ভারতের উড়িশা উপক’লমুখি ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে বরিশাল সহ সমগ্র দক্ষিণ উপক’ল যুড়ে প্রবল বর্ষণ শুরু হয়েছে। বুধবার দুপুর থেকেই উত্তর বঙ্গেপসাগর থেকে ধেয়ে আসা গভীর সঞ্চালনশীল মেঘে ঢেকে ছিল বরিশাল সহ পুরো দক্ষিণাঞ্চল। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার পরেই কালো মেঘে ঢেকে থাকা আকাশ থেকে হেমন্তের বর্ষণে জনজীবন অচল হয়ে পড়েছে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বরিশালে প্রায় প্রায় ৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় দানা ভারত উপক’লে এগুতে থাকলেও তার প্রভাবে যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সমগ্র উপক’লভাগে ব্যপক প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। উপক’লীয় এলাকায় রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ‘ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী-সিপিপি’র প্রায় ৭৮ হাজার সেচ্ছাসেবক সহ প্রায় সাড়ে ৪ হাজার আশ্রয় কেন্দ্র সম্ভাব্য যেকোন দূর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দূর্যোগ মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের নিবিড় কার্যক্রম সহ মাঠ পর্যায়ের সার্বিক প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার ।
এদিক ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নৌপথে সতর্কতা অবলম্বনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলেল সবগুলো নৌ বন্দরকে ২ নম্বর সতর্ক সংকেত জারী করায় একতলা যাত্রীবাহী নৌযান সহ অনধীক ৬৫ ফুট দৈর্ঘের সব নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেতের আওতায় রাখা হয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগের দুপুর ১২টার পর্যবেক্ষনে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ বরিশালের পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে ১৯ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৭.৮ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থান করছিল। এটি আরো উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে বলে জানিয়ে ঝড়টি কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের গতিবেগ ৯০ কিলোমিটার থেকে ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের নিকটবর্তি এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে বলে জানিয়ে উত্তর বঙ্গোপসাগর সহ গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছধরা ট্রলার সমুহকে পরবর্তি নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে এবার বর্ষা মৌসুমে স্বাভাবিক বৃষ্টির আকালের পরে শরৎ পেরিয়ে হেমন্তে’র ‘অকাল অতি বর্ষণ’ দক্ষিণাঞ্চলের মাঠে থাকা ৮.৮৫ লাখ হেক্টর জমির আমন ধানের সঠিক উৎপাদন নিয়ে শংকা বাড়ছে। ফলে প্রায় ২৪ লাখ টন আমন উৎপাদন নিয়ে ভয়াবহ সংকটে কৃষি যোদ্ধাগন। ভাটি এলাকা বিধায় বিলম্বিত আবাদের কারণে এ অঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমন এখন মাঝ পর্যায়ে।
অপরদিকে গত ভাদ্রের পূর্ণিমায় দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ১৫ হাজার হেক্টরের গ্রীষ্মকালীন সবজির পুরোটাই বিনষ্ট হবার ক্ষত ইতোমধ্যে সবজির বাজারে থাবা বসিয়েছে। কিন্তু সে ক্ষত কাটিয়ে ওঠার প্রস্তুতির মুখে হেমন্তের আরেক দফা অতিবর্ষণে আসন্নপ্রায় রবি মৌসুমের শীতকালীন সবজি আবাদ আরো বিলম্বিত করল। ফরে সবজির বাজারে আরো বিরূপ প্রভাবের আশংকা সৃষ্টি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বরিশালের প্রায় ৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। দুপুর সাড়ে আড়াইটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বরিশাল সহ সমগ্র উপক’ল যুড়ে হালকা থেকে মাঝারী বর্ষণ অব্যাহত ছিল।
ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’য় ভরকরে বর্ষণ যত দীর্ঘায়িত হবে, সবজির আবাদ বিলম্বিত হবার ফলে অস্থির সবজির বাজারে চলমান অগ্নিমূল্য পরিস্থিতিকে ভয়াবহ নাজুক পর্যায়ে নিয়ে যাবার আশংকা তৈরী করবে বরে মনে করছেন বাজার পর্যবেক্ষকগন।