হরিরামপুরে দলীয় বহিষ্কারাদেশ মাথায় নিয়েই নির্বাচনী মাঠে সরব বিএনপির দুই নেতা
২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৪১ পিএম | আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৪১ পিএম
আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের নির্বাচনে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন বিএনপি পন্থি চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও বয়ড়া ইউনিয়নের টানা তিনবারের নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর রহমান তুষার। তার নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে রীতিমতো উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের আনাচে কানাচে হৈচৈ পড়ে গেছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ভোটারদের মাঝেও তাকে নিয়ে চলছে নানামুখী জল্পনা কল্পনা, আলোচনা সমালোচনা। এ উপজেলায় শক্তিশালী চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন আরও দুই জন। এরা হলেন আওয়ামী পন্থি বর্তমান চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক দেওয়ান সাইদুর রহমান (মোটরসাইকেল প্রতীক) ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি মো. সাদ্দাম হোসেন।
জানা যায়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি কেন্দ্রীয়-ভাবে উপজেলা নির্বাচনকেও বর্জনসহ দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ নির্বাচন করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুশিয়ারি দেয়া হয়। দলীয় এমন সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে চেয়ারম্যান পদে এখনো ভোটের মাঠে সরব যুবদল নেতা উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও বয়ড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর রহমান তুষার ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা বিএনপির সদস্য কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসা।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত ২৪ এপ্রিল ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জবাব চেয়ে একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। এরপরও তারা নির্বাচন থেকে না সরায় ৪৮ ঘণ্টা অতিবাহিত হতেই বিএনপির স্থায়ী কমিটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় দল ও অঙ্গ সংগঠনের ৭৩ নেতাকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়।
শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে হরিরামপুর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম- আহ্বায়ক মো. জাহিদুর রহমান তুষার ও উপজেলা বিএনপির সদস্য মোশারফ হোসেন মুসাকেও আজীবন বহিষ্কার করা হয়।
দলীয় এমন সিদ্ধান্তসহ নির্বাচনের হালচাল ও আজীবন বহিষ্কারের ব্যাপারে দৈনিক ইনকিলাবকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে মো. জাহিদুর রহমান তুষার বলেন, "বহিষ্কারের চিন্তা বাদ দিয়েই আমি নির্বাচনের মাঠে নেমেছি। এর কারণ হলো আমার প্রতি জনগণের যে ভালোবাসা ও আস্থা। আমি দীর্ঘ ১৯ বছর একটানা বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেবা দিয়েছি। এতে করে উপজেলার সব জায়গাতেই জনগণের সাথে আমার একটা সু-সম্পর্ক ও পরিচিতি গড়ে উঠে। এতে করেই একটা সময় আমি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চিন্তা করি। এভাবেই আমার নির্বাচনে আসা।
তিনি আরও বলেন, আমাকে জেলার নেতৃবৃন্দ দলীয়ভাবে ডেকেছিলেন। তারা আমাকে নির্বাচন না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি তা মানতে পারিনি। কারণ এখানে দুজন শক্তিশালী প্রার্থী আছেন। যারা নাকি অনেক টাকাওয়ালা। এখন নির্বাচনের মাঠে নেমে যদি মাঠ ছেড়ে যাই, তাহলে জনগণ মনে করবে আমি টাকা খেয়ে বসে গেছি। তাই আমার প্রতি জনগণের যে আস্থা ও ভালোবাসা আছে, তা আর থাকবে না। তাই আমি দলীয়ভাবে বহিষ্কারের চিন্তাটা বাদ দিয়েই এ পথে নেমেছি। আমার কাছে আমার উপজেলার জনগণের ভালোবাসা ও চাওয়াটাই বড়। উপজেলার পরিবর্তনের জন্য জনগণের চাপেই আমি নির্বাচনী মাঠে আছি।
