তীব্র দাবদাহে পুড়ছে রংপুরসহ উত্তর জনপদ : বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:১৪ পিএম | আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:২২ পিএম
তীব্র দাবদাহ আর ভ্যাপ্সা গরমে বিপস্ত হয়ে পড়েছে রংপুরসহ গোটা উত্তর জনপদ। অসহ্য গরমে হাসফাঁস অবস্থা বিরাজ করছে মানুষসহ প্রাণীকূলে। বেড়ে চলেছে সর্দি-জ্বরসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা। বাসা-বাড়ি, অফিস কিংবা ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান সবখানেই চলছে অস্থিরতা। শান্তি মিলছে না কোথাও। বরং প্রতিদিনই তাপমাত্রা বেড়ে চলেছে। এই অবস্থায় প্রশান্তির একমাত্র উপায় বৃষ্টির জন্য হাহাকার পড়ে গেছে এ অঞ্চলে। প্রচন্ড তাপে রাস্তার পিচ উঠে যাচ্ছে।
স্মরণকালের প্রচন্ড গরম আর তাপদাহে মানুষের পাশাপাশি প্রাণিকূলেও হাঁসফাঁস উঠেছে। তীব্র গরমে হিটস্ট্রোক করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এছাড়া, সর্দ্দি-জ্বর, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন শত শত রোগী। একদিকে প্রচন্ড সুর্যের তাপ এবং ভ্যাপসা গরম তার ওপর বিদ্যুতের দফায় দফায় লোডশেডিং পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। ভয়াবহ এই অবস্থায় গরমে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
গতকাল সোমবার রংপুরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন রোববার তা ছিল ৩৮.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত এক সপ্তাহেরও বেশি দিন ধরে রংপুর বিভাগে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে ওঠানামা করছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান জানিয়েছেন, গত প্রায় ১০ দিন ধরে রংপুর অঞ্চলে অস্বাভাবিক আবহাওয়া বিরাজ করছে। সূর্য কিরণ লম্বালম্বিভাবে আসায় রোদের তীব্রতা অনেক বেশি এবং তীব্র গরম অনুভব হচ্ছে। এই গরম বাতাস স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করছে। এ তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি আরও ২/৩ দিন অব্যাহত থাকতে পারে। বৃষ্টি হলেই এ পরিস্থিতি কেটে যাবে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের খোঁজ নিয়ে জানা গেছে গত এক সপ্তাহ ধরে রংপুর মেডিকেলে রোগী ভর্তির সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। বিশেষ করে মেডিসিন, করোনারী কেয়ার ইউনিট ও শিশু ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা প্রতি মুহুর্তে বেড়ে চলেছে।
এদিকে, অব্যাহত দাবদাহের কারণে শহর কিংবা গ্রামের রাস্তা-ঘাট ও হাট-বাজারগুলোতে মানুষের উপস্থিতি কমে গেছে। কারো পক্ষেই বাহিরে থেকে কাজ-কর্ম করা সম্ভব হচ্ছে না। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দাবদাহের তীব্রতা বেড়ে গিয়ে অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছে যায় এবং রাত অবধি তা অব্যাহত থাকছে। আশ্বিন মাসের শুরুর দিকে হাল্কা বৃষ্টি হলেও গত প্রায় ১ মাসেরও অধিক সময় ধরে এ অঞ্চলে ভারি বৃষ্টির দেখা মিলছে না। বরং তীব্র দাবদাহ আর ভ্যাপসা গরমে মানুষসহ সকল প্রাণীকুল অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে দিনমজুর, রিকশাওয়ালা, শ্রমজীবী মানুষ, কৃষকরা পড়েছেন চরম বিপাকে। কাজকর্ম করতে না পারায় এসব পরিবারে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। মানুষের পাশাপাশি পশুপাখিরও জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। গত প্রায় ২০ দিন ধরে গোটা উত্তরাঞ্চল জুড়েই চলছে এই তীব্র দাবদাহ। ফ্যানের নিচে গিয়েও রেহাই পাচ্ছেন না মানুষ। ফ্যানের বাতাশও গরম হয়ে থাকছে। কয়েকদিনের দাবদাহ আর ভ্যাপ্সা গরম অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বাড়িতে থেকে ফ্যান চালিয়ে কিছুটা স্বস্তি পেলেও ক্ষেতে-খামারে কর্মরত মানুষগুলো পড়েছেন চরম বিপাকে। জীবিকার তাগিদে মাঠে কাজ করতে গিয়ে হরহামেশাই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। প্রচন্ড রোদের কারনে ক্ষেতে-খামারে কাজ করতে পারছে না। তীব্র রোদে গায়ে ফোস্কা পড়ে যাচ্ছে কৃষি শ্রমিকদের। একটু স্বস্তির আশায় ঘন ঘন ছুটে চলেছে গাছের নীচে।
