চৈত্রের শেষ দিনটিতে এসে দেশজুড়ে দিনভর রোদের তেজের তীব্রতা আরও বেড়ে গেছে। কোথাও ছিঁটেফেঁটাও বৃষ্টি নেই। খাঁ খাঁ রোদ্দুড়ে পুড়ছে চারদিক। আগামীকাল রোববার পয়লা বৈশাখে তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি এবং চলমান তাপপ্রবাহ আরও বিস্তারের আভাস দেয়া হয়েছে। উচ্চ খরতাপে পুড়ছে শহর-নগর-বন্দর, গ্রাম-জনপদসহ প্রায় দেশজুড়ে। তাপদাহে রাস্তায় সড়কে পিচ গলছে। প্রচ- গরমে চারদিকে দুঃসহ জীবনযাত্রা। অসহনীয় ভ্যাপসা গরমে-ঘামে হাঁপাচ্ছে মানুষ। অনেকেই সর্দি-কাশি-জ¦র, গলাব্যাথা, ডায়রিয়া, চর্মরোগ, হিট ট্রোক, পানিশূন্যতাসহ নানাবিধ রোগব্যাধিতে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। জরুরি কাজকর্ম ছাড়া দুপুর বেলায় ও এর আগে-পরে মানুষ ঘরের বাইরে যাচ্ছেন না।
গরমের তেজ লেগেছে আবহাওয়া বিভাগেও! অবশেষে আবহাওয়া বিভাগের টনক নড়েছে। আজ শনিবার আবহাওয়া বিভাগ (বিএমডি) তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা বা হিট এলার্ট জারি করেছে। এতে বলা হয়, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগসমূহের উপর দিয়ে মৃদু (তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস) থেকে মাঝারি (তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯.৯ ডিগ্রি সে.) তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। হিট এলার্ট বিজ্ঞপ্তিতে আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক আরও জানান, আজ ১৩ এপ্রিল থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।
আজ শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চট্টগ্রাম অঞ্চলের রাঙ্গামাটিতে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঈদের দিন বৃহস্পতিবারও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাঙ্গামাটিতে ৪০ ডিগ্রি সে.। এছাড়াও আজ শনিবার দেশের উল্লেখযোগ্য সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চট্টগ্রামের সীতাকু-ে ৩৯, চট্টগ্রামে ৩৭.৪, বান্দরবানে ৩৯.২, খেপুপাড়ায় ৩৮.৬, পাবনায় ৩৮.৫, চুয়াডাঙ্গায় ৩৮.৪, কক্সবাজার ও কুষ্টিয়ায় ৩৮ ডিগ্রি সে.। দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল সর্ব উত্তর জনপদের পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ায় ১৯.৫ ডিগ্রি সে.। রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৭.৬ এবং সর্বনি¤œ ২৫.৮ ডিগ্রি সে.।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, আজ শনিবার চট্টগ্রামের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ৫.৬ এবং সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ৩.১ ডিগ্রি সে. বেশি।
প্রায় সারা দেশেই দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাতের ‘সর্বনি¤œ’ তাপমাত্রাও বেড়েই চলেছে। অধিকাংশ জায়গায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ২৫ থেকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। রাতের তাপমাত্রাও আরও বাড়তে পারে।
চৈত্রের শেষ প্রান্ত ও বৈশাখের ঠিক শুরুতেই এসে তীব্র খরতাপের দহনে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন এবং ঈদোত্তর দিনগুলো অতিবাহিত হচ্ছে। খরা-অনাবৃষ্টি, কড়া ও তীর্যক সূর্যের দহনে যেন জ¦লছে গ্রাম-জনপদ, মাঠ-ঘাট-বিল, হাওর-বাওড়, শাক-সবজি ক্ষেত, ফল-ফসল, প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশ। বাতাসে যেন মরুর লু-হাওয়া বইছে।
প্রশান্তির বৃষ্টির আশায় চাতক পাখির মতোই আকাশের পানে তাকিয়ে আছে সবাই। কাক্সিক্ষত বৃষ্টি নেই। আবহাওয়া পূর্বাভাসে আপাতত বৃষ্টির কোন সুখবর নেই। বরং অনেক জায়গায় তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধির এবং তাপপ্রবাহ বিস্তারের আভাস দেয়া হয়েছে। ‘যদি’ এ সময়ে কোথাও বিচ্ছিন্নভাবে কালবৈশাখী ঝড় বা বজ্রসহৃ বৃষ্টি হয় তখন সেখানে বৃষ্টিপাত হলে সাময়িক স্বস্তি আসতে পারে।
আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের কোথাও এক ফোঁটাও বৃষ্টি ঝরেনি।
খরতাপের দহনে দেশের অনেক জেলা-উপজেলা, শহর-নগরে বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠছে। দূষিত পানি পান করে অসুস্থ হয়ে পড়ছে মানুষজন। অসহ্য গরমের সঙ্গে ঘন ঘন বিদ্যুতের লোডশেডিং, বিদ্যুৎ বিভ্রাটে শহর-গ্রামে সর্বত্রই দুর্বিষহ জনজীবন।
আবহাওয়া বিভাগের আগামীকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সর্বশেষ পূর্বাভাসে আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানান, আজ রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত পূর্বাভাসে: ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
নীলফামারী, নেত্রকোণা জেলাসহ রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আগামীকাল সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। চলমান তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আগামী মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পূর্বাভাসে জানা গেছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। বিরাজমান তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
এর পরের ৫ দিনে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে।
আবহাওয়া বিভাগ জানায়, পশ্চিমা লঘুচাপের একটি বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।