তুষার আরও বলেন, "রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে মিছিলও করা হয়েছে। মূলত দলীয় গ্রুপিং রাজনীতির কারণেই আমার বহিষ্কার চেয়ে মিছিল করা হয়েছিল। যারা আমার বিরুদ্ধে বহিষ্কার চেয়ে মিছিল করছেন, তাদের অনেকেই কিন্তু এই নির্বাচনেই অন্য কোনো না কোনো প্রার্থীর পেছনে কাজ করছেন। এটাও কিন্তু আমি জানি। । যারা টাকা খেয়ে অন্য প্রার্থীদের সমর্থন দিয়ে কাজ করছেন তারাও কিন্তু দলের বিভিন্ন পর্যায়ে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের লিডিং পজিশনে দায়িত্বে আছেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন মূলত ব্যক্তি সম্পর্কে হয়, দলীয়গত ভাবে নয়। আর এবার দলীয় কোনো প্রতীকও নেই।"
এ উপজেলার বিএনপি পন্থি ভাইস চেয়ারম্যান পদে আরেক প্রার্থী হলেন উপজেলা বিএনপির সদস্য ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন মুসাকেও আজীবন বহিষ্কার করা হয়। এ বিষয়ে তিনি বলেন, "আমি যখন নির্বাচনের চিন্তাভাবনা করেছি, তখন জানতাম না এ নির্বাচনেও দল যাবে না। দল যেটা ভাল মনে করেছে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে দলের সিদ্ধান্তকে আমি সাধুবাদ জানাই। আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রার্থী হয়েছি। আমি দীর্ঘদিন ধরেই জনগণের জন্য কাজ করি। জনগণ আমাকে ভালোবাসে, তাই নির্বাচনে এসেছি। আশা করি ভালো কিছু হবে। দল বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে কিছু করার নেই। তাছাড়া এখন দলে আমার কোনো পদ-পদবীও নেই।"
বহিষ্কারের বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এ জিন্নাহ কবির দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন, তাদেরকে কেন্দ্র থেকে আজীবন বহিষ্কারের চিঠি দেয়া হয়েছে। এছাড়াও এ নির্বাচনে আমাদের কোনো নেতা যদি গোপনেও কোনো প্রার্থীকে নির্বাচনে সহায়তা করেন এবং তার প্রমাণ যদি আমরা পাই, তাহলে তার বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এজন্য আমরা তিনটি মনিটরিং টিম গঠন করেছি।"
উল্লেখ্য, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রথম ধাপের নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ২৮ জন, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ২৪ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ২১ জনকে বহিষ্কার করা হয়।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করলেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব
মাগুরায় রানা আমীর ওসমানের বিজয় মিছিলে সাকিব আল হাসান
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে মির্জা ফখরুলের বৈঠক
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির লাশ উদ্ধার
মিথ্যা সংবাদ প্রচারের অভিযোগে জিডি করেছেন বুবলী
গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড জয়ী গায়কের বাড়িতে হামলা, একজন গুলিবিদ্ধ
সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলা : ৩ জনের যাবজ্জীবন, ৬ জন খালাস
কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিমান হামলা রাশিয়ার, অন্ধকারে ইউক্রেন
দুবছর ধরেই ভারতে বন্ধ কোভিশিল্ড, বিতর্কের মধ্যে দাবি সিরামের
ফের জেলেনস্কিকে খুনের ছক, ষড়যন্ত্রে শামিল ইউক্রেনেরই দুই কর্নেল!
‘গণছুটি’ নেয়া কেবিন ক্রুদের একসঙ্গে বরখাস্ত করল এয়ার ইন্ডিয়া
রেফারিং নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে বায়ার্ন
হিজবুল্লাহর হামলায় উত্তর ইসরাইলে এক ইহুদিবাদী সেনা নিহত
বাইডেনের স্বীকারোক্তি, মার্কিন বোমায় মারা গেছেন ফিলিস্তিনিরা
কর্ণফুলীতে বিধ্বস্ত বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান
ইসরাইলকে তথ্য দিতে গাজায় ব্রিটেনের ২০০ গোয়েন্দা ফ্লাইটের ১০০০ ঘণ্টা নজরদারি
এবার রাষ্ট্রীয় খরচে হজে যাচ্ছেন ৬৩ জন
রাজধানীতে জামায়াতের বিক্ষোভ
ব্রাজিলে ভয়াবহ বন্যায় মৃত্যু ১০০ ছাড়িয়ে গেছে
একই গ্রাম থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান ও দুই ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত