স্কুলে নিয়োগ পরীক্ষায় টাকা নেওয়ার অভিযোগ

Daily Inqilab ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা

০৪ মে ২০২৪, ০২:৫৮ পিএম | আপডেট: ০৪ মে ২০২৪, ০২:৫৮ পিএম

 

মেয়ের স্কুলেই মা ৫শ টাকার বিনিময়ে কষ্ট করে আয়া পদে কাজ করে দীর্ঘ ১৩ বছর পাড় করেছেন। আশায় বুক বেধে ছিলেন মেয়ে যোগ্যতা সম্পন্ন হয়ে এই স্কুলেই নিজের পদে স্থায়ী চাকরি পাবে। কিন্তু যোগ্যতা সম্পন্ন হয়ে চাকরি করার সুযোগ এলে মায়ের অস্থায়ী আয়া পদে স্থায়ী আবেদনের পর নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন। পরে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করেও টাকার কাছে হার মানতে হয়েছে। মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় তৃতীয় স্থান পাওয়া প্রার্থীকেই প্রায় চার মাস পর গত সোমবার (৩০এপ্রিল) ওই পদে নিয়োগ পত্র দেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় মায়ের আশা ‘গুড়ে বালি’ হয়েছে। এ ঘটনার পর সামান্য বেতনে চাকুরী করা ওই নারী ক্ষুব্ধ হয়ে বিচারের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেন। এমন ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বড়হিত উচ্চ বিদ্যালয়ে।

ঈশ্বরগঞ্জ সদর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে ওই বিদ্যালয়টির অবস্থান। দীর্ঘ দিন ধরে বিদ্যালয়টিতে আয়া পদ ছাড়াও নিরাপত্তাকর্মী ও অফিস সহকারী পদসহ বিভিন্ন পদ শূন্য ছিল। তার মধ্যে বিদ্যালয়ের পাশের বৃ-পাঁচাশি গ্রামের হত দরিদ্র চান মিয়ার স্ত্রী মাজেদা খাতুন গত ২০১১ সালে ৫শ টাকার বেতনে ওই বিদ্যালয়ে আয়া পদে কাজ করা শুরু করেন। এর মধ্যে প্রাইমারী শেষ করে মায়ের বিদ্যালয়ে ষষ্ট শ্রেণিতে ভর্তি হন মেয়ে হাদিছা খাতুন। মেধাবী ছাত্রী হয়ে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪.৭১ পেয়ে ঈশ্বরগঞ্জ সরকারী কলেজে ভর্তি হয়। মাজেদা খাতুন জানান,আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকায় মেয়েকে আর পড়ালেখা না করিয়ে ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে দিয়ে দেয়া হয়। বর্তমানে সেখানেই চাকরি করছে। এর মধ্যে গত বছরের ৫ জুলাই দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় বড়হিত উচ্চ বিদ্যালয়ে বিভিন্ন পদ ছাড়াও আয়া পদে লোক নেওয়া হবে। এমন বিজ্ঞপ্তি দেখে মেয়েকে আয়া পদে আবেদন করান। পরে গত ২৮ ডিসেম্বর নান্দাইল চন্ডীপাশা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে তাঁর মেয়ের পদে আরও পাঁচজন পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে। পরীক্ষা শেষে ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ দিবে দিচ্ছি বলে কালক্ষেপণ করে রাত দশটায় জানানো হয় এখন ফলাফল দেওয়া হবে না। পরে বেশ কয়েকবার তাগাদা করেও ফলাফল জানা যায়নি। এর মধ্যে গত প্রায় চার মাসেও ফলাফল জানানো হয়নি। কিন্তু গত সোমবার (৩০এপ্রিল) বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করা নাজমা বেগম নামের এক নারীকে ডেকে এনে নিয়োগপত্র তুলে দেন। এ ঘটনায় তিনি হতাশ হয়ে ওই দিনই ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর ফলাফল প্রকাশ ও সঠিক তদন্ত করার জন্য লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। মাজেদা বলেন, তিনি গোপন সূত্রে জানতে পেরেছেন নিয়োগ পাওয়া নারী নিয়োগ পরীক্ষায় তৃতীয় হয়েছিলেন। প্রায় আট লাখ টাকার বিনিময়ে তার চাকরি হয়েছে। তিনি বলেন, অনেক আশায় আছলাম যে আমি এত কষ্ট করে কাম কইর‍্যা অইলেও মেয়েটাকে এখানে ঢুকাবো। কিন্তু যোগ্যতা ছাড়াও ভালো করলেও চাকরিটা হয়নি। যে টাকা দিছে তার চাকুরী হইছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সুলতান উদ্দিন জানান, তিনি অনেক আগেই নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন কারনে সম্ভব হয়নি। তাছাড়া পুরো বিষয়টা সম্পর্কে সভাপতি অবগত আছেন।