গতকাল রংপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েক দিনে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় চরম বেকায়দায় পড়েছেন দিনমজুরসহ নি¤œ ও মধ্যম আয়ের লোকজন। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে বোরো ধান ক্ষেতের পরিচর্যাসহ বিভিন্ন রবিশস্যের ক্ষেতে কাজ করা শ্রমিকরা গরমে হাস-ফাস করছেন। একদিকে প্রচন্ড দাবদাহ, অন্যদিকে জমি থেকে নির্গত গরম গ্যাসের কারনে কারো পক্ষেই জমিতে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে দুপুরের পর কোন ভাবেই জমিতে নিড়ানি কিংবা বসে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে সর্দি, জ্বর ও কাশি। গ্রাম কিংবা শহর কোথাও বাদ নেই। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই দু-চারজন করে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আছেন।
এদিকে সোমবার দুপুরে চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখা গেছে প্রাণীগুলো ঠান্ডা বাতাশের জন্য ছটফট করছে। তবে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, গরমের কারণে চিড়িখানার প্রাণীদের বিশেষ যতœ নেওয়া হচ্ছে। খাঁচাবন্দি পশু-পাখির শরীর ঠিক রাখতে স্যালাইন খাওয়ানো হচ্ছে। বাঘ এবং সিংহের খাঁচায় দেওয়া হয়েছে বৈদ্যুতিক ফ্যান।
রংপুর মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকগন জানিয়েছেন, এমন আবহাওয়ায় জ্বর, সর্দি, চর্মরোগসহ শ্বাসকষ্ট, হিট ষ্ট্রোক ও ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বেশি থাকে। বর্তমানে এই অঞ্চলে যে আবহাওয়া বিরাজ করছে তা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। এই বৈরী আবহাওয়ায় রোগ-বালাইয়ের হাত থেকে রক্ষায় সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
তাদের মতে, এই গরমে যতটা পারা যায় ছায়ায় অবস্থান এবং বেশি বেশি পানি পান করতে হবে।
এদিকে তীব্র তাবদাহের কারণে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বেড়েছে ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা। হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে জায়গা নেই। বেড না থাকায় ফ্লোরেও রাখা হয়েছে অসংখ্য রোগী। রোগী ও স্বজনদের ভীড়ে হাসপাতালের ভিতরে গরমের মাত্রা আরও বেড়ে গেছে। তাছাড়া এত রোগীর চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খাচ্ছেন নার্স ও চিকিৎসকগন। হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন সর্দি, জ্বর, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে গড়ে প্রতিদিন দেড় থেকে দুশ রোগী রামেক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হচ্ছে। এদের মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যা বেশি। ## হালিম আনছারী, রংপুর। ২৪-০৯-২৪
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বৈদ্যুতিক পাখা খুলে পড়ে দুই শিক্ষার্থী আহত
উত্তরায় শান্তিপূর্ণ পূজা হবে 'মুগ্ধ চত্বরে'
শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় চিরশায়িত সেনা অফিসার লেফটেন্যান্ট নির্জন
বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর ইন্তেকাল
বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজী আর নেই, ইনকিলাব সম্পাদকের শোক
মতলবে ৯ বাল্কহেড, ১টি লোড ড্রেজারসহ আটক ২৮
জাভেদ পরিবারের ভেল্কি
দেশ ও দেশের সার্বভৌমত্ব বিরোধী চক্রান্ত রুখে দিতে হবে -ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
মরিচ্যা চেকপোষ্টে ৩০ লাখ টাকার ইয়াবা উদ্ধার করল বিজিবি, আটক -১
জো বাইডেন অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন
জাস্টিন ট্রুডোকে ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ উপহার দিলেন ইউনূস
শেরপুরে আদালতের হাজতখানা থেকে আসামির পলায়ন- ৩ পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার
গফরগাঁওয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে যুবক নিখোঁজ লাশ উদ্ধার
বিভাগীয় কমিশনার, এডিসি ও ইউএনও পরিবর্তন হবে
হিন্দুরা আমাদের নাগরিক, আমরা তাদের দেখভাল করছি: নিউইয়র্কে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকে ড. ইউনূস
জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে ড. ইউনূসের সাক্ষাৎ
সিংগাইরের সড়ক দূর্ঘটনায় ১ নারীর মৃত্যু
ষড়যন্ত্রকারীরা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে অপতৎপরতায় লিপ্ত : তারেক রহমান
টেলিটকের আনলিমিটেড ডাটা প্যাকেজ জেন-জি