রাঙ্গামাটির বরকলে ভারতীয় চোরাই কাঠ মজুদের অভিযোগ
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৫৩ পিএম | আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৫৩ পিএম

রাঙ্গামাটির ভারত সীমান্তবর্তী বরকল উপজেলার সীমান্ত এলাকায় ভারত থেকে অবৈধভাবে চোরাই কাঠ আনার অভিযোগ উঠেছে। ভারত থেকে আসা এসব চোরাই সেগুন কাঠ বরকলের সীমান্ত এলাকায় মজুদ করা হচ্ছে। সেখান থেকে বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অবৈধ জোত পারমিটের মাধ্যমে রাঙ্গামাটি শহর হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কাঠ ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মজুদ করে রাখা এসব চোরাই কাঠ বরকলের সীমান্ত এলাকা থেকে ইঞ্জিনচালিত বোটে করে রাঙ্গামাটি শহরের বেশ কয়েকটি স’মিলে মজুদ করা হচ্ছে। এরপর এসব কাঠের উপরিভাগ (চাল) কর্তন করে নতুন গুঁড়ির (টিম্বার) বানিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রয় করা হচ্ছে। এতে করে একদিকে ভারত থেকে চোরাই পথে কাঠ আসার সরকার রাজস্ব পাওয়ার সুযোগ নেই। অন্যদিকে জেলার সাধারণ কাঠ ব্যবসায়ীরা অসাধু চোরাই চক্রের কারণে ব্যবসায়ীকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভারত প্রথমে এসব কাঠ রাঙ্গামাটির বরকল উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী ছোট হরিণা অঞ্চলের বাজারঘাট ও বটতলী এলাকায় মজুদ করা হয়। সীমান্তবর্তী ও দুর্গমতার সুযোগ নিয়ে কাঠ চোরাকারবারিরা একটি শক্তিশালী সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট গঠন করে ভারতীয় অবৈধ কাঠ হরিণায় মজুদ করে। পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগ-সাজশে সক্রিয় হয়ে পড়েছে চক্রটি। কাঠ পরিবহনের ক্ষেত্রে বন বিভাগের জোত পারমিট গ্রহণ বাধ্যতামূলক। সেজন্য ছোট হরিণা থেকে রাঙ্গামাটি হয়ে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে এসকল কাঠ পরিবহনের জন্য জোত পারমিটের প্রয়োজন পড়ে। জোত পারমিটের জন্য হরিণা অঞ্চলের স্থানীয় ব্যক্তিদের নামে ভুয়া জোত পারমিট ইস্যু করা হচ্ছে। বন বিভাগের ইস্যু করা ফ্রি জোত পারমিট করে কাপ্তাই হ্রদ দিয়ে বোট বোঝাই করে রাঙ্গামাটির রাজবাড়ি স’মিলসহ আরও কয়েকটি স’মিলে ভারতীয় চোরাই কাঠ আনা হয়।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক রাঙ্গামাটির কাঠ ব্যবসায়ীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই অবৈধ ভারতীয় কাঠ চোরাকারবারি সিন্ডিকেট ও বন বিভাগের যোগসাজশে অবৈধ কাঠ ব্যবসা চলে আসছে। এতে বিপাকে পড়েছে প্রকৃত কাঠ ব্যবসায়ী ও জোত মালিকরা। অবৈধ কাঠ চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের দৌরাত্মে প্রকৃত কাঠ ব্যবসায়ী ও জোত মালিকরা অসহায় হয়ে পড়েছে। স্থানীয় জোত মালিকরা নিজেদের জোত-ভূমির কাঠ আহরণের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার রাজস্ব দিতে হয় না। বন বিভাগ স্থানীয় জোত মালিকের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিধি-মোতাবেক তদন্ত কার্যক্রম শেষে ফ্রি জোত পারমিট ইস্যু করেন। অবৈধ ভারতীয় সেগুন কাঠকে বৈধ করার জন্য ফ্রি জোত পারমিট ইস্যু করার ক্ষেত্রে বিপুল অংকের ঘুষ লেনদেন হয়। তাই এসকল পারমিট ইস্যু অধিকতর লাভজনক হওয়ায় এই দিকটাতে বন বিভাগের গভীর মনোযোগ থাকে। প্রকৃত ব্যক্তিগত জোত পারমিট ইস্যুর ক্ষেত্রে গড়িমসি ও কালক্ষেপন হয়। ফলে জোত মালিক ও সাধারণ কাঠ ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া ভারত থেকে স্থলবন্দর চালু করে বৈধভাবে কাঠ আমদানি করা যেত সেক্ষেত্রে সরকার বিপুল অংকের রাজস্ব পেতো।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, ২০১৯ সালের জুনে বরকলের ছোট হরিণা অঞ্চলে ভুয়া জোত পারমিট ইস্যু প্রক্রিয়ায় মধ্যেই একটি গোয়েন্দা সংস্থা প্রায় ৩ লাখ ১০ হাজার ঘনফুট পরিমাণ একটি মজুদ জব্দ করে। পরে স্থানীয়রা ব্যবসায়ীরা জব্দ কাঠের মালিকানাও দাবি করেনি। পরবর্তীতে ‘মালিক-বিহীন’ হিসাবে জানা গেলেও এসব কাঠ আবারও বন বিভাগের জোত পারমিট নিয়ে অবৈধভাবে বিক্রয় করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. জাহিদুর রহমান মিয়া বলেন, ‘ভারত থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে গাছ আসতেছে; এমন অভিযোগটি সত্য নয়। সীমান্ত এলাকা থেকে বরকল হয়ে রাঙ্গামাটি শহরে আসার পথে অনেকগুলো চেকপোস্ট ও কড়া নিরাপত্তা-বেষ্টনী রয়েছে। গাছ আসা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তবে সীমান্ত এলাকায় আটককৃত মজুদ করা গাছ স্থানীয়দের নামে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ভুয়া জোত পারমিট দেওয়া হচ্ছে; এই অভিযোগ সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। এ বিষয়ে তদন্ত চলমান আছে। যদি বন বিভাগের কোনো কর্মকর্তা এর সঙ্গে যদি সম্পৃক্ত থাকে তবে অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সাধারণত জোত পারমিটের ক্ষেত্রে বাগান অনুযায়ী এক পারমিটে ১-২ হাজার ঘনফুট গাছ পারমিট দেওয়া হয়ে থাকে।’
দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি (দুপ্রক) রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সভাপতি মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘রাঙ্গামাটির অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল হলো কাঠ। কাঠ উৎপাদন, আরোহণ ও বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে হাজারো পরিবারের জীবন-জীবিকা জড়িত। অবৈধ চোরাই কাঠ এ পুরো প্রক্রিয়াটিকে অস্থিতিশীল ও ভারসাম্যহীন করে তোলে। কিছু চোরাকারবারির জন্য সাধারণ ব্যবসায়ী ও জোত মালিক নিদারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই আমাদের অবস্থান সবসময় সাধারণ ব্যবসায়ী ও জোতমালিকের পক্ষে এবং চোরা কারবারিদের বিপক্ষে। সম্প্রতি বরকলের ছোট হরিণা সীমান্তে ভারতীয় পাচারের অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। চোরাকারবারী সিন্ডিকেটের অবৈধ কাঠ আরোহণ, পরিচলন ও পরিবহনে বন বিভাগের কারো কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিকট কার্যকর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ইসরায়েলি গণহত্যায় মার্কিন সমর্থন বন্ধের আহ্বান ইরানের