বড়হিত উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. শাহ জালাল টাকা নেওয়া হয়নি বলে অস্বীকার করে বলেন বোঝা পরামর্শ ও মিটিং মাটাং করতে করতে দেরী হইছে। অন্য কিছু না।

নিয়োগ পরীক্ষায় ডিজির প্রতিনিধি ছিলেন নান্দাইল চন্ডীপাশা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিউল্লাহ। তিনি বর্তমানে ময়মনসিংহের একটি সরকারী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি বলেন, ওই সময় পরীক্ষা শেষে সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করে ফলাফল ঘোষণার জন্য প্রধান শিক্ষককে বলা হয়। তিনি কেন ঘোষণা করেননি এটা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। তবে নিয়মানুযায়ী প্রার্থীদের উপস্থিতিতে ফলাফল ঘোষণা করতে হয়। কেন চারমাস পর নিয়োগপত্র দেওয়া হলো তা বোধগম্য নয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম প্রিন্স জানান, লিখিত অভিযোগ পেয়ে ঘটনাটি তদন্ত করতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছে।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দুবাই ফেরত যাত্রীর কাছে মিলল সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ!

দুবাই ফেরত যাত্রীর কাছে মিলল সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ!

অসহায় শিশুর জীবন বাঁচাতে যা করলেন সোনু সোদ

অসহায় শিশুর জীবন বাঁচাতে যা করলেন সোনু সোদ

সউদীতে প্রথম বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু

সউদীতে প্রথম বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু

অবসর ভাতা পাচ্ছেন না সৈয়দপুর রেলওয়ের কারখানার ৩ হাজার ৮৭৩ অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী

অবসর ভাতা পাচ্ছেন না সৈয়দপুর রেলওয়ের কারখানার ৩ হাজার ৮৭৩ অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী

যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি না-করা

যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি না-করা

কেএনএফের নারী শাখার প্রধান সমন্বয়ক আকিম বম

কেএনএফের নারী শাখার প্রধান সমন্বয়ক আকিম বম

যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫১ কোটির ড্রোন ভূপাতিত করল হুথিরা

যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫১ কোটির ড্রোন ভূপাতিত করল হুথিরা

নির্বাচনী মিছিলে প্রতিপক্ষের হামলা, মুন্সীগঞ্জে আহত ১০

নির্বাচনী মিছিলে প্রতিপক্ষের হামলা, মুন্সীগঞ্জে আহত ১০

তাইওয়ান প্রণালীতে মার্কিন জাহাজের অনুপ্রবেশ

তাইওয়ান প্রণালীতে মার্কিন জাহাজের অনুপ্রবেশ

গাজায় তিন জিম্মির মরদেহ উদ্ধার ইসরায়েলের

গাজায় তিন জিম্মির মরদেহ উদ্ধার ইসরায়েলের

গাঁজা খেলে আর জেল নয়, আনা হচ্ছে বড় আইন

গাঁজা খেলে আর জেল নয়, আনা হচ্ছে বড় আইন

অধ্যক্ষের কক্ষে ঢুকে শিক্ষক পেটানো ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কার

অধ্যক্ষের কক্ষে ঢুকে শিক্ষক পেটানো ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কার

নির্বাচনী প্রচারণার মাঠের পাশে ককটেল বিস্ফোরণ, আটক ৫

নির্বাচনী প্রচারণার মাঠের পাশে ককটেল বিস্ফোরণ, আটক ৫

চীনের তৃতীয় বিমানবাহী রণতরীর প্রথম সমুদ্রযাত্রার সব পরীক্ষা সম্পন্ন

চীনের তৃতীয় বিমানবাহী রণতরীর প্রথম সমুদ্রযাত্রার সব পরীক্ষা সম্পন্ন

হামাস গাজায় দীর্ঘমেয়াদে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত

হামাস গাজায় দীর্ঘমেয়াদে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত

লালমাই পাহাড়ের কান্না কেউ শোনে না অবাধে মাটি কেটে নিচ্ছে অসাধু ব্যক্তিরা

লালমাই পাহাড়ের কান্না কেউ শোনে না অবাধে মাটি কেটে নিচ্ছে অসাধু ব্যক্তিরা

বিটিভির অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত ফোনালাপ ফাঁস, কর্মী বরখাস্ত

বিটিভির অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত ফোনালাপ ফাঁস, কর্মী বরখাস্ত

জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার

জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার

নারী কর্মকর্তার সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িত সেই এসপি মোক্তারকে শাস্তি

নারী কর্মকর্তার সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িত সেই এসপি মোক্তারকে শাস্তি

জনগণ যাকে নির্বাচিত করবে তার সঙ্গেই আছি : আইনমন্ত্রী

জনগণ যাকে নির্বাচিত করবে তার সঙ্গেই আছি : আইনমন্ত্রী