ময়মনসিংহের ধোবাউড়া, হালুয়াঘাট ও ফুলপুর উপজেলায় বন্য পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। মঙ্গলবার ভোর থেকে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। সকাল নয়টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টি হয়। এতে এই তিন উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বৃষ্টি বাড়লে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বোরাঘাট নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে প্লাবিত হতে শুরু করে হালুয়াঘাট উপজেলা। পাহাড়ি ঢলে হালুয়াঘাট পৌর এলাকাসহ উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়নে পানি ছড়িয়ে পড়ে। পানিবন্দী হয়ে আছেন এখনো অন্তত ৭৫ হাজার মানুষ।
মঙ্গলবার সকালে হালুয়াঘাটের ধারা, নড়াইল, বিলডোরা, ধুরাইল, আমতৈল, স্বদেশী ও শাকুয়াই ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে। এসব ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বন্যার পানি ঢুকেছে। তলিয়ে গেছে বসতবাড়ি, আমন ধানের জমি, মাছের খামার। রয়েছে সুপেয় পানি ও খাদ্যের সংকট। তবে রোববার বিকেল থেকে ভূবনকুড়া, গাজীরভিটা, হালুয়াঘাট সদর, জুগলী ও কৈচাপুর ইউনিয়নে পানি কমতে শুরু করে। মঙ্গলবার সকালে এ উপজেলায় ৭৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে। তোফাজ্জল হোসেন (৫২) বাড়ি দারিয়াকান্দা গ্রাম। তাঁর বাড়িতে হাঁটুপানি। এলাকায় আজ সকাল থেকে পানি বাড়তে শুরু করেছে। তাই নিজের বাড়ি থেকে গরু নিয়ে পাকা সড়কে রাখতে ছাউনি করছিলেন। গরু এনে পাকা সড়কে ছাউনি করছিলেন। তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে আর কখনো পড়তে হয়নি। এলাকাটির বাসিন্দা মাহবুবুর রহমান বলেন, গত শনিবার থেকে বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে আছে। এ অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে।
হালুয়াঘাটের ইউএনও এরশাদুল আহমেদ বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন তৎপর রয়েছে। পানিবন্দী মানুষকে শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবার বিতরণ কার্যক্রম চলছে।
গত শুক্রবার দুপুরের পর অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও নেতাই নদের বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় ধোবাউড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা। রোববার বিকেল থেকে দক্ষিণ মাইজপাড়া, গামারীতলা ও ঘোষগাঁও ইউনিয়নে পানি কমতে শুরু করেছে। গতকাল সোমবার রাত থেকে পোড়াকান্দুলিয়া ইউনিয়নের পানি কমছে। তবে আজ গোয়াতলা, ধোবাউড়া সদরে পানি বাড়ছে। এখনো ৭৫টি গ্রামে পানিবন্দী আছেন ৬২ হাজার মানুষ।
ধোবাউড়ার ইউএনও নিশাত শারমিন বলেন, ‘দুটি ইউনিয়নে পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে নতুন করে কিছু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা চেষ্টা করছি।’
রোববার থেকে ফুলপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়। শেরপুর থেকে নেমে আসা পানি মালিঝি ও কংস নদী হয়ে পানি ফুলপুরের ছনধরা ইউনিয়ন দিয়ে প্রবেশ করে। গতকাল বিকেল থেকে ছনধরা ইউনিয়নে পানি কমতে শুরু করে। কিন্তু সিংহেশ্বর, ফুলপুর সদর ও বালিয়া ইউনিয়নের আজ নতুন করে ১৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ নিয়ে উপজেলাটিতে ৩৫ গ্রামে অন্তত ২৪ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছে।
ফুলপুরের ইউএনও এ বি এম আরিফুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির কারণে পরিস্থিতি খারাপের আশঙ্কা করা হচ্ছে। নতুন করে ১৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। নতুন একটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে, ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন বলেন, তিনটি উপজেলায় ৩৪ হাজার পরিবারের দেড় লাখের বেশি মানুষ এখনো পানিবন্দী। হালুয়াঘাটে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় ৬৩ মেট্রিক টন চাল, ৭ লাখ টাকা ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। বরাদ্দ সাপেক্ষে ত্রাণ কার্যক্রম চালানো হবে।