ঢাকা   মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি ২০২৫ | ৭ মাঘ ১৪৩১

উখিয়া টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের আনন্দ বেদনার মাঝে পবিত্র ঈদুল ফিতর পালিত

Daily Inqilab উখিয়া (কক্সবাজার ) উপজেলা সংবাদদাতা

১৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:২৬ এএম | আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:২৬ এএম

 

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় আশ্রিত রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে আনন্দ বেদনার মধ্য দিয়ে অনেকটা উৎসবমুখর পরিবেশে পালন করছে পবিত্র ঈদুল ফিতর।

বৃহস্পতিবার ( ১১-এপ্রিল-২০২৪) সারাদেশে উদযাপিত মুসলমানদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব, ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছেন মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্ত্যুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক রোহিঙ্গারা। উদাস চোখে দুঃসহ স্মৃতি, ক্ষুদ্র সামর্থ্যে অনেকটা নিষ্প্রভ অবস্থায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন রোহিঙ্গারা। অন্য বছরের তুলনায় এবার ঈদুল ফিতর ধর্মীয় এই উৎসবের আমেজ বেশি লক্ষ্য করা যায়নি। গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ৯ টার মধ্যে উখিয়া-টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে উখিয়ার বালুখালী, থাইংখালী, পালংখালী, কুতুপালং, মধুরছড়া, টেকনাফের লেদা, জাদিমুড়া, নয়াপাড়া ও শালবন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছোট-বড় শতাধিক মসজিদ-মক্তবে ঈদের নামাজ আদায় করেছে রোহিঙ্গারা। ঈদের নামাজ শেষে মোনাজাতে কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং নির্যাতনের বিচার চেয়ে স্বদেশে মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যাবাসনের জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করেন রোহিঙ্গারা।

রোহিঙ্গাদের মতে, কক্সবাজারের ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থিত ১৪২০টি মসজিদ ও ৯৪০টি নূরানি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মক্তব) রয়েছে। এসব মসজিদ ও নূরানি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (আজ) ঈদের নামাজ আদায় করেছেন রোহিঙ্গারা।

তবে পালিয়ে আসা সহায় সম্বলহীন এসব রোহিঙ্গারা প্রায় বিগত ৬ বছরেও মিয়ানমারে সৃষ্ট সহিংসতা, আপনজনদের উপর নিপীড়ন, নির্যাতন, পাশবিকতার কথা ভুলতে পারেননি। প্রতিটি ঈদে তাদের মাতৃভূমি থেকে দূরে থাকা ও স্বজন হারানোর বেদনার কথা আরো বাড়িয়ে তুলে তাদের। অন্যদিকে চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত ঈদের কেনাকেটা নিয়ে, নিরানন্দে কেটেছে তাদের ঈদ। আবার অনেক ধনী রোহিঙ্গা ও শিশু কিশোররা উৎসব মুখর পরিবেশ ও আনন্দের সাথে ঈদ উদযাপন করছেন, যা নিতান্ত স্বল্প অংশ।

ঈদুল ফিতরের উৎসব উদযাপন করতে গিয়ে হোস্ট গেস্ট-এর মধ্যে একটা সামাজিক সম্পর্ক স্থাপন করতেও দেখা গেছে। দল বেঁধে ক্যাম্পের অনেক বাসিন্দা স্থানীয়দের বাসা বাড়িতে গিয়ে ঈদ পালন করতে দেখা গেছে। এতে সাময়িক বিড়ম্বনা দেখা গেলেও বেলা বাড়ার সাথে তা একপ্রকার স্বাভাবিক হয়ে উঠে। এপিবিএন পুলিশের কড়া নজরদারী, কাঁটা তারের বেড়া অতিক্রম করে তারা স্থানীয়দের সাথে ঈদ উদযাপন করতে দেখা গেছে। উখিয়া টিএন্ডটি কলেজের সামনে যৌথ চেকপোস্ট ও এপিবিএন অধিনায়কের কার্যালয়ের সামনেও চেকপোস্ট বসিয়ে রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণ সংরক্ষিত করার চেষ্টা করা হয়েছে।

