আগামীকাল হরিরামপুর উপজেলা ভোটগ্রহণ : ত্রিমুখী লড়াইেয়র সম্ভাবনা
০৮ মে ২০২৪, ১২:১৬ এএম | আপডেট: ০৮ মে ২০২৪, ১২:১৬ এএম
আগামীকাল বুধবার মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সকাল আটটা থেকে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। কোনো বিরতি ছাড়াই চলবে বিকেল চারটা পর্যন্ত। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তীব্র গরমকে উপেক্ষা করে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকেরা ছুটে বেরিয়েছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। নানা প্রতিশ্রুতিতে ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন তারা।
উপজেলার নির্বাচনী এলাকা ঘুরে জানা যায়, এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রার্থী থাকলেও আওয়ামী লীগ ও ‘বিএনপি’র তিন নেতার মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে জানা গেছে। এরা হলেন সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক দেওয়ান সাইদুর রহমান (মোটরসাইকেল প্রতীক), বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি মো. সাদ্দাম হোসেন (দোয়াত কলম) ও বিএনপি পন্থি একক প্রার্থী উপজেলা যুবদলের সদ্য বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক ও বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের তিনবারের সাবেক চেয়ারম্যান জাহিদুর রহমান তুষার (কাপ পিরিচ)। বাকি দুজন প্রার্থী হলেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ও সদ্য সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. আজিম খান (আনারস) এবং আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সৈয়দ শামসুল ইসলাম বিপুল (ঘোড়া)।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী গত ১৭ এপ্রিল মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে হরিরামপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পাঁচজন চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ১৮ জনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আমিনুর রহমান।
সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুজন আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পেলে মোট প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২০ জনে। গত ২২ এপ্রিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তামজিদ উল্লাহ প্রধান লিল্টু এবং উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজিবুল হাসান রাজিব ও স্বতন্ত্র প্রার্থী রকিবুল হাসান। ২৩ এপ্রিল চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোট ১৭ প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন- সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল বাশার সবুজ (উড়োজাহাজ), উপজেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক মো. বিল্লাল হোসেন (বই), উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি রবিউল ইসলাম রাজা (তালা), উপজেলা বিএনপির সদ্য বহিষ্কৃত সদস্য ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন মুছা (চশমা), শেখ কাওছার উদ্দীন (পালকি), সামছুক হক (টিয়া), মোহাম্মদ সাঈদ (মাইক) ও হাবিবুর রহমান (টিউবওয়েল)।
সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হলেন- উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা আক্তার চায়না (ফুটবল), সদ্য সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী (পদ্মফুল), সামছুন্নাহার দীনা (কলস) ও জোৎস্না শিকদার (হাঁস)।
সরেজমিনে জানা যায়, আ. লীগের অভ্যন্তরীন কোন্দলে
এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকলেও আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের বড় একটা অংশের নেতাকর্মীর সমর্থন পাচ্ছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি দোয়াত কলম প্রতীকের মো. সাদ্দাম হোসেন। ওয়ার্ড থেকে শুরু করে প্রতিটি ইউনিয়নের দলীয় নেতাকর্মীর অধিকাংশই তার পক্ষে কাজ করায় প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে আছেন তিনি। তবে ভোটের মাঠে এখনও তেমন সুবিধাজনক অবস্থান তৈরি করতে পারেননি বলেও অনেকে মন্তব্য করেন।
এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে আছেন, সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ দেওয়ান সাইদুর রহমান। তিনি ২০০৯ তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে ফেল করলেও পরবর্তীতে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিতব্য ৫ম ধাপের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। দুইবার চেয়ারম্যান পদে দায়িত্বপালনকালে পুরো উপজেলা জুড়ে তার নিজস্ব কর্মীবাহিনীসহ বড় আকারের একটা ভোট ব্যাংক তৈরি হয়েছে। ফলে এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেক সাধারণ ভোটাররাই বলছেন, দেওয়ান সাইদুরের কোনো বিকল্প নেই।
নির্বাচনের বিষয়ে দেওয়ান সাইদুর রহমান জানান, "আমার জয়ের বিষয়টি জনগণের ওপর ছেড়ে দিয়েছি। জনগণ যে রায় দিবে, আমি তা মাথা পেতে নিব। তবে এটা স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এখানে দলীয় প্রতীক নেই। স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় নয়, ব্যক্তি সম্পর্কটাই বড়। এখানে কেউ না কেউ, কারও না কারও আত্নীয় স্বজন। আমার বিগত সময়ের কাজ দেখে মানুষ আমাকে ভোট দেবে। প্রতীক পাওয়ার পর থেকে আমি মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি। তাদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়াও পেয়েছি। সব পর্যায়ের মানুষই আমার পাশে আছেন।”
