এমপি আনার হত্যা: গ্যাস বাবুকে নিয়ে ঝিনাইদহের দুই পুকুরে ডিবির অভিযান
২৬ জুন ২০২৪, ০৪:০৫ পিএম | আপডেট: ২৬ জুন ২০২৪, ০৪:০৫ পিএম
ঝিনাইদহের পুকুরে ফেলা গ্যাস বাবুর তিনটি মোবাইলে ঝুলছে ঝিনাইদহ জেলা আ’লাগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুসহ অনেক প্রভাবশালী নেতার ভাগ্য। কিন্তু বুধবার দুই ঘন্টার অভিযানে সেই মোবাইল উদ্ধার করা হয়নি। ১১ জন জেলে ও ৩ জন সুইপার নামিয়ে দুইটি পুকুর তন্ন তন্ন করেও তিনটি মোবাইল উদ্ধার করতে পারেনি জেলেরা। ফলে ডিবি পুলিশের এই অভিযান অনেকটাই নিষ্ফল হয়েছে।
বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঝিনাইদহ শহরের খোকা চেয়ারম্যানের পেট্রোল পাম্পের পেছনের পুকুরে অভিযান চালানো হয়। ১১ জন জেলে আনা হয় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বাদুড়গাছা গ্রাম থেকে। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় ঝিনাইদহ পৌরসভার তিনজন সুইপার। এই ১৪ জন মিলে পুকুরে নেমে মোবাইল খোঁজা শুরু করেন। এ সময় পুকুরের পাশে, ভবনের ছাদে ও বিভিন্ন গাছে হাজারো উৎসুক মানুষ এই অভিযান দেখার জন্য ভীড় জমায়। অভিযানের সময় মামলার আসামী ঝিনাইদহ জেলা আ’লীগের ত্রান সম্পাদক কাজী কামাল আহম্মেদ বাবু পুকুরের দক্ষিন পাশে পিপিলিকা মার্কের উপরে পুলিশ বেষ্টিত অবস্থায় বসে ছিলেন। তিনি ঝিনাইদহ জেলাখানা থেকে এসে মোবাইলটি কোথায় ফেলেছেন তা দেখিয়ে দেন।
দুপুর ১২টার দিকে ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ হেলিকপ্টারযোগে ঝিনাইদহ বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামে অবতারণ করেন। সেখান থেকে তিনি সোজা অভিযান চলা পুকুরে চলে যান। তিনি প্রায় ১৫ মিনিট অভিযান স্বচক্ষে দেখেন। এরপর তিনি গনমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার জন্য পায়রা চত্বরে পৌছান।
এদিকে পুকুরে অভিযানের সময় বেশিক্ষন টিকতে পারেননি জেলে ও সুইপাররা। ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধ ও পানির নিচে ভাঙ্গা কাঁচের জিনিস থাকায় তারা ২৫ মিনিট মতো মোবাইল খুজে উপরে ওঠে পড়েন। এ সময় শৈলেন বিশ্বাস ও সরোয়ার হোসেন নামে দুই জেলে জানান, পুকুরের পানি অত্যন্ত বিষাক্ত। নামার পরপরই তাদের শরীর চুলকানো শুরু হয়। এ কারণে পানির মধ্যে তারা বেশিক্ষন টিকতে পারেনি। ফলে মোবাইল উদ্ধার সম্ভব হয়নি। এরপর তারা ঝিনাইদহ বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামের পাশের পুকুরে অভিযান পরিচালনা করেন। সেখানে ৩০ মিনিটেরও বেশি সময় জাল টেনে মোবাইল খোঁজা হয়। কিন্তু মোবাইলের কোন হদিস মেলেনি। মোবাইল উদ্ধারের খবরে সেখানেও শত শত উৎসুক মানুষ পুকর পড়ে সমবেত হন। এক পর্যায়ে অভিযান সমাপ্ত করে চলে আসেন ডিবি ও পুলিশের অভিযানিক দল।
ঝিনাইদহের দুই পুকুরে ডিবির অভিযান নিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ ঝিনাইদহের গনমাধ্যমকর্মীদের জানান, আদালতের নির্দেশে আমরা আলামত উদ্ধারে ঝিনাইদহের দুইটি পুকুরে অভিযান চালাচ্ছি। আমরা চেষ্টা করছি মোবাইল তিনটি উদ্ধারের। এই মোবাইলে ডিজিটাল এ্যভিডেন্স রয়েছে। মোবাইলগুলো উদ্ধার হলে মামলাটি আরো সমৃদ্ধ হতো। তিনি বলেন, শিমুল ভুইয়ার জবানবন্দিতে ঝিনাইদহে কাজী কামাল বাবুর নাম উঠে এসেছে। তিনি মোবাইলে কার কার সঙ্গে কথা বলেছেন, ম্যাসেজে ছবি আদান প্রদান করেছেন তার প্রমান রয়েছে। তাছাড়া বাবু নিজেই আদালতে মোবাইল তিনটি পুকুরে ফেলার কথা স্বীকার করেছেন। ফলে সাক্ষ্য আইনের ২৭ ধারায় পারিপাশির্^ক সাক্ষ্য হিসেবে যা বলা হয়েছে সেটার জন্যই ঝিনাইদহে গ্যাস বাবুকে নিয়ে আসা।
ডিবি প্রধান হারুন আরো বলেন, মোটা দাগে বলা যায় এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে যারা জড়িত সবাই বাংলাদেশী। আমরা ইতিমধ্যে এই কিলিং মিশনের ৭ জনের মধ্যে আমরা ৫জনকে গ্রেফতার করেছি। ফয়সাল ও মুস্তাফিজ নামে দুইজন পলাতক রয়েছে। তারা নদী, সাগর, খাল আবার কখনো পাহাড়ে অবস্থান করছে বলে প্রযুক্তি খাটিয়ে জানতে পেরেছি।