ঈদ উদযাপনের ব্যাপারে প্রশাসনের মত হচ্ছে, স্থানীয়দের পাশাপাশি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় রোহিঙ্গারাও ক্যাম্পে নির্বিঘ্নে ঈদ উদযাপন করছে। সরেজমিন ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,মিয়ানমারে সৃষ্ট সহিংসতায় ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয় উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায়। ৩২ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প গড়ে তুলে ১৪ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশে এবার সহ ঈদুল ফিতর ৬ বার পালন করছেন রোহিঙ্গারা। অনেক ক্যাম্পে ঈদ উৎসবের তেমন আমেজ নেই। ২০১৭ সালের আগেই যাদের নিয়ে ঈদ উদযাপন করেছিলেন, এবার তাদের অনেকে শুধু স্মৃতি। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুর নির্যাতনে প্রাণ হারানো সেই স্বজনদের দুঃসহ স্মৃতি মনে করেই পালন করেন রোহিঙ্গারা। পাশাপাশি অপ্রতুল ত্রাণ ব্যতীত তাদের পর্যাপ্ত সেমাই চিনি, কাপড়, প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও ঈদের পণ্য ছাড়া নিরানন্দে ঈদ উদযাপন করছেন বেশিরভাগ রোহিঙ্গা।

আবার একেবারেই ঈদের আমেজ নেই তা নয়, যে সব রোহিঙ্গা ধনী ও মধ্যপ্রাচ্যে যাদের আত্মীয় স্বজন রয়েছে, তারা উৎসব মুখর পরিবেশে ঈদ উদযাপন করছেন। শহর বন্দরে তেমন যেতে না পারলেও স্থানীয়দের মতো হাট বাজারে গিয়ে ভিড় করে কেনাকাটা শেষে ঈদ উদযাপন করেছে। তাদরে মতে মিয়ানমারের তুলনায় বাংলাদেশে ঈদ উদযাপন অনেক শ্রেয়। মিয়ানমারে ঈদ উদযাপন করলেও স্বাধীনভাবে চলাফেরা করা দুরূহ ব্যাপার ছিল। পাশাপাশি আনন্দে উৎসবে ভাসছে রোহিঙ্গা শিশু কিশোররা। তারা নাগরদোলা ও বিনোদন কেন্দ্রে অনাবিল আনন্দে সময় পার করছেন রোহিঙ্গার শিশুরা। একাধিক রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু জানান, ঈদ সামগ্রী ছাড়া ও অনেকেই যৎসামান্য কেনাকেটা করে ঈদুল ফিতর উদযাপন করছি। মিয়ানমারে স্বাধীনভাবে ঈদ উদযাপনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হলেও এখানে তা নেই। তাই বেশ ভালো আছি। কুতুপালং ক্যাম্প এর জনৈক মাঝি( রোহিঙ্গা নেতা) জানান, রেশন ও কিছু উপকরণ ছাড়া ঈদ উপলক্ষ্যে তেমন কোন উপকরণ বা সেমাই চিনি জামা কাপড় কোনো প্রতিষ্ঠান দেয়নি। তবে অনেকে ঘরের প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রয় করে অথবা স্বর্ণ, অলংকার বন্ধক রেখে অল্পস্বল্প কেনাকেটা করেছে। আবার যাদের আত্মীয় স্বজন বিদেশে রয়েছে তাদের পাঠানো অর্থায়নেও কেনাকেটা করে অনেকেই ভালো ঈদ কাটিয়েছে।

রোহিঙ্গাদের অনেকের মতে, ফিলিস্তিনের মতো আমরাও বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মধ্যেও আল্লাহর গায়েবি সাহায্যে এ পর্যন্ত টিকে থেকে বেঁচে আছি। ফিলিস্তিনের অধিবাসীরা যেমন নির্যাতিত, নিপীড়িত আমরাও মিয়ানমার সরকারের নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছি।

কুতুপালং এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা জনৈক সুলতান জানান, রোহিঙ্গারা ঈদ করতে স্থানীয়দের সাথে মিশে গিয়েছে। এতে বুঝা যাচ্ছেনা কে রোহিঙ্গা, কে বাংলাদেশী। তা চিহ্নিত করা অনেকটা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি স্থানীয়দের পরিবেশ পরিস্থিতি মারাত্মক বিপর্যয়ে ফেলছে।

বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতানাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, ঈদের বেশ কিছুদিন আগ থেকে স্থানীয়দের সাথে একাকার হয়ে কেনাকেটা ও ঈদ পালন শেষে নির্দিষ্ট সীমানা পার হয়ে জন স্রোতের সাথে মিশে গেছে রোহিঙ্গারা। যা স্থানীয়দের ক্রন্সকাটা ও জিনিসপত্রের মূল্যের উপর মারাত্মক নেতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।

 