ভারতকে কোনোক্রমে সভ্য রাষ্ট্র বলা চলে না : শায়খ আহমদুল্লাহ

সরকার পতনের যে নীলনকশা প্রমাণসহ ফাঁস করলেন পিনাকী

ঢাকা উত্তর বিএনপির ৭ নেতা বহিষ্কার, মিরপুরে বিক্ষোভ

নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্তে উত্তাল ইসরায়েল, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা প্রধান বরখাস্তের উদ্যোগ

মেসির দুর্দান্ত গোল, মায়ামির হ্যাটট্রিক

আছিয়া হত্যার বিচারের দাবিতে সাতক্ষীরায় মহিলা জামায়াতের মানববন্ধন

অপরাধে জড়িয়ে পড়লে কাউকে ছাড় নয়-মাহবুব আলমগীর আলো

কত হাজার কোটি টাকার মালিক শেখ সেলিম? জানা গেলো চাঞ্চল্যকর তথ্য!

ফরিদপুরে শিশুকে যৌন হয়রানির অভিযোগে ব্যবসায়ীকে গণপিটুনি

ঢাকায় হিজবুত তাহরীরের সক্রিয় সদস্য গ্রেপ্তার

১৯ দেশের মিশন প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে ইসি

ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের তীব্র নিন্দা

নর্থ মেসিডোনিয়ার নাইটক্লাবে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড: নিহত ৫৯, আটক ১০

ট্রেনে ঈদযাত্রা: ২৭ মার্চের টিকিট বিক্রি শুরু

কর্মবিরতি প্রত্যাহার, মেট্রোরেলে টিকিট ব্যবস্থা চালু

নাটোরে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আটক

ঢাকাসহ ৩ বিভাগে বৃষ্টি ও বজ্রপাতের পূর্বাভাস

ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি নিয়ে পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন ট্রাম্প

শিশুর গলায় ছুরি ঠেকিয়ে মাকে ধর্ষণের চেষ্টা