ভাদ্রের দু দফার প্রবল বর্ষণে বরিশাল মহানগরীর অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক যানবাহন চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে জনদূর্ভোগ ক্রমশ বাড়ছে। মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষনে দীর্ঘদিনের উদাশীণতা ও অবহেলার সাথে ভাদ্রের শুরু ও শেষের নজিরবিহীন প্রবল বর্ষণে নগরীর অনেক সড়কের অবস্থাই বর্ণনাতীত। কিন্তু এসব সড়কের নুন্যতম মেরামত দুরের কথা জরুরী রক্ষনাবেক্ষেনেও নগর ভবনের কোন পদক্ষেপ নেই। এমনকি সাম্প্রতিক পট পরিবর্তনের পরে সিটি মেয়রকে অপসারন করে প্রশাসক নিয়োগ দেয়ার পরে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকেও বদলী করা হয়েছে। ফলে নগরন ভবনে অনেক জরুরী বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহনেও জটিলতা বাড়ছে। ফলে নগরীর রাস্তাঘাটগুলোর জরুরী মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষনেও কোন পদক্ষেপ গ্রহন সম্ভব হচ্ছে না।
ফলে নগর ভবন এখন ‘দাপ্তরিক কর্মকান্ড’ এবং ‘পর্যবেক্ষন’এ সীমাবদ্ধ থাকায় অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও ঝুলে আছে। তহবিলের তেমন সংকট না থাকলেও নগরবাসীর ভোগান্তী বাড়ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। বর্তমান নগর পরিষদ দায়িত্ব গ্রহনের দিন কয়েক আগেই বরিশাল মহানগরীর সড়ক ও ড্রেন সহ অবকাঠামো উন্নয়নে প্রায় ৮শ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করে একনেক। চলতি অর্থ বছরে সে প্রকল্পের আওতায় দেড়শ কোটি টাকা পাবার আশা করছে নগর ভবন। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতির পরে মন্ত্রনালয় থেকে বিষয়টি নিয়ে কিছু জানান হয়নি।
তবে সদ্য বিদায়ী নগর পিতার সময়ে প্রকল্পটির অর্থ প্রাপ্তি সাপেক্ষে ৩২২ কোটি টাকা ব্যায় সম্বলিত ১৬৫টি রাস্তার পুনঃ নির্মান, সংস্কার ও উন্নয়ন এবং ৫৫ কিলোমিটার ড্রেন নির্মানে দরপত্র আহবান করে নির্মান প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যাদেশও দেয়া হয়েছিল। ভড়া বর্ষায় কিছু সড়কের কাজ শুরুও হয়েছে। এছাড়া বিদায়ী মেয়রের সময়ে আরো কিছু সড়কের জরুরী মেরামত ও উন্নয়নে প্রাক্কলন তৈরী করে তা অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকাকালীন রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে তাকে বিদায় নিতে হয়েছে। কিন্তু নতুন প্রশাসক দায়িত্ব গ্রহনের একমাসেও তা আর অনুমোদন লাভ করেনি।
ফলে বরিশাল মহানগরীর অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কের বেহাল দশা মারাত্মক জনদূর্ভোগ সৃষ্টি করছে। এমনকি সাম্প্রতিক দু দফার প্রবল বর্ষণ ও প্লাবনে নগরীর অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হলেও তার মেরামত সহ জরুরী রক্ষনাবেক্ষন ব্যবস্থাও অনুপস্থিত।
নগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ডের রাজকুমার ঘোষ রোডটির পরস্থিতি এখন সব বর্ণনার বাইরে। মাত্র সাড়ে ৩শ মিটারের এ সড়কটিতে ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং একটি ফার্মাসিউটক্যাল কোম্পানীর বিভাগীয় পণ্যাগার ছাড়াও অন্তত ২শ পরিবারের বাস। কিন্তু বিগত দুটি নগর পরিষদ এ সড়কটির উন্নয়ন দুরের কথা, মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষনেও নুন্যতম কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেনি। নতুন প্রকল্পের আওতায় এ সড়কটির সংস্কার সহ উন্নয়নের লক্ষে একটি প্রাক্কলন তৈরীর কথা বলেছেন সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলী। তবে সদ্য বিদায়ী নগর পিতার কাছে তা উপস্থাপন না হওয়ায় অনুমোদনও হয়নি। নগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ডের এ সড়কটি দেখভাল কার কাছে তাও এলাকাবাসীর কাছে অজ্ঞাত।
বর্তমান নগর পরিষদ দায়িত্ব গ্রহনের আগেই ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের মৃত্যুর পরে বিধি অনুযায়ী নির্বাচনও হয়নি আইনগত জটিলতায়। ফলে পুরো ২২ নম্বর ওয়ার্ডবাসীর মত রাজকুমার ঘোষ রোডটিও এখন অনেকটা অভিবাবক শূণ্য। অথচ সামান্য বৃষ্টিতেই এ সড়কটি নিমজ্জিত হচ্ছে। এ ওয়ার্পের কাজী পাড়া সহ বেশীরভাগ রাস্তাঘাটের অবস্থাও অত্যন্ত করুন। মাছ চাষের নমে সাবেক ইজারাদার পাশের লেকটির পয়ঃ নিস্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ করলেও নগর ভবন তা অপসারন করে ভঙ্গুর এ সড়কটিকে রক্ষায় কোন ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারেনি। ফলে ভঙ্গুর রাজকুমার ঘোষ রোড ইতোমধ্যে যান চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পরার পরে সাম্প্রতিক প্রবল বর্ষণে লেকের পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে। ফলে পথচারীদের চলাচলও প্রায় বন্ধ রাজকুমার ঘোষ রোডে।
এব্যপারে সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল বাশারের দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি ইতোপূর্বে ‘রাজকুমার ঘোষ রোডের পরিপূর্ণ মেরামত সহ বিটুমিনাস কার্পেটিং-এর লক্ষে ঠিাকাদার নিয়োগ করা হয়েছে’ বলে জানালেও মঙ্গলবার ‘সড়কটি মেরামতে প্রাক্কলন তৈরী’র কথা বলে ‘তা অনুমোদন পেলে দরপত্র আহবান সহ ঠিাকাদার নিয়োগের পরে কাজ শুরু’র আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তবে কবে নাগাদ এসব কর্মকান্ড সম্পন্ন করে রাস্তাটির কাজ শুরু হবে, সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেন নি তিনি।