তিনি বলেন, ডিবির একটি শক্তিশালী টিম খাগড়াছড়িতে অভিযান চালাচ্ছে। ঝিনাইদহ থেকে আমি সেখানে যোগদান করবো। তিনি বলেন, পলাতক ফয়সাল ও মোস্তাফিজের কাছে এমপি আনার হত্যাকান্ডের অনেক তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। তাদের গ্রেফতার করা গেলে অনেক কিছু জানা যাবে। ডিবি প্রধান বলেন, ফয়সাল ও মোস্তাফিজ সাগরে বা মাটির নিচে যেখানেই থাকুক না কেন আমরা তাদেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো। কোন ভালো মানুষকে হয়রানি করা হবে না এবং অভিযুক্ত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুসিয়ারী উচ্চারণ করেন।
তিনি বলেন, সন্দেহভাজন আসামিদের মধ্যে মোস্তাফিজুর ও ফয়সাল সংসদ সদস্য খুন হওয়ার আগে গত ২ মে কলকাতায় যান। তারা দেশে ফিরে আসেন ১৯ মে। এই দুজনকে হন্য হয়ে খোঁজ করছে ডিবি।
অভিযানের সময় ঝিনাইদহ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ফারুক আযম, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর ডিবির সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহফুজুর রহমান, ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার আজিম উল আহসান, ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকারিয়া ইমরান, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর আবিদুর রহমান ও ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি মোঃ শাহিন উদ্দীনসহ ডিবি, এনএসআই ও ডিএসবির কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছেন।
এর আগে মঙ্গলবার বিকালে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি প্রিজন ভ্যানে কাশিমপুর কারাগার থেকে ঝিনাইদহ জেলা কারাগারে আনা হয় গ্যাস বাবুকে। গত সোমবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহর আদালত আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদ ওরফে গ্যাস বাবুকে নিয়ে ঝিনাইদহে অভিযানের আদেশ দেন। পাশাপাশি বাবুর ব্যবহৃত তিনটি মোবাইল ফোন উদ্ধারে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনার আদেশ দেওয়া হয়। আদেশ মোতাবেক মঙ্গলবার বিকাল চারটার দিকে গ্যাস বাবুকে ঝিনাইদহ কারাগারে পাঠানো হয়। জিজ্ঞাবাদে গ্যাস বাবু জানিয়েছেন, জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু তার কাছ থেকে তিনটি মোবাইল ফোন নিয়ে আলামত নষ্টের জন্য দুইটি পুকুরে ফেলে দেন। তাকে সঙ্গে নিয়ে আজ বুধবার দুটি পুকুরে অভিযান চালায় ডিবি ও ঝিনাইদহ পুলিশের যৌথ অভিযানিক টিম।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ইসরাইলের ব্যবহৃত অস্ত্র দিয়েই গাজায় ৪ ইসরাইলি সৈন্যকে হত্যা
খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ আজ
কোচবিহারে মুসলিম মহিলা কর্মীকে মারধর, ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গড়ল বিজেপি
তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে নিয়ে সংসার করতে স্বামীকে পেটালেন চেয়ারম্যান
চীনে চাঙ্গা হচ্ছে ‘অলিম্পিক অর্থনীতি’
আজ জাবির সিনেট অধিবেশন, প্রস্তাবিত বাজেট ৩১৮ কোটি টাকা
নাম থেকে বাবার পদবি মুছে ফেললেন টম ক্রুজ কন্যা
জটিল রোগে আক্রান্ত অভিনেত্রী হিনা খান!
ইসরায়েল লেবাননে হামলা চালালে ‘ধ্বংসকারী যুদ্ধ শুরু হবে’ : ইরানে জাতিসংঘের মিশন
বিশ্বখ্যাত কে-পপের গান শোনার অপরাধে উত্তর কোরিয়ায় ২২ বছরের যুবককে হত্যা
নতুন গাড়ি প্রসঙ্গে যা জানালেন অপু বিশ্বাস
ভিনিসিউসের জোড়া গোলে ব্রাজিলের বড় জয়
আমিরাতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত বাংলাদেশির মৃত্যু
নিষেধাজ্ঞা পেলেন আর্জেন্টিনা কোচ
মুরাদনগরে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া ও পশু জবাই
রাজধানীতে শ্রমজীবী মানুষের বিক্ষোভ
শ্রীপুরে বিএনপির প্রস্তুতি সভা থেকে ৪ নেতা গ্রেফতার
ভূরুঙ্গামারীতে নেশার টাকা না পেয়ে যুবকের আত্মহত্যা
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে জমি নিয়ে বিরোধে ছোট ভাইকে কুপিয়ে জখম
ডেপুটি স্পিকার হঠাৎ অসুস্থ, হেলিকপ্টারে নেওয়া হলো ঢাকায়