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. সাদ্দাম হোসেন জানান, “উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ দলীয় সব নেতাকর্মী ও আপামর জনগণ আমার সঙ্গে আছেন। হরিরামপুরের মানুষ শান্তি চায়। শান্তির জন্য দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ ভোটাররা আমার সঙ্গে আছেন। আমি ভোট প্রার্থনায় যেখানেই যাচ্ছি, সেখানেই ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।”
নির্বাচনী মাঠে শক্ত অবস্থানে থাকা আরেক প্রার্থী হলেন বিএনপি পন্থি সদ্য বহিষ্কৃত উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের টানা তিনবারের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর রহমান তুষার (কাপ পিরিচ প্রতীক)। একাধিক আ. লীগ পন্থি প্রার্থীদের উপেক্ষা করে হেভিওয়েট প্রার্থীর তালিকায় আলোচনায় এসেছেন তিনি। দলীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে নির্বাচনে এসে তিনিও উঠে এসেছেন আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে। আ. লীগের দলীয় গ্রুপিং ও অর্ন্তকোন্দলের রোষানলে এবারের নির্বাচনের বড় ফ্যাক্ট হতে পারেন বলেও জানা যায়। বিভিন্ন মহলের মন্তব্যে আরও উঠে আসে, বিএনপি পন্থি সাধারণ ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে গেলে নির্বাচনের মেরুকরণ ঘুরে যেতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। তবে এ নির্বাচন নিয়ে সহসাই মুখ খুলছেন অনেক ভোটাররাই। নির্বাচনের জয়পরাজয়ের হিসেবে অনেক সাধারণ ভোটারা অনেকটাই নিরব ভূমিকাও পালন করছেন বলে দেখা গেছে।
সাধারণ জনগণ ও খেটে খাওয়া মানুষের ব্যাপক সমর্থন পাচ্ছেন এমন দাবি করে জাহিদুর রহমান তুষার বলেন, “দীর্ঘ ১৯ বছর একটানা বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেবা দিয়েছি। দীর্ঘদিন চেয়ারম্যান থাকায় উপজেলার সব ইউনিয়নের জনগণের সঙ্গে আমার একটা সুসম্পর্ক রয়েছে।”
নির্বাচন না করার জন্য চাপ ছিল জানিয়ে তুষার বলেন, “আমাকে জেলার নেতারা দলীয়ভাবে ডেকে নির্বাচন না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে এখানে দুজন অর্থসমৃদ্ধ শক্তিশালী প্রার্থী থাকায় মাঠ ছেড়ে দেইনি। কেননা যদি মাঠ ছেড়ে যাই, তাহলে জনগণ ভাবতে পারে, আমি টাকা খেয়ে বসে গেছি। মাঠ ছেড়ে দিলে আমার প্রতি জনগণের যে আস্থা ও ভালোবাসা আছে, তা আর থাকবে না। তাই আমি দলীয়ভাবে বহিষ্কার হলেও নির্বাচনী মাঠে আছি। জনগণের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস নিয়েই নির্বাচনী মাঠে আছি। বাকিটা আল্লাহ ভরসা।”
উল্লেখ্য, উপজেলায় মোট ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৪১ হাজার ৬০৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭১ হাজার ৩৩৪ জন; নারী ভোটার ৭০ হাজার ২৩৪ জন এবং হিজড়া ভোটার একজন। প্রথম ধাপে আগামীকাল মোট ৬৫টি কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ আমিনুর রহমান মিঞা ইনকিলাবকে জানান, নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। আলহামদুলিল্লাহ এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা নেই। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে সুন্দর একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
কালশীতে রিকশাচালক-পুলিশের সংঘর্ষে পথচারী গুলিবিদ্ধ
ইউরোপিয়ান সোশ্যাল বিজনেস ট্যুরে প্রফেসর ইউনূস
মুস্তাফিজের অভাব বোধ করেছে দল: চেন্নাই অধিনায়ক
১৭ মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা চেয়ারম্যান প্রার্থী : টিআইবি
ভারতের মুসলিম জনসংখ্যা কি সত্যিই বিস্ফোরিত হয়েছে?
গাজায় যুদ্ধাপরাধের তদন্ত দাবি করেছে জর্ডান
পাবলিক ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট রিফর্ম স্ট্রাটেজি প্রণয়নের কাজ শুরু
বাজার থেকে এসএমসি প্লাসের সব ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস প্রত্যাহারের নির্দেশ
কোহলির যে কথায় মুগ্ধ আফ্রিদি
ভারতীয় ভাতাপ্রাপ্ত এজেন্সীগুলো দেশে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে: রাশেদ প্রধান
ভারতীয় ভাতাপ্রাপ্ত এজেন্সীগুলো দেশে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে: রাশেদ প্রধান
জাতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে উলামায়ে কেরামগণকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করতে হবে : মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান
মূল খেলোয়াড়দের ছাড়াই দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর
ব্যাংকে কি মাফিয়া, মাস্তানরা ঢুকবে? রিজভী
কানাডায় তেল ও গ্যাস খাতের কোম্পানির ‘বিশেষ উপদেষ্টা হয়েছেন সাজ্জাদ রশিদ
কালশীর পুলিশ বক্সে আগুন দিলো অটোরিকশাচালকরা
যে ভাবে নিখোঁজ হলেন এমপি আনার
ক্লাসে উপস্থিত না হয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের বিষয়ে কঠোর হচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
ফুলবাড়ীতে চোরাই গরু উদ্ধার, গ্রেফতার তিন
এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্ট আলাদা করবে টিকটক