চৌগাছায় ঐতিহ্যবাহী বাঁশ শিল্প বিলুপ্তির পথে
০৮ মে ২০২৪, ০৬:১০ পিএম | আপডেট: ০৮ মে ২০২৪, ০৬:১০ পিএম
যশোরের চৌগাছায় অপ্রতুলতা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এবং পরিকল্পিত উদ্যোগের অভাবে বিলুপ্ত হতে চলেছে বাঁশ শিল্প। বর্তমান বাজারে প্লাস্টিক পণ্য সামগ্রীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়েছে এককালের ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প। অপরদিকে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় অভাব-অনটনের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন বাঁশ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলো। পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকতে তারা এ পেশাকে ছেড়ে অন্য পেশায় ঢুকে পড়ছেন। ঐতিহ্যবাহী শিল্পকর্মটি এ এলাকা তথাদেশ থেকে বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার খড়িঞ্চা দাসপাড়া, সলুয়া, বিশ্বনাথপুর, পুড়াপাড়া, সুখপুকুরিয়া ও গুয়তলাীসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে বিগত কয়েক দশক ধরে প্রায় দুই শতাধিক পরিবার বাঁশ শিল্পের সাথে স¤পৃক্ত ছিল। এক সময় চৌগাছায় গৃহস্থ পর্যায়ে প্রচুর বাঁশ উৎপাদিত হতো। এ ছাড়া পাশের উপজেলা থেকেও প্রচুর বাঁশ আনা হতো। ওই বাঁশ দিয়ে চালুন, কুলা, টেপারি, ডালা, ঝুঁড়ি ধান-চাল ও ডাল সংরক্ষণের জন্য গোলা, ডোল, বাজার করার খাড়ই, মাটি কাটার ঝুড়ি, মাছ ধরার যন্ত্রপাতি, চাষাবাদের জন্য সৌখিন অনেক পণ্যসহ গৃহস্থালী কাজের অনেক জিনিস তৈরি করা হতো। এগুলো প্রত্যেক পরিবারের জন্যই ছিল অপরিহার্য্য। কিন্তু কালের বিবর্তনে বাজারে প্লাস্টিকের হরেক রকমের পণ্য আসায় হারিয়ে যাচ্ছে এ শিল্পটি।
একদিকে যেমন এলাকায় বাঁশ উৎপাদন কম হয়ে গেছে, তেমনি কোন অঞ্চল থেকেও বাঁশ এ অঞ্চলে আসছে না। অপরদিকে, প্লাস্টিকের বাজারে প্রতিযোগিতায় বাঁশের পণ্যগুলো টিকতেও পারছে না। ফলে এ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোতে নেমে এসেছে দুর্দিন। বেঁচে থাকার তাগিদে অনেকেই পেশা বদল কলছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে উপজেলায় হাতে গোনা ১০০ থেকে ১১০টি পরিবার এ শিল্পের সাথে কোনো রকমে টিকে রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পুরুষদের পাশাপাশি বাঁশ শিল্পের সাথে তিন শতাধিক নারী জড়িত ছিলেন। এ ছাড়া পরিবারের মেয়ে সন্তানরাও এ কাজে সহায়তা করত। বাঁশের কাজ করে নারীরা স্বাবলম্বী ছিলেন এবং তাদের কাছে জমাকৃত টাকা মেয়ের বিয়ে কিংবা স্বামী-সংসারের প্রয়োজনীয় অন্য কাজে লাগাতেন। এখন কাজ না থাকায় ওই নারী শিল্পীরা বেকার হয়ে পড়েছেন। বাঁশ শিল্পের সাথে জড়িত উপজেলার টেঙ্গুরপুর গ্রামের সবিতা দাস নামের এক গৃহবধূ জানান, বাঁশের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, চাহিদা কম, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি এবং পণ্য বিক্রি করতে গিয়ে বাধ্য হয়ে বাজারে অতিরিক্ত খাজনা দিতে হয়। ফলে এখন আর লাভ হয় না। তাই তাদের সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকে। মির্জাপুর গ্রামের দূর্গারানী দাস, ঠান্ডরানী দাস ও সুচিত্রা রাণীদাস নামের বাঁশ শিল্পীরা জানান, কাজ না থাকায় তাদের হাতে কোনো টাকা পয়সা থাকে না। ফলে নিজের রুচি কিংবা চাহিদা মোতাবেক কোনো জিনিষপত্রও কিনতে পারছেন না। যে কোনো প্রয়োজনে স্বামী বা সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে থাকতে হয়। তাদের অভিমত, বাঁশ শিল্পকে রক্ষা করতে হলে বাজারে বাঁশপণ্যের খাজনাবিহীন বিক্রির সুযোগ ও সরকারি ভাবে সুদ মুক্ত সহজ কিস্তিতে লোন দিতে হবে। করতে হবে সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা। সরকারিভাবে প্লাস্টিক ব্যবহারের খারাপ দিকগুলো প্রচার করতে হবে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী চৌগাছা কামিল মাদ্রাসা এলাকার রবিন দাস বলেন, এ শিল্পটি ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের অন্তর্ভুক্তহলেও সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো সংস্থাই এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখার ভূমিকা নিচ্ছে না। বাঁশ শিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে জরুরি ভিত্তিতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, পরিকল্পনা ও আধুনিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার। সে সঙ্গে পেশায় জড়িতদের তালিকা করে সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা উচিত।
এ বিষয়ে চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুস্মিতা সাহা বলেন, শিল্পটি আমাদের বাঙালি সংস্কৃতিরই অংশ। আমরা চেষ্টা করব এদেরকে সার্বিক সহায়তা দিতে। এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হবে ।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
৩২ দিনে ৮ বার বাড়ল স্বর্ণের দাম
রাইসির মৃত্যু হলে কে হবেন ইরানের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট
ইসরাইলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করুন : বাইডেনকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী
হেলিকপ্টার খুঁজতে গিয়ে নিখোঁজ ৩ উদ্ধারকারী
রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত: বৈরী আবহাওয়ায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত
ঘুষের দর-কষাকষির অডিও ভাইরাল
আইপিএল: প্লে অফে কে কার মুখোমুখি
আট গোলের রোমাঞ্চ: ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে রিয়ালের ড্র
সহজ জয়ে লা লিগায় রানার্সআপ বার্সা
ক্লপকে অশ্রুসিক্ত বিদায় লিভারপুলের
সিটির অমরত্বের রাত...
বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা
ফতুল্লায় হত্যা মামলার আসামি কেরানিগঞ্জে গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে বান্দরবানে কেএনএফের ৩ সদস্য নিহত
রাজশাহীতে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখতে চাওয়ায় পুলিশকে মারপিট, যুবক আটক
স্বাচিপ রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি ডা. জাহিদ, সম্পাদক ডা. অর্ণা জামান
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রগঠনের দাবিতে সারাদেশে জেলা ও মহানগরীতে ইসলামী
খালেকুজ্জামানের বাড়ী সরকারিভাবে পুননির্মাণের দাবি - ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ
কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত সাবেক বিজেপি নেতা
সঠিক ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিতকরণে বিএসটিআই নিরলস কাজ করে যাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী