নাসির উদ্দিনের সময়ে অর্থাৎ বিগত তিন বছর আগে কার্ডিওলজি বিভাগে ইকো পরীক্ষার মেশিন ছিল ৩টি। কিন্তু বর্তমানে মাত্র একটি মেশিনে খুঁড়িয়ে খঁড়িয়ে চলছে ইকো পরীক্ষার কাজ। ফলে রোগীদের ভীড়ে এই দীর্ঘ সিরিয়ালের সৃষ্টি হয়, বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মচারিরা।
কার্ডিওলজি বিভাগের কর্মচারি মো: কামাল জানান, ২০২১ সাল থেকে গত তিন বছরে কার্ডিওলজি বিভাগ থেকে সাত দফা হাসপাতালের পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে নষ্ট মেশিন মেরামত এবং নতুন মেশিনের চাহিদার তথ্য জানানো হয়।
হৃদরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা: গোবিন্দ কান্তি পাল বলেন, বর্তমানে রোগীর চাপ বেশি। তারপরও আমরা সর্ব্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। নেই প্রফেসর পদ, তারপরও অল্প জনবলেও রোগীদের সেবার কোন ঘাটতি নেই। তবে হৃদরোগ বিভাগে আগে তিনটি ইকো মেশিন থাকলেও বর্তমানে একটি মেশিনে কাজ চলছে। ফলে রোগীদের চাপে সিরিয়াল পেতে অনেক সময় লেগে যায়। এ বিষয়টি বার বার পরিচালসকসহ সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত তারা এনিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
এবিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন করেও হাসপাতালের পরিচালকের বক্তব্য জানা যায়নি। তবে উপ-পরিচালক ডা: মো: জাকিউল ইসলাম বলেন, রোগীর চাপ বেশি থাকায় একটু সমস্যা হচ্ছে। তবে ইকো মেশিনের বিষয়টি দ্রুত খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইরানে মার্কিন বর্বরোচিত হামলা বিশ্বমানবতাকে ভাবিয়ে তুলছে

ইরানে মার্কিন বর্বরোচিত হামলা বিশ্বমানবতাকে ভাবিয়ে তুলছে

কমিটি গঠনের ২দিন পরই স্থগিত হলো শেরপুরের নালিতাবাড়ী এনসিপির কমিটি !

কমিটি গঠনের ২দিন পরই স্থগিত হলো শেরপুরের নালিতাবাড়ী এনসিপির কমিটি !

প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নিয়ে বিএনপির নতুন প্রস্তাব

প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নিয়ে বিএনপির নতুন প্রস্তাব

রাতের ভোটের নুরুল হুদাকে ধরে পুলিশে দিলো বিক্ষুব্ধ জনতা

রাতের ভোটের নুরুল হুদাকে ধরে পুলিশে দিলো বিক্ষুব্ধ জনতা

ট্রাম্পের বিশ্বাসঘাতকতা

ট্রাম্পের বিশ্বাসঘাতকতা

সাহেবাবাদ ডিগ্রি কলেজের গভর্নিং বোর্ডের সভাপতি হলেন ব্যারিস্টার আব্দুল আল মামুন

সাহেবাবাদ ডিগ্রি কলেজের গভর্নিং বোর্ডের সভাপতি হলেন ব্যারিস্টার আব্দুল আল মামুন

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি ফয়সল বিপ্লব গ্রেপ্তার

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি ফয়সল বিপ্লব গ্রেপ্তার

শেরপুরে জনপ্রিয় ষাড়ের মই দৌড় প্রতিযোগীতায় আনন্দে মেতে উঠে হাজারো মানুষ

শেরপুরে জনপ্রিয় ষাড়ের মই দৌড় প্রতিযোগীতায় আনন্দে মেতে উঠে হাজারো মানুষ

শাহরাস্তিতে ডাকাতিয়া নদীতে পড়ে শিশু নিখোঁজের ৫ ঘন্টা পর মৃত উদ্ধার করলো ডুবুরিরা

শাহরাস্তিতে ডাকাতিয়া নদীতে পড়ে শিশু নিখোঁজের ৫ ঘন্টা পর মৃত উদ্ধার করলো ডুবুরিরা

জকিগঞ্জে ‘মৃত ব্যক্তি’ জীবিত ফিরে এলেন: দাফনের আগ মুহূর্তে চাঞ্চল্যকর ঘটনা

জকিগঞ্জে ‘মৃত ব্যক্তি’ জীবিত ফিরে এলেন: দাফনের আগ মুহূর্তে চাঞ্চল্যকর ঘটনা

কুড়িগ্রামে ট্রাক চাপায় প্রাণ গেলো যুবকের

কুড়িগ্রামে ট্রাক চাপায় প্রাণ গেলো যুবকের

ডা. জোবাইদা রহমানের জন্মদিনে রূপগঞ্জে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি উদ্বোধন

ডা. জোবাইদা রহমানের জন্মদিনে রূপগঞ্জে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি উদ্বোধন

আজ ‘মার্চ টু সচিবালয়’ ঘোষণা চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের

আজ ‘মার্চ টু সচিবালয়’ ঘোষণা চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের

অবশ্যই ইসি পুনঃগঠন হবে : এনসিপি

অবশ্যই ইসি পুনঃগঠন হবে : এনসিপি

চার্জ গঠন বিষয়ে শুনানি ২৯ জুন

চার্জ গঠন বিষয়ে শুনানি ২৯ জুন

উন্নতমানের গবেষণার পরিবেশ পেলে মেধাবীরা আবার দেশে ফিরবে : সালাহ উদ্দিন আহমেদ

উন্নতমানের গবেষণার পরিবেশ পেলে মেধাবীরা আবার দেশে ফিরবে : সালাহ উদ্দিন আহমেদ

সচিবালয়ের ভেতর সব সংগঠন বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে রিট

সচিবালয়ের ভেতর সব সংগঠন বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে রিট

দুদকের মামলায় স্ত্রীসহ খালাস পেলেন বিএনপি নেতা দুলু

দুদকের মামলায় স্ত্রীসহ খালাস পেলেন বিএনপি নেতা দুলু

নিজের সুরক্ষা চেয়ে মা-বাবার বিরুদ্ধে মেয়ের মামলা

নিজের সুরক্ষা চেয়ে মা-বাবার বিরুদ্ধে মেয়ের মামলা

দক্ষিণ সিটিতে সকল নাগরিক সেবা প্রদানের আহ্বান, গাফিলতিতে ব্যবস্থা

দক্ষিণ সিটিতে সকল নাগরিক সেবা প্রদানের আহ্বান, গাফিলতিতে ব্যবস্থা