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

প্রায় ৩০ বছর পরে বরিশালে জামায়াতের প্রকাশ্য সম্মেলন
উল্লাপাড়ায় হাত পা বাঁধা তরুণের লাশ উদ্ধার
কাপ্তাই উপজেলা আ'লীগ সভাপতি অংসুইছাইন চৌধুরীসহ ২জন গ্রেফতার
রিসোর্টে জোর করে বিয়ে দেওয়ায় সমালোচনার ঝড়
টঙ্গীতে র‌্যাব অভিযানে অস্ত্র ও মাদকসহ আটক ৯
আরও

আরও পড়ুন

উত্তরা রাজউক মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিভাবকদের মানববন্ধন

উত্তরা রাজউক মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিভাবকদের মানববন্ধন

লীলাবতী ছেড়ে আজ বাড়ি যাবেন সাইফ

লীলাবতী ছেড়ে আজ বাড়ি যাবেন সাইফ

প্রায় ৩০ বছর পরে বরিশালে জামায়াতের প্রকাশ্য সম্মেলন

প্রায় ৩০ বছর পরে বরিশালে জামায়াতের প্রকাশ্য সম্মেলন

ঢাবির বৃহত্তর চাটগাঁইয়া পরিবার, বিজয় একাত্তর হলের নেতৃত্বে শরীফ এবং জাহিদ

ঢাবির বৃহত্তর চাটগাঁইয়া পরিবার, বিজয় একাত্তর হলের নেতৃত্বে শরীফ এবং জাহিদ

বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সম্পর্ক উষ্ণ, ৩ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্যের আশা

বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সম্পর্ক উষ্ণ, ৩ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্যের আশা

উল্লাপাড়ায় হাত পা বাঁধা তরুণের লাশ উদ্ধার

উল্লাপাড়ায় হাত পা বাঁধা তরুণের লাশ উদ্ধার

কাপ্তাই উপজেলা আ'লীগ সভাপতি অংসুইছাইন চৌধুরীসহ ২জন গ্রেফতার

কাপ্তাই উপজেলা আ'লীগ সভাপতি অংসুইছাইন চৌধুরীসহ ২জন গ্রেফতার

‘এনজিও সেল’ গঠন করলো নাগরিক কমিটি

‘এনজিও সেল’ গঠন করলো নাগরিক কমিটি

রিসোর্টে জোর করে বিয়ে দেওয়ায় সমালোচনার ঝড়

রিসোর্টে জোর করে বিয়ে দেওয়ায় সমালোচনার ঝড়

টঙ্গীতে র‌্যাব অভিযানে অস্ত্র ও মাদকসহ আটক ৯

টঙ্গীতে র‌্যাব অভিযানে অস্ত্র ও মাদকসহ আটক ৯

এক যুগ পর রাঞ্জি ট্রফিতে কোহলি

এক যুগ পর রাঞ্জি ট্রফিতে কোহলি

‘গোপালী’কোটায় পূর্বাচলে প্লট পান হাসিনার পিয়ন ওয়ালিদ-রনি

‘গোপালী’কোটায় পূর্বাচলে প্লট পান হাসিনার পিয়ন ওয়ালিদ-রনি

ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম-২০২৫ এর সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত

ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম-২০২৫ এর সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত

বাজারের জমি অধিগ্রহণ না করেই ব্রিজের সংযোগ সড়ক নির্মাণের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন

বাজারের জমি অধিগ্রহণ না করেই ব্রিজের সংযোগ সড়ক নির্মাণের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন

বেনজীরের সাভানা ইকো পার্কে এনবিআরের ১৫ সদস্যের গোয়েন্দা টিম

বেনজীরের সাভানা ইকো পার্কে এনবিআরের ১৫ সদস্যের গোয়েন্দা টিম

এবার জার্সিতে ‘পাকিস্তান’ লেখা নিয়ে আপত্তি ভারতের

এবার জার্সিতে ‘পাকিস্তান’ লেখা নিয়ে আপত্তি ভারতের

ট্রাম্পের অভিষেক নিয়ে ‘বিভক্ত’ আমেরিকানরা

ট্রাম্পের অভিষেক নিয়ে ‘বিভক্ত’ আমেরিকানরা

সদরপুরে মোটরসাইকেল-অটোরিক্সার সংঘর্ষে প্রাণ গেল কলেজ ছাত্র আসিফের

সদরপুরে মোটরসাইকেল-অটোরিক্সার সংঘর্ষে প্রাণ গেল কলেজ ছাত্র আসিফের

রাউজানে সমন্বয়ক রাফির ওপর হামলা, থানায় অভিযোগ

রাউজানে সমন্বয়ক রাফির ওপর হামলা, থানায় অভিযোগ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি আবেদন বিকেলে শুরু

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি আবেদন বিকেলে শুরু